বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড (বিসিবি) ক্রিকেট অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের ওপর জারি করা নিষেধাজ্ঞা শিথিল করেছে।
মঙ্গলবার বিসিবি’র নির্বাহী কমিটির এক সভায় সাকিবের ওপর জারি করা দেশে ও বিদেশে ক্রিকেট খেলার ওপর নিষেধাজ্ঞা ছয় মাসের বদলে তিনমাসে কমিয়ে এনেছে।
এর ফলে সাকিব এ বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে ফের ক্রিকেটে অংশ নিতে পারবেন। তবে ঘরোয়া ও আন্তর্জাতিক লিগে খেলার ওপর জারি করা বিধিনিষেধ কমিয়ে কিংবা পুরোপুরি তুলে নেওয়া হচ্ছে না।
তারমানে আইপিএল চ্যাম্পিয়ন কলকাতা নাইড রাইডার্স সাকিবের অভাব বোধ করবে। এছাড়াও সাকিব কেএফসি বিগ বাস, ইংলিশ ক্রিকেট লিগ বা সিপিএলে অংশ নিতে পারবেন না।
তবে এটা ভেবে নেওয়া ঠিক হবে না যে, আমরা সাকিবের অখেলোয়াড়সুলভ বা আপত্তিকর আচরণে পক্ষে কথা বলছি। আমরা সাকিবের শিশুসুলভ ও অদায়িত্বহীন আচরণের বিপক্ষে।
তার দায়িত্বহীন আচরণের জন্য শৃঙ্খলা কমিটির সাজা ভোগ করতে হয়েছে সাকিবকে। তবে এটাও মনে রাখতে হবে, একজন খেলোয়াড় যখন ভুল করেন এবং সে ভুলের জন্য ক্ষমা চান, তখন কেন এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া- যে কারণে একজন খেলোয়াড়ের হৃদয় ক্ষত-বিক্ষত হয়!
আমরা বিসিবির সঙ্গে এ বিষয়ে একমত নই। আমরা চাই, সাকিবের ওপর আরোপিত সাজা ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে প্রত্যাহার করা হোক। তাকে মুক্তভাবে খেলতে দেওয়া হোক এবং সেই সঙ্গে বাংলাদেশকে বিদ্যমান পরিস্থিতি থেকে উত্তরণ ঘটানোর সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হোক।
আমরা দেখেছি, সাকিব তার ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখিয়ে বাংলাদেশকে বিভিন্ন ম্যাচে বিজয়ী করেছে।
বিসিবি প্রেসিডেন্ট নিহত সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনির সন্তান মেঘ সাকিব সম্পর্কে কী বলেছিল, তা কি শুনতে পাননি!
তারকা ও অসাধারণ ব্যক্তিরা অন্যদের থেকে একটু আলাদাই হয়। সেই জন্য তাদের সঙ্গে আচরণটাও কিছুটা ভিন্ন হবে। মেঘ সাকিবের হাজার হাজার ভক্তদের সঙ্গে একই সুরে গলা মিলিয়ে সাকিবকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখতে বলেছে।
আমরা মনে করি, মেঘ-এর আহ্বান সাকিবকে আরো বেশি দায়িত্বশীল করে তুলবে। তরুণেরা সাকিবকে আইডল হিসেবে দেখেছে। এই দায়িত্বশীলতাই, সাকিবকে সত্যিকারের একজন খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলতে সাহায্য করবে।
সাকিবই একমাত্র বাংলাদেশের খেলোয়াড় যিনি দেশের জন্য আইসিসি র্যাংকিংয়ে সর্বোচ্চ খেতাব বয়ে এনেছেন। তার অর্জন বাংলাদেশকে গর্বিত করে। শুধু তাই-ই নয়, বিদেশের ক্রিকেট অঙ্গনে বাংলাদেশকে তিনিই পরিচিত করে দিয়েছেন।
সাকিবের ক্রিকেট দক্ষতা এতই মানসম্মত যে, অন্য দেশের ক্রিকেট কর্তৃপক্ষের নজরে এসেছেন তিনি। ফলে, তারা সাকিবকে তাদের দেশে খেলার জন্য ডেকে নিয়ে গেছেন। আমাদের মনে রাখতে হবে, সাকিব ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া ও ওয়েস্ট ইন্ডিজে তার যে ক্রীড়ানৈপুণ্য দেখিয়েছেন, তা আমরা ভুলবো না। তার মতো আর কেউই সে রকম নৈপুণ্য দেখাতে সক্ষম হননি। শুধু বাংলাদেশ সরকারই নয়, কেউই একজন খেলোয়াড়কে তার পেশাগত খেলা থেকে বিরত রাখার অধিকার রাখেন না।
