বিখ্যাত নীতিবাদী দার্শনিক। অস্ট্রিয়ার বংশদ্ভূত হলেও অ্যাডওয়ার্ডস আমেরিকান হিসেবেও পরিচিত।
১৯২৩ সালে অস্ট্রিয়ার রাজধানী ভিয়েনার পল এইসেন্সটেইনে ২ সেপ্টেম্বর জন্ম গ্রহণ করেন অ্যাডওয়ার্ডস। তিন ভাইয়ের মধ্যে সর্বকনিষ্ট অ্যাডওয়ার্ডস তার ইহুদি বাবা মার সঙ্গে বেড়ে ওঠেন। তবে অস্ট্রেলিয়ার খ্যাতিমান নীতিবাদী দার্শনিক পিটার সিঙ্গার জানান, অ্যাডওয়ার্ডসের শৈশব বা শিক্ষা জীবনের বেড়ে ওঠাটা ধর্মীয় গণ্ডির মধ্যে হয়নি। ধর্মীয় কায়দায় তার বিকাশ হয়নি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ১৯৩৮ সালে অস্ট্রিয়ার সঙ্গে জার্মানির যুক্ত হওয়ার সময় পড়ালেখার জন্য অ্যাডওয়ার্ডসের পরিবার তাকে স্কটল্যান্ডে পাঠান। সেখান থেকে তিনি পরবর্তীতে অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নে পরিবারের সঙ্গে মিলিত হন। আগে তার নামের সঙ্গে অ্যাডওয়ার্ডস ছিল না। অস্ট্রেলিয়ায় যাওয়ার পর তার পারিবারিক নাম এডওয়ার্ডস হয়ে যায়। অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন হাই স্কুলের শিক্ষা জীবনের পাঠ চুকে তিনি মেলবোর্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শনে পড়াশোনা করেন।
শিক্ষা ও কর্ম
১৯৪৭ সালে অ্যাডওয়ার্ডস স্কলারশিপ পেয়ে ইংল্যান্ডে পড়াশোনা করেন। সর্বশেষ তার এ শিক্ষার অভিযাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়র্কে স্থির হয়। এখানেই তিনি জীবনের শেষ পর্যন্ত কাটিয়ে দেন। দর্শনে শিক্ষকতাই ছিল তার পেশা ও নেশা। বার্কলির ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছুদিন শিক্ষকতা করেছেন। এরইমধ্যে তিনি ১৯৫১ সালে কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।
১৯৬৬ সাল পর্যন্ত নিউইয়র্ক ইউনিভার্সিটি, ১৯৮৬ পর্যন্ত ব্রুকলিন কলেজে শিক্ষকতা করেন। এছাড়া ষাটের দশক থেকে এডোয়ার্ড ১৯৯৯ পর্যন্ত নিউ স্কুলে শিক্ষকতা করেন।
ধারণা
আধুনিক ইউরোপীয় দর্শনের এনালিটিক্যাল ধারায় অ্যাডওয়ার্ডস বিশ শতকের একজন গুরুত্বপূর্ণ নীতিবাদী দার্শনিক। তিনি মূলত বার্টান্ড রাসেল ও কিয়েরগার্ড দ্বারা প্রভাবিত। তার দর্শন চিন্তার প্রধান কাজের জায়গা হলো— স্কেফটিসিজম বা সংশয়বাদ।
বার্টান্ড রাসেল যেমন ধর্মীয় অবিশ্বাস লুকাতেন না, অ্যাডওয়ার্ডসও তেমনি তার ধর্মে অবিশ্বাসের কথা গোপন করেননি। দার্শনিক দিক থেকে তার দুটি মূল লক্ষ্য ছিল, একটা হল, কন্টিন্যান্টাল ফিলসফিক্যাল ধারার বিখ্যাত জার্মান দার্শনিক মার্টিন হেইডেগারের শক্তিশালী প্রভাবকে ধাক্কা দেয়া। দ্বিতীয় লক্ষ্য ছিল, উইলহেল্ম রেইচের মনোবিশ্লেষণী দার্শনিক যুক্তিধারায় আঘাত হানা।
ধর্মীয় চিন্তা বা বিশ্বাসের জন্ম অনিশ্চয়তা ও সংশয় থেকে—এ ধারণা যেভাবে দার্শনিক যৌক্তিক প্রক্রিয়ায় বিস্তারিত হয়েছে বার্টান্ড রাসেলের মধ্যে অ্যাডওয়ার্ডস তা আরো বিশ্লেষণ করেছেন। বার্টান্ড রাসেলের স্কেপটিসিজমের উপর ডক্টরেট থিসিস শেষ করার পর রাসেলের সঙ্গে তার ভাল বন্ধুত্বও গড়ে ওঠে। এমনকি অনেক কাজ তারা যৌথভাবেও সম্পন্ন করেছেন। ১৯৫৭ সালে অ্যাডওয়ার্ডস রাসেলের ধর্ম বিষয়ক দর্শন ও চিন্তা বিষয়ক রচনা একসঙ্গে করে বের করেন। ‘হোয়াই আই এম নট আ খ্রিস্টিয়ান’ শিরোনামে এ সংকলন প্রকাশিত হয়।
বিজ্ঞান ও যুক্তির ধারায় অ্যাডওয়ার্ডসের গভীর দখল আছে বলে মাইকেল রীনের মতো দার্শনিকরা স্বীকার করেছেন। নৈতিক দর্শনে রয়েছে তার গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ১৯৬৫ সালে প্রকাশিত ‘আ মডার্ন ইন্ট্রুডাকশন টু ফিলসফি’ এবং ১৯৬৭ সালে প্রকাশিত বিখ্যাত ‘এনসাইক্লোপেডিয়া অব ফিলসফি’ তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ। এ দুটি সংকলনেই এডওয়ার্ডস গভীরভাবে যুক্ত। আর্থার প্যাপ এর সাথে যৌথ সম্পদনায় এডওয়ার্ডস ‘আ মডার্ন ইন্ট্রুডাকশন টু ফিলসফি’ বের করেন। একইসঙ্গে আট খণ্ডের ‘এনসাইক্লোপেডিয়া অব ফিলসফি’র প্রধান সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন অ্যাডওয়ার্ডস।
‘বার্টান্ড রাসেল’স ডাউটস অ্যাবাউটস ইন্ডাকশন’ (১৯৪৯), ‘দি লজিক অব মোরাল ডিস্কোর্স’ (১৯৫০), ‘ইথিক্স এন্ড ল্যাংগুয়েজ’ (১৯৬৬), ‘ইথিকস এন্ড অ্যাথেইজম’ (১৯৬৯), ‘হেইডেগার অন ডেথ’ (১৯৭৯), ‘হেইডেগার কনফিউশন’ (২০০৪) অ্যাডওয়ার্ডসের উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ।
গ্রন্থনা : শাহাদাৎ তৈয়ব
বাংলাদেশ সময়: ১৩১৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৪