ঢাকা, সোমবার, ৮ পৌষ ১৪৩১, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক: সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

জয়িতা শিল্পী, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২২৭ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৪
পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক: সম্ভাবনার নতুন দুয়ার

বাংলাদেশ পুলিশে নারীর যাত্রা শুরু হয় ১৯৭৪ সালে। তখন মাত্র ১৪ জন নারী সদস্য যোগদান করেন- যাদের মধ্যে ৭ জন সাব ইন্সপেক্টর এবং ৭ জন কনেস্টবল।

  এর দু’বছর পর ১৯৭৬ সালে আরও ১৫ জন নারী সদস্য ডিএমপিতে যোগদান করেন ইউনিফর্ম সার্ভিসে সাব ইন্সপেক্টর ও কনেস্টবল পদে।

১৯৮৬ সালে ৬ষ্ঠ বিসিএস এর মাধ্যমে প্রথম সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগ দেন ফাতেমা বেগম। ১৯৮৮ সালে ৭ম বিসিএসে চারজন নারী সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ দশবছর বিরতির পর আবার ১৯৯৯ সালে ১৮তম বিসিএস এর মাধ্যমে ৮ জন নারী সহকারী পুলিশ সুপার পদে যোগদান করেন।

এরপর আর তেমন বেগ পেতে হয়নি। প্রায় প্রতিবছর নারী কর্মকর্তা ক্যাডার সার্ভিসে যোগদান করেছেন। নানা প্রতিবন্ধকতা পেরিয়ে এরই মধ্যে মেয়েরা তাদের পেশাদারিত্বের প্রমাণ দিয়েছেন অনেকক্ষেত্রে। এসব কর্মকর্তা দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে পুলিশ বিভাগে যেমন নিজেদের জায়গা করে নিয়েছেন, তেমনি তাদের এই দৃঢ় অবস্থান অন্যান্য নারী পুলিশের মধ্যে আস্থা ও নির্ভরতা তৈরি করেছেন। দেশেই শুধু নয় কেউ কেউ জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সাফল্যের সঙ্গে কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেছেন। এতে করে বিশ্বে বাংলাদেশ পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হচ্ছে।

বর্তমানে ডেমোক্র্যাটিক রিপাবলিক অব কঙ্গো এবং হাইতিতে দু’টি ফিমেল ফর্ম পুলিশ ইউনিট (ফিমেল এফপিইউ) সাফল্যের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে। মোটকথা দেশে-বিদেশে নারী পুলিশ কর্মকর্তা সমভাবে দক্ষতা ও পেশাদারিত্ব প্রমাণ করে যাচ্ছেন।

যে কারণে BPWN
নারী পুলিশ কর্মকর্তারা চাকরির ক্ষেত্রে নানা সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। আমাদের সমাজ কাঠামোয় নারীরা সর্বদা বিভেদের শিকার। প্রতিকূল পরিবেশকে অনুকূল করে কাজ করতে হয়। তাই নিজেদের ঐক্যবদ্ধ হওয়া খুব জরুরি। কারণ সামগ্রিক শক্তিতে অশুভ শক্তিকে পরাজিত করা সম্ভব। এতে করে সমস্যা সমাধানের পথ খুঁজে পাওয়া যায় সহজে। নারী কর্মকর্তাদের শক্তি বৃদ্ধি, সমস্যা সমাধান এবং বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে অসহায় নারীদের সর্বোচ্চ সেবা প্রদানের উদ্দেশে BPWN (Bangladesh Police Women Network) গঠিত হয় ২০০৮ সালের ২১ নভেম্বরে। UNDP এর পিআরপি (Police Reform Program) এ বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক গঠনের কথা উল্লেখ আছে। তার ভিত্তিতে এই সংগঠনের জন্ম।  

লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য:
যে লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে নিয়ে BPWN (Bangladesh Police Women Network) যাত্রা শুরু করে সেগুলো হলো-

•    আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীতে নারীর ভূমিকা বৃদ্ধি
•    নারী নেতৃত্বের বিকাশ
•    পুলিশিং এ নারীর ক্যাপাসিটি বৃদ্ধি
•    নারীর কাজের উপযোগী পরিবেশ তৈরি
•    অধিক সংখ্যক নারী নেতৃত্ব সৃষ্টি
•    সেবার মান উন্নত করা
•    নারীর প্রতি বিরোধমূলক দৃষ্টিভঙ্গীর পরিবর্তন
•    নারী ও শিশু ভিকটিমের প্রয়োজনীয় সাপোর্ট প্রদান।

বর্তমানে BPWN এর সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন মিলি বিশ্বাস পিপিএম, অতিঃ পুলিশ কমিশনার, ট্রাফিক, ডিএমপি। অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সদস্যের মধ্যে রয়েছেন রেবেকা সুলতানা, সহ-সভাপতি এআইজি (ক্রাইম-ওয়েস্ট), পুলিশ হেডকোয়াটার্স ঢাকা, ফরিদা ইয়াসমিন বিপিএম, যুগ্ম নির্বাহী সচিব এসএস প্রটেকশন, এসবি মালিবাগ ঢাকা।

