ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

মানুষ যখন `সংখ্যা’

আমিনুল ইসলাম, সুইডেন থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৭ ঘণ্টা, আগস্ট ৪, ২০১৪
মানুষ যখন `সংখ্যা’ ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

মুন্সিগঞ্জের মাওয়া-কাওড়াকান্দি নৌ-পথে মাওয়া ঘাটে পদ্মানদীতে সোমবার যাত্রী নিয়ে পিনাক-৬ নামে একটি লঞ্চ ডুবে গেছে।

কিছুদিন আগেই বড় ধরনের একটি লঞ্চ দুর্ঘটনা ঘটে ছিলো এবং সেই দুর্ঘটনায় আমরা এমন দৃশ্যও দেখেছি যেখানে পরিবার পরিজন কবর খুঁড়ে বসে আছে যদি স্বজনের লাশটি অন্তত পাওয়া যায়।



যখন আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্ধার কাজ বন্ধ ঘোষণা করা হলো তখনো নিকট আত্মীয়রা নিজেদের স্বজনদের খুঁজে ফিরছেন নদীতে নিজেদের উদ্যোগে! এইবারও এইরকম হবে কিনা সেটি সময় বলে দেবে।

লঞ্চটি ঠিক কী কারণে ডুবলো সেটি আমরা আদৌ জানতে পারবো কিনা এই নিয়েও সংশয় আছে।

লঞ্চে অতিরিক্ত যাত্রী ছিলো- সেটি বলছেন বেঁচে যাওয়া যাত্রীরা। আবার এও বলা হচ্ছে আবহাওয়া খারাপ ছিলো এই জন্য লঞ্চটি ডুবে গেছে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে আবহাওয়া খারাপ থাকলে যে লঞ্চ ডুবে যায়? সেটি কী করে চলাচল করে? এ ছাড়া আবাহাওয়া যদি খারাপই থেকে থাকে তাহলে লঞ্চ কতৃপক্ষ কী সেটি জানতেন না?

কিংবা যারা আবহাওয়ার সংবাদ দিয়ে থাকেন তারাও কি এ বিষয়ে অবহিত ছিলেন না?

মূল বিষয় হচ্ছে আবহাওয়া এমন কোনো খারাপ ছিলো না, যে একটি ফিট লঞ্চ ডুবে যাবে! তাহলে লঞ্চটি ডুবলো কেন?

অদ্ভুত একটা বিষয় হচ্ছে লঞ্চটিতে ঠিক কতজন যাত্রী ছিলো তা কেউ-ই বলতে পারছেন না।

লঞ্চ কতৃপক্ষ কয়জন যাত্রী নিয়ে লঞ্চ ছাড়ছেন সেই হিসাব কী তাদের কাছে নেই? তাদের কী এজন্য কোনো জবাবদিহি করেতে হয় না?

যদি করতে হয় তাহলে তারা কি জানে না ঠিক কয়জন যাত্রী লঞ্চে ছিলেন? নাকি যেভাবেই হোক দ্রব্য সামগ্রীর মতো ঠেলে লঞ্চের প্রতিটি কানা পূর্ণ করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়াই মূল কথা!

মানুষের জীবনের কোনো মূল্য সেখানে নেই! যারা ব্যবসা করছে তাদের কথা না হয় বাদ দিলাম কিন্তু সরকারিভাবে যারা এ সব দেখভাল করেন তারাই বা কী করছেন?

প্রতিবার লঞ্চ দুর্ঘটনা হয় আর কিছু শোক প্রকাশ করেই কর্ম সাধন! এর প্রতিকারের কোনো উপায় বা সমাধান নিয়ে ভাবার সময় কি কারো নেই!

এভাবেই কী আমাদের দেখতে হবে সেই নির্মম দৃশ্য? যেখানে আত্মীয় স্বজন বসে আছে কবর খুঁড়ে, যদি স্বজনের লাশটি অন্তত মেলে!

আর কারো স্বজনকে যদি খুঁজে না পাওয়া যায় তাহলে উদ্ধার কাজ কি করে বন্ধ ঘোষণা করা হয়? যেটি আমরা এর আগে দেখেছি।

মানুষগুলো মরে যাচ্ছে, এখন তাদের মৃতদেহ পর্যন্ত পাওয়া যাবে না? অন্তত স্বজনদের দিকে তাকিয়ে হলেও তো উদ্ধার কাজ চালিয়ে যাওয়া উচিত।

কেউ বলছে ৫০০, কেউ ৪০০ আবার কেউ বলছে ২৫০ যাত্রী নিয়ে পিনাক-৬ লঞ্চটি ডুবে গেছে! নিশ্চিত থাকুন ওই লঞ্চে কতজন যাত্রী ছিলো সেটা আর কখনোই জানা যাবে না! কারণ ওই লঞ্চের যাত্রীগুলো মানুষ ছিলো না, ছিলো কেবল একটা ‘সংখ্যা’!

যে সংখ্যা আমরা কেউ আর কোনো দিন জানতে পারবো না। এর চাইতে বরং আমরা ১,২, ৩ করে হিসাব কষতে থাকি সংখ্যাতত্ত্বের, হিসেবে ঠিক কবে ডাক আসবে নিজেদের ‘সংখ্যা’ হবার!

গবেষক ও  ও অন লাইন এক্টিভিষ্ট, ইমেইল-tutul_ruk@yahoo.com

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।