প্রয়াত হওয়ার কিছুদিন আগে প্রখ্যাত সাংবাদিক নির্মল সেন তার এক কলামে প্রশ্ন তুলেছিলেন, ‘আমাকে স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি কে দেবে?’ নির্মলদা’র এ-প্রশ্ন এখন গণমানুষের হয়ে উঠেছে। সেই গ্যারান্টি এখন কেউ দিতে পারছে না।
অতি সম্প্রতি র্যাব, পুলিশ ও গোয়েন্দা সূত্রে একটি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে। যাতে বলা হয়েছে, গত এক যুগে অপহরণ হয়েছে ১০ হাজার ১৬১ জন। এদের মধ্যে তিন শ’ জনের লাশ পাওয়া গেছে। উদ্ধার হয়ে পরিবারের কাছে ফিরে এসেছেন আড়াই হাজার মানুষ। অবশিষ্ট প্রায় সাত হাজার জন নিখোঁজ।
পরিসংখ্যানটি উদ্বেগজনক। ১২ বছরের অপহরণচিত্রে দেখা যায়, ২০০২ সালে অপহৃত হয়েছেন ১০৪০ জন। তখন বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায়। আর আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ২০১৩ সালে অপহৃত হয়েছেন ৮৭৯ জন। মাঝের বছরগুলোতে এ সংখ্যা ওঠা-নামা করেছে। সংবাদপত্রে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০১০ সাল থেকে ২০১৪ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ২৬৮ জন অপহৃত হয়েছেন। এর মধ্যে ৪৩ জনের লাশ পাওয়া গেলেও ১৮৭ জনের কোনো খোঁজ নেই। তারা কোথায় কীভাবে আছে, অথবা আজও বেঁচে আছে কিনা কেউ বলতে পারে না। মৃতদেহগুলোর বেশির ভাগই ভেসে উঠেছে নদীতে, পুকুরে বা ডোবায়।
গুম, অপহরণ, হত্যা এখন প্রতিদিনকার সংবাদ শিরোনাম। কারা এসব ঘটনায় জড়িত, এখনও তা বের করা হয়নি। চলমান গুম ও অপহরণের ঘটনা সরকারের জন্য লজ্জার। বিভিন্ন সময়ে সরকারের পক্ষ থেকে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অপরাধীদের কোনো প্রকার ছাড় দিতে নারাজ। কিন্তু কাজে সেটি দৃশ্যমান হচ্ছে না। সাম্প্রতিককালের ঘটনাগুলোতে পরিষ্কার হচ্ছে, সরকার এখন মানুষের জীবনের নিরাপত্তা দিতে পারছে না।
অপহরণ ও গুম ইস্যুতে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। একটি সরকারের প্রাথমিক দায়িত্ব হচ্ছে জনগণের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। গুম-হত্যার নৃশংস ঘটনা ঘটছে, তার প্রতিরোধের জন্য ঐক্যবদ্ধ আওয়াজ না তুলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একে অন্যকে দোষারোপের চেষ্টা চালাচ্ছে। এইসব নির্মম নৃশংস হত্যাকাণ্ডকে রাজনৈতিক বিতর্কের বিষয় করা মোটেই কাম্য নয়।
দেশে একটি অসুস্থ রাজনীতি চলছে। এ-কারণে গুম, হত্যা ও অপহরণের মতো ঘটনাগুলো একের পর এক সংঘটিত হচ্ছে। এখন সুস্থির কোনো রাজনৈতিক নেতৃত্ব নেই। তবে আমলাতান্ত্রিক নেতৃত্ব আছে। সেটিও জনবান্ধব নয়। নারায়ণগঞ্জে সাতজনকে অপহরণের পর হত্যা। শীতলক্ষ্যা নদীতে ইটবাঁধা অবস্থায় এ লাশগুলো ভেসে ওঠার খবরে মনে হয় বাংলাদেশ আবার মধ্যযুগের বর্বরতায় ফিরে গেছে।