বাংলাদেশ তথা দক্ষিণ এশিয়াতে নারী পুলিশ কর্মকর্তাদের সংগঠন হিসাবে বাংলাদেশ পুলিশ ওমেন নেটওয়ার্ক প্রথম। এর কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য সংখ্যা ২৩। পিআরপি এবং বিপিডব্লিউএন এর যৌথ উদ্যোগে ২০১২ সালে অনুষ্ঠিত BPWN এর প্রথম বার্ষিক সাধারণ সম্মেলন। সম্মেলনে যে সব বিষয় গুরুত্বের সঙ্গে আলোচিত হয়েছে সেগুলো হলো -

•    নারী পুলিশের ভূমিকা
•    নেতৃত্ব
•    জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারীদের উন্নয়ন
•    ক্যাপাসিটি বিল্ডিং
•    পেশাদারিত্ব
•    নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

এই সংগঠনের দ্বিতীয় বার্ষিক সাধারণ সম্মেলন ১১ ও ১২ জুন ২০১৪। সংগঠনের লক্ষ্য রাখতে হবে এই প্রতিযোগিতামূলক বিশ্বে প্রত্যেককে পেশাদারিত্ব ও দক্ষতা উন্নয়নের জন্য বিশেষজ্ঞ হিসেবে তৈরি করা প্রয়োজন। বর্তমানে পুলিশকে বহু ডিপার্টমেন্টে বহুমুখী কাজ সম্পাদন করতে হয়। যারা যে ক্ষেত্রে ভাল করছেন তাদেরকে ওই বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিয়ে ওই সেক্টরেই কাজের সুযোগ করে দেয়া উচিত।

পুলিশ বাহিনীর প্রধান কাজ হলো দেশের আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, অপরাধ দমন এবং অপরাধী শনাক্ত করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা। এর মাধ্যমে আইনের শাসন  তথা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় পুলিশ প্রথম স্তরের কাজটি গুরুত্বের সঙ্গে করে থাকে। পুলিশই প্রথম বিচারকের ভূমিকা পালন করে থাকে।

আধুনিক গণতান্ত্রিক পুলিশিং এ পুলিশকে নানাবিধ কাজ করতে হয়। পুলিশ এখন জনগণের বন্ধু। পুলিশ বিভাগের সব ইউনিটেই সাধারণ জনগণের অবাধ প্রবেশ। এখন জনগণই যে পুলিশের কাছে আসছে তা নয়, বরং পুলিশও জনগণের কাছে যাচ্ছে। সামাজিক সমস্যা সমাধানে ওপেন হাউজ ডে, কমিউনিটি পুলিশিং এর মাধ্যমে বাল্যবিবাহ, যৌতুক, মাদক বিরোধী কার্যক্রম, চোরাচালান রোধ, সামাজিক মূল্যবোধের অবক্ষয় রোধ ইত্যাদি বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে পুলিশ বিভিন্ন কর্মসূচি হাতে নিচ্ছে। এর মাধ্যমে জনগণের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক সহজ হচ্ছে।

আমাদের সমাজে নারী ও শিশুরা সমস্যাগ্রস্ত হয় বেশী। এসব সমস্যা সমাধানে নারী পুলিশ অধিকতর ভূমিকা রাখতে পারে। সংবেদনশীল অনেক বিষয় নারী ভিকটিম নারীকেই নির্ভরতার সঙ্গে বলতে পারে। এ ক্ষেত্রে উইমেন সাপোর্ট অ্যান্ড ইনভেস্টিগেশন ডিভিশন গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টার অসহায় নারী ও শিশুদের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে এবং এরই মধ্যে মানুষের আস্থাও অর্জন করতে পেরেছে।

বাংলাদেশ পুলিশ উইমেন নেটওয়ার্ক নারীর কর্মক্ষেত্র বৃদ্ধি এবং দক্ষতা ও পেশাদারিত্বের উন্নয়নে বদ্ধ পরিকর। এজন্য নারী নেতৃত্বের বিকাশ ঘটানো খুব জরুরি। সেই সঙ্গে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে নারীকে দক্ষতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করতে হবে এবং নারী অধিকার প্রতিষ্ঠা করতে হবে । BPWN যুগোপযোগী দক্ষ এবং চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় পারদর্শী নারী পুলিশ রূপে নিজেদের দেখতে চায়। এজন্য নারীদের প্রস্তুত করতে হবে এবং পুলিশ বিভাগসহ সবার অকুণ্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা প্রয়োজন। এই সহযোগিতার হাত সবাই প্রসারিত করবেন এবং BPWN (Bangladesh Police Women Network) এর জয়যাত্রায় হাতে হাত মেলাবেন এটাই প্রত্যাশা।

জয়িতা শিল্পী: এসি এডমিন, রমনা ডিভিশন, ডিএমপি এবং ব্যানএফপিইউ-১, রোটেশন-৭, কিনসাসা, ডিআর কঙ্গো ফেরত

বাংলাদেশ সময়: ২২২৭ ঘণ্টা, জুন ১০, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।