ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

মিশুক মুনীর-তারেক মাসুদ

আমাদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

আদনান সৈয়দ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৪
আমাদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা

নিষ্ঠুর সময় দ্রুত চলে যায়। বিশ্বাস করতে কষ্ট হয় যখন এই লেখাটি যাদের উদ্দেশ্যে লিখছি তারা দুজন এই জাগতিক জীবন থেকে অনেক দূরে।

তাদের নামের আগে এখন প্রয়াত নামের একটা কঠিন ভয়ংকর শব্দ জুড়ে বসে আছে। অথচ এই সেদিনও মিশুক ভাইয়ের সাথে নিউইয়র্কের স্টারবক্সে বসে কফির চুমুকের সাথে সাথে কত বিষয় নিয়েই না আড্ডা! মিডিয়া নিয়ে তার কত স্বপ্ন! এটিএন নিউজে নতুন নতুন কত বিষয় নিয়ে অনর্গল কথা বলে গেলেন মিশুক মুনির। আমি আর বন্ধু আতিক তাই শুধু মন্ত্র মুগ্ধের মত শুনেছি। বয়সের লম্বা তফাত থাকা সত্ত্বেও কখনও মনে হয়নি মিশুক ভাই আমাদের চেয়ে অনেক বড়। কখনও মনে হয় নি তিনি বাংলাদেশের একজন বড় মিডিয়া ব্যক্তিত্ব। শুধু মনে হত তিনি বুঝি আমাদেরই একজন খুব কাছের এক বন্ধু। অথচ তার সাথে আগে থেকে যে খুব পরিচয় ছিল তাও কিন্তু নয়। নামটা জানা ছিল। আরো জানা ছিল তিনি শহীদ মুনির চৌধুরির পুত্র। অথচ বন্ধু আতিকের বাসায় আনুষ্ঠানিক পরিচয়ের পরমুহূর্ত থেকেই তিনি একজন কাছের মানুষ হয়ে গেলেন। সমস্যাটা হয়ে গেল সেখানেই। কাছের মানুষ হয়ে যাওয়া মানেই আত্মার আত্মীয়। ভাই বাংলাদেশে চলে গেলেন। ঠিক তিন দিন পর গভীর রাতে চলচ্চিত্র নির্মাতা এনায়েত করিম বাবুল ভাইয়ের ফোন। মিশুক ভাই, তারেক মাসুদ নাকি আর নেই। সেই চশমা আর তার আড়ালে বুদ্বিদীপ্ত চোখ, কাশ ফুলের মত ইয়া বড় গোঁফ ঝুলে আছে নাকের ডগায়, এলোমেলো শুভ্র চুল, ছিপছিপে লম্বা, কফি পাগল, বিরিয়ানি পাগল লোকটা নাকি আর নেই! কি অবাক করার মত কথা! মৃত্যুর কঠিন আর নির্মম বাস্তবতার শিকার তাকে হতেই হল। শুধু বার বার মনে হয় এই মৃত্যুর মত এত বাস্তব সত্য আর কি হতে পারে?

গত ১৩ আগস্ট, বুধবার নিউইয়র্ক ফিল্ম সেন্টার জ্যাকসন হাইটস এর ইস্ট ওয়েস্ট টিউটরিয়েলে গাড়ি দুর্ঘটনায় নিহত মিশুক মুনীর এবং তারেক মাসুদের তৃতীয় মৃত্যু বার্ষিকী উপলক্ষে এক স্বরণ সভার আয়োজন করে। আলোচকবৃন্দরা কেউ ছিলেন তাদের ঘনিষ্ঠতম বন্ধু, কেউ ছিলেন সহযোগী যোদ্ধা। অসাধারণ এক অনুষ্ঠান। বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা এবং নিউইয়র্ক ফিল্ম সেন্টারের উপদেষ্টা কবির আনোয়ার বলেন, ‘মিশুক কিংবা তারেক আমাদের জন্য ছিল অহংকার। দুঃখজনক যে এরা দুজনেই সড়ক দুর্ঘটনায় চলে গেলেন। এর চেয়ে বেদনার আর দুঃখের আর কি আছে? আমাদের সব শিল্প-সাংস্কৃতিক জোটদের উচিত বাংলাদেশে যাতে আর একটি প্রাণও সড়ক দুর্ঘটনায় ঝরে না যায় সে জন্য সরকারের প্রতি জোর চাপ তৈরি করা। ’

এ কথা চোখ বুজেই বলে দেওয়া যায় যে, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রকে বাংলাদেশের উঠান পেরিয়ে বহির্বিশ্বের সাথে পরিচয় করিয়ে দেওয়ার অন্যতম আয়োজক ছিলেন তারেক মাসুদ। অন্যদিকে বাংলাদেশে টিভি সাংবাদিকতার পুরোধা ছিলেন মিশুক মনির। মিডিয়া নিয়ে যিনি বাংলাদেশে বসে অনেক দূর ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলেন। দুঃখজনক যে চলচ্চিত্র স্বপ্নদ্রষ্টা, সংস্কৃতি পাগল, উদ্যোমী আর মেধাবী এই তরুণদের খুব অকালেই আমাদের কাছ থেকে ঝরে যেতে হল।
এই স্বরণ সভায় উপস্থিত ছিলেন নিউইয়র্ক ফিল্ম সেন্টার এর কর্মকর্তাবৃন্দসহ অনেকেই। তারেক মাসুদ এবং মশুক মুনিরের উপর কর্ম এবং ব্যক্তিগত স্মৃতিচারণে ওবায়েদুল্লাহ মামুন, মিনহাজ আহমেদ, আদনান সৈয়দ, অনিন্দ আতিক, আকবর হায়দার কিরণ, তানভির রব্বানী, মোশাররফ আহমেদ,আশরাফুল হাসান বুলবুল, সেমন্তী ওয়াহেদ,মাহফুজা বুলবুল,ফাহিম রেজা নূর, লুৎফা শাহানা, মিম, তাসের খান মাহমুদসহ আরো অনেকেই অংশ গ্রহণ করেন।

আবারো মিশুক মুনির এবং তারেক মাসুদের কাছে ফিরে আসি। এরা দুজনেই হলেন আমাদের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা। এদের মৃত্যু নেই। মৃত্যু এদেরকে ছুতে পারে না। পারবে না। আর সে কারণেই মিশুক মুনীর, তারেক মাসুদরা বেঁচে রইবেন আমাদের মাঝে সবসময়, যুগ যুগ ধরেই।

নিউইয়র্ক থেকে

বাংলাদেশ সময়:১৫৫৪ ঘণ্টা, আগস্ট ১৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।