একের পর এক গুম-খুনের ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ছে দেশজুড়ে। সাম্প্রতিক সময়ে অস্ত্র উঁচিয়ে অপহরণ করা হয়েছে রাজনৈতিক দলের নেতা, জনপ্রতিনিধি, ব্যবসায়ী, আইনজীবী, শিক্ষকসহ অনেক ব্যক্তিকে। লক্ষ্মীপুরে ঢাকায় অপহরণের পরপর যুবদল নেতার লাশ পাওয়া গেছে। অপহরণের ৩৫ ঘণ্টার পর ফিরে এসেছেন বেলার প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামী এ বি সিদ্দিক। কেরানীগঞ্জ থেকে আওয়ামী লীগকর্মী রিন্টু অপহৃত হয়েছে।
ময়মসিংহের ভালুকায় একই দিনে অপহরণ করা হয়েছে দুই শিক্ষককে। নোয়াখালীর বাম-প্রগতিশীল নেতা কমরেড মফিজুর রহমানের মৃতদেহ শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দূরে একটি ধানক্ষেতে গলাকাটা ও হাত-পায়ে রগকাটা অবস্থায় পাওয়া গেছে। প্রায় একই সময়ে নারায়ণগঞ্জেও একই রকম ঘটনা। বিএনপি নেতা ইলিয়াস আলী অপহৃত হয়েছেন দুই বছর হলো। তারও আগে বিএনপির আরেক নেতা চৌধুরী আলম নিখোঁজ। সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি হত্যাকাণ্ডের কোনো কিনারা আজ পর্যন্ত পুলিশ করতে পারে নি।
এই অব্যাহত গুম, খুন, অপহরনের পেছনের কারণটা কি? সাধারণ অর্থে একটি কারণ হতে পারে ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্য’। একসময় দেশে উগ্রপন্থীদের দ্বারা রাজনৈতিক সন্ত্রাস বিস্তৃত ছিল। সেটি বর্তমানে নেই বললে চলে। তাহলে এগুলো সমাজে অপরাধপ্রবণতা বেড়ে যাওয়া ও ব্যক্তিগত আক্রোশের বহির্প্রকাশ! দিনে-দুপুরে একই শহরের সাত ব্যক্তিকে অপহরণ, অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে হত্যা করা এবং তারপর শরীরে ইট-বেঁধে নদীতে ফেলে দেওয়া--- এটাতো সঙ্ঘবদ্ধ পরিকল্পনা ছাড়া হতে পারে না।
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ-এর ২০১১ এর প্রতিবেদন (পৃ. ২৬৫) মতে, র্যাব গঠনের পর থেকে ২০১১ পর্যন্ত র্যাবের হাতেই প্রায় ১,৬০০ ব্যক্তি বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। অবশ্য র্যাবের দাবি, এ-সংখ্যা ৬২২ জন। বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের তথ্যমতে, শুধু ২০০৯ থেকে ২০১৪-এর ১০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৬৬৮ জন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন।
আইন ও সালিশকেন্দ্র (আসক)-এর দেওয়া তথ্যমতে, ২০১৩ সালে সার্বিক মানবাধিকার পরিস্থিতি ছিলো চরম উদ্বেগজনক। এর সঙ্গে নতুন সংযোজন হয়েছে গুম বা গুপ্তহত্যা। ২০১৩ সালে ৭২জন বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের শিকার এবং এদের মধ্যে ৫৩ জন গুম হন; মাত্র ৫ জনের লাশ উদ্ধার করা সম্ভব হয়। ‘গুম হওয়া থেকে সকল ব্যক্তির সুরক্ষার জন্য আন্তর্জাতিক চুক্তি’ (International Convention for the Protection of All Persons from Enforced Dispapaearence) অনুযায়ী, গুম বলতে রাষ্ট্রের কোনো মৌন সমর্থন বা রাষ্ট্রের অনুমতি নিয়ে বা সমর্থনে কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী বা বাহিনী কর্তৃক বিনা বিচারে আটক, অপহরণ বা অন্য কোনো উপায়ে তার স্বাধীনতা হরণ করে, সে-ব্যক্তিকে তার স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত করে জোর জবরদস্তির মাধ্যমে আইনের সুরক্ষার বাইরে রাখাকে বুঝায়। এ কনভেনশনের ১(২) এবং ৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী, কোনো অবস্থাতেই (যুদ্ধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা বা অন্য যে কোনো জরুরি অবস্থা) গুম গ্রহণযোগ্য নয়; এবং রাষ্ট্রের বাহিনী কর্তৃক নিয়মিত গুম হওয়ার ঘটনা ঘটতে থাকলে আন্তর্জাতিক আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী তা ‘মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ’ হিসাবে গণ্য হবে। রাষ্ট্র যদি তার বিচার করতে ব্যর্থ হয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন চুক্তি অনুযায়ী দায়ী ব্যক্তিদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচারের মুখোমুখি করা যেতে পারে।
স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী ও পুলিশপ্রধানের বক্তব্য অনুযায়ী গুম-হত্যা বিচ্ছিন্ন ঘটনা। তাই গুম হওয়াটা এখন আর তোলপাড় করার বিষয় নয়। তাতে প্রমাণিত হয়, যিনি গুম হচ্ছেন, কিংবা হত্যার শিকার হচ্ছেন, সে-পরিবারটির বা ঐ পরিস্থিতির শিকার জনগণের মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বোঝার সক্ষমতা রাষ্ট্রের নেই। মানুষের প্রাণের মূল্য এদেশের শাসকগোষ্ঠীর কাছে কখনো ছিলো না। আজও নেই। পুরো একটি পরিবারের মধ্যে দুঃখ-বেদনা-হতাশা থেকে ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে ক্ষোভ আর ক্রোধ। ক্ষমতার পালাবদলের পর সেই প্রতিহিংসা আরও বিপুল গুমÑখুনের জন্ম দেবে না, কে বা বলতে পারে!
কোনো অপহৃত ব্যক্তির পরিবারকে তার নিরাপত্তার জন্য কেন প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চাইতে হবে? তারা ফিরে আসার জন্য কেন প্রধানমন্ত্রী বরাবর আবেদন করতে হবে? এসব ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সাধারণ মানুষকে সাহায্য করার কথা। জনগণের জানমালের নিরাপত্তা দেওয়া তাদেরই দায়িত্ব। কিন্তু আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা নিজেদের দায়িত্ব পালন করতে পারছেন না। আমরা পুলিশের কাছ থেকে এটি আশা করি না। সাধারণ জনগণ মনে করে, পুলিশ সদস্যরা তাদের বন্ধু। অথচ সাম্প্রতিক সময়ে গুম, হত্যা, অপহরণের ক্রমবর্ধমান ঘটনার সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নাম চলে আসছে, নারায়ণগঞ্জে নজরুল হত্যার ঘটনায় র্যাবের সাথে ৬ কোটি টাকা বিনিময়ের খবর প্রকাশিত হয়েছে, তা কোনোভাবেই প্রত্যাশিত নয়। এ যদি হয় অবস্থা, তাহলে সাধারণ মানুষের শেষ আশ্রয়স্থল থাকলো কই? এসব সংস্থাকে তাদের অবস্থান পরিষ্কার করা উচিত। এখনই প্রকৃত দোষীদের খুঁজে বের করে বিচারের মুখোমুখি না করতে পারলে দেশের এবং দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভাবমুর্তি ক্ষুন্ন হবে। তাতে রপ্তানিবাণিজ্য ও বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং ক্রেতাদের মধ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়বে।
