ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

বন এলাকার মানুষ জানে কিভাবে বাঘের সাথে থাকতে হয়

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২৫৮ ঘণ্টা, আগস্ট ৮, ২০১৪
বন এলাকার মানুষ জানে কিভাবে বাঘের সাথে থাকতে হয়

২৯ জুলাই ছিল বিশ্ব বাঘ দিবস। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও বন, বন্যপ্রাণী-জীব বৈচিত্র্য ও পরিবেশ রক্ষা বিষয়ক সংগঠনগুলো দিবসটি পালন করেছে।

ঈদের ছুটির কারণে দিবসটি খুব আলোচনায় না আসলেও চলতি প্রায় পুরো সপ্তাহেই বাংলাদেশের রয়েল বেঙ্গল টাইগার রক্ষা ও সুন্দরবনের সংরক্ষণ নিয়ে নানান সেমিনার ও আলোচনা হয়েছে। গত এক দশকে যেভাবে বাঘের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে কমে গেছে তা প্রতিরোধে সব মহলকে আরো যত্নবান ও সচেতন হতে হবে। যুক্তরাজ্য ভিত্তিক দি ইন্ডিপেন্ডেন্ট অবলম্বনে প্রতিবেদনটি লিখেছেন শাহাদাৎ তৈয়ব

ভৌগলিক ও আঞ্চলিকভাবে সুন্দরবনের গুরুত্ব অপরিসীম। পরিবেশ ও জীব বৈচিত্র্য সংরক্ষণের দিক থেকে বাংলাদেশের জন্য সুন্দরবনের রক্ষা অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু সুন্দরবনের টিকে থাকার পূর্ব শর্ত হল সেখানকার বাঘসহ অন্যান্য প্রাণ ও জীব বৈচিত্র্যের টিকে থাকা। বিশেষত রয়েল বেঙ্গল টাইগারকে রক্ষা করা আর সুন্দরবন রক্ষা এখন প্রায় সমার্থক হয়ে উঠেছে।

আশঙ্কার বিষয় হল, বাঘের উপর হামলা, বাঘের চলাফেরায় বিঘ্নতা সৃষ্টি এবং বাঘ জব্ধ করাসহ বাঘ নিয়ে আন্তর্জাতিক চোরাকারবারী চক্রের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় সুন্দরবন ক্রমেই রয়েল বেঙ্গল টাইগার, হরিণ, হাতিসহ অন্যান্য সব প্রাণীর জন্য অনিরাপদ আবাস হয়ে উঠেছে। অনিরাপদ হয়ে যাওয়ায় বাঘের প্রজননের জন্যও সুন্দরবনের পরিবেশ বেশ প্রতিকূল হয়ে উঠছে।

বন ও প্রাণী বিশেজ্ঞরা বলছেন, বাঘ যেমন ভয়ানক হিংস্র প্রাণী কিন্তু তাই বলে তাকে মেরে ফেলা যাবে না। মানুষ ও অন্যান্য জীব বৈচিত্র্যের প্রয়োজনে বাঘের বেঁচে থাকায় মানুষকেই বেশি সহায়ক ভূমিকা পালন করতে হবে।

একদিকে বাঘ যেমন মারা হচ্ছে তেমনি বাঘের হানায় সুন্দরবনের আশপাশের এলাকার বহু সাধারণ মানুষ প্রাণ হারাচ্ছে। প্রায়ই সুন্দরবনের আশপাশের গ্রামবাসীরা বাঘের ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি হয়। কিন্তু তারপরও নিজেদের জীবন রক্ষার বিষয়টি মারাত্মক না হয়ে উঠলে সেখানকার গ্রামবাসীরা অতিষ্ট হয়ে বাঘ মারতে উদ্ধত হয় না। কারণ গ্রামবাসীরা বুঝতে পারে, বাঘের জীবন তাদের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ।  

মোটকথা প্রতিবেশি হিসেবে বাঘের সাথে কেমন করে সহাবস্থান করতে হবে এর কৌশল জানতে হবে। একইসাথে সে বিষয়ে সচেতন ও আন্তরিক হতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তা না হলে বাঘ রক্ষা করা যাবে না।   

