৩১ মে, বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য হচ্ছে: "Raise Tobacco Taxes"; যার বাংলা ভাবানুবাদ করা হয়েছে: “তামাকের উপর কর বাড়াও”।
কার্যকর তামাক নিয়ন্ত্রণে তামাকের উপর করবৃদ্ধি ও মূল্যবৃদ্ধিকে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ হিসাবে বিবেচনা করা হয়। অর্থনীতির সাধারণ নিয়ম হচ্ছে, কোনো পণ্যের দাম বাড়লে তার ব্যবহার কমে। বিশেষ করে; তামাকের মত বহুমাত্রিক ক্ষতিকর পণ্যের ক্ষেত্রে অর্থনীতির এ নিয়ম প্রমাণিত সত্য। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার মতে, তামাকের উপর উচ্চ হারে কর আরোপ এবং তামাকের মূল্য বৃদ্ধি করলে ব্যবহার কমে আসবে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার উদ্যোগে প্রণীত আন্তর্জাতিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ‘ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)’ এর আর্টিকেল ৬-এ তামাকের উপর কর বাড়ানোর সুপারিশ করা হয়েছে। ২০০৩ সালে ৫৬তম বিশ্ব স্বাস্থ্য সম্মেলনে চূড়ান্ত হওয়া এ চুক্তিতে স্বাক্ষরকারী প্রথম দেশ বাংলাদেশ। এছাড়া ২০০৪ সালে বাংলাদেশ এ চুক্তি অনুস্বাক্ষর (র্যাটিফাই) করেছে।
এফসিটিসিতে বলা হয়েছে; “সদস্য দেশগুলো তামাকের ব্যবহার কমানোর মাধ্যম হিসাবে কর ও মূল্যনীতি বাস্তবায়ন করবে। ” গবেষণায় দেখা গেছে, তামাকের উপর উচ্চ হারে কর আরোপ দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে তামাকের ব্যবহার কমাতে কার্যকর; বিশেষত কিশোর-তরুণদের ধূমপানসহ তামাকের নেশায় নিরুৎসাহিত করে। তামাকের উপর কর আরোপের ফলে ১০ভাগ যদি মূল্য বাড়ে, তবে উন্নত দেশে তামাকের ব্যবহার ৪ভাগ কমে; কিন্তু উন্নয়নশীল দেশে দ্বিগুণ অর্থাৎ ৮ভাগ কমে আসে। গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে; তামাকের উপর কর বৃদ্ধি করাকে তামাক নিয়ন্ত্রণে কম ব্যয়ে (প্রায় বিনা খরচে) কার্যকর পদক্ষেপ হিসাবে বিবেচনা করা হয়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য প্রতিবেদন ২০১০-এ বলা হয়েছে, তামাকের উপর ৫০% সম্পূরক শুল্ক আরোপ করা হলে ২২টি উন্নয়নশীল দেশে ১৪০০ মিলিয়ন ইউএস ডলার (১০,৮৫০ কোটি টাকার সমপরিমাণ অর্থ) অতিরিক্ত অর্থ পাওয়া যাবে। এ অর্থ যদি জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যয় করা হয়; তবে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে সরকারী ব্যয় ৫০% বাড়ানো সম্ভব হবে। ২০০৮ সালে তামাক নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণে বিশ্বের বিভিন্ন দেশকে উদ্বুদ্ধ করতে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থা এমপাওয়ার প্যাকেজ প্রণয়ন করে। এতে সর্বশেষ ‘আর’ (জ) মূলত কর বৃদ্ধির বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
