ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

তাদের ও আমাদের নির্বাচন আর রাজনীতি ।। হাসান মামুন

. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৪ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৪
তাদের ও আমাদের নির্বাচন আর রাজনীতি ।। হাসান মামুন প্রধানমন্ত্রী শেখ ‍হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী পদে বিজয়ী নরেন্দ্র মোদী

ভারতকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় গণতন্ত্র বলা হয় এজন্য নয় যে, তারা সবচেয়ে ভালো গণতান্ত্রিক দেশ। বলা হয় এজন্য যে, সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষ সেখানে গণতন্ত্র চর্চার অংশ হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেয়।

এর ভেতর দিয়ে তারা কী পাচ্ছে, সে বিষয়ে প্রশ্ন তোলা যাবে। তবে তারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে বিপুলভাবে। ৮০ কোটিরও বেশি ভোটার ভারতের। ভাবতে গেলে মাথা ঘুরে যায়।

এতগুলো রাজ্যে ধাপে ধাপে এত মানুষের অংশগ্রহণে নির্বাচন সম্পন্ন হওয়ার পর রাষ্ট্রক্ষমতার সুন্দর হস্তান্তর হচ্ছে এখন। ভারতীয় কংগ্রেস একটিও বাজে কথা না বলে বিজয়ী দলকে অভিনন্দন জানিয়েছে। তারা যে খুব খারাপভাবে হেরেছেন, সেটা স্বীকার করে নিয়ে এর কারণ অনুসন্ধানের প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।

কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী ও সহ-সভাপতি রাহুল গান্ধী দু’জনেই নিজের কাঁধে নিয়েছেন এর দায়। তাদের পদত্যাগের গুজবও রটেছিল। বিশেষ করে সোনিয়া যে ধরনের মানুষ, এতে পদত্যাগ তিনি করতেই পারেন। আদর্শ গণতান্ত্রিক দেশ, বিশেষত ব্রিটেনে এমন সংস্কৃতি রয়েছে। এ নিবন্ধ লেখা পর্যন্ত অবশ্য জানা যায়নি কংগ্রেস নেতৃত্বে তেমন কিছু ঘটেছে কিনা।

আমরা দেখতে পেলাম, দেশ পরিচালনায় বিজেপি জোট সরকারের সাফল্য কামনা করে বক্তব্য রেখেছেন বিদায়ী প্রধানমন্ত্রী ড. মনমোহন সিং। হ্যাঁ, বিজেপি যদিও একাই সরকার গঠনের মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছে, তারপরও তারা বলছেন, এনডিএ (ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক এলায়েন্স) সরকারই গঠিত হবে। নরেন্দ্র মোদির মতো একজন বিতর্কিত ব্যক্তির নেতৃত্বে হলেও ভারতের কেন্দ্রে গঠিত হতে যাচ্ছে একটি শক্তিশালী সরকার।

শুধু শক্তিশালী নয়, এটি হবে অত্যন্ত শক্তিশালী। সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে জোটসঙ্গীদের সঙ্গে বিরোধ হলে, তারা সমর্থন প্রত্যাহার করলে বা বেরিয়ে গেলেও এ সরকারের কিছু যাবে-আসবে না। বিজেপি একাই সরকার চালিয়ে নিয়ে যেতে পারবে। দলটির উত্থান পরবর্তী ভারতে এটা এক নতুন পরিস্থিতি।

দুই মেয়াদ বা দশটি বছর কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট সরকার ভারত শাসন করেছে। এর পর অনুষ্ঠিত নির্বাচনে তাদের সুবিধা করতে পারার কথা নয়। ‘ইনকাম্বেন্সি ফ্যাক্টর’ বা রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকার দায়সহ নির্বাচনে গিয়ে কম ক্ষেত্রেই জনগণের ইতিবাচক সাড়া পাওয়া যায়। আমাদের দেশে নব্বইয়ের পর সুষ্ঠুভাবে অনুষ্ঠিত কোনো নির্বাচনেই ক্ষমতাসীন দল দ্বিতীয়বার জিতে রাষ্ট্রক্ষমতায় ফিরতে পারেনি। বর্তমান সরকার পেরেছে এজন্য যে, গত ৫ জানুয়ারি অর্ধেকেরও বেশি সংসদীয় আসনে কোনো ভোট হয়নি বা হতে পারেনি; বাকি আসনগুলোয় হয়েছে প্রতিদ্বন্দ্বিতাহীন, নামকাওয়াস্তে ভোট।