বাঘের আক্রমণে মৃত্যুর পরিসংখ্যান
প্রতিমাসেই বাঘ ও বন বিড়ালের আক্রমণে সুন্দরবনের পার্শ্ববর্তী গ্রামবাসীদের কেউ না কেউ নিহত হয়। সুন্দরবনই বিশ্বের একমাত্র অঞ্চল যেখানকার অধিবাসীরা নিয়মিত বাঘের আক্রমণের শিকার হয়।

গত জুলাই মাসে বাঘের আক্রমণে দুজন নিহত হয়েছে। একটি ঘটনা ঘটেছে ১১ জুলাই। অন্যটি ঘটেছে ২৬ জুলাই। সুন্দরবনের কাছাকাছি বালি গ্রামের অনিল মিস্ত্রি(৪৮) জানান, তারা বনের খুব কাছে মাছ ধরতে গিয়েছিল। এ সময় বাঘ তাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।  

কিন্তু ভারতের অংশে যে সুন্দরবন রয়েছে সেখানে সচরাচর এধরনের ঘটনা ঘটে না। তবে বনের খুব গভীরে জ্বালানি কাঠ, কাঁকড়া কিংবা মধু সংগ্রহ করতে গেলে প্রায়ই বাঘের থাবার শিকার হতে হয়। তখনই মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

কিন্ত কেউ জানে না, সুন্দরবনকে ঘিরে যেসব গ্রাম রয়েছে সেখানে শত শত মানুষের মধ্যে ঠিক কতজন এভাবে বাঘের থাবায় প্রাণ হারিয়েছে।
অমিতাভ ঘোষ তার বিখ্যাত উপন্যাস দি হাঙরি টাইডে সুন্দরবনের চমৎকার কাব্যময় বর্ণনা দিয়েছেন। সুন্দরবন হল ‘ভারত মাতার কাপড়ের ঝুলে পড়া সুতা এবং একইসাথে তার সাড়ির ছেঁড়া আঁচল। ’    

বাঘের হানায় কি পরিমাণ মানুষ সেখানে মারা গেছে তার সুনির্দিষ্ট কোনো পরিসংখ্যান নেই। সরকারি যে হিসাব রয়েছে তা খুবই অস্পষ্ট। সঠিক সংখ্যা তাতে বুঝা যায় না। আবার সাধারণভাবে যেসব ধারণা চালু রয়েছে তাও বাস্তবসম্মত নয়।

অধিকাংশ ক্ষেত্রে যেটা দেখা যায়, সেটা হল এখানে যেসব মানুষ বাঘের হানায় মারা যায় তাদের বেশিরভাগই অবৈধভাবে বনের ভেতর প্রবেশকারী। এবং পরে তাদের আর কোনো খোঁজ খবর পাওয়া যায় না। এই নিখোঁজের ফলে বাঘের শিকার ওই নিখোঁজ ব্যক্তির স্বজনরা প্রায় আশঙ্কা করে থাকে যে, হয়ত তাকে কর্তৃপক্ষের তরফে শাস্তি দেয়া হয়েছে। না হয়, তাদের মাছ ধরার পারমিট বাতিল হয়ে গেছে।

বাঘ কমে যাওয়ার সাথে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব
বাঘ কমে যাওয়ার সাথে বনের পরিবেশেরও সম্পর্ক রয়েছে। পুরো পরিবেশ ব্যবস্থার সাথেই এর সম্পর্ক রয়েছে। বেশ কয়েক বছর ধরে বিশ্বব্যাপী জলবায়ুর ব্যাপক পরিবর্তনের বিষয়টি বনের অস্তিত্বের সাথে গভীরভাবে যুক্ত হয়ে গেছে। এর ফলে আগের চেয়ে সমুদ্রে মাছ কমে যাচ্ছে, মাছ কম ধরা পড়ছে, নদীর নাব্যতা হ্রাস পাচ্ছে, আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে এখন অনেক বেশি সাইক্লোন, সুনামি বেশি হচ্ছে। এর সাথে সমুদ্রে স্বচ্ছ পানি কমে যাওয়ায় সমুদ্রের স্তর মারাত্মকভাবে বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বন্যা ও ঝড়ের মাত্রা বেড়ে গেছে। বায়ূমণ্ডলের ওজন স্তর ফুটা হয়ে আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে উষ্ণতা নির্গমনের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই পুরা পরিস্থিতির কারণে বনাঞ্চলের ক্ষয় হচ্ছে। বনের প্রকৃতি হ্রাস পাচ্ছে। যার সরাসরি ক্ষতিকর প্রভাব পড়ছে বনের প্রাণ ও জীব বৈচিত্র্যের উপর।

