ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

বাঁচাতে হবে সমুদ্রকেও

এরশাদুল আলম প্রিন্স | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৩৯ ঘণ্টা, জুন ৫, ২০১৪
বাঁচাতে হবে সমুদ্রকেও

আজ বিশ্ব পরিবেশ দিবস। সারা বিশ্বের মনোযোগ দিনটির দিকে।

ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলোর ওপর জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব বিবেচনায় নিয়ে পরিবেশ দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য Raise Your Voice-Not Sea Level-যার ভাবানুবাদ করা যায়— হতে হবে সোচ্চার, সাগরের উচ্চতা বাড়াবো না আর।

দুই দশক আগে পৃথিবীর ক্ষুদ্র রাষ্ট্রগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাব থেকে নিজেদের রক্ষা ও এ বিষয়ে বিশ্বব্যাপী সচেতনা বৃদ্ধির লক্ষ্যে এক সম্মেলনের আয়োজন করে। আজ দুই দশক পর এসেও এ বিষয়ে তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই।

কেবল সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধিই নয়, জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যান্য বিষয়েও তেমন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নেই। যদিও এ ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক আইনের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে বিভিন্ন রাষ্ট্র তাদের অভ্যন্তরীণ আইন প্রণয়ন করেছে। কিন্তু বিষয়টি কেবল আইন প্রণয়নের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, প্রয়োজন আইনের প্রয়োগ। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর অনেক দেশেই জলবায়ু তহবিলের যথাযথ ব্যবহার নেই।    
 
সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধিতে মারাত্মক হুমকির মধ্যে আছে পৃথিবীর অন্তত ৫০টি দেশ। এই দেশগুলোর কেবল মানুষ নয়, সামগ্রিক জীববৈচিত্রই হুমকির মুখে পড়বে। এইসব দেশে প্রায় ছয় কোটি মানুষের বাস। তাছাড়া এসব রাষ্ট্র ৫০টি অর্থনৈতিক সমুদ্র অঞ্চলেরও মালিক, যা কী-না প্রায় পৃথিবীর শতকরা ৩০ ভাগেরও বেশি। তাই এ অঞ্চলগুলোর ভৌগোলিক নয়, অর্থনৈতিক গুরুত্বও ব্যাপক।

গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, এই শতাব্দীর শেষে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়ে যাবে দুই মিটার। এর ফলে পৃথিবীর অনেক দ্বীপ রাষ্ট্র পুরোপুরি বসবাসের অযোগ্য হয়ে যাবে যেমন— মালদ্বীপ, কিরিবাতি, টুভালু ইত্যাদি।

বারবাডোসের মতো ক্যারিবিয়ান দ্বীপরাষ্ট্রগুলো পরিবেশ বিপর্যয় ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির জন্য ইতোমধ্যে হুমকির মুখে। আর জলবায়ু পরিবর্তনের অনেকগুলো অনুসঙ্গের মধ্যে অন্যতম হলো সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি। এটি মুলত জলবায়‍ু পরিবর্তনের প্রতিক্রিয়া যা-কিনা অবশেষে মানুষের জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ।

পৃথিবীতে গড়ে প্রতিবছর সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বাড়ছে ৩ মিলিমিটার। কেবল গত শতাব্দিই নয়, বিগত কয়েক শতাব্দির যেকোনো সময়ের চেয়ে এর হার অনেক বেশি। তার চেয়েও ভয়ানক হলো যে, এই হার আগামিতে আরো বাড়বে। ফলে এর অবশ্যম্ভাবী ফল ভোগ করবে ক্ষুদ্র দ্বীপ রাষ্ট্রগুলো। ১৮৭০ সাল থেকে ২০০৪ সাল পর্যন্ত সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বেড়েছে ১৯৫ মিলিমিটার, যা বছরের হিসেবে প্রায় ১.৪৬ মিলিমিটার। সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির এ ধারাবাহিকতা বজায় থাকলে এই শতকের শেষ নাগাদ তা বেড়ে ১৮ থেকে ৫৯ সে.মি. পর্যন্ত হওয়াটা অস্বাভাবিক কিছু নয়। আবার কোন কোন গবেষক তা ৫৬ থেকে ২০০ সে.মি পর্যন্ত হতে পারে বলেও দাবী করেছেন। তবে, অঙ্কের হিসাবে যাই হোক-সর্বনিম্ন পর্যায়ের উচ্চতা বৃদ্ধির প্রভাবও ব্যাপক।

পরিবেশের এই বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় আকস্মিক নানান দুর্যোগ-দুর্বিপাক তো আছেই, আকস্মিকভাবে প্লাবিত অনেক শহর যা ইতিপূর্বে কখনোই হয়নি। ২০০৮ সালে ভেনিসে যে বন্যা হয়, তা জলবায়ু পরিবর্তনেরই ফল। কেননা, এর আগে এরকম বন্যা সেখানে কখনই আঘাত হানেনি। এটি অনাকাঙ্ক্ষিত কিন্তু অবশ্যম্ভাবী; এমন অনেক দুর্যোগ ভবিষ্যতে আমাদের জন্য অপেক্ষা করে আছে।

এরকম বন্যা বা জলোচ্ছ্বাসের কারণে উপকূলীয় অঞ্চলে মানুষের বসবাস অসম্ভব হয়ে পড়বে। জীবন ও জীববৈচিত্র পড়বে বিরাট সঙ্কটে। ভূমিধ্বস, নদীভাঙন, বন্যা নিত্যদিনের ঘটনা হয়ে দাঁড়াবে। বিপুল পরিমাণ জনগোষ্ঠী হয়ে পড়বে জলবায়ুউদ্বাস্তু।

তাই, ব্যক্তি থেকে শুরু করে রাষ্ট্র, এমনকি আর্ন্তজাতিক পর্যায়ে জলবায়ু বিষয়ে সচেতনতা জরুরি। কেননা বাঁচতে হবে নিজেকে, বাঁচাতে হবে আগামী প্রজন্মকে।

লেখক : আইন ও মানবাধিকার সম্পাদক, বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বাংলাদেশ সময়: ১৭৩৬ঘণ্টা, জুন ০৫, ২০১৪



বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।