সাকিবকে বিদেশে খেলা থেকে বিরত রাখা বিসিবির উচিত হবে না, যদি না বাংলাদেশের অনে কোনো খেলার সময়ের সঙ্গে তা মিলে যায়। সাকিবকে প্রযোগিতামূলক খেলায় তার পারদর্শিতা দেখানোর সুযোগ আমাদের দেওয়া উচিত।
সম্প্রতি, ওয়েস্ট ইন্ডিজের তারকা স্পিনার নারিনকে আইপিএলের ফাইনালে কলকাতা নাইট রাইডার্সে খেলার সুযোগ করে দেয় সে দেশ। যদিও একই সময়ে নিজের দেশে তখন ওয়েস্ট ইন্ডিজ ওডিআই খেলছিল।
বিশ্ববাসী দেখলো কীভাবে সাকিব ছাড়া বাংলাদেশ ওডিআইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাজে খেলা খেলেছে। সাকিবের অনুপস্থিতিকে সামাল দিতে তিনটি ম্যাচেই সাতজন ব্যাটসম্যান, চারজন ওপেনার পাশে ছিলেন। এর মধ্যে সর্বশেষ ম্যাচটিতে বাংলাদেশ দলের খেলার নৈপুণ্য ছিল একেবারেই অনুল্লেখ্য। এটিতে বাংলাদেশ দল শুধু হোয়াইট ওয়াশই হলো না, ৭০ রানে বোল্ড আউট হতে হয়েছে। সেই সঙ্গে একমাত্র তামিম ছাড়া আর কারোরই রান সংখ্যা দুই অংকের ঘরে পৌঁছায়নি।
সাকিবের বোলিংয়ের অভাবে তৃতীয় ওডিআইতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ রেকর্ড গড়ার সুযোগ পেয়েছে। বাংলাদেশ দল প্রথম তিনটি ম্যাচের প্রথম দিকে ভালো সুযোগ তৈরি করতে পারলেও সাকিবের অনুপস্থিতিতে তা ভেস্তে গেছে।
আমরা নিশ্চিত নই যে, শুধুমাত্র মাশরাফি ও তাসকিন টেস্ট সিরিজের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ কিনা। সাকিবের অনুপস্থিতিতে টেস্টে বাংলাদেশ শক্ত কোনো অবস্থানে যেতে পারবে কিনা। বাংলাদেশ তার দুর্বল বোলিং নিয়ে আশা করতে পারে না যে, ওয়েস্ট ইন্ডিজের ২০ উইকেট নেবে। টাইগারর পেছন থেকে সিরিজ শুরু করবে। আমরা আশ্চর্য হবো না, যদি ওয়েস্ট ইন্ডিজ নতুন কোনো রেকর্ড গড়তে পারে। আমরা এ জন্য বিসিবি ও বাংলাদেশ দল ব্যবস্থাপনাকেই দায়ীকেই দায়ী করবো।
আমরা অনেক পরে জানতে পারি, সাকিবকে প্রথম টেস্টের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজে পাঠানো হবে। বাংলাদেশের বৃহত্তর স্বার্থে আমি অন্তত আশা করবো যে, সাকিবের সাজা ৩১ আগস্টের পরে যেন আর বহাল না থাকে। এতে করে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজে দ্বিতীয় ম্যাচে অংশ গ্রহণ করতে পারবেন।
সাকিব কিন্তু অনুশীলন করছেন। তবে যথেষ্ট অনুশীলন হয়নি এই অভিযোগে যেন তাকে দল থেকে বাদ না দেওয়া হয়।
এ বাদেও আমি আরো পরামর্শ দিতে চাই, আইসিসি ওয়ার্ল্ড কাপ-২০১৫ পর অন্য দেশের ঘরোয়া ক্রিকেট খেলায় সাকিবের ওপর থেকে যেন নিষেধাজ্ঞা তুলে নেওয়া হয়।
আইসিসি কাপে নির্বাচিত করার আগে কোনো ক্রিকেটারকে যেন বিদেশে খেলতে দেওয়া না হয়।
বিদেশে খেলতে যাওয়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে বিসিবি বা বাংলাদেশ ক্রিকেট কোনো কিছুই অর্জন করতে পারবে না। বরং খেলতে দেওয়ার অনুমতি দিলে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। এতে বাংলাদেশই বরং অনেক কিছু অর্জন করবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৭১০ ঘণ্টা, আগস্ট ২৭, ২০১৪