ঈদের ছুটিতে এবার যেভাবে সড়ক দুর্ঘটনা হলো, বিশেষত ঈদের দিন থেকে, তাতে একটু ঘাবড়ে গিয়েছিলাম। এতে হতাহতের সংখ্যা একশ’ ছাড়িয়ে যাবে কি? এমন একটা প্রশ্ন মনে জেগেছিল।
এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু ও সাংবাদিক তার মাইক্রো ফ্যামলি নিয়ে সিলেটের দিকে বেড়াতে গিয়েছিলেন অফিস থেকে পাওয়া গাড়িতে। পুরনো চালকও পেয়ে গিয়েছিলেন। তার পর্যাপ্ত ঘুম, খাওয়া ইত্যাদি নিশ্চিত করা হয়েছিল। মোটিভেট করা হয়েছিল, আস্তেধীরে চালাবে। তারপরও রাতে মেসেজ পাঠিয়ে ঘুমালাম : ‘বন ভয়েজ। যাত্রা শুভ হোক। বেড়ানো আর ফিরে আসাটাও। ’
এসব বলতে ইচ্ছা করে না। তবু বলতে হয়। যাদের বলা হয়, তাদের মধ্যেও জাগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া। যে প্রতিক্রিয়াই হোক, সতর্ক করা তো দায়িত্ব। আমাকেও যেন কেউ সতর্ক করে। গোটা একটা পরিবার হাইওয়ে ধরে যাবে; আবার ফিরে আসবে। সতর্ক করব না? আর আমাদের হাইওয়ে তো ঠিক হাইওয়ে নয়। ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ককে চার লেনে উন্নীত করা হচ্ছে। অন্তত চার লেন না হলে নাকি কোনো সড়ককে মহাসড়ক বলা যায় না। আরও কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়। সেগুলো নিয়ে এক্সপার্টরা আলোচনা করবেন। আমি শুধু বলব, আমাদের হাইওয়ে সত্যিকারের হাইওয়ে হলে তাও রক্ষা ছিল কিছুটা। অন্তত মুখোমুখি সংঘর্ষের ঝুঁকি থেকে বাঁচা যেত। তখন লেন ধরে চলত গাড়িগুলো। যানজটও কমে আসত।
আমাদের হাইওয়েতে গরু-ছাগল এসে পড়ে। খড় শুকানো হয়। পাশেই বসতি, ভ্যান-রিকশার স্ট্যান্ড কিংবা হাটবাজার। সব রকম অযান্ত্রিক যান চলে হাইওয়েতে। মোটর সাইকেল ও বাইসাইকেলে দিব্যি যাতায়াত করে মানুষ। এগুলো বন্ধের কথা আমরা সিরিয়াসলি ভাবছি বলে মনে হয় না। দুটি মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণের কাজও এগোচ্ছে না সেভাবে। এ অবস্থায় কিছু মহাসড়ক ও আঞ্চলিক সড়কের অবস্থা ছিল বেশ খারাপ। জোড়াতালির ব্যবস্থা হয়েছিল। সেটাও অনেক ক্ষেত্রে ছিল ব্যর্থ চেষ্টা। এর মধ্যে যদি ঈদ এসে পড়ে! তাতে সড়কে কয়েকগুণ বাড়ে যান চলাচল! আর এরই মধ্যে প্রিয়জন যদি গোটা পরিবার নিয়ে ছুটে প্রাইভেট কারে! উদ্বেগ হবে না?
