ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের নির্বাচন ও প্রবাসে গৃহকাতরতা

দেলোয়ার জাহিদ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৪
কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের নির্বাচন ও প্রবাসে গৃহকাতরতা

মা ও মাতৃভুমির জন্য প্রবাস থেকে কার না মন কাঁদে। দেশ থেকে কেউ কেউ বিদেশে আমাদের অভিজ্ঞতা ও অনুভূতির কথা জানতে চান।

তারা হয়তো প্রবাসজীবনকে অনেক সুখকর বলে মনে করেন। সৎভাবে এর জবাব দেওয়া খুবই কঠিন, অন্ততঃ তাদের জন্যে, যাদের দেশে কিছু না কিছু জনসম্পৃক্ততা ছিলো বা এখনো আছে। স্মৃতিবেদনা তাদের কুড়েকুড়ে খায়। মানসপটে অতীত-আর্তি ভেসে উঠে ক্ষণে ক্ষণে, হারানো দিনকে ফিরে পাবার আকাঙ্খা ও স্মৃতিবেদনায় ভরে উঠে মন।   

মন ছুটে যায় কুমিল্লায়। ক’জন সাংবাদিক সুহৃদকে নিয়ে ইতোমধ্যে গঠিত হয়েছে কুমিল্লা প্রেস ক্লাব নির্বাচনের নির্বাচন কমিশন। কুমিল্লা আইনজীবী সমিতির সাবেক সভাপতি অ্যাডভোকেট জহিরুল ইসলাম, সচেতন নাগরিক কমিটির সভাপতি আলহাজ শাহ মোহাম্মেদ আলমগীর ও বিশিষ্ট ক্রীড়া সংগঠক বদরুল হুদা জেনুকে নিয়ে এই কমিশন করা হয়েছে। কুমিল্লায় তাদের নতুন করে পরিচিত করে দেবার কোনো প্রয়োজন নেই। সংশ্লিষ্ট সকলে সতর্ক অপেক্ষায় কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের অর্থবহ ভাল একটি নির্বাচনের।

কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের নির্বাচনকে ঘিরে রংবেরং এর ফেইসবুক পোস্টিং, প্রার্থীদের ভোটের জন্য আকুতি, আবেদন, নিবেদন... সব কিছুতেই যেন একটা পরিবর্তনের ছোঁয়া। সে পরিবর্তন কিছু আনন্দ-বেদনার মাঝে আত্মগ্লানিও এনে দেয় মনে। যে উচ্চতায় ছিলো কুমিল্লা প্রেস ক্লাব তাকে আরো উচ্চতার শিখরে নিয়ে যেতে পারিনি, স্বার্থহীন কোনো নেতৃত্ব সৃষ্টি করতে পারিনি, আগামী প্রজন্মের জন্য সাংবাদিকতায় কোনো আলোকবর্তিকা রেখে যেতে পারিনি। সীমাবদ্ধতার এ সীমাগুলো ডিঙ্গাতে ভরসার কোনো ক্ষেত্র সৃষ্টি করতে পারিনি, এমন সব ভাবনায় প্রবাসে যখন নিজের মন খুবই ভারাক্রান্ত, তখনই তথ্যপ্রযুক্তির সুবাদে এ প্রজন্মের ক’জন অনুজ বা সন্তানতুল্য সাংবাদিকের সঙ্গে হয় যোগাযোগ। ওরা শুনালো কিছু আশার বাণী। আমাদের অসমাপ্ত কাজগুলোকে এগিয়ে নিতে চায় ওরা... জানতে চায় কোথা থেকে হয়েছিলো শুরু... যেতে হবে কোথায়…কতদূর!