যাহোক, দশ বছর দেশ পরিচালনা করে কংগ্রেস অনেক বড় অভিযোগে জনতার চোখে দোষী সাব্যস্ত হয়ে পড়েছিল। এর পুরো ফায়দা উঠিয়েছে বিজেপি। কংগ্রেসের বিপরীতে তাদের দৃঢ় নেতৃত্ব ছিল। প্রচারণায় স্পষ্টতই এগিয়ে ছিলেন তারা। বিনিয়োগেও। হিন্দুত্ববাদী বিরাট জনগোষ্ঠী শুধু নয়, তরুণ সমাজকেও আকর্ষণ করতে সক্ষম হয় বিজেপি। বিগ বিজনেস হাউস ও মিডিয়ার সমর্থন এবার বেশি পেয়েছিল দলটি ও তার মিত্ররা। বেশ কিছু রাজ্যে অসম্ভব ভালো করেছেন তারা। সব মিলিয়ে এতটাই ভালো যে, খোদ বিজেপি নেতৃত্ব অবাক হয়ে গেছে।

নানা ফ্যাক্টর একত্র হয়ে পড়লে এমনটি ঘটে যাওয়া বিচিত্র নয়। তবে কেউ বলতে পারবেন না, ভারতের নির্বাচন কমিশন, সামরিক বা বেসামরিক প্রশাসন পক্ষপাত দেখিয়েছে বিজেপির প্রতি। ভোট গ্রহণ করতে গিয়ে কোথাও কোথাও গোলযোগ হয়েছে বটে। প্রশাসন বা নির্বাচন সংশ্লিষ্ট লোকও কম মারা যায়নি এতে। কিন্তু নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়নি। আমাদের এখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনেও প্রশ্ন ওঠে সরকার ও প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে। ওঠে পক্ষপাতের অভিযোগ।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পরে অবশ্য বাতিল হয়ে গেছে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ে। সরকার সে মতো ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনেই জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছে। এটা নিয়েই বেঁধেছিল গোল। বিএনপিহ বিরোধী দলগুলো নির্বাচনে না গিয়ে গেছে আন্দোলনে। সেটি নিয়েছিল মারাত্মক সহিংস রূপ। সভ্য গণতান্ত্রিক দুনিয়াও চিন্তায় পড়ে গিয়েছিল এটা দেখে। এরই মধ্যে হয়ে গেছে একটা অগ্রহণযোগ্য নির্বাচন। তাতে সরকারও গঠিত হয়েছে। এখন তারা বলছেন, মেয়াদ শেষে অর্থাৎ পাঁচ বছর পর নিয়মানুযায়ী পরবর্তী নির্বাচন হবে। এর আগে কিছু নয়।

তাদের রাষ্ট্রক্ষমতায় থেকে যাওয়ার এ প্রক্রিয়ায় প্রতিবেশী বৃহৎ রাষ্ট্র ভারতের কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকার ব্যতিক্রমী সমর্থন দিয়েছিল। তাদের পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশে এসে খোলাখুলি অবস্থান নিয়েছিলেন ‘সংবিধান অনুযায়ী’ নির্বাচন অনুষ্ঠানের পক্ষে। এক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থানও তাদের টলাতে পারেনি। বাংলাদেশের ওই নির্বাচন নিয়ে দেশটির নীতিনির্ধারকদের সঙ্গে এক রকম বিরোধেও জড়িয়ে পড়ে কংগ্রেস সরকার। সেটি কারও দৃষ্টি এড়ায়নি।