যাত্রীবাহী বাস-ট্রাকের সঙ্গে প্রাইভেট কার বা মাইক্রোবাসের সংঘর্ষে কত গুণীজনকে যে হারিয়েছি! তারেক মাসুদের মতো প্রতিভা ক’টা জন্মেছে এদেশে? এমন তো নয় যে, তার অনেক বয়স হয়েছিল। হাছন রাজার বংশধর মমিনুল মউজদীনের কথা মনে পড়ে? ঢাকা-সিলেট মহাসড়কেই বোধহয় তিনিসহ গোটা পরিবার শেষ হয়ে গেল এক দুর্ঘটনায়। কবি ছিলেন তিনি। অন্য রকম স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি ছিলেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী সাইফুর রহমানকেও আমরা মর্মান্তিকভাবে হারিয়েছি এক সড়ক দুর্ঘটনায়। পথে উঠে আসা একটি গরুকে বাঁচাতে গিয়েই বোধহয় তার চালক গাড়িটি নিয়ে ফেলে পাশের জলাশয়ে।
এ নিবন্ধ লিখতে বসার আগে একটি দৈনিক পত্রিকার অনলাইন সেকশনের দায়িত্বে থাকা একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, ঈদের ছুটিতে মোট ক’জন মারা গেল? সেই নির্মম প্রশ্ন। তিনি ঠিকমতো কিছু বলতে পারলেন না। ‘ঈদের ছুটি’ মানে কী, সেটাও নিশ্চিতভাবে বলা মুশকিল। ধরে নেয়া যায়, এ শনিবার পর্যন্ত লোকে ঈদ ঘিরে ছোটাছুটি করতে থাকবে দেশজুড়ে। এর মধ্যে যত সড়ক দুর্ঘটনা হবে, সেগুলোকে একসঙ্গে বলতে হবে ঈদের বাজারে সংঘটিত দুর্ঘটনা। এতে আহতের সংখ্যাটাও গুরুত্বপূর্ণ। যারা করুণভাবে মারা গেল, তারা তো আর থাকছে না। আহতরা থাকছে। তাদের নিয়ে প্রশাসন ও পরিবারের একটা সংশ্লিষ্টতা থাকবে। টাকা খরচ হবে, সময় দিতে হবে আর পোহাতে হবে দুর্ভোগ। তারপরও অনেকে বাঁচবে না। এরা একমাত্র রোজগেরে হলে তো পরিবারটার বিপদ। কিছু আহত ব্যক্তি হয়ে পড়বে পঙ্গু। এদের নিয়ে সৃষ্টি হবে নতুন বিপর্যয়।
আমরা এসব গভীরভাবে খতিয়ে দেখছি বলে মনে হয় না। তাহলে তো সরকার সক্রিয় হয়ে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিত। না নিলে আমরা নিতে বাধ্য করতাম। এর কোনোটাই হচ্ছে না। সড়ক দুর্ঘটনা উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে কী কী করতে হবে, তা যে কোনো এক্সপার্ট বলে দিতে পারেন। বলছেনও। তাদের মধ্যে তেমন ভিন্নমতও দেখা যাচ্ছে না। কিন্তু সড়কপথে পরিবর্তন ঘটছে খুব ধীরে। যেভাবে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক উন্নয়নের কাজ এগোচ্ছে, তার চেয়ে কম গতিতে। রাস্তার ডিজাইন ও কোয়ালিটি ভালো হচ্ছে না। উন্নত হচ্ছে না যানবাহনের মান। যথেষ্ট সংখ্যক দক্ষ চালকের ব্যবস্থা হচ্ছে না। দক্ষদের মধ্যেও বাড়ছে না সড়কপথের আইন মেনে চলার প্রবণতা।
