কল্পনা করুন, আপনি এই মুহূর্তে আমেরিকা কিংবা ইংল্যান্ডে ঘুরতে গেছেন। গিয়ে দেখলেন সেখানকার সব বাসা বাড়িতে ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার পতাকা উড়ছে।
নিশ্চয়ই আপনার মনে হবে- আপনি ভুল দেশে চলে এলেন নাতো? এইবার ভাবুন, কোন বিদেশি বাংলাদেশে এই মুহূর্তে বেড়াতে এসেছে, তারা যদি এখন
দেখে- বাংলাদেশের বাসাবাড়িগুলোতে ব্রাজিল কিংবা আর্জেন্টিনার পতাকা উড়ছে কিংবা যানবাহনে উড়ছে! তাহলে তাদের অনুভূতি কেমন হচ্ছে একবার চিন্তা করুন।
বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা চলে এসেছে। সঙ্গে আমাদের দেশের বাসা বাড়ি ছেয়ে গেছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকায় কিংবা স্পেন, জার্মানি, ইতালির তথা ভিন দেশি পতাকায়। এমনকি রাস্তা-ঘাটের যানবাহন গুলোতে এই পতাকাগুলো দেখা যাচ্ছে।
কিছুদিন আগে যখন বাংলাদেশে বিশ্বকাপ ক্রিকেট খেলা হয়েছিলো তখন ভারত-পাকিস্তানের পতাকাসহ স্টেডিয়ামে যাওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনা সমালোচনা হয়েছে। বর্তমানে হচ্ছে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনার পতাকা নিয়ে।
সোমবার যখন যশোরের জেলা প্রশাসক অনুরোধ করলেন সেই জেলা থেকে সকল স্থাপনা ও যানবাহনে ভিন দেশি পতাকা সরিয়ে ফেলা হোক, তখন আমরা সবাই জানতে পারলাম- দেশের পতাকা আইনে দূতাবাস ছাড়া দেশের কোন স্থাপনা ও যানবাহনে ভিন দেশি পতাকা লাগানো যায় না।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। বাংলাদেশিরা আদতে ফুটবল প্রিয় জাতি। দেশের গ্রাম-গঞ্জ থেকে শুরু করে শহর অঞ্চলে বিশ্বকাপ নিয়ে উম্মাদনা অনেক বছর ধরেই চলে আসছে। সঙ্গে ব্রাজিল-আর্জেন্টিনাসহ নানান দেশের পতাকা টানানোটাও একটা সংস্কৃতি হয়ে গিয়েছিলো।
তবে এখন আমাদের দেশের শিক্ষিত মানুষের সংখ্যা বেড়েছে, সঙ্গে মোবাইল কোম্পানি ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকের মাধ্যমে যে কোন তথ্য আমরা খুব সহজেই পেয়ে যাই। সেটি যেমন শহর অঞ্চলের জন্য প্রযোজ্য, ঠিক তেমনি গ্রাম অঞ্চলের জন্যও প্রযোজ্য। তাই এখন আমাদের নিজেদের সচেতন হওয়া উচিত।
এখন যেহেতু আমরা জেনে গেছি, ভিন দেশি পতাকা টানানো ঠিক নয়, তাই আমাদের কাজ হবে এই কাজ থেকে বিরত থেকেই বিশ্বকাপ ফুটবল উপভোগ করা। এ ছাড়া নিতান্তই যদি নিজ সমর্থিত ফুটবল দলটির পতাকা টানানোর দরকার হয় তাহলে ভার্চুয়াল সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম তো রয়েছেই।
ফেসবুকে নিজেদের কাভার ফটোতে সর্বোচ্চ নিজের সমর্থিত দলের পতাকা হয়তো দেয়া যেতে পারে।
আমাদের সবারই নিজেদের দেশের আইন, সঙ্গে নৈতিকতার বিষয়টিও খেয়াল রাখা উচিত। আমরা সবাই বিশ্বকাপ উম্মাদনায় মাতবো, কিন্তু এমন কিছু করবো না যেটি এ সব কিছুকে ছাড়িয়ে যায়।
আমিনুল ইসলাম: গবেষক ও ও অন লাইন এক্টিভিষ্ট, ইমেইল- tutul_ruk@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ১৮১৫ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৪