গুম-অপহরণ, হত্যা, রগ কাটা থামবার কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। বরং একটি ভয়াবহ আকার ধারণ করছে। রাজনৈতিক শত্রুতা নেই এমন লোকের গলাকাটা ও হাত-পায়ের রগকাটা লাশ পাওয়া গেছে ধানক্ষেতে। গুজব রটিয়ে কুমিল্লায় হিন্দুপল্লীতে হামলা করা হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই ছাত্রলীগ নেতার হাত-পায়ের রগ কাটা হয়েছে। এইসব অপরাধের সংজ্ঞা ভিন্ন হতে পারে। তবে যোগসূত্র আলাদা নয় বলে আমার মনে হচ্ছে। দেশকে অস্থিতিশীল, অকার্যকর করে তোলার ক্ষেত্রে একটি পরিকল্পনা, চক্রান্ত চলছে না তো! আমরা জানি, একটি বিশেষ গোষ্ঠীরই প্র্যাকটিস আছে রগ কাটার। সেই সাথে একটি বিশেষ প্রশিক্ষিত চক্রও এর পিছনে আছে। যদিও দেশের একটি দৈনিক (প্রথম আলো) শিবির কর্তৃক রগ কাটার নিউজে শিবিরের জায়গায় ‘দুর্বৃত্ত’ শব্দটি ব্যবহারে অধিক সচেতন। এক্ষেত্রে দৈনিক প্রথম আলো পাঠককে কিছুটা হলেও ধোঁকা দিচ্ছে বলাই যায়। আবার একই সময় আমরা দেখতে পাই মাগুরা জেলার মোহাম্মদপুর উপজেলার বিনোদপুর ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ সভাপতির বাড়িতে ভাতিজার লাশের খবরটির শিরোনাম।
বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়া এখন গুম-হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার। তিনি এবং তার অনুগত নেতারা এইসব অপরাধের জন্য সরকারকে দায়ী করেছেন। সৈয়দা রিজওয়ানা হাসানের স্বামীর অপহৃত হওয়ার ঘটনায় তারা সরকারকে দায়ী করেছিলেন। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেই ফেলেছিলেন, রিজওয়ানার স্বামীকে যারা অপহরণ করেছিল তারাই ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। কেউ কেউ তো আবারও এমনও বললেন, এই অপহরণ ঘটনার মধ্যে সরকার পতনের আন্দোলনের সূচনা হবে। এই হুঙ্কারের ২৪ ঘণ্টা না পেরুতেই সিদ্দিক ফিরে আসেন। যদিও এই অপহরণ নিয়ে অনেক প্রশ্ন রয়েছে। রহস্য লুকিয়ে আছে।
খালেদা জিয়া সম্প্রতি এক সময়ের ছাত্রলীগ নেতা শফিউল আলম প্রধান’র জাগপা আয়োজিত সভায় দাঁড়িয়ে নারায়ণগঞ্জের হত্যাকাণ্ডের জন্য আওয়ামী লীগের উপর দোষারোপ করে বক্তৃতা করছিলেন, এই সেই শফিউল আলম প্রধান, যিনি বঙ্গবন্ধুর শাসনামলের শেষদিকে ঢাকার সূর্যসেন হল থেকে সাতজন ছাত্র ও যুবনেতাকে তুলে নিয়ে মহসিন হলের প্রাঙ্গণে ব্রাশ ফায়ারে হত্যার ‘নায়ক’ ছিলেন বলে অভিযুক্ত ও দণ্ডিত হয়েছিলেন।