ঈদের বাজারে এ ব্যবস্থাটা যেন ভেঙে পড়ে। আর আমরা সবাই চেয়ে চেয়ে দেখি। সরকার ব্যস্ত হয়ে পড়ে জোড়াতালি দিয়ে ঈদটা পার করতে। ক’বছর ধরে তার চ্যালেঞ্জ দেখছি দুর্ঘটনা কমানো নয়; ঘরমুখো মানুষকে মোটামুটি একটা যানজটমুক্ত সড়ক ব্যবস্থা ‘উপহার’ দেয়া। এবার সেটা একদিন নিশ্চিত করা গেছে তো অন্যদিন যায়নি। এ রুটে গেল তো অন্য রুটে নয়। ঘরমুখোদের মধ্যে ছিল একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া। তাতে সরকারের মুখরক্ষা অন্তত হতো। কিন্তু ঈদের দিন থেকে মহা ও আঞ্চলিক মহাসড়কে যেভাবে দুর্ঘটনা হচ্ছে, তাতে দ্বিতীয়টাই হয়ে উঠেছে ইস্যু।
ঈদের দিনেই আবার একটা নৌকাডুবি ঘটল। আনন্দ ভ্রমণে গিয়ে সলিল সমাধি হল অনেকের। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকের একটা উদ্যোগের খবর দেখলাম সংবাদপত্রে। তিনি নাকি নৌকায় যাত্রী বহনের কাজটা ‘রেগুলেট’ করবেন। মহান এ উৎসাহ অটুট থাকলেই হয়! এদেশে বড় বড় লঞ্চ দুর্ঘটনা হয়। শত শত মানুষ মারা যায় একসঙ্গে। কিছু লাশ চিরতরে হারিয়েও যায়। কোনো কোনো ক্ষেত্রে নিমজ্জিত লঞ্চ তুলতেও পারি না আমরা। তদন্ত কমিটি হয়। সব কমিটি রিপোর্ট দেয় না। দিলেও হয় না তার সুপারিশের বাস্তবায়ন। মামলা হলেও হয় না লঞ্চমালিক ও চালকের সাজা। ‘দুর্ঘটনা’ ভেবে দ্রুতই আমরা ভুলে যাই এসব। ওইসব রুটের যাত্রীরাও।
তারা অবশ্য কীভাবে জানবে, কোন লঞ্চ ত্রুটিপূর্ণ? কোনটি স্পেশাল পারমিশন নিয়ে ঈদের সময় ‘সার্ভিস’ দিতে নেমেছে? কোনটির কত যাত্রী তোলার কথা? কত মালামাল? ‘রোটেশন সিস্টেম’ করে লঞ্চমালিকরা নাকি অতিরিক্ত যাত্রী তোলার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। অতিরিক্ত মুনাফা যাতে নিশ্চিত হয়! এদের মধ্যে আওয়ামী লীগ-বিএনপি মিলেমিশে আছে। প্রশাসন নাকি তাদের কাছে অসহায়। ইতিবাচক কিছু করতে গেলেই বিগড়ে যায় তারা। নৌপথে ধর্মঘট করে। সরকারি ফেরি চলাচলেও বিঘ্ন ঘটায়! এ অবস্থায় একজন জেলা প্রশাসক কী-ই বা করতে পারবেন! তার তো উৎসাহই হারিয়ে যাওয়ার কথা।
প্রচুর সড়ক দুর্ঘটনা আর নৌকাডুবি হলেও অনেকে ভেবে আশ্বস্ত ছিলাম যে, এবার লঞ্চডুবি হয়নি। আমাকে একজন এটা বলেও আশ্বস্ত করেছিল যে, সরকার এবার নদীপথে হেলিকপ্টার দিয়ে তদারকির ব্যবস্থা করেছে। তাকে এখন বলতে চাই, লোকজন কর্মস্থলে ফেরার সময় তদারকি বোধহয় ঝুলে পড়েছিল। নাকি শুধু কেওড়াকান্দি-মাওয়া রুটেই হয়েছিল ওটা? তাই কি অতিরিক্ত যাত্রীবোঝাই ও ত্রুটিপূর্ণ লঞ্চটা খেলনার মতো দুলতে দুলতে চোখের সামনে তলিয়ে গেল? আবহাওয়া একটু গোলমেলে ছিল বৈকি। কিন্তু প্রথম দুটি ক্ষেত্রে গোলমাল না হলে ওটা মাওয়া ঘাটে এসে পৌঁছাত।
