এক.
সাকিব, সাকিব, সাকিব। এইতো কয়েক মাস আগে আইপিএল-এ পুরো ভারতবর্ষে উচ্চারিত নাম।
দুই.
জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সব ধরনের ক্রিকেটে সাকিব আল হাসানকে ছয় মাস নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড-বিসিবি। এছাড়া আগামী দেড় বছর তাকে বিদেশে খেলার কোনো অনাপত্তিপত্র না দেয়ারও সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এর আগে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের নির্দেশে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে উপস্থিত সাংবাদিকদের সাকিব বলেন, আকরাম খানের মৌখিক অনুমতি নিয়ে আমি সিপিএলে খেলতে দেশ ছেড়েছিলাম। এরপর যা ঘটেছে, তার সবই ভুল বোঝাবুঝি।
তিনি বলেন, বিসিবির নির্দেশ পেয়ে সিপিএল না খেলেই আমি দেশে ফিরে এসেছি।
তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগেরও জবাব দেওয়ার চেষ্টা করেন সাকিব।
তিনি বলেন, আমি কোনো ভুল করিনি। বোর্ডের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি থেকে সমস্যা তৈরি হয়েছে। এখন আলোচনা করলেই সব ঠিক হয়ে যাবে।
তিন.
কিন্তু এরপর হয়ে গেল নিষিদ্ধ সাকিব। কিন্তু কেন? কী এমন অপরাধ তাকে ছয় মাস নিষিদ্ধ হতে বাধ্য করল? সাকিব কি বেশী অপরাধ করেছেন? ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বলেছেন, শুধু এবারের ঘটনায় যে সাকিবকে শাস্তি দেয়া হয়েছে তা নয়।
‘এরা কারো কথাই শুনতে চায় না’ উল্লেখ করে তিনি বলেছেন, সবচেয়ে ভয়ংকর বিষয় যে বাংলাদেশের জন্য ‘রোল মডেল’ সাকিবের ‘আচরণ’ আরো কয়েকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়েছে।
চার.
সাকিবের শাস্তি শুধু দেশে নয়, আন্তর্জাতিক মিডিয়াতেও ছড়িয়ে পড়েছে। সাকিবের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে ইএসপিএন ক্রিকইনফোসহ আন্তর্জাতিক মিডিয়াগুলোও ফলাও করে খবর প্রচার করে। ইএসপিএন ক্রিকইনফোর ‘সাকিব আল হাসান ব্যানড ফর সিক্স মানথস বাই বিসিবি’ এ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশ করে।
পাঁচ.
কিছু দিন ধরেই সাকিবকে নিয়ে বেশ আলোচনা সমালোচনা হচ্ছে। সাকিবের নানাবিধ কর্মকাণ্ড নিয়ে এর আগেও অনেক কথা হয়েছে। অনেকেই হয়তো বলছেন, এই শাস্তি ওর প্রাপ্য ছিলো। ভুল বার বার করলে সেটি আর ভুল থাকে না, অপরাধ হয়ে যায়। তাছাড়া এভাবে বার বার পার পেয়ে গেলে অন্য খেলোয়াড়রাও এরকম করতে পারেন। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিলে হয়তো এ ধরনের বিষয় আর ঘটবে না। যুক্তিগুলো অবশ্যই ফেলে দেয়ার মতো না। কিন্তু দেশসেরা বলে কথা। যে সাকিব দেশকে গর্ব এনে দিয়েছেন, তা কী আমরা ভুলে গেলাম ? হয়তো অপরাধ ছিল কিন্তু অনুশোচনাও তো ছিল। ভুল বোঝাবুঝির জন্য ক্ষমাও তো চেয়েছেন সাকিব।
ছয়.
খুব বেশী দিন আগের কথা নয়, বিসিবির সঙ্গে ক্যাচাল করে ইন্ডিয়ায় লীগ খেলতে যাওয়া আফতাব, শাহরিয়ার, নাফিসসহ একদল খেলোয়াড়ের এখন কোন অস্তিত্ত্বই নেই। বিপিএল ফিক্সিং কেলেংকারিতে বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আশরাফুলের ক্যারিয়ার শেষ। সুতরাং বিসিবি চাইলে সাকিবের খেলোয়াড়ি জীবন শেষ করে দেওয়াও খুব বেশী কঠিন কিছু না।
সাত.
এটিএননিউজের প্রধান বার্তা সম্পাদক প্রভাষ আমিন তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, সাকিব আল হাসান ৬ মাসের জন্য সব ধরনের ক্রিকেটে নিষিদ্ধ। আগামী দেড়বছর দেশের বাইরের কোনো লিগে খেলতে পারবেন না। সাকিবের ভালোর জন্যই শাস্তিটা দরকার ছিল। আশা করি এ শাস্তিতে সাকিবের বোধোদয় হবে। ৬ মাস পর ফিরে আসবে অন্য সাকিব। বাংলাদেশের ক্রিকেট সাকিবকে মিস করবে।
প্রথম আলোর সিনিয়র রিপোর্টার শরীফুল হাসান লিখেছেন, সাকিবকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। বিসিবি আসলে কি চায়? তারা কি চাইছে সাকিব ক্ষুব্ধ হয়ে পদত্যাগের ঘোষণা দিক; নয়তো তাদের পা ধরে ফিরে আসুক! একটা কথা সবার মনে রাখা দরকার, বাংলাদেশে হাজার হাজার বেয়াদব আছে, শৃঙ্খলা ভঙ্গকারী আছে লাখ লাখ। কিন্তু সাকিব আছে একটাই। কাজেই শাস্তি দিতে গিয়ে আমরা যেন তার ক্যারিয়ারই ধ্বংস না করে দেই। কারণ তাতে সাকিবের চেয়ে বেশি ক্ষতি বাংলাদেশের ক্রিকেটের। বিসিবির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার চাইছি...’
আর সাকিব আল হাসানও তো লন্ডন থেকে ফিরে বিমানবন্দরে বলেছেন, আমি খেলা ছেড়ে দেব কেন? আইপিএল জেতার পর দেশে এসে বলেছিলাম- আইপিএল জিতে যে মজা পেয়েছি তার চেয়ে বেশি মজা পাই দেশের হয়ে একটি ম্যাচ জিতলে। সো খেলা ছাড়ার তো প্রশ্নই উঠে না। আমি আগামী ২০৩০ সাল পর্যন্ত খেলতে চাই।
শেষ কথা
হ্যাঁ প্রিয় সাকিব, সবকিছু ভুলে নিজেকে প্রস্তুত করুন। ছয়মাস পর যেন এর জবাবটা মাঠেই দিতে পারেন। আর বর্তমান ঘটনার জন্য ক্ষমা করুন সাকিব।
সাইফ বরকতুল্লাহ: barkat09@gmail.com
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৪