অদৃশ্য খাঁচাটির দেখা কি কেউ পেয়েছেন? প্রশ্নটি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত আছেন যারা, তাদের উদ্দেশ্যে করা। নিজে নিজেকে এই প্রশ্ন করে চলেছি নিরন্তর, উত্তর আসছে না ভেতর থেকে।
পত্রিকাতে থাকতেই দেখেছি রাজনৈতিক শক্তির বাইরেও কর্পোরেট বা বিজ্ঞাপনী শক্তির দেখা পাই। টেলিভিশনে এসে পাই ঐ শক্তিটির দানবীয় রূপ। তাদের ইশারায় কতো খবরের ভ্রুণ হত্যা হয়েছে, তার কি কোনো পরিসংখ্যান তৈরি হয়েছে কোনো বার্তাকক্ষে? হয়নি জানি। তবে কোনো কোনো মৃত খবরের কথা হয়তো একজন রিপোর্টার বা বার্তা সম্পাদক এখনো মনে ধারণ করে আছেন। কখনো কখনো সেই মৃত খবরটির জন্য বেদনায় আপ্লুত হোন তারা। স্বৈরশাসক, নানা প্রকার তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়কার গণমাধ্যমের উপরের রাজনৈতিক চাপের কথা জানি। সেই চাপগুলো নিয়ে অনেক গল্পকথা প্রচলিত। কিন্তু গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর সময়ে গণমাধ্যম কতোটা স্বাধীনতা ভোগ করেছে, করছে তা নিয়েও দীর্ঘশ্বাস বা চাপা ক্ষোভ আছে সংবাদকর্মীদের। যতোটুকু দেখেছি বা দেখছি গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর সময়ে-সুবিধাভোগি ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বেড়ে যায়। ফলে গণমাধ্যমগুলোকে সবাইকে সামলে নিয়ে চলতে হয়। এই সামলে নিয়ে চলতে গিয়েই সে পরাধিনতার খোলসে ঢুকে পড়ে। সেখান থেকে মাথা বের করে মুক্ত আকাশ দেখার শক্তিটাও তার মরে যায়। তখন কেবল যে রাজনৈতিক ও কর্পোরেট শক্তির দ্বারা গণমাধ্যম শৃঙ্খলিত থাকে তা নয়। যেমন এই সময়টাতেও এই দুই শক্তির বাইরেও নানা টোটকা শক্তির কাছেও নতজানু হতে হচ্ছে গণমাধ্যমকে। গণমাধ্যমের অন্দরের মানুষ বলেই আমি বা আমরা জানি কতো সামান্য কারণে কিংবা কতো সামান্য মানুষের ইচ্ছেতে মৃত্যু হচ্ছে গণমানুষের জন্য তৈরি খবর। প্রতিদিনের মতো বিশ্ব মুক্ত সাংবাদিকতা দিবসে তো আমি আপ্লুত অপমৃত্যুর শিকার সেই খবরগুলোর জন্য। হয়তো আমি একা নই, সহকর্মীদের অনেকেই হয়তো শোকাহত এই একই কারণে।
তুষার আবদুল্লাহ: বার্তা প্রধান, সময় টেলিভিশন
বাংলাদেশ সময়: ১৭৫৮ ঘণ্টা, মে ৩, ২০১৪