লঞ্চটি যেভাবে এত যাত্রী নিয়ে ডুবে গেল, সেটা আমাদের জন্য বড় লজ্জার। ওই মুহূর্তটা কেউ সেলফানে ধারণ না করলেই বোধহয় ভালো ছিল। তাহলে লোকমুখে বর্ণনা শুনে ঠিক বুঝতে পারতাম না, কী ঘটেছিল! আমরা তদন্ত কমিটির কার্যক্রমের জন্য অপেক্ষা করতাম। আর কিছুদিন পর পুরো ব্যাপারটা যেতাম ভুলে। এর চেয়ে বড় লঞ্চ দুর্ঘটনাও তো আমরা হজম করেছি। এটাও সহ্য করে নিতাম। এক্ষেত্রে কিন্তু অনেক ভাসমান যাত্রীকে উদ্ধার করা গেছে ঘাটের কাছেই লঞ্চটি ডুবল বলে। মাওয়ায় অপেক্ষমান স্পিড বোটগুলো তাৎক্ষণিকভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল উদ্ধারকাজে।
দুর্ঘটনায় এটা আমাদের এক বড় শক্তি। লোকে অগ্র-পশ্চাৎ না ভেবে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিপন্নকে উদ্ধারে। রানা প্লাজার ঘটনায় উদ্ধারকাজে নেমে অনেক সাধারণ মানুষ তো ইতিহাস সৃষ্টি করেছে। তাদের কেউ কেউ এখন ভুগছে ‘ট্রমা’য়। দু’একজন নাকি পাগল হয়ে গেছে। আমাদের সরকার ও প্রশাসন অবশ্য পাগল হচ্ছে না। নৈতিক দায়িত্ব নিয়ে বা নিছক ব্যথা-বেদনা থেকে কেউ পদত্যাগও করছেন না। তারা বরং আমাদের বুঝিয়ে চলেছেন, সার্ভেয়ার খুব কম বলে লঞ্চগুলো ঠিকমতো সার্ভে করা যাচ্ছে না। চালক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা যাচ্ছে না অর্থ, উদ্যোগ ও সমন্বয়ের অভাবে। নৌপথে অতিরিক্ত যাত্রী পরিবহন রোধে নাকি নজরদারি বাড়ানো হবে, ইত্যাদি। আমরা এসব শুনে যাচ্ছি। ঈদের বাজারে আবার অতিরিক্ত যাত্রী হতে দ্বিধা করছি না। সামনেই রয়েছে আরেকটি ঈদ। তখনও একই পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে এবং আমরা যোগ দেব তাতে। খুব কম লোকই সিদ্ধান্ত নেব জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাড়ি না যাওয়ার। গ্রামের বাড়ি থেকেও নিরুৎসাহিত করা হবে কম।
যাতায়াতের নির্ভরযোগ্য ব্যবস্থা থাকলে তাও না হয় কথা ছিল। মাঝে তো এমনকী বেড়ে গিয়েছিল ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা। এর আগে চলেছে ট্রেন ও এর লাইনে নাশকতা। বাংলাদেশ কনসেপ্টে অবিশ্বাসীরা নাকি এটা করছিল। কিন্তু এ কনসেপ্টে বিশ্বাসীরা তো রেলগেটগুলো নিরাপদ করছেন না। ঈদের বাজারে দ্রুতগামী ট্রেনের ধাক্কায় বরযাত্রীবাহী একটি বাস দুমড়ে-মুচড়ে মারা গেল অনেকে। রাজধানীতেও এমন একটি ঘটনা ঘটে এর মধ্যে। ঈদে ঘরমুখোদের অনেকে পণ্যবাহী ট্রাকে চড়ে বসেছে। এক্ষেত্রে বড় প্রাণহানির ঘটনা ঘটতে থাকার পরিপ্রেক্ষিতে প্রশাসন এটা ‘নিষিদ্ধ’ করেছিল। নিষিদ্ধ জিনিস নতুন করে নিষিদ্ধ করা। তাতেও কাজ হয়নি। যেভাবে হোক, ঈদে তো বাড়ি যেতে হবে! ঈদশেষে কাজেও ফিরতে হবে প্রয়োজনে ট্রাকে চেপে! ট্রাকে সবজি, তার ওপর মানুষ। এরা অবশ্য ছিল দরিদ্র শ্রমজীবী। দেশের এক স্থানে ট্রাক উল্টে এদের সাতজন একসঙ্গে নিহত হয়েছে।