বাঘের হামলা বেড়ে যাওয়ার কারণ
বন ও বাঘ রক্ষার উদ্দেশ্যে সুন্দরবনের গ্রামবাসীর উপর ঘন ঘন বাঘের হামলা নিয়ে এখন পর‌্যন্ত প্রচুর গবেষণা হয়েছে। বাঘ রক্ষায় নানারকম প্রস্তাব এসেছে। নেয়া হয়েছে বিভিন্ন উদ্যোগ।

ঘন ঘন বাঘের হামলার ব্যাপারে একটি তত্ত্ব বেশি চালু রয়েছে, সেটা হল, সুন্দরবনের বাঘ বিশ্বের যেকোনো বনের বাঘের চেয়ে অনেক বেশি হিংস্র ও আক্রমণাত্মক। কারণ সমুদ্র উপকূলীয় এলাকায় হওয়ায় এমনটি হয়েছে। সমুদ্রের পানি নোনা হওয়ায় উপকূলের পরিবেশের ওপর এর একটি রুক্ষ প্রভাব স্বাভাবিকভাবেই তৈরি হয়েছে। যেকারণে সেখানকার বনাঞ্চলের বাঘগুলোও বেশি রুক্ষ ও রাগী। তবে বেশিরভাগ বিশেষজ্ঞরা এ তত্ত্বকে স্রেফ মিথ বলে মনে করেন।

বাঘের হামলা বেড়ে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাস্তব কারণেই বনাঞ্চলের মানুষ বনের উপর নির্ভরশীল। কিন্তু বর্তমান সময়ে নানা বৈষয়িক কারণে জীবন যাপনের জরুরি উপায় উপকরণ ও সম্পদ ক্রমাগত কমে যেতে থাকায় তারা বনের গভীর পর‌্যন্ত যেতে বাধ্য হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা যেটাকে বনের নাভী বা প্রাণ বলছেন সেখান পর‌্যন্ত স্থানীয় বসতিরা ঢুকতে শুরু করেছে। অন্যরাও এসে প্রবেশ করছে। তারা মধু, কাঁকড়া, চিংড়ি এবং ঘরবাড়ি, নৌকা ও অন্যান্য আসবাব তৈরির জন্য কাঠ সংগ্রহে ঢুকে পড়ছে বনের একেবারে গভীরে। এই প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় বাঘের হামলাও পাল্লা দিয়ে বেড়ে গেছে। বাঘ বাধ্য হচ্ছে হামলা করতে। হামলা করতে গিয়ে বাঘ বনের বাইরেও বেরিয়ে আসছে। কারণ বাঘ তার প্রয়োজনীয় শিকার ধরতে চায়। অপরদিকে বর্তমানে শিকার কমে যাওয়ায় বাঘ সারাক্ষণ ছুটাছুটি করে। বেশ উদ্বিগ্ন অবস্থায় থাকে। এতে করে বাঘের বিচরণের এলাকায় মানুষের উপস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় শিকার মনে করে তা ধরার জন্য মানুষের চলার পথ অনুসরণ করে বাঘ বাইরে বেরিয়ে আসছে।

