জেনেছেন নিশ্চয়ই, সোমবার সাকিবকে সব ধরনের ক্রিকেট থেকে ছয় মাসের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তিনি কোন ধরনের বিদেশি লীগ খেলতে পারবেন না প্রায় দেড় বছরের জন্য।
যদিও সাকিব নিজে কোন মিডিয়ার সামনে প্রতিক্রিয়া জানাননি, তবে মঙ্গলবার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক ও টুইটারের মাধ্যমে সাকিব আসলে দেশবাসীকে একটা খোলা চিঠি দিয়েছেন।
খোলা চিঠি বেশ আবেগঘন ছিলোই বলতে হয়। তিনি লিখেছেন- অতীতে, এমনকি এখন পর্যন্ত তিনি সাধারণ মানুষদের কাছ থেকে যে ভালোবাসা ও সমর্থন পেয়েছে, তাতে ভীষণ অভিভূত। এমনকি, এই মুহূর্তে তিনি তাঁর হূদয়ের অন্তস্থল খুলে দেখানোর কথাও বলেছেন, যার মাধ্যমে তিনি জানান দিতে চান আজকের যে সাকিব, এর সব কিছুই সাধারণ মানুষের ভালোবাসা, সমর্থন ও দেশের পতাকার জন্য। তিনি দেশ ও দেশের মানুষের জন্য প্রতিমুহূর্তে লড়াই করতে চান বলেও জানিয়েছেন।
সোমবার থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যে ঝড় বইছে এ বিষয়ে কোন সন্দেহ নেই। এ ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের মতামত কিন্তু পাওয়া যাচ্ছে। তবে একটা কথা কিন্তু প্রায় সবাই বলছে, সেটা হলো- সাকিব হয়তো অন্যায় করেছেন। তার হয়তো শাস্তিরও দরকার আছে, যাতে তিনি নিজে এবং দলের অন্যান্যরাও সতর্ক হয়ে যায়। অর্থাৎ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির কথা হচ্ছে।
সেই সাথে সবাই এটাও বলেছে, যে শাস্তি দেয়া হয়েছে সেটি বেশি হয়ে গেছে। অন্যভাবেও হয়তো শাস্তি দেয়া যেত। যেমন, কেউ বলছে বড় অংকের টাকা জরিমানা করা যেত, সাথে কিছু ম্যাচ নিষিদ্ধ ও সতর্ক করে দেয়া। যদি ভবিষ্যতে এমন হয় তাহলে আরও বড় শাস্তি; কিংবা একটা সিরিজের জন্য নিষিদ্ধ এই রকম নানান কিছু আসছে।
আবার অনেকেই বলছেন, এ ঘটনার জন্য যদি এতো বড় শাস্তি হয় তাহলে তো শোয়েব আখতার বা শ্যেনওয়ার্নের মতো গ্রেট ক্রিকেটাররা তেমন খেলার সুযোগই পেত না। তাই ওকে মৌখিক সতর্ক করে দেয়া উচিত। আবার ওর শাস্তির পক্ষেও কিছু মানুষের মতামত আছে।
যেহেতু সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে সংবাদ মাধ্যম, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম সবাই আসলে সাকিবের এই শাস্তি নিয়ে সোচ্চার হয়েছে এবং বেশীরভাগই মনে করছে শাস্তি বেশি হয়ে গেছে, তাই মনে হচ্ছে- হয়তো শেষপর্যন্ত এই রায়টি বহাল নাও থাকতে পারে। এছাড়া বিসিবিও প্রশ্নের ঊর্ধ্ব নয়।
তবে একটা কথা না বললেই নয়, সাকিব আজ সাধারণ মানুষের ভালোবাসার কথা বলেছেন, তিনি বলেছেন দেশের মানুষকে তিনি ভালোবাসেন ও দেশের হয়ে তিনি লড়াই করতে চান; দেশের মানুষের ভালোবাসার জন্যই তিনি আজকের সাকিব। তাকে মনে রাখতে হবে, এই ভালোবাসা যাতে দুই দিক থেকে বহাল থাকে। অর্থাৎ দেশের মানুষ যেমন তাকে ভালবাসে, তেমনি তিনিও যাতে এমন কিছু করে বা বলে না বসেন যাতে সবাই কষ্ট পায় কিংবা বুক ভেঙ্গে যায়। অর্থাৎ ভালবাসাটা যাতে দুই পক্ষ থেকেই বহাল থাকে, পূর্ণতা পায়। আর দুই পক্ষ থেকে বহাল থাকলেই না সেটি সফল প্রেম।
আশা করছি, সাকিব ও দেশের মানুষের মাঝে প্রেমের সফল পরিণতি ঘটবে। আর সাকিব সেটি বুঝতে সক্ষম হবেন।
আমিনুল ইসলাম
আমিনুল ইসলাম: গবেষক ও ও অন লাইন এক্টিভিস্ট, tutul_ruk@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ১৮৪২ ঘণ্টা, জুলাই ৮, ২০১৪