এত মানুষ একসঙ্গে গ্রামে যেতে এবং সেখান থেকে ফিরতে চাইলে কোনো পরিবহন ব্যবস্থাই এটা সুন্দরভাবে সম্পন্ন করতে পারবে না। কথিত সড়ক-মহাসড়কে নামবে জোড়াতালি দেয়া বাতিল গাড়ি। অদ্ভুত দেশ এটা। যানবাহনের তুলনায় লাইসেন্সধারী চালক নাকি অর্ধেক। হওয়ার কথা তো উল্টো। এ অবস্থায় ঈদের বাজারে পয়সা কামাতে নামছে হেলপার-চালক। এরাই দুর্ঘটনা ঘটাচ্ছে বেশি। আর বেশি দুর্ঘটনাকবলিত হচ্ছে ওইসব যান। প্রাইভেট কার, মোটর সাইকেলওয়ালা আর পথচারীকে তারা পিষে ফেলছে নির্বিঘ্নে। নৌপথেও সড়কের মতো অবস্থা। নৌযানের কন্ডিশন খারাপ। দক্ষ চালক নেই। অদক্ষ চালকের হাতে ত্রুটিপূর্ণ ছোট লঞ্চগুলোই বেশি হচ্ছে দুর্ঘটনার শিকার। এ যুগে ওরা নাকি আবহাওয়া বার্তারও পরোয়া করে না।
প্রশ্ন হলো, সরকার কী করছে? নৌপথে বিলাসবহুল লঞ্চ কম নামছে না। বড় বিনিয়োগ রক্ষায় সেগুলোর নিরাপত্তার ব্যবস্থা না হয় মালিকরাই করছে। সরকার তো অন্তত অন্যগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে, নাকি? সেগুলোয় যাতায়াত করে প্রধানত গরিব যাত্রীরা। লঞ্চে ভাড়া তুলনামূলকভাবে কম। সেজন্যও কি সুদৃষ্টি নেই সরকারের? এখানে কি কোনো শ্রেণী দৃষ্টিভঙ্গি রয়েছে?
মাওয়ায় ডুবে যাওয়া লঞ্চটিতে নৌমন্ত্রীর দূরসম্পর্কের তিন ভাগ্নি ছিল। এদের প্রত্যেকে মারা গেছে। ফেসবুকে তারা ছবি আপ করেছিল লঞ্চে ওঠার আগে। এভাবে কত পরিবার খালি হয়ে যাচ্ছে লঞ্চ দুর্ঘটনায়! সড়কপথেও। ঈদ বাজারের বাইরেও প্রতিদিন উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে চলাচলের সময়। এদের বেশিরভাগ কিন্তু রোজগেরে। তারা আহত হয়ে পড়ে থাকলেও অর্থনীতির ওপর এর চাপ গিয়ে পড়ছে। একে অবহেলা করে আমরা আর চলতে পারব কি?
পারব। তাতে পরিস্থিতির হয়তো আরও অবনতি হবে। কিছু ক্ষেত্রে উন্নতি করছি আমরা। ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে সবাই মিলে সচেষ্ট হলে যাতায়াতে দুর্ঘটনা কমিয়ে আনা যাবে অবশ্যই। টিভিতে একজন এক্সপার্ট সঠিকভাবেই বলছিলেন, এগুলো ঠিক দুর্ঘটনা নয়। অব্যবস্থাপনার কারণেই ঘটছে এসব। এগুলো আসলে মনুষ্য-সৃষ্ট।
দুর্ঘটনা ঘটে পশ্চিমা দেশে। সব রকম প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার পরও যখন সড়ক, রেল বা নৌপথে কিছু ঘটে যায়; সেটাকে তারা অ্যাকসিডেন্ট বা ‘দুর্ঘটনা’ বলে। সেজন্য আবার দুঃখ-শোকে কাতর হয়ে পদত্যাগ করেন কেউ কেউ। এশীয় একটি দেশেও সম্প্রতি এমনটি ঘটল। সন্দেহ নেই, আত্মমর্যাদাবোধও পথ দেখাচ্ছে তাদের। তারা উন্নতি করবে না তো কী আমরা করব?
লেখক : সাংবাদিক, কলামিস্ট
বাংলাদেশ সময় : ১৬৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ০৬, ২০১৪