ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ছাত্ররাজনীতির আশা ও হতাশা!

সাইফুল্লাহ সাইফ, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০২ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৪
ছাত্ররাজনীতির আশা ও  হতাশা! ছবি: ফাইল ফটো

ছাত্র রাজনীতিকে শ্রদ্ধা করি। দেশের দু:সময়ে একমাত্র ছাত্ররাই পারে অপার শক্তি ও সাহস নিয়ে জাতির পাশে দাঁড়াতে, ছাত্রদেরই ওপর সেই আস্থা রাখা যায়।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, ইতিহাসের প্রত্যেকটি সফলতায় ছাত্রদের ভূমিকা অনস্বীকার্য। ছাত্রদের এই বিপুল শক্তি, সাহস ও নিস্বার্থ ত্যাগের উৎস কী? কারণ, ছাত্রজীবনে একটি কোমল মন লালন করে শিক্ষার্থীরা, তাদের মধ্যে তখনও একটা মানবিকতার উন্মাতাল ঝোঁক থাকে। বলতে পারি, তখনও তাদের ছুঁতে পারে না স্বার্থান্বেষী মনোভাব।

যেখানে একজন পেশাজীবী মানুষ গোটা দেশ কিংবা চরম সামাজিক সঙ্কটেও ভাবতে পারেন নিজের স্বার্থের কথা। ফলাফল তার থলেতে আসবে কি আসবে না। সেখানে একজন ছাত্র ভাবে ন্যায় ও অন্যায়ের মাপকাঠিতে; ক্রুদ্ধ-ক্ষুব্ধ চোখে তাকায় অপনীতি ও অরাজকতার দিকে। ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বার্থকে ময়লা জামার মতো ঝেড়ে ফেলে ছাত্ররা সম্মিলিত স্বার্থের কথা চিন্তা করে, বৃহত্তর কল্যাণে প্রত্যাশায় কাজ করে তারা। ছাত্র রাজনীতির নৈতিক ভিত্তি এটাই। আর এই বিশ্বাসটুকু থেকেই ছাত্র রাজনীতিকে শ্রদ্ধার চোখে দেখি।  

এবার দেখা যাক আমাদের সাম্প্রতিক ছাত্র রাজনীতির বর্তমান অবস্থান কী। যদি জানতে চাওয়া হয়, এই মুহূর্তে আপনার পেশা কী? নিশ্চয়ই আপনি বলবেন না, আপনার পেশা ছাত্রলীগ, ছাত্রদল অথবা ছাত্রশিবির।

আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানে প্রথমেই আছেন ছাত্র পরিচয়ে, এই ছাত্রত্বের অধিকার নিয়ে আপনি ছাত্ররাজনীতি করছেন। আপনি কেন রাজনীতি করছেন? কাদের জন্য রাজনীতি করছেন? ধরে নিচ্ছি, আপনি যেকোনো দলের, আপনার প্রতিষ্ঠানের, একজন রাজনৈতিক প্রতিনিধি। আপনি আপনার প্রতিষ্ঠানের কণ্ঠস্বর। আপনার মাধ্যমে সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা তাদের দাবি-দাওয়া, তাদের বক্তব্য তুলে ধরবে। আপনি সকল ছাত্রছাত্রীর সম্মিলিত শক্তি। রাজাকে রাজ্যের দায়িত্ব দেওয়া হয় প্রজাদের জন্য। রাজ্য তার নিজের না, প্রজাদের। তাকে একজন যোগ্য ব্যক্তি হিসেবে ধরে নিয়ে দায়িত্ব দেওয়া হয়, যাতে প্রজারা ঝড়-ঝঞ্ঝাটবিহীন নিরাপদে থাকতে পারে।      

রাজনীতি আপনার আদর্শ হতে পারে, রাজনীতি আপনার জীবন না। আপনার হাতে অনেক ক্ষমতা থাকার অর্থ এই নয় যে, আপনি অন্যায়ভাবে তাকে ব্যবহার করবেন। আপনি একটি পরিবারের প্রতিনিধিত্ব করেন। আপনার পরিবারটা আরও একটু বড় হয় বন্ধুদের নিয়ে, তার পরিসর আরও একটু বাড়ে পাড়া-প্রতিবেশী নিয়ে। এভাবে ব্যপ্ত হতে হতেই কিন্তু একটি সমাজ, একটি দেশ এবং সর্বোপরি মানবসমাজ। আমরা প্রত্যেকেই যদি নিজ নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করি তবে আমরা মনুষ্যগোত্রভুক্ত হয়ে সভ্য সমাজ না গড়ে বনচারীই থেকে যেতাম। আমরা সবাই ক্ষমতার অপব্যবহার করি না বলেই আমরা সভ্য প্রজাতি। আমরা মানুষ। এবং সবোর্পরি আমরা আধুনিক ও যুগোপযোগী মানুষ।

বাংলাদেশ সময়: ১৬২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।