পরশু দিন আমাকে একটা মেয়ে ফোন করেছে, সে এইচএসসি পরীক্ষার্থী। মেয়েটি খুবই বিচলিত; কারণ সে জানতে পেরেছে পদার্থ বিজ্ঞানের প্রশ্ন ফাঁস হয়ে গেছে।
আমি মেয়েটাকে সান্ত্বনা দিলাম। বললাম, “শিক্ষামন্ত্রী যেটা বলেছেন সেটাই নিশ্চয়ই সত্যি। আসলে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে ঠোকা দিয়ে কিছু ছাত্রছাত্রীকে ঠকিয়ে কিছু মানুষ টাকা কামিয়ে নেয়। পরীক্ষা হয়ে যাবার পর সেই প্রশ্নটি দেখিয়ে হই চই করে। ”
মেয়েটি বলল, “আমার কাছে যে প্রশ্ন আছে আমি আপনাকে এখনই পাঠিয়ে দিই। দুদিন পর পরীক্ষা হয়ে গেলে আপনি মিলিয়ে নেবেন। ”
আমি বললাম, ঠিক আছে।
মেয়েটি সঙ্গে সঙ্গে আমাকে হাতে লেখা কিছু প্রশ্ন পাঠিয়ে দিল।
আজকে পরীক্ষা ছিল। সকাল থেকে আমি মনে মনে দোয়া করছি যেন প্রশ্নগুলো মিলে না যায়। আমি মেয়েটিকে বলতে পারব, “দেখেছ, আসলে প্রশ্ন ফাঁস হয় না। ”
দুপুরে মেয়েটি ফোন করে জানিয়েছে ফাঁস হওয়া প্রশ্ন মিলে গেছে, আমাকে এক কপি প্রশ্ন পাঠিয়েছে।
আমি পরীক্ষার প্রশ্ন আর দুদিন আগে পাওয়া হাতে লেখা প্রশ্ন একসঙ্গে করে দিয়ে দিচ্ছি, কেউ বিশ্বাস না করলে নিজের চোখে দেখতে পাবেন। আমার ই-মেইলের তারিখ আর সময়টিও যুক্ত দিলাম। মেয়েটির এই-মেইল অ্যাড্রেস সরিয়ে দিলাম সে যেন আবার উটকো ঝামেলায় না পড়ে।
মেয়েটি আমাকে বলেছে, “স্যার, কিছু একটা করেন। ”
কেউ কি আমাকে বলতে পারবে আমি কী করব? এই দেশেরন ছেলেমেয়েরা লেখাপড়া করে আমাদের দেশটাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে, আমরা সেটা নিয়ে কত স্বপ্ন দেখি।
আমাদের ছেলেমেয়েরা এই স্বপ্ন ধারণ করে লেখাপড়া করে। তারপর দেখা যায় এই দেশের সরকার একটা পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা দিতে পারে না। আমি বিশ্বাস করতে রাজি নই যে আন্তরিকভাবে চাইলে পরীক্ষার প্রশ্নপত্রের নিরাপত্তা নিয়ে কোনো সমস্যা হওয়া সম্ভব।
আমি যে মেয়েটির কথা বলেছি সে আমাকে ফোন করার আগে পাগলের মতো সব জায়গায় ফোন করে তার অভিজ্ঞতাটি জানাতে চেষ্টা করেছে, কেউ শুনতে রাজি হয়নি।
একটি সমস্যা না দেখার ভান করলেই কি সমস্যাটা মিটে যায়? সমস্যা মিটাতে চাইলে সেটাকে সবার আগে স্বীকার করতে হয় দেশের সর্বোচ্চ মহল এই সমস্যাটা স্বীকার করতেই রাজি নই, তাহলে সমস্যাটা সমাধান হবে কেমন করে?
এই দেশের ছেলেমেয়েদের আমরা নূতন জীবনের স্বপ্ন দেখাতে চাই। ভয়ংকরভাবে শুদ্ধ এই হতাশ ছেলেমেয়েগুলোকে আমরা কেমন করে স্বপ্ন দেখাব?
কেউ কি আমাকে বলবেন?
মুহম্মদ জাফর ইকবাল: লেখক ও অধ্যাপক, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।