ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ইউক্রেনে রাশিয়ার ধীরগতির যুদ্ধকৌশল ।। ইউরি ফ্রাইডম্যান

.. | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৪
ইউক্রেনে রাশিয়ার ধীরগতির যুদ্ধকৌশল ।। ইউরি ফ্রাইডম্যান

ইউক্রেনের ক্রিমিয়া প্রথমে স্বায়ত্বশাসন দাবি করেছিল। পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হতে থাকলে এক পর্যায়ে স্বাধীনতার দাবিতে গণভোট দাবি করে বসে ক্রিমিয়া।

এ ঘটনায় ক্রিমিয়াকে ইউক্রেনের বিপরীতে পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সহযোগিতা দেয় রাশিয়া। গেল মার্চে গণভোটের মাধ্যমে ক্রিমিয়াকে রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত করার পর ইউক্রেন-ইউরোপ-মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র-বনাম রাশিয়ার এ যুদ্ধ পরিস্থিতি চরম আকার ধারণ করে। এ ঘটনার পর দেশটির পূর্বাঞ্চলীয় দোতেনস্ক এলাকার জনগণও ইউক্রেনের সঙ্গে আলাদা হয়ে যাওয়ার গণভোট দাবি করে।

তবে ক্রিমিয়ার ঘটনা এতটা উত্তপ্ত না হলেও দোতেনস্কের স্বাধীনতা নিয়ে এ অঞ্চলের বিদ্রোহীরা মারাত্মক হয়ে ওঠে। পরবর্তীতে সেখানে ইউক্রেন ও ব্রিদ্রোহীদের মধ্যে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি হয়, তাতে রাশিয়ার অবস্থান খুব কঠোর হয়ে ওঠে। শেষ পর্যন্ত রাশিয়া তার কঠোর মনোভাব থেকে সরে এলেও ইউক্রেনের সঙ্গে সংঘাত ও বিরোধ প্রশ্নে মস্কো নতুন অবস্থান গ্রহণ শুরু করে। কিন্তু এর মধ্যেই রাশিয়া বনাম আমেরিকা প্রায় যুদ্ধ যুদ্ধ অবস্থা বিরাজ করতে থাকে।   

এই পটভূমিতে রাশিয়া কি তাহলে সত্যি সত্যি ইউক্রেনে হামলা করতে যাচ্ছে? ইউক্রেনের কাছে জানতে চাইলে তার উত্তর হবে, হ্যাঁ। কিন্তু রাশিয়ার কাছে জিজ্ঞাসা করলে উত্তর হবে না। অপরদিকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে জানতে চাইলে উত্তর হবে, ইউক্রেন থেকে ক্রিমিয়ার আলাদা হওয়ার পর রাশিয়া ইউক্রেনে আগ্রাসনের একটি মাত্রা দেখিয়ে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এই পরিস্থিতিকে রাশিয়ার ‘হামলা’ হিসেবে দেখছে না। এতে করে যুক্তরাষ্ট্র হয়ত কূটনৈতিক এবং রাজনৈতিক জটিলতা এড়ানোর চেষ্টা করছে।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলের সীমান্ত জুড়েই রাশিয়া ভয়াবহ যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে। ন্যাটো জানিয়েছে, এ মুহূর্তে ইউক্রেনের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলে ভারি অস্ত্রসহ রাশিয়ার এক হাজার এবং সাধারণ পদাতিক সৈন্য মোতায়েন রয়েছে ২০ হাজারেরও বেশি। রাতের গভীর অন্ধকারে রুশ সেনারা এসব ভারি ভারি অস্ত্রশস্ত্র ও সামরিক সরঞ্জাম নিয়ে ইউক্রেনের এই সীমান্তে হাজির হয়।

গত মাসের প্রথম দিকে ইউক্রেনের সীমান্তে বেশ কয়েকজন রুশ সেনাকে আটক করে কিয়েভের বাহিনী। রাশিয়ার সেনাবাহিনীর বড় ধরনের একটি ট্রাক বহর ইউক্রেনে অভ্যন্তরে প্রবেশের সময় তাদেরকে আটক করা হয়।
image.adapt_1
এ অবস্থায় আপনি যদি মনে করেন, রুশপন্থী ইউক্রেনের বিচ্ছিন্নতাবাদী এবং রুশ সেনারা ইউক্রেনে ছুটি কাটাচ্ছে কিংবা আপনি যদি মনে করেন, রাশিয়ার প্যারামিলিটারি বাহিনীর ওই ট্রাকটি দুর্ঘটনাক্রমে ইউক্রেন সীমান্তে ঢুকে পড়েছে, তার মানে আপনি বলতে চাচ্ছেন—রাশিয়ার সরকার ইউক্রেন বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধরত বিদ্রোহীদের কোনো অস্ত্র দিচ্ছে না, কিংবা কোনোরকম নির্দেশনা দিচ্ছে না। তাহলে ওই ট্রাকটি কেন ঢুকে পড়েছিল? আপনি তাহলে মনে করছেন, ট্রাকটি মানবিক সাহায্য পৌঁছানোর জন্য ইউক্রেনের ভেতরে ঢুকে পড়ে?