সেজন্য তো আর কংগ্রেসকে শাস্তি দেয়নি দেশটির জনগণ। সরকারের বিদেশনীতি কমই বিবেচনায় নিয়েছে তারা। ভোট দেয়ার সময় তারা নাকি বেশি বিচার করেছে সুশাসনের বিষয়টি। বিশেষত দ্বিতীয় মেয়াদের শেষভাগে এসে রাষ্ট্রক্ষমতার উচ্চ পর্যায়ে সংঘটিত দুর্নীতির অভিযোগে জর্জরিত হয়ে পড়ে কংগ্রেস। এর বিরুদ্ধে সরকার বা দলীয় কোনো পর্যায় থেকেই বিশ্বাসযোগ্য পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। মনমোহন সিং ও সোনিয়া গান্ধী দু’জনেরই পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি রয়েছে ভারতে। এটা সত্ত্বেও তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, দুর্নীতিকে প্রশ্রয় ও ধামাচাপা দিয়েছিলেন তারা। নাগরিক সমাজ ও নবগঠিত একটি রাজনৈতিক দলের (আম আদমি পার্টি) তরফ থেকে এ ইস্যুতে জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলা হয়। তারও ফায়দা তুলে নিয়েছে বিজেপি।

ফায়দা তুলে নিতেও জানতে হয়। মোদী নেতৃত্ব সেটা করে দেখিয়েছে। কংগ্রেস ছাড়া সর্বভারতীয় পর্যায়ে একদা একটা অবস্থান ছিল বামফ্রন্টের। পশ্চিমবঙ্গেও তাদের সে অবস্থা আর নেই। সেখানে তৃণমূল কংগ্রেস কঠিন অবস্থান গড়ে নিয়েছে। এবারের নির্বাচনে কংগ্রেসের অবস্থা হয়ে পড়েছে জয়ললিতার দল এআইএডিএমকে ও মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের তৃণমূল কংগ্রেসের কাছাকাছি। অন্যরা জোট গড়ে ফেললে প্রধান বিরোধী দলের মর্যাদাও হারাতে পারে কংগ্রেস।

নির্বাচনে এমন অবস্থা হয়েছে যাদের, তারাও নাকি সরকার থেকে বিদায় নেয়ার সময় বিশেষত বিদেশনীতি বিষয়ে কিছু সুপারিশ রেখে যাবেন নতুন সরকারের জন্য। এটা তাদের রীতি। বিজেপি জোট সরকার তা বিবেচনা করতেও পারে, নাও পারে। এর মধ্যে নাকি রয়েছে বাংলাদেশ ও চীন বিষয়ে মনমোহন সরকারের অবস্থান সম্পর্কিত নীতি।

বাংলাদেশের দিক থেকে নিরাপত্তা প্রশ্নে বন্ধুত্বপূর্ণ মনোভাবের প্রমাণ পেয়েছিল মনমোহন সরকার। চীনের সঙ্গেও কিছুটা সম্পর্কোন্নয়ন হয়েছিল ভারতের। লক্ষণীয়, বাংলাদেশে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এক রকম বিরোধে জড়ালেও চীন তেমন দ্বিমত করেনি ভারতের সঙ্গে। বাংলাদেশ ঘিরে অভিন্ন বাণিজ্যিক স্বার্থ নাকি তাদের ছিল। আঞ্চলিক রাজনীতিতে এটি এক নতুন উপাদান, যুক্তরাষ্ট্র স্বভাবতই যা পছন্দ করবে না।

india_electionভারতের ভাবী প্রধানমন্ত্রী মোদিকে শুভেচ্ছা জানাতে দেরি করেননি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। গুজরাটের দাঙ্গায় ভূমিকা রাখার দায়ে দেশটি মোদিকে ভিসা না দেয়ার যে সিদ্ধান্ত মেনে চলছিল, সেটিও প্রত্যাহার করা হয়েছে চটজলদি। এটাই স্বাভাবিক। ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদি কি যুক্তরাষ্ট্র সফরে যাবেন না? এশিয়া শুধু নয়, বিশ্ব অর্থনীতিতেও ভারত এখন এক উদীয়মান শক্তি। দেশটিকে উপেক্ষা করে বিশেষত এ অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষেও কিছু করা কঠিন। আমাদের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনেও তার প্রমাণ মিলেছে। বিএনপি বিশ্বাস করে, ভারত ওভাবে পাশে এসে না দাঁড়ালে ওই পরিস্থিতিতে শেখ হাসিনা সরকার নির্বাচনটা করে ফেলতে পারতো না।

