ঢাকা: বাংলাদেশের টেলিভিশন দর্শকের ৭০ শতাংশই বিদেশি (বিশেষ করে ভারতীয়) বিভিন্ন চ্যানেলে আসক্ত। দেশীয় টেলিভিশন চ্যানেলের দর্শক মাত্র ৩০ শতাংশ।
জরিপে পাওয়া তথ্য অনুসারে, দেশের শতকরা ৫৫ শতাংশ ক্যাবল অপারেটরে বাংলাদেশের সব চ্যানেল দেখানো হয়। তবে এতো চ্যানেলের পরেও মোট দর্শকের এক তৃতীয়াংশেরও কম এসব চ্যানেলে আকৃষ্ট হন। জরিপে দেখা গেছে, শতকরা ৭৫ জন দর্শক বাংলাদেশি সব চ্যানেলের নামও বলতে পারেন না।
ক্যাবল টিভি দর্শক ফোরামের হিসাবে সারাদেশে প্রায় ৬ কোটি স্যাটেলাইট চ্যানেলের দর্শক রয়েছেন।
টিআরপির ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপনদাতারা চ্যানেলকে বিজ্ঞাপন দেন উল্লেখ করে জরিপ রিপোর্টে বলা হয়, টিআরপি শহরের ২-৩টি এলাকায় ৫শ মানুষের ওপর ডিজিটাল পদ্ধতিতে করা হয়। আর বিজ্ঞাপনদাতারা এ ফলের ওপর ভিত্তি করে বিজ্ঞাপন দেন। তারা জানেন না তাদের বিজ্ঞাপন ক’জন দেখেন।
টিআরপির রির্পোট নির্ভরযোগ্য কিনা তা নিয়ে দর্শক মনে প্রশ্ন রয়েছে। টিআরপির মাধ্যমে অনুষ্ঠানের মানদন্ড দেখে বিজ্ঞাপন না দিতে দর্শকরা অনুরোধ করেছেন, জরিপ রিপোর্টে এ কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
দেশীয় চ্যানেল দর্শকদের বিনোদন দিতে পারে কিনা এমন প্রশ্নে জরিপে দেখা যায়, দর্শকের মতে দেশীয় চ্যানেল পুরোপুরি বিনোদন দিতে পারে না।
মাঠ পর্যায়ে চ্যানেল আই, এটিএন বাংলা, এটিএন নিউজ, এনটিভি, ইন্ডিপেন্ডেন্ট, একাত্তর, সময় টিভি নিজেদের তুলে ধরতে পারলেও অন্যগুলো তাদের তুলে ধরতে পারেনি, এমন মত উঠে এসেছে এই জরিপের ফলে।
অন্যদিকে ভারতের কিছু অনুষ্ঠানে তাদের আসক্তি দেখা গেছে।
ভারতের জি বাংলায় প্রচারিত মিরাক্কেল ও ড্যান্স বাংলা সব শ্রেণির দর্শকের কাছে জনপ্রিয়তা পেয়েছে। কিন্তু দেশীয় চ্যানেলে সেই মানের কোন অনুষ্ঠান তৈরি হয় না, মত জরিপ রিপোর্টে।
জরিপে বলা হয়, দেশীয় চ্যানেলের ‘আওয়ার ডেমোক্রেসি’ দর্শকদের হৃদয় ছুঁয়েছে। ইভেন্ট বিভাগে সবার শীর্ষে চ্যানেল আই’র ক্ষুদে গানরাজ, সেরা কন্ঠ, ক্লোজআপ ওয়ান।
অপরাধ ও অনুসন্ধানমূলক অনুষ্ঠানের মধ্যে তালাশ, অপরাধ সূত্র, ক্রাইম ওয়াচ, বিবেকের কাছে প্রশ্ন দর্শক জনপ্রিয়তা পেয়েছে। আজকের বাংলাদেশ সম্পাদকীয় ও একাত্তর জার্নালের উল্লেখযোগ্য সংখ্যক দর্শক রয়েছে।
নতুন চ্যানেলগুলো অনুষ্ঠান বা ইভেন্ট দিয়ে তেমন একটা জনপ্রিয়তা না পেলেও সঙ্গীতভিত্তিক চ্যানেল সিক্সটিন’র চাহিদা রয়েছে। তবে বেশিরভাগ এলাকায় তা দেখা যায় না।
দর্শক টিভি চ্যানেলের কাছে কি চায়, কোন ধরনের বিজ্ঞাপন পছন্দ করে, কোন বিজ্ঞাপন সচেতনতা বৃদ্ধি ও প্রভাব পড়ে এসবের ওপর ঢাকা ও ঢাকার বাইরে জরিপ করা হয়।
২০১২ অক্টোবর থেকে ২০১৩ মে পর্যন্ত সারাদেশের ২০টি এলাকার ৪০ হাজার ৮৬৯ পরিবারের ৪ লক্ষ ৭৫ হাজার ৬৩০ জন দর্শক জরিপে অংশ নেয়। যাদের বয়স ১৬ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে।
জরিপে রবি’র বাঁধ ভাঙ্গা, বাঁশ না হাঁস, ডাক্তার আপা, দেশপ্রেমিক, স্বপ্নধারা, কোকাকোলা, সার্ফ এক্সেল, লাইফবয় (সাবিক), বসুন্ধরা (মাহফুজ ও শিমুলের সংলাপ) বিজ্ঞাপনগুলো দর্শকদের প্রশংসা কুঁড়িয়েছে।
প্রাণ লিচু ক্যান্ডি (শিশুর চিৎকার), বসুধা আইসল্যান্ড (সি-বিচে একজনের মাথার চুল বাতাসে উড়ে যায়), রাঙা মেহেদী (মেয়ের নাচ), ফেয়ারনেস ক্রিম (তামিম ইকবালের চোখ টিপি), ওয়ালটন থ্রিডি টিভি (নারী মডেলের চোখ টিপি), আমলকি খাব (বাংলালিংক) বিজ্ঞাপনগুলো দর্শকদের মাঝে দৃষ্টিকটু ও নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছে।
২০১২ সালের দর্শকরা সেরা বিজ্ঞাপন নির্বাচন করেছেন, দৈনিক সমকাল পত্রিকার (ভাই গোলটা দিবেন)। রবি’র দেশপ্রেমিক বিজ্ঞাপনটি দর্শকদের মনে উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। জরিপে এশিয়ান টিভি ও এসএ টিভি ছাড়া অন্য টিভি দর্শকরা অংশগ্রহণ করেন।
জরিপের বিষয় উল্লেখ করে সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন মুন্না বাংলানিউজকে বলেন, টিআরপি জরিপ নিয়ে দর্শকরা দ্বিধাবিভক্ত। এর জরিপ বিশ্লেষণ দেখে বিজ্ঞাপন দেওয়া উচিত নয়। কারণ দর্শক যেকোন চ্যানেলের বড় খোরাক।
অনুষ্ঠান সম্পর্কে তিনি বলেন, একটি চ্যানেল দর্শক জনপ্রিয়তা পেতে হলে মানসম্পন্ন অনুষ্ঠান, সংবাদ প্রচার করতে হবে।
জরিপে সব বিষয় তুলে আনা সম্ভব হয়নি জানিয়ে আগামীতে আরো বড় পরিসরে জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করার আশ্বাস দেন শাহাদাৎ হোসেন মুন্না।
বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, ৩০ মে, ২০১৪