ঢাকা: বৃহস্পতিবার ১২ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া ফুটবল বিশ্বকাপ মহাযজ্ঞে থাকছে বাংলাদেশও। বিশ্বকাপে এবার কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমী খুঁজে পাবে লাল সবুজের দেশ বাংলাদেশের নামও।
হাজারো তরুণের চোখে ফুটবল নিয়ে কতো না স্বপ্ন! স্বপ্নের ফুটবল নিয়ে এগিয়ে যাবার পথটি যদিও এখনও দীর্ঘ, অমসৃণ ও বন্ধুর। তবে বিশ্বের সেরা ফুটবল দল, নান্দনিকতার জাদুকর ব্রাজিল তাদের জার্সিতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লিখে কোটি কোটি বাঙালিকে যে অভূতপূর্ব গর্ব ও সম্মান দিয়েছে তার তুলনা হয় না। পাশাপাশি ফুটবলের অধরা স্বপ্ন ছুঁতে আমাদের আগামী, অনাগত দিনের পথচলায় এই সম্মান বড় এক পাথেয় হয়ে থাকবে।
এখানে কেবল গর্ব ও সম্মানবোধই নয়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের মান ও ডিজাইনের নান্দনিক উৎকর্ষের প্রতি ব্রাজিলীয় কর্তৃপক্ষের আস্থার স্বীকৃতিও । এমন অভিমত বিশিষ্টজনদের।
বাংলাদেশের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি ও তাজরিন গার্মেন্ট দুর্ঘটনায় ১১শ’র বেশি পোশাকশ্রমিকের মৃত্যু হয়। এ দুটি মর্মান্তিক ঘটনার কারণেই ব্রাজিলীয় ফুটবল কনফেডারেশন (সিবিএফ) নিহতদের প্রতি গভীর সমবেদনা ও সম্মান জানানোর সিদ্ধান্ত নেয়। এরই অংশ হিসেবে তারা তাদের বিশ্বকাপ দলের জার্সিতে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লিখার ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তটি নেয়। বাংলাদেশের জন্য এমন স্বীকৃতি অভূতপূর্ব । ফুটবল বিশ্বকাপযজ্ঞে বাংলাদেশের টুপিতে পালক গোঁজার ঘটনা এটাই প্রথম।
এ ব্যাপারে বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের এক সময়কার কৃতী ফুটবলার ও বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সিনিয়র সহ-সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী বাংলানিউজকে বলেন, ফিফার সদস্য ২০৮টি দেশে ১২ জুন থেকে ১৪ জুলাই চলবে ফুটবল উৎসব। আর সারাবিশ্বে এই উৎসবের অন্যতম অনুষঙ্গ বাংলাদেশের তৈরি জার্সি।
তিনি বলেন, বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ৩০টি দেশেরই কম বেশি প্রায় সবারই জার্সি রপ্তানি করছে বাংলাদেশ। এ জার্সিগুলো পড়বে সেইসব দেশের হাজারো দর্শক। যা সেই সব দেশের লোকাল মার্কেটে বিক্রি হবে।
তিনি বলেন, তবে এর মধ্যে ব্রাজিলই একমাত্র দল যারা 'মেড ইন বাংলাদেশ' লিখেছে তাদের খোদ বিশ্বকাপ দলের জার্সিতে। আর লাখো লাখো ব্রাজিলীয় দর্শকের কথা না হয় বাদই দিলাম। তারাও গায়ে জড়াবেন বাংলাদেশের তৈরি জার্সি। এই বিশ্বকাপের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্প পা দিল সম্মানের এক নতুন বেদীতে, ইতিহাসের এক নতুন অধ্যায়ে।
তিনি বলেন, ২০১৪ বিশ্বকাপে প্রতিদ্বন্দ্বী ৩০টি দেশে এবার আমরা প্রায় চার হাজার কোটি টাকার ব্যবসা করেছি। যা আমাদের অর্থনীতির জন্য অনেক বড় সবুজ সংকেত।
তিনি বলেন, এখানে সবচেয়ে বড় যে বিষয়টিকে আমি উল্লেখ করার মতো বলে অমি মনে করি তা হলো বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া প্রতিটি দলের কোটি সমর্থক আমাদের বাংলাদেশের তৈরি জার্সি গায়ে জড়াবে। এদের মধ্যে ব্রাজিল যেহেতু আমাদের দেশের তৈরি জার্সির মান, উন্নত ব্র্যান্ডের স্বীকৃতি দেবার পাশাপশি আমাদের নিহত শ্রমিকদের সম্মান দিয়ে ‘মেড ইন বাংলাদেশ’ লিখেছে; সেজন্য ব্রাজিলের প্রতি আমাদের সবার বিশেষ নজর থাকবে।
বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের (বাফুফে) সহ-সভাপতি বাদল রায় বাংলানিউজকে বলেন, অন্য কোনো দেশ এমন উদ্যোগ নেয়নি। ব্রাজিল নিয়েছে। এজন্য তাদের প্রতি আমাদের থাকবে বাড়তি ভালোবাসা ও সম্মান।
তিনি বলেন, বছরব্যাপী আমরা সারা ফুটবল বিশ্বে জার্সিসহ নানা ক্রীড়া সরঞ্জাম সরবরাহ কররে থাকি। বিশ্বকাপ উপলক্ষে তা অনেক বেশি ও বিপুল সংখ্যায় সরবরাহের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
এদিকে সাবেক জাতীয় ফুটবলার ও বর্তমানে আবাহনী ফুটবল দলের ম্যানেজার সত্যজিৎ দাশ রুপু এ নিয়ে বাংলানিউজকে বলেন, এটা আমাদের অর্জন। এই অর্জনের স্বীকৃতি দিয়ে ব্রাজিল যে সম্মান অঅমাদের দিলো তা সত্যিই বিরল। এর কোনো তুলনা হয় না। আমি তো মনে করি, এ জন্য এদেশে যত ব্রাজিল সমর্থক রয়েছেন ব্রাজিলের প্রতি তাদের ভালোবাসা ও শুভকামনা আরো বাড়বে।
তিনি বলেন, এই অর্জন আমাদের জন্য বড় ধরনের ব্যবসায়িক অর্জনও বটে। আমরা যে এখন বিশ্বমানের জার্সি প্রস্তুতকারক, এর প্রমাণ পাঁচবারের বিশ্বকাপজয়ী ব্রাজিল।
এবার নিজ মাটিতে বিশ্বকাপ জিতে নিতে পারে ব্রাজিল। অন্যতম ফেভারিটদের তালিকায় তারাই সবচে এগিয়ে। ব্রাজিলের চিরচেনা হলুদ-সবুজ জার্সিতে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ’ আর কোটি বাঙালির সমর্থন! এ দুয়ে মিলে আমাদের জন্য তৈরি হয়েছে গর্ব, সম্মান ও আত্মমর্যাদা বোধের এক জায়গা। তাই আমাদের চাওয়া, এবার দেশের মাটিতে বিশ্বকাপ জিতে নিক পেলে-ভাবা-তোস্টাও-গারিঞ্চা-জিকো-রোমারিওর দেশ, সাম্বা-নৃত্যে মাতোয়ারা ফুটবল-উন্মাদনার দেশ, আধুনিক ফুটবলের তীর্থ ব্রাজিল।
বাংলাদেশ সময়: ০০১০ ঘণ্টা, জুন ০১, ২০১৪