একারণে এ বছর বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস-এর প্রতিপাদ্য বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, বাংলাদেশে যত কম মূল্যে তামাকজাত দ্রব্য পাওয়া যায় পৃথিবীর কোনো দেশেই এত কম মূল্যে তামাকজাত দ্রব্য পাওয়া যায় না। বিগত কয়েক বছরে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের দাম কয়েকগুণ বাড়লেও তামাকজাত দ্রব্যের দাম সে হারে বাড়েনি বরং কমেছে। সস্তায় তামাকজাত দ্রব্য (সিগারেট, বিড়ি, গুল, জর্দ্দা, সাদাপাতা) প্রাপ্তির কারণে মানুষের মধ্যে তামাকের ব্যবহার বেড়ে চলেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার ২০০৪ সালের গবেষণায় বলা হয়, ৩৬.৮ ভাগ মানুষ তামাক সেবন করে। অথচ গ্লোবাল এডাল্ট টোব্যাকো সার্ভে (গ্যাটস) ২০০৯ এর তথ্যমতে, ৪৩.৩ ভাগ মানুষ তামাক ব্যবহার করছে। এ গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হচ্ছে, দরিদ্র ও নিরক্ষর/স্বল্প শিক্ষিতদের মধ্যে তামাক সেবনের হার বেশি। মূলত, স্বল্প মূল্যে বিড়ি-সিগারেট ও অন্যান্য চর্বণযোগ্য (সাদা পাতা, জর্দা, গুল ইত্যাদি) তামাক প্রাপ্তিই তামাক ব্যবহারের হার বৃদ্ধির প্রধান কারণ।
২০০৪ সালে বিশ্ব স্বাস্থ্যসংস্থার গবেষণায় বলা হয়, তামাক ব্যবহারের কারণে বাংলাদেশে ৩০ বছরের বেশি বয়স্ক জনগোষ্ঠীর মধ্যে প্রতিবছর ১২ লক্ষ মানুষ তামাক ব্যবহারজনিত প্রধান ৮টি রোগে (ফুসফুস ক্যান্সার ও মুখ গহ্বরের ক্যান্সার, হদরোগ, উচ্চরক্তচাপ, স্ট্রোক, ডায়বেটিস, যক্ষা, হাঁপানি) আক্রান্ত হয়। এর মধ্যে ৫৭,০০০ জন মৃত্যুবরণ এবং ৩,৮২,০০০ লোক শারীরিক কর্মক্ষমতা হারায় বা পঙ্গুত্ব বরণ করছে। উক্ত গবেষণার আলোকে অধ্যাপক আবুল বারাকাতের নেতৃত্বে বেশ কয়েকজন অর্থনীতিবিদের সমন্বয়ে ২০০৬-০৭ সালে হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট রিসার্চ সেন্টার (এইচডিআরসি) তামাকের অর্থনীতি বিষয়ক এক গবেষণা পরিচালনা করেন।
এ গবেষণায় বলা হয, তামাকের কারণে অসুস্থ্যদের মাত্র ২৫% রোগীর সরকারি স্বাস্থসেবা, অকালমৃত্যু এবং পঙ্গুত্বের কারণে বছরে দেশের অর্থনীতিতে ১১০০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছে। এখানে বলে রাখা ভাল, মানুষের মৃত্যু ও শারীরিকভাবে কর্মক্ষমতা হারানোর যে পরিসংখ্যান এখানে দেয়া হয়েছে তা ২০০৪ সালের, যখন বাংলাদেশে তামাক সেবনের হার ছিল ৩৬.৮%, বর্তমানে তা ৪৩.৩%। সুতরাং দেখা যায় এ সময়কালে তামাক সেবনের হার যেমন বেড়েছে তেমনি জনসংখ্যাও বেড়েছে। তাই তামাক সেবনজনিত কারণে মৃত্যুসংখ্যাও অনেক বেড়েছে, তামাক সেবনজনিত আর্থিক ক্ষতির পরিমাণও বেড়েছে।
বাংলাদেশে প্রধানত দু’রকমভাবে তামাক ব্যবহার হয়। ধূমপাননির্ভর তামাকজাত দ্রব্যের মধ্যে বিড়ি-সিগারেট প্রধান। তবে স্বল্প মাত্রায় সিগার, চুরুট ও হুক্কা’র প্রচলন লক্ষ্য করা যায়। অন্যদিকে চর্বনযোগ্য তামাকের মধ্যে পানের সঙ্গে সাদাপাতা, জর্দা ও আলাদাভাবে গুল (মাড়ির মধ্যে ব্যবহৃত হয়) ব্যবহার অন্যতম। এছাড়া স্বল্পমাত্রায় খৈনী ও নস্যি’র ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। এদের মধ্যে অনেকে আছেন, যারা ধূমপানের পাশাপাশি চর্বণযোগ্য তামাকও ব্যবহার করেন।