সময় কাটানোর বিবেচনায় কুমিল্লা প্রেস ক্লাবকে আমার সেকেন্ড হোম না বলে ফাস্ট হোম বললেই হয়তো সুবিচার করা হতো। কুমিল্লার সাংবাদিকতা, সংগঠন ও খেটে খাওয়া মানুষের মাঝে কেটেছে কত না সুখ-সময়। ১৯৮৫ সালের ১৬ অক্টোবর ৩টি আগ্রহী সাংবাদিক সংগঠনের এক যৌথ সম্মেলনে কুমিল্লা প্রেস ক্লাবকে প্রাতিষ্ঠানিকীকরণ, গণতন্ত্রায়ন ও পর্যায়ক্রমে সরকারি নিবন্ধন গ্রহণের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ১৯৮৫ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত অনুষ্ঠিত সবক'টি নির্বাচনে আমি সভাপতি, অধ্যাপক আবদুস সামাদ কুমিল্লা প্রেস ক্লাব এর সাধারণ সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন বলে মনে পড়ে। কুমিল্লা প্রেস ক্লাবকে নিবিড়ভাবে গড়ে তুলতে আমার সঙ্গে সক্রিয় ও অক্লান্তভাবে কাজ করেছিলেন গোলাম মাহফুজ, নজরুল ইসলাম বাবুল, আবদুল আজিজ মাসুদ, খায়রুল আহসান মানিক, সৈয়দ নূরুর রহমান, মরহুম বদিউল আমিন দুলাল, ফিরোজ মিয়া, আবুল কাশেম, আমিনুল হক, আলী আকবর মাসুম, শামীম আহসান, কুদরত-ই-খোদা, ওমর ফারুকী তাপস, রমিজ খান, শহীদউল্লাহ, জসিমউদ্দিন প্রমুখ। বিভিন্ন উপজেলা থেকে এসে কুমিল্লার সাংবাদিকতাকে অর্থবহ ও সমৃদ্ধ করেছেন অনেকে। তাদের উৎসাহিত ও সংগঠিত করতে প্রতিটি উপজেলায় প্রেস ক্লাব গঠন করা হয়েছিলো। প্রচেষ্টা ছিলো জেলা সদরের কুমিল্লা প্রেস ক্লাবকে একটি প্রতিনিধিত্বশীল প্রেস ক্লাব হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা। প্রচেষ্টা ছিলো তরুণ মেধাবী যুবকদের এ পেশায় আকৃষ্ট করা। কুমিল্লা প্রেস ক্লাব ছিলো একটি সমন্বিত পরিবার। সকলে সকলের সুখ-দুঃখে জড়িয়ে ছিলো। পুণর্গঠনকালীন সময়ে ছিলো না উল্লেখযোগ্য তেমন কোন অর্থ বা সম্পদ। সবচেয়ে বড় সম্পদ ছিলো একতা, পারষ্পরিক বিশ্বাস এবং শ্রদ্ধাবোধ; এসবের শক্ত একটি ভিত্তির উপরই গড়ে উঠেছিলো কুমিল্লা প্রেস ক্লাব।
cp_1
কুমিল্লা প্রেস ক্লাবকে নেপথ্যে পৃষ্টপোষকতা করেছিলেন দৈনিক রূপসী বাংলার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক মরহুম অধ্যাপক আবদুল ওহাব এবং কোনো একপর্যায়ে এ প্রক্রিয়ায় শামিল হন মরহুম গোলাম মোস্তাফা চৌধুরীসহ অন্যান্যরা। কুমিল্লার সাংবাদিকতায় আরো যারা অগ্রজ ছিলেন তারা হলেন- মরহুম ফজলে রাব্বী, মরহুম আফতাবুর রহমান ও কাজী মমতাজ উদ্দিন। আর সেসময়ে তরুণদের মধ্যে অধ্যাপক আলী হোসেন, প্রদীপ সিংহ রায়, রেজাউল করিম শামীম, অশোক বড়ুয়া ও আবুল হাসানাত বাবুলসহ আরো ক’জন।

কীভাবে যে সময় গড়িয়ে যায়, মনে হয় এ যেন সেদিনের  কথা। কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের পুনর্গঠনের পর ২৮ বছরেরও অধিক সময় পেরিয়ে গেছে। স্মৃতিকাতর মন আজো প্রবাসে খুঁজে ফিরে কত না স্মৃতি। কুমিল্লার সাংবাদিকতা, সংগঠন ও এর ব্যাপ্তি এবং বিকাশের রয়েছে এক সুদীর্ঘ ইতিহাস। যা শুধু কুমিল্লার নয়, দেশের সাংবাদিকতার ক্ষেত্র ও নেতৃত্বকে অনেকভাবেই সমৃদ্ধ এবং বিকশিত করেছে। কাজের দীর্ঘতালিকা প্রকাশ করে কাউকে বিব্রত করার কোনো অভিপ্রায় নেই। তবে অন্তত: কটি সচিত্র নজির আগামী নেতৃত্ব বাছাইয়ের সুবিধার্থে তুলে ধরবো। যদি এর থেকে কোনো অনুপ্রেরণা পাওয়ার থাকে তাহলে অবশ্যই এ লেখার স্বার্থকতা খুঁজে পাবো।

