গত এক সপ্তাহে বেশ কয়েকজন ফেসবুক বন্ধু একটা বিষয় নজরে আনলেন। সেটি হচ্ছে, যুদ্ধাপরাধী সাঈদী-নিজামীর প্রত্যাশিত রায়কে সামনে রেখে
জামায়াত-শিবির নতুন করে প্রচারণা শুরু করেছে।
গত জুম্মাবারে দেশের অনেক মসজিদের সামনেই আবেগ মাখানো লিফলেট দিয়ে কৌশলে এদের যুদ্ধাপরাধের ভুমিকাকে সরিয়ে রেখে ইসলামী নেতা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।
রাজধানীর কোনো মসজিদে এরকম লিফলেট বিলি হওয়ার খবর না পেলেও, এই দু’জনসহ জামায়াতের সব যুদ্ধাপরাধী নেতার নাম উল্লেখ করে পোস্টারিং হচ্ছে বলে নজরে এসেছে আমাদের অনলাইন অ্যাক্টিভিস্টদের। এর বাইরে বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমে যে খবর প্রকাশিত হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে এই দুই রায়কে সামনে রেখে জামায়াত-শিবির তাদের স্বভাবমতোই নতুন করে তাণ্ডব চালানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।
স্মরণ করা যেতে পারে যে, বিচার প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর থেকেই, বিশেষ করে ২০১২ ও ১৩ সালে জামায়াত-শিবির যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া নস্যাৎ করতে এহেন কোনো তাণ্ডব বাকি রাখেনি। সাঈদীর রায়ের পর স্বভাবসুলভ মিথ্যাচারের নতুন ডালা খুলেছে তারা। সাঈদীকে চাঁদে দেখা যাচ্ছে, দেশব্যাপী এমন গুজব রটিয়ে তারা সাধারণ ধর্মপ্রাণ নারী-পুরুষকেও তাদের তাণ্ডবে জড়িয়ে নিয়েছে। উত্তেজিত জনতার মব তৈরি করে তাদেরকে দিয়ে থানা ও অন্যান্য স্থাপনায় আক্রমণের সামনে ঠেলে দিয়েছে।
সাঈদীর বিচারের আপীল প্রক্রিয়া চূড়ান্ত পর্যায়ে, দেশ প্রত্যাশিত রায়ের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। এই চূড়ান্ত সময়ে জামায়াত-শিবির যে নতুন করে ষড়যন্ত্রে মেতে উঠবে, সে ব্যাপারে সন্দেহ থাকার কোনো কারণ নেই।
কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এর বিপরীতে সাধারণ মানুষ এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ রক্ষায় সরকারের কি যথাযথ প্রস্তুতি আছে? নাগরিক সমাজ কি এই তাণ্ডব মোকাবেলায় আগের তুলনায় সংহত এবং যুথবদ্ধ ভুমিকায় নামতে পারবেন? এরকম কোনো লক্ষণ এখনও দেখা যাচ্ছে না।
একথা সত্যি যে, জাতীয় পর্যায়ে আমাদের প্রাকৃতিক বিপর্যয় মোকাবেলার মতোই, রাজনৈতিক তাণ্ডব মোকাবেলায় বাংলাদেশের আইনশৃংখলা বাহিনীও গত কয়েকবছরে এক ধরনের সক্ষমতা অর্জন করেছে। প্রথম দিকে যেভাবে পথেঘাটে আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা নির্মম নির্যাতন এবং প্রাণনাশের শিকার হয়েছেন, শেষের দিকে এসে তার হার কমেছিল। কিন্তু অপরাধীরা সবসময় একই পদ্ধতি ব্যবহার করে না, নতুন নতুন পদ্ধতিতে অপরাধ করে তারা সাফল্য পেতে চায়। এক্ষেত্রেও জামায়াত-শিবির তাদের আগের পদ্ধতিতেই নতুন করে তাণ্ডব চালাতে নামবে, এমনটা ভেবে বসে থাকলে চলবে না।
মনে রাখতে হবে, এই গোষ্ঠী সন্ত্রাসবাদি হিসেবে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছে। এদের সঙ্গে আছে আন্তর্জাতিক বিভিন্ন মহল। সন্ত্রাস পরিচালনায় কৌশল ও সক্ষমতা, অর্থ ও অস্ত্র সংগ্রহ এবং ব্যবহারে তাদের দক্ষ জনবল রয়েছে। এরকম একটি শক্তি মোকাবেলায় তাই রাষ্ট্র ও তার নাগরিকদের যৌথ প্রস্তুতির প্রয়োজন রয়েছে। জামায়াত-শিবির নতুন করে কী তাণ্ডব চালাবে সেটা আগাম অনুমান করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা না নিলে আমাদের সামনে নতুন কোনো বিষ্ময় এসে হাজির হতে পারে।
ধর্মীয় বিভিন্ন সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার পাশাপাশি রাষ্ট্রের সম্পত্তিগুলোর নিরাপত্তা, প্রগতিশীল রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের নিরাপত্তার ব্যাপারটি বড় করে ভাবতে হবে। ধর্মীয় উস্কানির পাশাপাশি নানা ধরনের গুজব রটিয়ে স্বল্প সময়ে বড় আকারের ক্ষতি করার কোনো চেষ্টা কীভাবে মোকাবেলা করতে হবে সে ব্যাপারে যথেষ্ট পরিকল্পনা না থাকলে এর চরম মূল্য দিতে হবে গোটা বাংলাদেশকে।
জামায়াত-শিবিরের পিতৃপুরুষরা একাত্তর সালের এক অন্ধকার রাতে অপ্রস্তুত নিরীহ নাগরিকদের উপর হামলে পড়েছিল অস্ত্র নিয়ে। সেই তাণ্ডব আমাদেরকে রুখতে পারেনি, কিন্তু এই সবুজ জমিনে ৩০ লক্ষ মানুষকে চিরঘুমে ঘুমিয়ে যেতে হয়েছিল। এই শিক্ষা যেন আমরা ভুলে না যাই। অপ্রস্তুত, অরক্ষিত অবস্থায় যেন আমরা এই সন্ত্রাসী গোষ্ঠীর সামনে পড়ে না যাই, সেই প্রস্তুতি নেয়ার সময় কিন্তু বয়ে যায়।
আরিফ জেবতিক: ব্লগার ও অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট
বাংলাদেশ সময়: ২০৫৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৮, ২০১৪