নির্বাচনই শুধু করে ফেলেননি হাসিনা, পরিস্থিতিও শান্ত করে এনেছিলেন। বিএনপি নেত্রীও সেটি আঁচ করতে পেরে প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন আন্দোলন। এজন্য তাকে কম বিদ্রুপ শুনতে হয়নি। যে ধরনের সহিংস আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন, সেটি হঠকারিতা ছিল বলেও সমালোচনা শুনতে হয়েছে তাকে। অনেকে তখনও মনে করতেন, এখনও মনে করেন, দলীয় সরকারের অধীনে হলেও নির্বাচনে চলে যাওয়া উচিত ছিল খালেদা জিয়ার। শেখ হাসিনা নাকি পারতেন না তার বিজয় ঠেকিয়ে রাখতে।

খালেদা জিয়া ও তার কট্টর সমর্থকরা সেটি মনে করেন না। এদের বদ্ধমূল ধারণা, শেখ হাসিনা তাদের জিততে দিতেন না। সেভাবে সব কিছু সাজিয়ে রেখেই নির্বাচনে আহ্বান করছিলেন তিনি। বাংলাদেশ তো আর ভারত নয়। এখানে নির্বাচন কমিশন সরকারের আজ্ঞাবহ। জনপ্রশাসন দলীয়করণের শিকার। এ দু’পক্ষ একটি শক্তিশালী সরকারের সঙ্গে থাকলে তাকে আর ঠেকায় কে? এমনটি মনে করেন বলেই খালেদা জিয়া এখনো বলছেন তত্ত্বাবধায়ক ধরনের সরকার ফিরিয়ে এনে নির্বাচন দেয়ার কথা। মেয়াদ শেষের আগে, অচিরেই নাকি হাসিনা সরকারকে তারা বাধ্য করবেন এমন একটি নির্বাচন দিতে।

ভারতে ক্ষমতার পটপরিবর্তনে বিএনপির মধ্যে স্পষ্টতই উৎসাহ বেড়ে উঠতে দেখা গেল এ প্রশ্নে। বেগম জিয়া দ্রুততার সঙ্গে অভিনন্দন জানালেন মোদিকে। শেখ হাসিনার আগেই যেন ওটা জানানো যায়, সে বিষয়ে সিরিয়াস ছিলেন তিনি। কিন্তু দ্রুত অভিনন্দন জানালেই কি সম্পর্কোন্নয়ন হয়ে যাবে বিএনপির সঙ্গে বিজেপির? আর শেখ হাসিনা সরকারের সঙ্গে সম্পর্কোন্নয়নে সেটি হয়ে উঠতে বাধা? একে বরং বলতে হয় আমাদের রাজনীতির উপরভাসিতার একটা প্রমাণ।

ব্যক্তি ও পার্টি পর্যায়ে কংগ্রেস ও তার সরকারের সঙ্গে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যে নিবিড় সম্পর্ক ছিল, সেটা এখন নিশ্চয় ‘মিস’ করবেন তারা। কিন্তু জাতীয় স্বার্থের ভিত্তিতে এক ধরনের সম্পর্ক তো গড়ে উঠবেই দু’দেশের সরকারের মধ্যে। শেখ হাসিনা তার অভিনন্দন বাণীতে আশা প্রকাশ করেছেন, বাংলাদেশ দিয়েই যেন শুরু হয় প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নরেন্দ্র মোদির বিদেশ সফর। সেটি ঘটলে কিন্তু অবাক হওয়া যাবে না।

