ধরা যাক ব্রাজিলের এক লোক বাংলাদেশে কাজ করে। একদিন ঘুম থেকে উঠে আড়মোড় ভেঙে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে শত শত ব্রাজিলের পতাকা উড়ছে।
- বউ তুমি কোথায়?
- বাসায়, বেডরুমে... কেন?
- আমি তো মনে হয় দেশে চলে এসেছি
- কী বলছো!... কো-কোথায়? বউ কোনো কারণে নার্ভাস!
- ড্রইংরুমে
বউ সঙ্গে সঙ্গে লাইন কেটে দিল। কারণ স্বৈরনী বউ তখন বেডরুমে তার প্রাক্তন প্রেমিকের সঙ্গে রোমান্টিক সময় কাটাচ্ছিল। সে প্রেমিককে বললো ‘জলদি পালাও ও চলে এসেছে!’
- কি বলছো? কোথায়??
- ড্রইংরুমে
- কী ক্কী বলছো?? ... প্রেমিক লাফ দিয়ে জানালা গলে বাইরে কোনোরকমে কার্নিশে ঝুলে পড়লো। স্ত্রী কাপড়-চোপড় সামলে ড্রইংরুমে ছুটে গেল।
ওদিকে আরেক আর্জেন্টিনার পাবলিক, সেও বাংলাদেশে কাজ করে। সেও ধরা যাক একদিন ঘুম থেকে উঠে আড়মোড় ভেঙে জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখে শত শত আর্জেন্টিনার পতাকা উড়ছে। তার সন্দেহ হলো তবে কি সে তার দেশ আর্জেন্টিনায় চলে এসেছে? তারও অবশ্য এর মধ্যে একবার দেশে যাওয়ার কথা ছিল। সেও কী মনে করে স্ত্রীকে ফোন দিল—
- বউ তুমি কোথায়?
তার বউ অবশ্য স্বামী ভক্ত, সে বললো
- কেন গো?
- আমি তো মনে হচ্ছে দেশে চলে এসেছি
- কী বলছো কিন্তু আমি তো...
ওদিকে আর্জেন্টাইন লোকটার স্ত্রী আবার স্বামীকে সারপ্রাইজ দিতে বাংলাদেশে চলে এসেছে। কিন্তু এয়াপোর্টে নেমে ট্যাক্সি ক্যাব নিতে গিয়ে দেখে সব ক্যাবে জার্মানির পতাকা উড়ছে। ঘটনাচক্রে ট্যাক্সিওলারা আবার সব জার্মানির সাপোর্টার। তো আর্জেন্টিনার লোকটার বউ কাঁদো কাঁদো গলায় বললো ‘ওগো সর্বনাশ হয়েছে!’
- মানে? কী হয়েছে?
- আমি তো তোমাকে সারপ্রাইজ দিতে বাংলাদেশে এসেছিলাম, এখন মনে হচ্ছে প্লেন ভুল করে জার্মানি চলে এসেছে। ...ইইই (কান্না)
গল্প থেকে এবার বাস্তবে আসি। যশোর জেলার ডিসি সাহেব এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তিনি বলেছেন চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে সব বিদেশি পতাকা নামাতে হবে। এই খবর দেখে আমি আমার এক সিনিয়র কবি বন্ধুকে ফোন দিলাম যিনি যশোরেই থাকেন।
- রমেশ দা ফ্লাগ কি নামিয়েছেন?
- তুমি কী করে জানলে? না নামাইনি আটচল্লিশ ঘণ্টা ধরে ফ্লাগ ওড়াচ্ছি। কোনো কাজ হচ্ছে না।
আমি অবাক, উনি আবার কী বলেন!
- কী কাজ হচ্ছে না? কী বলছেন?
- আরে আমি তো সাদা ফ্লাগ ওড়াচ্ছি মানে সন্ধি ফ্লাগ আরকি। তোমার বউদির রাগ তো কমছে না।
চব্বিশ ঘণ্টায় যশোরের ফ্লাগ নেমেছে কিনা জানি না। তবে ভাঙ্গা উপজেলায় আর্জেন্টিনার সাপোর্টাররা দশ কিলো মিটার লম্বা এক ফ্লাগ বানিয়ে টাঙ্গিয়েছে। বেশি দূরে যাওয়ারই বা দরকার কী? সেদিন রিক্সা না পেয়ে মহাখালির এক চিপা গলি দিয়ে শর্টকাট মেরে আসছিলাম। দেখি আকাশজুড়ে ঢাইস এক ব্রাজিলের পতাকা উড়ছে। এই সময় পরিচিত এক তরুণকে পেলাম। সে এগিয়ে এসে বললো—
- হাবিব ভাই এদিক দিয়ে কই যান?
- শর্টকাট মারি। এই পতাকা তোমরা লাগিয়েছ? উপরের দিকে ইঙ্গিত করি।
- জ্বী এখানে আমরা সবাই ব্রাজিল। আমি তখন দ্বিতীয় একটা প্রশ্ন না করে পারলাম না।
‘আচ্ছা বিশ্বকাপ শেষ হলে এই বিশাল পতাকার কী হবে?’
তরুণ এদিক ওদিক তাকয়ে বলে, ‘আরে তাও ভেবে রেখেছি হাবীব ভাই। বিশ্বকাপের পর পরই বড় ভাইয়ের বিয়ে। সামিয়ানাটা এটা দিয়েই চালিয়ে দিব ভাবছি। ’
লেখক : কার্টুনিস্ট, রম্যলেখক, সম্পাদক, উন্মাদ
বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘণ্টা, জুন ১৭, ২০১৪