ধূমপাননির্ভর হিসাবে যারা বিড়ি সেবন করে, এরা দরিদ্র। এদের পুষ্টি ঘাটতির পাশাপাশি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান এর মত মৌলিক প্রয়োজনগুলো অনেকক্ষেত্রেই উপেক্ষিত। দেশের ৪০ভাগ মানুষ দারিদ্র্য সীমার নীচে বসবাস করে। বলা যেতে পারে, মূলত এরই বিড়ি সেবন করে। অথচ বিড়ি ধূমপায়ীরাই প্রতিদিন প্রায় ৮ কোটি টাকা খরচ করছে। দেশে বিড়ি ধূমাপায়ীরা যে অর্থ প্রতিদিন বিড়ির জন্য ব্যয় করছে সে অর্থ দিয়ে ঐসব পরিবারের পুষ্টি ঘাটতির বড় অংশ দূর করা সম্ভব। দরিদ্র মানুষের মধ্যে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট পরিচালিত ‘হাংরি ফর টোব্যাকো’ নামক এক গবেষণায় বলা হয়, বাংলাদেশের মানুষ যদি তামাকের জন্য ব্যয় করা অর্থের ৬৯ শতাংশ খাদ্যের জন্য ব্যয় করে তবে দেশে অপুষ্টিজনিত মৃত্যু অর্ধেক কমিয়ে আনা সম্ভব। আমরা জানি, অপুষ্টিজনিত রোগে যারা মারা যায় এদের অধিকাংশই দরিদ্র পরিবারের শিশু।
‘তামাক ও দরিদ্রতা’ শীর্ষক অপর এক গবেষণায় জানা যায়, প্রতিবছরের বিড়ির পিছনে যে পরিমাণ টাকা (২৯১২ কোটি টাকা) খরচ হয় তা দিয়ে বিড়ি কারখানায় কর্মরত শ্রমিকের চাইতে অধিকসংখ্যক মানুষের স্বাস্থ্যকর পরিবেশে কর্মসংস্থান হতে পারে। বিড়ির বার্ষিক খরচ দিয়ে ৪৮৫ কোটি ডিম অথবা ২৯ কোটি ১ কেজি ওজনের মুরগী, অথবা ২৯ লক্ষ গরু অথবা ১৪ লক্ষ টন চাল অথবা ২৩ লক্ষ রিকশা ক্রয় করা সম্ভব।
শুধু বিড়ি সেবনই নয়; বিড়ি কারখানাগুলোও জনস্বাস্থ্য, পরিবেশ, অর্থনীতির উপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ২০০৮ সালের সরকারি হিসাবে বলা হয়, দেশে বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা ২,৬৬,৮১৮ জন। অন্যদিকে বেসরকারি সংগঠন প্রজ্ঞা’র সাম্প্রতিক হিসাব মতে, সারাদেশে বিড়ি শ্রমিকের সংখ্যা ৬৬০০০ জন। দূষিত পরিবেশে বিড়ি কারখানায় কাজ করা শ্রমিকরা মারাত্মক রকম কম মজুরিতে কাজ করায় একদিকে কখনও দারিদ্র থেকে মুক্তি পায় না। অন্যদিকে অকালে অসুস্থ্য ও মৃত্যুবরণ করে। বিড়ি কোম্পানিগুলো শ্রমিকের কর্মসংস্থান এর বিষয় তুলে কর বৃদ্ধির বিরোধীতা করে থাকে। অথচ বিশ্ব ব্যাংকের গবেষণায় দেখা যায়, বাংলাদেশে তামাক নিয়ন্ত্রণ হলে ১৮.৭% চাকুরি বৃদ্ধি পাবে। তামাক কোম্পানিগুলো মিথ্যাচার করছে। তারা বলছে বিড়ি শিল্পে অনেক শ্রমিক কাজ করে। অথচ বিড়ি শিল্পে যে মারাত্মক শ্রম শোষণ হয় তা তারা বলে না।
মানুষের জীবন অপেক্ষা কোনো কিছুই গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে না। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ-১১ এবং অনুচ্ছেদ ১৮ (১) এ মানুষের মৌলিক মানবাধিকার এবং জনস্বাস্থ্যের জন্য হানিকর মদ ও ভেষজের ব্যবহার নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়েছে। আন্তজার্তিক তামাক নিয়ন্ত্রণ চুক্তি ফ্রেমওয়ার্ক কনভেনশন অন টোব্যাকো কন্ট্রোল (এফসিটিসি)-র আর্টিকেল-৬ নং ধারায় তামাক ব্যবহার হ্রাসে কর বৃদ্ধির বিষয় উল্লেখ করা হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা তামাক নিয়ন্ত্রণের যে কয়টি পদ্ধতির কথা বলেছেন, তার মধ্যে করবৃদ্ধি অন্যতম।
