প্রহসনের নির্বাচনের পর মাজাভাঙ্গা দল জাতীয় পার্টিকে ডামি বিরোধীদল বানিয়ে আওয়ামী লীগ নতুন সরকার গঠন করেছে। বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দেশে এখন সর্বত্রই আওয়ামী লীগের এমপি।
বিএনপি বলে একটা দল আছে বটে, কিন্তু তারা তো দেশের উন্নয়নের কথা বলে না! তাদের দলের স্রষ্টাকে কিভাবে বিভিন্নভাবে বিতর্কিত করা যায় এই নিয়ে তারা ব্যস্ত। তারা কতটা ভারতবিরোধী-আওয়ামী লীগ কতটা ভারতপ্রেমী, তারা কত মুক্তিযুদ্ধ করেছে-আওয়ামী লীগে কত রাজাকার, তারা কত আস্তিক-আওয়ামী লীগ কত নাস্তিক, তারা কত সৎ-আওয়ামী লীগ কত বাটপার এসব নিয়েই তাদের কন্ঠ এখন সোচ্চার।
বিএনপির এই অদরকারি বেফাঁস কিছু আলগা মন্তব্যের জন্য বর্তমান সরকারের তাবেদারেরা কেন জান-প্রাণ ছেড়ে যুক্তি-তর্কে মেতে উঠছে তা আসলেই বোধগম্য নয়।
বর্তমানে দেশে জাতীয় সংসদ অধিবেশন চলছে। সরকারি কোনো সাংসদের তীর্যক কোনো মন্তব্যের প্রতিবাদে খামোখা ওয়াক আউট করার মত এখন আর কেউ নেই।
মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের দাবিদার আওয়ামী লীগের যদি সত্যি দেশের কোনো উন্নয়নের ইচ্ছে থেকেই থাকে, তবে তার সূবর্ণ সুযোগ এখনই। কন্ঠ ভোট বলুন, আর যে ভোটেই বলুন, জনগুরুত্বপূর্ণ যে কোনো বিল সহজেই পাশ হয়ে যাবে। ত্বরিত কোনো উন্নয়ন কাজ শুরু করতেও কোনো সমস্যা হবার কথা নয়। শুধুই দরকার সদিচ্ছার।
আগের সরকার এই করেছে, সেই করেছে তাই আমরা এই করতে পারছি না, সেই করতে পারছি না- এসব খোঁড়া যুক্তি দিয়েও এখন আর আওয়ামী লীগ জনগণকে ধোঁকা দিতে পারবে না। কোনো কাজ যদি না করতে পারে, তবে তার দায় এখন শুধুই আওয়ামী লীগের।
অথচ আওয়ামী লীগের সাংসদেরা করছেটা কী? বাস্তবে আমরা কি দেখছি? সরকারি দলের লোকেরা বিএনপি কোথায় কি বলল, কি করলো এই নিয়ে গবেষণা করতেই ব্যস্ত।
খালেদা জিয়া মুক্তিযুদ্ধের সময় কোথায় ছিলেন তা নিয়ে গবেষণা কি সংসদে বসে করতে হবে? গোলাম আযমের পাসপোর্ট নিয়ে আলোচনা কি সংসদে করার বিষয়?
মিনিটে মিনিটে জনগণের পকেটের লাখ লাখ টাকা খরচ করে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত সংসদে বসে তারা বিএনপির সমালোচনা করছে কেন? বিএনপি তো এখন কোনো ফ্রেমেই পড়ে না। তারা তো বিরোধীদলেও নেই। তাদের কেউ তো সংসদেও নেই। তাদের নিয়ে কথা বলে সংসদের অমূল্য সময় নষ্ট করছে কেন আওয়ামী লীগ?
এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগের উন্নয়নমূলক কোনো কাজের নজির কি আমরা দেখতে পাচ্ছি?
গত টার্মের প্রতিশ্রুতি যা সময়ের অভাবে পূরণ করতে পারেনি, তা পূরণের এখনই সময়। নির্বাচনী ইশতেহারে দেওয়া প্রতিশ্রুতি না পূরণ করার কোনো যুক্তি কি এখন আওয়ামী লীগের আছে?
নির্বাচনে জিতলে নাকি পদ্মার বুকে কয়েকটা সেতু হবে শুনেছিলাম, তা সেই সেতুর কাজ কতদূর? ঘরে ঘরে বিদ্যুত-গ্যাস-পানি কি পৌঁছেছে? দলের মধ্যে কি দুর্নীতি কমেছে? দেশের মানুষের নিরাপত্তা ব্যবস্থার কি কোনো উন্নতি হয়েছে?
শ্রমবাজারে আমাদের জনশক্তি রপ্তানির অগ্রগতি কতদূর? ভারত থেকে আমরা কি তিস্তার পানি আদায় করতে পেরেছি? ভারতে আমরা কি আমাদের চ্যানেলগুলো চালাতে সক্ষম হয়েছি? ভারতসহ অন্যান্য দেশের সাথে আমাদের বাণিজ্য ঘাটতি কি কমেছে? বাম্পার ফলনের কথা বলেও কেন ভারত থেকে চাল আমদানি করতে হচ্ছে?
আমাদের বেকারত্বের হার কি কমেছে? শিক্ষার হারের অগ্রগতির জন্য নতুন কি কি পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে? কুইক রেন্টালের ফাঁস আর কতদিন গলায় ঝুলবে? যুদ্ধাপরাধীদের বাকিদের রায় কার্যকর হবে কবে?
কোটি কোটি টাকায় জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে রেকর্ড করা হয়েছে, খুব ভালো হয়েছে। মরা চেতনা জাতীয় সঙ্গীতের তুমুল সুরে জাগ্রত হয়েছে। এখন এই জাগ্রত চেতনার কাছে জবাবদিহি করুন, দেশের উন্নয়নের কাজে এখন পর্যন্ত কি কি করেছেন? এসব প্রশ্নের উত্তর সংসদে বসে উচ্চস্বরে জনগণকে দিন।
তা না হলে দেশপ্রেমের চেতনায় জাগ্রত জনগণ কোনদিন আপনাদের ক্ষমা করবে না।
ড. জিনিয়া জাহিদ : বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক, অর্থনীতিবিদ ও গবেষক
বাংলাদেশ সময়: ০৮৩২ ঘণ্টা, এপ্রিল ০১, ২০১৪