মোদি কী করবেন আর কত দূর যাবেন, তা শুধু তিনি নির্ধারণ করবেন না। এক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে তার এমন উত্থানে যেসব বিজনেস হাউস আর মিডিয়া ভূমিকা রেখেছে, তারাও। ভূমিকা রাখবে (মূলত কংগ্রেসের হাতে গড়ে ওঠা) ভারতীয় আমলাতন্ত্র। বাবরি মসজিদ ভাঙা আর গুজরাটের দাঙ্গায় বিজেপির সাম্প্রদায়িক ইমেজটাই বেশি করে সামনে এসেছে, বিশেষত আমাদের। দলটিতে যে এদেশের যে কোনো ‘গণতান্ত্রিক’ দলের চেয়ে বেশি গণতন্ত্র চর্চা রয়েছে, সেটি নজরে আসছে না। মোদিকে কিন্তু নিজ দলের সিনিয়র নেতাদের মত নিয়েই দেশটা চালাতে হবে। তাদের সবাই কট্টরপন্থী নন।


নির্বাচনে জিততে যেসব সাম্প্রদায়িক ও বিদ্বিষ্ট কথাবার্তা বেশি বলতে হয়েছে তাকে, সেগুলো কম বলে বা একেবারে না বলে মোদিকে এখন মন দিতে হবে বিপুল ম্যান্ডেট প্রদানকারী জনতার প্রত্যাশা পূরণে। বাংলাদেশে কী হলো না হলো, সেদিকে মনোযোগ দেয়ার ফুরসৎ তিনি কমই পাবেন আপাতত। ভারতে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি শ্লথ হয়ে পড়েছে, এটা ভালো করে জানে বিজেপি। কর্মসংস্থান সৃষ্টির যে অঙ্গীকার তারা বারবার করেছেন নির্বাচনে, অর্থনীতিকে গতিশীল করা না গেলে সেটি কীভাবে নিশ্চিত হবে? গুজরাটে প্রবৃদ্ধি বাড়াতে পেরেছেন বলেই গোটা ভারতে মোদি সেটি করতে পারবেন, এটা তো একটা ছেঁদো কথা। তার ‘গুজরাট মডেলে’ও ছিদ্র রয়েছে।

ছেঁদো কথায় লোকে মজে বটে; কিন্তু যখন দেখে কোনো কাজ হচ্ছে না, তখন আবার চটে যায়। বিপুল বিজয় বুমেরাং হতেও দেখা যায় বিশেষত আমাদের মতো দেশগুলোয়। ভারত তো আমাদের মতোই। জনগণ ও নেতৃত্ব বিচারে বাংলাদেশের চেয়ে খুব এগিয়ে নেই ভারত। বিশাল দেশ, বিরাট এর অর্থনীতি। বাজার অর্থনীতি চালুর পর সেটি গতিও পেয়েছে। এটা তো ঘটেছে বাংলাদেশেও। সামাজিক কিছু সূচকে আমরা বরং এগিয়ে রয়েছি।

ভারত স্পষ্টভাবে এগিয়ে আছে গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিক চর্চায়। কী সুন্দর নির্বাচন করল তারা! কী চমৎকারভাবে ক্ষমতার হস্তান্তর হচ্ছে! দেশের কোথাও নির্বাচনে পরাজিতদের ‘সাইজ’ করা হচ্ছে না। আমলাতন্ত্রে অস্থিরতা নেই কোনো। রাষ্ট্রক্ষমতায় যারাই আসুক, দেশটির সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো রেখে যাবে তার ভূমিকা। এ প্রত্যাশাও থাকছে, মোদি সরকার রাষ্ট্রকে হিন্দুত্ববাদী করে তুলতে চাইলেও তাতে খুব সফল হবে না এসব প্রতিষ্ঠানের উপস্থিতির কারণেই। নতুন সরকারের বাংলাদেশ বিষয়ক নীতিও এর মধ্য দিয়েই আকার পাবে। আমাদের কারও অতি উৎসাহ আর কারও মন খারাপে সেটি প্রভাবিত হবে খুব কমই।

Hasan_mamun

 

 

 লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট  

 

 

 

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৫ ঘণ্টা, মে ১৯, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।