আরো কারণ হল বনের ভেতরে মানুষের চলার ধরনের সাথে সাধরণভাবে বাঘ তার শিকারের সাথে মিল খুঁজে পায়। যেকারণে বাঘ মানুষের উপর চড়াও হয়। ভারতের ওয়াইল্ডলাইফ প্রটেকশন সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা ও বাঘরক্ষা কর্মী বেলিন্ডা রাইট জানান, ‘আপনাকে তো বনের ভিতরে ঢুকে বাঘের শিকার অন্যান্য বন্যপ্রাণীদের মতো ধীরপায়ে হাঁটতে হয়, অনেকটা হামাগুঁড়ি দিয়ে চলার মত করে হাঁটেন। এতে মানুষ তো এ সময় চারপেয়ে প্রাণীদের মতো হয়ে যায়। ফলে বাঘ তার শিকার মনে করে সেভাবেই মানুষের সাথে আচরণ করে। অন্যদিকে স্থানীয় লোকজন বেশ কয়েক বছর ধরে এ ধরনের ম্যানগ্রোভ বনের উপর পুরাপুরি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। আর তাছাড়া বিশেষ করে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের এ বন এলাকা হল দেশটির সবচেয়ে দারিদ্র্য নিপীড়িত অঞ্চল। এখানে কোনো রাস্তা নেই, বিদ্যুৎ নেই। মানুষের মিনিমাম সুবিধাটুকু এখানে খুবই কম। কোনোমতে এখানে একটি মাত্র স্বাস্থ্যকেন্দ্র তৈরি হয়েছে। ’

ডব্লিউ ডব্লিউ এফ এর কর্মকর্তা জোসেফ ভ্যাটাকাভেন জানান, এমন একটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে যাতে মানুষ খেতে হচ্ছে বাঘকে। কারণ মানুষজন বনের গভীরে ঢুকছে। তাদের কেউ দেখতে পায় না। কিন্তু তারা তো সেখানে তাদের চলার চিহ্ন রেখে আসছে। এ চিহ্ন অনুসরণ করে বাঘ মানুষের উপর চড়াও হয়। আবার এ চিহ্ন অনুসরণ করেই বাঘ বাইরে চলে আসে।

বন এলাকার মানুষই জানে কিভাবে বাঘের সাথে থাকতে হয়
ভ্যাটাকাভেন জানান, বাঘের হামলায় এত মৃত্যুর পরও বাঘের প্রতি স্থানীয় মানুষদের এক অন্যরকম মমত্ববোধ কাজ করে। বাঘের প্রভাব মানুষ কোনোভাবেই এড়াতে পারে না।

তিনি বলেন, ‘বনের কাছের গ্রামবাসীদের জীবনে রয়েল বেঙ্গল টাইগারের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তারা মনে করে, রাতের অন্ধকার নেমে এলে বাঘ তাদের মেরে ফেলতে পারে। এই ব্যাপারটিই তাদের পুরো মনোজগত বা ভাবজগতকে বদলে দিয়েছে। ’ ‘এই ভাবটি সবসময়ই তাদের মধ্যে কাজ করে। যখনই তারা বনে মাছ ধরতে যায় বা মধু সংগ্রহ করতে যায়, তারা গভীর আশঙ্কায় থাকে। মনে মনে ভাবে এটাই বুঝি তাদের শেষ যাত্রা। আর মনে মনে বাঁচার জন্য দোয়া করতে থাকে। ’

যে বাঘের হানায় মারা গেছে তারে গ্রামবাসী কেউ ভুলতে পারে না। গ্রামের প্রতিটি মানুষই তার কথা মনে রাখে। এমন কোনো গ্রাম নেই যেখানে কেউ না কেউ বাঘের থাবায় মারা পড়ে নি। এমনকি হামলায় বাঘের নখের আঁচড়, কামড়, আঘাতের চিহ্ন বয়ে বেড়ায় এমন মানুষের সংখ্যাও অনেক। এসব এলাকায় গিয়ে কারো সাথে বাঘের কথা উঠালেই এসব আহতের দাগ দেখিয়ে দেয়া হয়।

তবু এমন হামলার শিকার মানুষ ও তাদের স্বজনরা বাঘকে এতটুকু ঘৃণাও করে না। গ্রামবাসীদের বহু মানুষ আছে যারা বাঘ কেন বনের কোনো প্রাণীকেই তারা ঘৃণা করে না। বাঘের প্রতি, বন্যপ্রাণী ও পাখিদের প্রতি তাদের ভালবাসা বিস্ময়কর। তারা রীতিমত বনের সংরক্ষক। বিশেষ করে এসব মানুষ জানে কিভাবে বাঘের সাথে একসাথে থাকতে হয়। বসবাস করতে হয়। তারা বনের কাঠ কাটার ঘোরতর বিরোধী।