তামাক হচ্ছে সর্বগ্রাসী একটি পণ্য। তামাক চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সেবন সকল পর্যায়েই জনস্বাস্থ, পরিবেশ, অর্থনীতির উপর মারাত্মক নেতিবাচক প্রভাব ফেলে। এজন্য উন্নত দেশগুলো তামাকের উপর উচ্চ হারে কর আরোপ, সিগারেটের প্যাকেটে ছবিসহ সতর্কতাবাণীসহ কঠোর আইন প্রণয়ন করায় তামাক সেবনের হার কমে যাচ্ছে। পাশাপাশি খাদ্য নিরাপত্তা ও পরিবেশ রক্ষার স্বার্থেও উন্নত দেশগুলো কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করায় তামাক চাষ কমে যাচ্ছে। যে কারণে বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল দেশগুলোকে তামাক কোম্পানিগুলোর আগ্রাসন বেড়ে গেছে।
অধ্যাপক আবুল বারাকাত এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশে সিগারেটের উপর ১০% গড় মূল্য বৃদ্ধি করলে সিগারেট সেবনের হার ৫% কমবে এবং বিড়ির মূল্য ১০% বৃদ্ধি পেলে বিড়ি সেবনের হার ৭% কমবে। আমরা মনে করি, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সুপারিশ অনুযায়ী সিগারেটের মূল্যস্তর উঠিয়ে সব সিগারেটের উপর ৭০% এক্সাইজ ট্যাক্স নির্ধারণ করতে হবে। এতে সিগারেটের মূল্য গড়ে ১৩০% বৃদ্ধি পাবে এবং সিগারেট সেবনের হার ৬৬% কমবে। এতে প্রায় ৭০ লক্ষ ধূমপায়ী ধূমপান ত্যাগ করবে এবং ৭১ লক্ষ তরুণ ধূমপান শুরু করা থেকে বিরত থাকবে। ৬০ লক্ষ (বর্তমান ধূমপায়ীসহ) মানুষের তামাকজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে অকালমৃত্যু রোধ রক্ষা করা সম্ভব হবে। তবু সরকারের রাজস্ব ১৫০০ কোটি টাকা বাড়বে।
তামাকজাত দ্রব্যের উপর উচ্চহারে কর বৃদ্ধি করে জনস্বাস্থ্য উন্নয়নকে গুরুত্ব দিতে হবে। কর বৃদ্ধির ক্ষেত্রে আরেকটি বিষয় লক্ষ্য রাখতে হবে, এমনভাবে কর বাড়াতে হবে যেন প্রকৃত মূল্য বৃদ্ধি পায়। কারণ প্রকৃত মূল্য না বাড়লে কর বাড়ানোর সুফল সঠিকভাবে প্রতিফলিত হবে না।
সুনির্দিষ্ট সুপারিশ:
- সিগারেটের বিভ্রান্তিকর কর স্তর উঠিয়ে দিতে হবে। সব সিগারেটের উপর কমপক্ষে ৭০% কর আরোপ করতে হবে।
- বিড়ি ও চর্বণযোগ্য তামাকের উপর সিগারেটের মতই ৭০% কর আরোপ করতে হবে।
- প্রতিবছর মুদ্রাস্ফীতি সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে সব তামাকের উপর উচ্চ হারে কর বাড়াতে হবে।
- অতিরিক্ত করের একটা অংশ বিড়ি কারখানার শ্রমিকদের বিকল্প কর্মসংস্থান, জনস্বাস্থ্য উন্নয়নে ব্যয়ের ব্যবস্থা করতে হবে।
লেখক পরিচিতি: আমিনুল ইসলাম সুজন, নির্বাহী সম্পাদক, সমস্বর, বাংলাদেশ তামাকবিরোধী জোট
বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ ঘণ্টা, মে ৩১, ২০১৪