বলা হচ্ছে, বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রয়েছে। এই রিজার্ভ রেকর্ড ছাড়িয়ে যাচ্ছে প্রতিবার।
এক্ষেত্রে উৎপাদন খাতে বিনিয়োগের সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না। সার্বিক যে পরিস্থিতি, তাতে উৎপাদনশীল খাতে বিনিয়োগের প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে না। শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠার জন্য যে পরিবেশ দরকার, তা নেই। এর ফলে এসব অর্থ থেকে যাচ্ছে কোষাগারে। যখন কারখানার যন্ত্রপাতি বা অন্যকিছু আপনি আমদানি করছেন না, তখন এসব অর্থ কোষাগারেই থেকে যাচ্ছে। আর এই জমে থাকাটা অর্থনৈতিক স্থবিরতার লক্ষণ। আপনি কাজ করছেন না, তার লক্ষণ। ফলে এতে আনন্দের কোন ব্যাপার ঘটে নাই। বরং যা ঘটেছে, তাকে বলতে হবে দুঃখের ব্যাপার।
ফলে অর্থনীতির সার্বিক পরিস্থিতিকে আমার কাছে সুখপ্রদ মনে হচ্ছে না। একদিকে পদ্মাসেতুর কাজ শুরু করে দেয়া হয়েছে। একটি আর্থিক টেন্ডারের মাধ্যমে কাজ দেয়া হচ্ছে। আমার যমুনা ব্রিজের অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, যারা টাকা দেয়, তারা কাজের তদারকি করে থাকে। এইরকম অবকাঠামো নির্মাণের ক্ষেত্রে আমাদের জ্ঞান ও অভিজ্ঞতা সীমিত। ফলে তারা কী করছে, না করছে— তা বুঝে উঠতে পারা অনেক সময় সম্ভব হয় না। তাছাড়া এক্ষেত্রে দুর্নীতি হওয়ারও যথেষ্ট আশঙ্কা থাকে। তারপর বলছি, আমরা নিজেদের টাকায় সেতু নির্মাণ করছি। আমাদের সত্যি সত্যি যদি এ টাকা থেকে থাকে, তাহলে অন্য খাতে তা ব্যয় করা যেতো। অনেকগুলো অবকাঠামো নির্মাণের বিষয় তো আছে— চট্টগ্রাম রোড, ময়মনসিংহ রোড, এমন জরুরি অনেক রাস্তা রয়েছে। তাছাড়া যে রাস্তাটা পছন্দ করা হয়েছে, তা দৌলদিয়ার সঙ্গে হয়নি। এটা আসলে প্রথম নয়, গুরুত্বের দিক দিয়ে দ্বিতীয় পছন্দ হওয়া উচিত ছিল। প্রথম পছন্দ, বেনাপোল থেকে ভারতের ট্রানজিটের জন্য— অনেকে তাই ধারণা করে। তবে বৃহত্তর ফরিদপুর, যশোর বা কুষ্টিয়ার জন্য আগের রোডটাই অধিকতর ভাল হতো।
যাইহোক ব্রিজ নির্মাণের জন্য নদীশাসন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। বিশেষত নদীর পাড় ঠিকঠাক রাখা। যমুনার মতো পদ্মা যদিও এতো চঞ্চলমতি নয়, তবু পদ্মার ভাঙ্গন রয়েছে। সুতরাং নদীশাসন ঠিকঠাক মতো করতে হবে।
বলা হচ্ছে, নিজেস্ব অর্থ দিয়ে ব্রিজ নির্মাণ করা হবে। নিজেস্ব বলতে বলতে কী বুঝায়? কর থেকে আহরিত অর্থ এতে বিনিয়োগ করা হবে। যেখানে দাতা ব্যাংক .৫ বা.৭ শতাংশ সুদে টাকা দিচ্ছিল। এতো কম সুদে টাকা পাওয়া অন্য কোন মাধ্যম থেকে সম্ভব নয়। সুতরাং প্রয়োজন ছিল সরকারের আরেকটু চেষ্টা করা, এতে হয়তো বৈদেশিক ঋণ থেকেই টাকাটা পাওয়া যেতো।
সুতরাং সার্বিকভাবে যদি অর্থনীতির গতির কথা বলা হয়, তাহলে বলব, এ ব্যাপারে আমি আশাম্বিত নই। যদিও আশাবাদীই থাকতে চাই। কেননা, শিল্প-কারখানা স্থাপনের ক্ষেত্রে প্রাইভেট সেক্টরে কতটুকু বা পাবলিক সেক্টরেই বা কতটুকু বিনিয়োগের প্ল্যান সে ব্যাপারেও কোন স্পষ্ট ধারণা পাওয়া যাচ্ছে না।
পিপিপি (সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্ব)-এর কথা বলা হলেও সে ব্যাপারেও তেমন কোন অগ্রগতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে না। আমি নিজে বহুদিন ধরে এ খাতে কাজ করায় পিপিপি সম্পর্কে আমার যথেষ্ট ধারণা রয়েছে। উন্নত বিশ্বে পিপিপি-এর ভিত্তিতে কাজ হয়, আবার ছোট ছোট দেশগুলোতেও সম্ভব। এ ব্যাপারে মালেশিয়া যথেষ্ট অগ্রগতি ঘটিয়েছে। পিপিপি-র সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে— আত্মবিশ্বাস এবং সমন্বয়, এটা দুটা থাকতে হবে। অর্থনীতির অগ্রগতির ক্ষেত্রে এইসব বিষয় নজর রাখা প্রয়োজন।
লেখক : অবসরপ্রাপ্ত সচিব
বাংলাদেশ সময় : ১৩৪৪ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৪