সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্র আত্মহত্যা করেছে। ছেলেটি কি কারণে আত্মহত্যা করেছে তা ঠিক জানা যায়নি।
এরা না পারছে নিজেদের শিক্ষাগত যোগ্যতার চাইতে নিচে নেমে কোন কাজে যোগ দিতে, না পাচ্ছে সমমানের কিংবা এর সামান্য নিচের কোন কাজ। এছাড়া নিজেরা উদ্যোক্তা হওয়ার মতো আর্থিক কিংবা মানসিক শক্তিও অনেকের নেই পারিপার্শ্বিক অবস্থার চাপে। এর ফলে একটা বিশাল অংশ বেকার থেকে যাচ্ছে।
সমাজে বেকার মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেলে সেখানে হতাশার সৃষ্টি হয়, বেড়ে যায় বিশৃঙ্খলা। এছাড়া পারিবারিক, সামাজিক ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়েও একটা অস্থিরতা বিরাজ করে। আত্মহত্যার প্রবণতাও দেখা দেয়। তো, সমাজ কিংবা রাষ্ট্র যখন এই বিশাল সংখ্যার শিক্ষিত মানুষগুলোর চাকরির ব্যবস্থা করতে পারছে না তখন বেকার হিসেবে, বেকারদের নিজেদের করনীয় কি সেটাও কিন্তু চিন্তার খোরাক যোগায়। অন্তত কেউ যাতে হতাশাগ্রস্ত হয়ে না যায়।
শিক্ষিত বেকারদের প্রাথমিক যে সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় সেটি হচ্ছে পাশ করার পর বাড়ি থেকে টাকা চাইতে সমস্যা। তখন টাকা চাইতে যেমন লজ্জা হয়, তেমনি বাড়ি থেকেও নানান কথা শুনতে হয়। এ ক্ষেত্রে বাড়ির মানুষগুলোরও একটু সহনশীল হওয়া প্রয়োজন। যদিও আমাদের দেশে সেশনজট মিলে এতো লম্বা সময় পড়াশোনা করতে হয় যে অনেক সময় ধৈর্য্যের বাঁধ ভেঙ্গে যায়। এরপরও দুই দিক থেকেই যদি একটু সহনশীল হওয়া যায় তাহলে কিন্তু সমস্যার সৃষ্টি হয় না।
আর যারা পাশ করার পরই নিজেদের বেকার হিসেবে আবিষ্কার করে তাঁদের প্রধান কাজ হওয়া উচিত আপাত কোন ভাবে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করতে যে টাকা খরচ হয় কিংবা নিজের পকেট মানির টাকাটা কোন ভাবে নিজে ব্যবস্থা করা যায় কিনা শে দিকে খেয়াল করা।
সেক্ষেত্রে, যারা উচ্চশিক্ষিত অথচ বেকার তারা ইচ্ছে করলেই ড্রাইভিং শিখে ঢাকার রাস্তায় সাময়িক ক্যাব চালাতে পারে। অথবা কোন সুবিধাজনক সপে সেলসম্যান হিসাবে জব করতে পারে। অথবা দিনে অন্তত দুইটা বা তিনটা টিউশনি করতে পারে।
উপরের তিনটা অপশনের সুবিধা হলো এই জবগুলা চেষ্টা করলেই পাওয়া সম্ভব। সম্ভব বলতে কঠিন হলেও তুলনামূলক সহজ। অথচ সুবিধাজনক অবসর পাওয়া যায়। হাতে বেশ খানিকটা সময় রেখে জবগুলো করা যায়।
এই কাজগুলো করতে পারলে মাসের শেষে নিজে চলার মত টাকা পাওয়া যাবে। সেই টাকা দিয়ে ইন্টারনেটে বা অন্য উপায়ে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের জব সার্কুলার অনুযায়ী কাগজপত্র রেডি করে আবেদন করাটা অনেক সহজ হয়ে যাবে। এখন সমস্যা হচ্ছে প্রথম অপশনটা, অর্থাৎ ড্রাইভিং হয় অনেকে করতে চান না, সামাজিক অবস্থার কারণে কিংবা অনেকে জানেন না। পৃথিবীর অনেক দেশে কিন্তু শিক্ষিত মানুষগুলো ড্রাইভিং করে পার্টটাইম কাজ হিসেবে।
আর আমাদের তরুণদেরই তো এগিয়ে আসতে হবে নতুন কিছু করে দেখাতে। আর যারা ড্রাইভিং জানে না তাঁরা অন্য অপশনও ভেবে দেখতে পারে। বিষয় হচ্ছ প্রথম দিকে কোন রকম কোন কিছুর তোয়াক্কা না করে কিছু একটা কাজে যোগ দেয়া। এই ক্ষেত্রে বাড়ি থেকে যেমন টাকা চাইতে হবে না তেমনি হতাশা ভাবটা কেটে যেতে পারে।
মেয়েরা বুটিকের পোষাক (হাতের কাজ, এপ্লিক, ব্লক, চুমকি) কিছুটা প্রফিটে তাদের বাসায় বসে পরিচিতদের মাঝে সেল করতে পারে। প্রতিবেশী, আত্নীয়স্বজন এবং স্কুলে সন্তানের বন্ধুদের গার্জিয়ান এসব বুটিক পোষাক আগ্রহ নিযে কিনে থাকে। যথেষ্ট চাহিদাও আছে এই পোষাকের। এছাড়া শুধু মেয়েরা কেন, আজকাল যে কোন নারীপুরুষ ভেদাভেদ নেই। চাইলে ছেলেরাও করতে পারে।
আর যারা বেকার তাঁদের নিজেদের একটা প্লাটফর্ম থাকা উচিত। সেটা হতে পারে অনলাইনে কিংবা বাস্তবে। যেখানে সবাই নিজেদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে। কোথায় কোন চাকরির বিজ্ঞাপন হয়েছে, কোন চাকরি কিভাবে পেতে হয়, কোন ইন্টারভিউতে কি জিজ্ঞেস করেছে, হতাশা, আনন্দ সব কিছু যেখানে শেয়ার করা যাবে। এতে করে বেকারদের অন্তত নিজেদের একা মনে হবে না, এছাড়া সময় ঠিক ভাবে কাটানোরও একটা বন্দোবস্ত হয় এতে।
আমিনুল ইসলাম, গবেষক ও অন লাইন এক্টিভিস্ট, ইমেইল- tutul_ruk@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ১৮৩১ ঘণ্টা, জুন ০৮, ২০১৪