উদাহরণ দিতে গিয়ে সুন্দরবনের ভারতীয় অংশের এক নারীর ঘটনা জানান বেলিন্ডা রাইট। ১৪ বছরের স্কুল ছাত্রী রুপালি বওলিয়া বাঘের হামলায় নিহত হয়। তার বাবার সাথেই রাইটের কথা হয়। ২০০৪ সালের ঘটনা। সে সময় রাতে রুপালি তাদের মাটির ঘরে বসে স্কুলের হোমওয়ার্ক করছিল। এ সময় বাঘ তার উপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

এ ঘটনার কথা স্মরণ করে রুপালির বাবা বিমল বওলিয়া বন সংরক্ষণ ও বাঘ রক্ষায় তার আকুতি প্রকাশ করেন। বিমল বলেন, ‘যদি আমরা সমৃদ্ধ হতে চাই, নিরাপদভাবে বেঁচে থাকতে চাই তবে আমাদের বুঝা দরকার এবং এই আকাশ এই বন, এই বাঘকে আমাদের শ্রদ্ধা করা জরুরি। ’

বাঘ সংরক্ষণে উদ্যোগ
বাঘ রক্ষাকর্মী ভ্যাটাকাভেন এসব উদ্যোগের সাথে জড়িত। তাদের চলমান একটি উদ্যোগ হল, বনের চারপাশে নাইলনের বেড়া নির্মাণ। যাতে বেড়ায় বাধা পেয়ে বাঘ ভেতরে থেকে যায়। সেইসাথে বনের গভীরে প্রবেশে লোকজনের উপর বাধা শক্তিশালী করা।    

এছাড়া আরো উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তবে এসব উদ্যোগ বেশি একটা সফল হয়নি। যেমন সুন্দরবনের গভীরের হ্রদ ও সরু খালে বোটে করে মানুষের ডামি ভাসিয়ে দেয়া হয়। এসব ডামিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে রাখা হয়। ভাবনাটা হল, ডামিটাকেই বাঘ মানুষ মনে করবে। এবং শিকার হিসেবে যখন ধরার চেষ্টা করবে তখন ইলিক্ট্রিক শক খাবে। শক খাওয়ার পর মানুষকে আর শিকার ভাববে না বাঘ। ফলে দ্বিতীয়বার মানুষ দেখলে বাঘ চড়াও হবে না।

এই উদ্যোগ বেশি সফলতা পায়নি। তবে নাইলনের বেড়া বেশি ফলদায়ক হবে বলে বেশ আশাবাদী ভ্যাটাকাভেন। এ উদ্যোগের প্রাথমিক লক্ষ্য হল, বাইরে বের হতে বাধা দিয়ে বনের অভ্যন্তরে বাঘকে থাকতে দেয়ার ব্যাপারটি নিশ্চিত করা।  

এছাড়া গ্রামের রাস্তায় রাস্তায় বাড়ির আশপাশে রাতের বেলায় লাইট জ্বালানোর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারণ বাঘের কাছে অন্ধকার বেশি পছন্দনীয় হওয়ায় গ্রামের ভেতরে বাঘের প্রবেশের সময় আলো দেখে ফিরে যেতে পারে। এ সময় বাঘকে বাধা দেয়ার কাজ করবে লাইটের আলো।

সবকিছুর পরও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন জনসচেতনা সবচেয়ে বেশি জরুরি। পাশাপাশি বাঘ ও বন সংরক্ষণে প্রয়োজনীয় আইন কার‌্যকর করা আরো বেশি জরুরি। এতে আইন শৃঙ্খলার উন্নতি ঘটলে বহিরাগত মানুষদের বনের ভেতর প্রবেশ ঠেকানো যাবে। তবে স্থানীয় মানুষদের জন্য সরকার ও উদ্যোগী মানুষদেরকে নতুন ধরনের কাজ ও শ্রমের ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে হবে। যাতে স্থানীয় মানুষদের বনের ওপর যে নির্ভরশীলতা গড়ে উঠেছে তা দূর করা সম্ভব হয়। আর তা দূর হলে বনের ভেতর মানুষের যাতায়াত বন্ধ হবে। এবং বাঘ ও বনের সংরক্ষণ প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে আরো গতিশীল হবে।

বাংলাদেশ সময়: ১২৫৮ ঘন্টা, আগস্ট ০৮, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।