সাংবাদিকতা পেশা কোনো ব্যবসা, চাটুকারিতা বা ব্যক্তিগত স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার নয়। এ পেশা আমাদের রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত হবারও নয়। এ পেশার নিজস্ব কিছু স্পিরিট আছে, যারা একে ধারণ করতে পারেন না, তাদের জন্য এ পেশা নয়। কুমিল্লার অধিকাংশ সাংবাদিক মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে উঠে আসা, তাদের সবার জীবনেই কম-বেশি অভাব, অনটন, দুঃখ, বেদনা ও দারিদ্র্যের ছোঁয়া আছে এবং তা থাকাটাই স্বাভাবিক। কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের ছত্রছায়ায় গড়ে উঠা সাংবাদিক পরিবারের অভিবাবক হিসেবে সৎ, সাহসী ও বলিষ্ঠ নেতৃত্বের প্রয়োজন এবং সে প্রয়োজনকে সামনে রেখেই কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের আসন্ন এ নির্বাচন। কাজেই এর গুরুত্ব সময়ের প্রেক্ষাপটে খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।

কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের নেতৃত্বে খুব শীঘ্রই পরিবর্তন আসছে, আসছে আগামী দিনে... নবীন-প্রবীণের মিলনমেলা হবে এ প্রতিষ্ঠান। ঢাকা, চট্টগ্রামের পরই কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের নাম উঠে আসতো আলোচনায়। কার্যক্রম ও পেশাদারিত্বের উল্লেখযোগ্য একটি কেন্দ্র ছিলো কুমিল্লা প্রেস ক্লাব। তখন সোসাইটিস রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্টের অধীনে নিবন্ধন করে কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের শুধু আইনি ভিত্তিই তৈরি করা হয়নি বরং সারাদেশের প্রেস ক্লাবগুলোকে সংগঠিত হতেও অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। ঢাকা, চট্রগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, সিলেট, নোয়াখালী, ময়মনসিংহ, জামালপুর, রাঙ্গামাটি, গাইবান্ধা জেলা সদরসহ অনেক প্রত্যন্ত অঞ্চলেও সাংবাদিকদের ডাকে ছুটে গিয়েছি। ঘরে অর্থাৎ কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের পুনর্গঠনের প্রচেষ্টাটি ছিলো নানা কারণে বেশ দুরূহ । তবে তরুণদের সঙ্গে নিয়ে সে দুর্গম পথও পাড়ি দিতে পেরেছি। অনেক বাধা ও প্রতিকূলতা অতিক্রম করে পুনর্গঠিত করেছি কুমিল্লা প্রেস ক্লাবকে। আজো কুমিল্লা প্রেস ক্লাব সে ভিত্তির উপরই দাঁড়িয়ে। তাই সফলতার কৃতিত্বগুলো উৎসর্গ বা নিবেদন করবো সে তরুণদের, যাদের নিয়ে কাজ করেছি। তাদের অবদানগুলো কোনো বিলবোর্ডে নয় বরং প্রতিটি সাংবাদিকের হৃদয়ে যেন গেঁথে থাকে এটাই আগামী নেতৃত্বের কাছে প্রত্যাশা করবো। প্রত্যাশা করবো, যাদের সাহসী পদক্ষেপে কুমিল্লা প্রেস ক্লাব প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা পেয়েছে তাদের নাম, পরিচতি রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ থেকে এনে তা ক্লাব সদস্যদের জন্য উন্মুক্ত করা হোক। মরহুম অধ্যাপক আবদুল ওহাব, মরহুম গোলাম মোস্তাফা চৌধুরী, মরহুম ফজলে রাব্বী, মরহুম আফতাবুর রহমান, মরহুম মোহাম্মদ উল্লাহকে প্রেস ক্লাবের জীর্ণ ফটোফ্রেমে বন্দি করার পরিহাস বন্ধ করে প্রতিবছরই তাদের জন্ম ও মৃত্যুবার্ষিকী যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা হউক।

তাদের নামে স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করা হোক। সাংবাদিকতা পেশার উন্নয়নে ভিন্নমুখী প্রতিভাগুলো থেকে এ প্র্রজন্মের সাংবাদিকদের অনেক কিছুই শেখার আছে। আর স্নেহাস্পদ সাংবাদিক মরহুম বদিউল আমিন দুলাল ও মরহুম নওশাদ কবিরের স্মৃতিকেও তুলে ধরা দরকার।