২৮ এপ্রিল জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সমাবেশ থেকে সরকারের উদ্দেশ্যে গেরিলা হামলার হুমকি দিয়েছেন সাদেক হোসেন খোকা। সাদেক হোসেন খোকা এ কথা বললেন, যখন দেশব্যাপী পরিকল্পিত গুম ও খুন হচ্ছে। এ সময়ে একথা বলার অর্থই হলো, যা তারা করতে চাচ্ছেন ওই কাজে যেন বিএনপিকর্মীরা সহায়তা করে সেটা জানিয়ে দেওয়া। অর্থাৎ জামায়াত যে জঙ্গি তৎপরতায় নামছে বিএনপিও তার কর্মীদের সেই কাজে নামার হুকুম দিয়ে দিল খোকার মাধ্যমে। সে কারণে খোকার গেরিলা হামলার হুমকিতে জনমনে প্রশ্ন উঠেছে, আন্দোলনের মাঠে না নেমে, আন্দোলনের কোনো কর্মসূচি না দিয়েই বিএনপির এ-নেতা এমন হুমকি কেন দিলেন? এর পেছনে কি কোনো গভীর ষড়যন্ত্র কাজ করছে? খোকার এ ধরণের বক্তব্য বিএনপির দেউলিয়াত্বেরই বহির্প্রকাশ। তারা সরকার তথা আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কৌশলের কাছে বারবার মার খেয়ে চরম হতাশা থেকেই এ-ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারে। এ-হতাশা থেকেই রাজপথের আন্দোলনের নয়, জামায়াত-শিবিরের মতো চোরাগোপ্তা কর্মসূচির মাধ্যমে সরকার পতনের হুমকি দিয়ে থাকতে পারেন।
খালেদা জিয়া ও বিএনপি নেতারা যখন গুম-হত্যার প্রতিবাদে সোচ্চার হন, কিংবা একে সূত্র ধরে সরকার পতনের আন্দোলনে ডাক দেন, তখন আমার মনে পড়ে যায়, ‘ভূতের মুখে রাম নাম’ প্রবাদটি। তাদের মুখে এসব প্রতিবাদ, প্রতিরোধের ডাক শোভা পায় না। এদের দাঁতেও আগে থেকে বিষ আছে। ভুলে যাওয়ার কথা নয়, বেশিদিন আগের কথা নয়, গুম-অপহরণের ঘটনা শুরু হয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে। ২০০৩ এর ২৪ জুলাই বিএনপি নেতা চট্টগ্রামের ব্যবসায়ী জামাল উদ্দিন অপহৃত হন, এর ২৫ মাস পর ফটিকছড়িতে তার কঙ্কাল উদ্ধারের ঘটনা স্মরণ করতে হয়। বিরোধী দলকে দমন করার জন্য বিএনপি আমলে র্যাব গঠনের মধ্য দিয়ে পুলিশকে বিশেষায়িত করা হয়েছে, বিচারবর্হিভূত এনকাউন্টারের মাধ্যমে। তার মাসুল বিএনপিকে দিতে হচ্ছে। বিএনপির পথে পা বাড়িয়ে আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে সদম্ভে। এ দম্ভ’রও মাসুল দিতে হবে এ-সরকারকে। এ মাসুলটা কতটা হবে সরকার কী একবারও ভাবছে! ভবিষ্যতে এ ফ্রাংকেনস্টাইনের দানবের কবল থেকে আওয়ামী লীগও যে রক্ষা পাবে না সেটা নিশ্চিতভাবে বলা যায়!!
মানুষের শান্ত থাকার কোনো উপায় নেই। মানুষের ভেতরে ক্ষোভ তৈরি হচ্ছে। এ ক্ষোভের বিস্ফোরণ হলে সরকার বাহাদুর তার গদিখানা ঠিক রাখতে পারবেন তো!
কী হবে কপাল ঠুকে ঠুকে কাঁদা ছাড়া। এই যে আমরা লিখি, সাধারণ মানুষের কাছে এগুলো প্রলাপমাত্র। দেশের মানুষ ভালো নেই। একটি ভয়াবহ খারাপ সময়ের ভেতর দিয়ে আছে। শঙ্কার মধ্যে আছে। আমরাও আছি। কে জানে কাল আমি কিংবা আপনি জীবিত থাকবো কী না, গুম হয়ে যাবো কী না! আমাদের উপরও সেই রশি ঝুলিয়ে রেখেছে।
আর কত নীরব থাকবেন, এবার আসুন আমরা সরব হই।
হাবীব ইমন : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কবি, গণমাধ্যমকর্মী
emonn.habib@gmail.com