অবশ্য ট্রাকটি ঢুকে পড়ার ওই ঘটনা নিয়ে একটি জবাব দিয়েছেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। তার বক্তব্য হল, ট্রাকটির ‘এইটুকু সবুজ শান্ত লোকেরা’ আসলে রুশ সেনাবাহিনীর ইউনিফর্ম কেনার জন্য গিয়েছিল। সেইসঙ্গে পুতিন স্বীকারও করে নিয়েছেন, তারা আসলে দৈবক্রমে রুশ সেনা!
         
বাস্তবতা হলো, রাশিয়া ও ইউক্রেন পুরাপুরি একটি কার্যকর যুদ্ধের মধ্যেই আছে। মাঝে মাঝে রাশিয়া ইউক্রেনের সঙ্গে এ সংঘাতে আরো বেশি খোলাখুলি হওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। আবার কিছুটা শ্লথ হয়ে যায়। মূলত এর মধ্য দিয়ে যে ব্যাপারটি পরিষ্কার হয়ে যায় তা হল, রাশিয়া একটি অভিনব যুদ্ধ কৌশল অনুসরণ করে যাচ্ছে। মানে আন্তর্জাতিক শক্তির প্রতিক্রিয়াটা যদি এমন হয় যে, ইউরোপের একটি প্রধান শক্তি অপর একটি শক্তির উপর হামলা করল, তাহলে এর মানে দাঁড়াবে, তাদের মধ্যে পরিস্থিতি শান্ত হয়ে গেল। কিন্তু ব্যাপারটা রাশিয়ার দিক থেকে এমন নয়। কারণ ক্রেমলিনের কৌশল হল খুবই অদ্ভুত। অন্তত পাঁচ মাস ধরে রাশিয়া একটি ছদ্মবেশি যুদ্ধের আবহ তৈরি হয়ে আছে। একদিকে তারা শান্তির ভান ধরে। আবার যুদ্ধ পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। ধীরে ধীরে রাশিয়া তার আগ্রাসনের মাত্রা বাড়ায়, উত্তেজনা ছড়িয়ে আবার দেশটি পিছে নেমে আসে। অবস্থা এমন যে, রাশিয়ার বিরুদ্ধে প্রত্যক্ষ কোনো অ্যাকশনেও যাওয়া যায় না, আবার সে যে যুদ্ধ পরিস্থিতি তৈরি করে রেখেছে তা থেকে সরেও আসা যায় না।    

মার্কিন সামরিক বিশেষজ্ঞ মাইকেল ওয়েসিস এ অবস্থাকে ‘ধীর বিন্দু বিন্দু আক্রমণ’ বলে আখ্যায়িত করেছেন। কিন্তু এ অবস্থা কেমন করে গড়ে তুলেছে রাশিয়া, আমরা আসলে তা জানিই না। তার মানে কি রাশিয়া এর মধ্য দিয়ে যুদ্ধের একটি নতুন ধরনের রূপরেখা তৈরি করছে। কিংবা পুতিনের বর্তমান প্রশাসন কি পুরানো সোভিয়েত রাশিয়ার পুরা কাঠামোটাকেই ভেঙে দিচ্ছে?
  
এ অবস্থা রাশিয়ার ক্ষেত্রে নতুন কোনো ঘটনা না। ঠাণ্ডা যুদ্ধের সময়ও রাশিয়া তাই করেছে। পশ্চিম ইউরোপে হামলা করতে গিয়ে সে সময় রাশিয়া যে ‍যুদ্ধ কৌশল বেছে নিয়েছিল তার বহু পন্থাই এখন ইউক্রেনের ক্ষেত্রেও অনুসরণ করছে। তবে বর্তমানে পুতিন যেটি করছে তাতে অন্যরকম বৈশিষ্ট্য ধরা পড়ছে। মানে নতুন ভাবে নতুন মাত্রায় পুরানা যুদ্ধ কৌশলের প্রয়োগ।  

২৯ আগস্ট লেখাটি দি আটলান্টিকে প্রকাশিত

ইংরেজি থেকে অনুবাদ : শাহাদাৎ তৈয়ব

বাংলাদেশ সময় : ১৩০৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।