ঈশ্বরের সঙ্গে কিছুক্ষণ কাটানোর ইচ্ছে আছে। কতো উপযোগ-অভিযোগ আর প্রশ্ন জমা আছে তার জন্য।
মানবিকতা কঙ্কালের কাঁধে ঝুলিয়ে দিয়ে তারা রাজনীতিকে ধর্ম হিসেবে বেছে নিয়েছে। রাজনীতির শিরা উপশিরায় যেমন করে সন্ত্রাস মিশে গিয়েছে, দ্বিতীয় ঈশ্বর দাবিদারদের রক্তে এখন পেশী শক্তির শ্বেত কণিকা। যা তাদের অসহিষ্ণু করে তুলছে। তারা নিজেদের পবিত্র কর্ম এলাকাটিকে বেছে নিয়েছে সন্ত্রাসের মহড়াকেন্দ্র হিসেবে। সেই মহড়ায় রোগী, রোগীর পরিজন, সেখানে কর্মসূত্রে যাওয়া অন্য পেশাজীবীরাও তাদের দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে। দ্বিতীয় ঈশ্বরদের এই দানবীয় ভূমিকা অনেক দিন আগে থেকেই দৃশ্যমান। ইদানীং সেই দৃশ্যটি নিয়মিতভাবে মঞ্চস্থ হচ্ছে। ঢাকার বারডেম, মিটফোর্ড থেকে শুরু করে রাজশাহীর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পর্যন্ত চিকিৎসকদের মানবিক অবয়বগুলো দানবীয় আকার নিয়ে আস্ফালনে মেতেছে। যারা সামনের সারিতে আছেন তারা সদ্য শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন। যতোদূর জানি তাদের পাঠ্যক্রমে নৈতিকতার কোনো কোর্স নেই। ঐ চর্চাটি শিক্ষাজীবনে তারা করে আসতে পারেনি। শিক্ষাজীবন থেকেই তারা দেখেছে পূ্র্বসূরিরা কি উপায়ে রোগী শোষণ করে ভোগবাদী হয়ে উঠেছে। এবং ক্রমশ কি উপায়ে হয়ে উঠেছে রাজনীতির দাস। তারা পূর্বসূরিদের একান্ত অনুসারী হয়ে উঠতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ।
এবার আসি চতুর্থ স্তম্ভে। পেশাটিকে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভই বলা হয়। এই স্তম্ভটি যদে নড়বড়ে হয়ে যায় বা ঘুনে ধরে তাহলে গণতন্ত্র এবং রাষ্ট্রও বিপর্যয়ের মধ্যে পড়ে। ঐ স্তম্ভের বালুকণা হয়ে টের পাচ্ছি, স্তম্ভটিতে ঘুণ ধরেছে। স্তম্ভের বালি-সিমেন্টও রাজনীতি ও ভোগধর্মের অনুসারী হয়ে উঠেছে। তাদের সেই ধর্মের উগ্রতায় স্তম্ভের পলস্তরা খসে খসে পড়ছে। ‘তাহারা চতুর্থ স্তম্ভ’ এই আওয়াজে প্রকম্পিত চারিপাশ। ফলে সকলের সঙ্গেই তাদের তৈরি হচ্ছে দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক। এই দ্বান্দ্বিকতায় জড়ানোর প্রধানতম কারণ হলো নৈতিতকতা থেকে সরে আসা। এবং যে কোনো ঘটনায় পক্ষ নিয়ে নেওয়া। যখন কোনো একটি পক্ষের দিকে স্তম্ভটি হেলে পড়ে তখন অপর পক্ষের সংগে সাংঘর্ষিক অবস্থা তৈরি হয়। স্মরণকালের ঘটনাগুলোর আড়ালে সেই কথাই উচ্চারিত হচ্ছে। চতুর্থ স্তম্ভের পলেস্তরা খসে পড়তে দেখে উদ্বিগ্ন আমজনতা। কেননা এই স্তম্ভটি আকঁড়ে ধরেই তো তারা টিকে আছে নষ্ট সময়ে।
দ্বিতীয় ঈশ্বরের যে দানবীয় মুখোশের কথা বলা হলো, জানানো হলো চতুর্থ স্তম্ভটির নড়বড়ে হয়ে পড়ার কথা। এ যেমন বাস্তবতা। একইভাবে বাস্তবতা হচ্ছে এখনো কোনো কোনো দ্বিতীয় ঈশ্বরতুল্য মুখ তার মানবিক হাত বাড়িয়ে দেয় রোগীর দিকে। বালুকণাদের কেউ কেউ স্তম্ভের পলেস্তরা খসে পড়া ঠেকাতে আলোড়িত হয়। কিন্তু সেই ঈশ্বরতুল্য মুখের সংখ্যা হাতের কড়ি দিয়ে গোনা যায়, আলোড়িত বালুকণারাও সংখ্যালঘু হয়ে যাচ্ছে। যখন লেখাটি লিখছি তখন মিটফোর্ড হাসপাতাল এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব তৈরি করে রেখেছে দ্বিতীয় ঈশ্বরকূল। স্তম্ভের বালুকণারা কাছে ঘেঁষতে পারছে না। এই দু্ই কূলেরই আছে সমগোত্রীয় সংগঠন। তারা নিজ নিজ পক্ষে সাফাই গেয়ে যাচ্ছে। দলের স্বার্থে , নেতৃত্বের স্বার্থে তা হয়তো সংগত। কিন্তু যা সংগত নয়, তাহলো রাষ্ট্র ও সমাজের এই দুই পক্ষ আকঁড়ে বেঁচে থাকতে চায় মানবিকতা, আম মানুষ। তাই তাদের মানবিক চরিত্রটি আবারো পরিস্ফুট হতে হবে। সাংঘর্ষিক অবস্থান থেকে সরে আসতে হবে উভয়কেই। এজন্য লোভধর্ম ছেড়ে নৈতিকতার পূজারী হতে হবে তাদের। আর নষ্ট রাজনীতির দেয়া অ্যাপ্রোন ও কলামটি ত্যাগ করতে হবে। এটি ত্যাগের কাজটি করতে সক্ষম হলেই দ্বিতীয় ঈশ্বর-সঙ্গে কিছুক্ষণ বা বহুক্ষণ নিরাপদে কাটাতে পারবো আর চতুর্থ স্তম্ভটি হবে সত্যিকারের আশ্রয়।
বাংলাদেশ সময়: ২১৩০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৪