জীবনে বেশ কয়েকবারই মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি। ১৮৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত স্পেনের একটি সংবাদপত্র (ডেয়ারিও দে পন্তেভেদরা) তাদের ম্যাগাজিনে একটি সাক্ষাৎকার দেয়ার অনুরোধ জানালো। সে ২০০০ সালের কথা। মাসাধিককাল হাসপাতালে থেকে সবে মুক্ত হয়েছি তারপরও কথা বলতে রাজি হলাম। আমাকে নিয়ে প্রায় ৭০-৮০টি ছবি তোলার পর এক জায়গায় এসে ফটোগ্রাফার ধমকে দাঁড়ালো, বললো পেয়েছি... দেয়ালে লেখা লিভারেতাদ মানে লিবার্টি... সেখানের ছবিটিই তাদের প্রচ্ছদে স্থান পেলো। ওরা মানুষের জন্য কাজ করায় ‘আমি আমার গর্বকে হারিয়ে ফেলেছি’ শিরোনামে আমার সাক্ষাতকারটি ছাপালো। সেখানেও প্রেস ক্লাব প্রসঙ্গ এসেছে বেশ কয়েকবার [প্রচ্ছদ ও সাক্ষাতকারটি সংযুক্ত] 

ক্লাব, প্রচলিত ধারণায় একটি সাধারণ স্বার্থ বা উদ্দেশ্য দ্বারা গঠিত দুই বা অধিক মানুষের একটি সমিতি। একটি পরিসেবা ক্লাব যেমন- স্বেচ্ছাসেবী বা দাতব্য কার্যকলাপের জন্য; শখ ও ক্রীড়া, সামাজিক কার্যক্রম, রাজনৈতিক ও ধর্মীয় কার্যক্রম এবং বিনোদন ইত্যাদি। সে অর্থে কুমিল্লা প্রেস ক্লাব হওয়ার কথা এর যেকোনো একটি বা এর অধিক লক্ষ্য অর্জনের মাধ্যম। সেই সময়ে কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের কার্যপরিধি নিয়েও মহলবিশেষ কিছু প্রশ্ন তুলেছিলো। কারণ অধিকাংশ সময়ই কুমিল্লার সংবাদ জাতীয় সংবাদপত্রের প্রথম পাতায় গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে নিতো। কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের পুনর্গঠন পরবর্তী কয়েকটি কার্যক্রমের ছবিসমেত উদাহরণ হিসাবে এখানে তুলে ধরা হলো। যদি তা বর্তমান প্রজন্মের সাংবাদিকদের কোনোভাবে অনুপ্র্রেরণার খোড়াক যোগায়, তবেই উপস্থাপনে এর সার্থকতা।

কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের অতীত কার্যক্রমে জেলার প্রতিটি উপজেলায় এর শেকড় গ্রথিত ছিলো, জেলার প্রতিটি পেশাজীবী ও শ্রমজীবী মানুষের মিলনস্থল ছিলো কুমিল্লা প্রেস ক্লাব। অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে কুমিল্লার সাংবাদিকরা ছিলেন সদা সোচ্চার। মানবাধিকার লংঘনের বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে সেবাদানের এক অনন্য নজিরও স্থাপন করেছিলো কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সংগঠিত তরুণ সাংবাদিকেরা। এর কয়েকটি দৃষ্টান্ত হতে পারে ভবিষ্যতের জন্য অনুকরণীয়- যেমন: নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চরাঞ্চলগুলোতে জলোচ্ছ্বাসের পর ত্রান বিতরণ ও চরাঞ্চলের মানুষের হৃদয়স্পর্শী কতগুলো প্রতিবেদন প্রকাশ, দাউদকান্দির চরাঞ্চলে লাঠিয়ালদের আক্রমণে মিশে যাওয়া এক বিরান জনপদের কথা,  কুমিল্লা বিমানবন্দর এলাকায় সেই সময়ে ১১ গ্রাম বাঁচাও আন্দোলন, হালিমা সুতাকলের শ্রমিকদের আন্দোলন, লাকসাম ও সদর দক্ষিণ উপজেলার মাছের বাড়া অপসারণ আন্দোলন নিষ্পত্তিতে সক্রিয় ভূমিকা পালন, কৃষকদের আন্দোলনে সহায়তা, ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার কৃষিঋণ কারচুপির বিরুদ্ধে প্রতিরোধ, কুয়েত প্রত্যাগত শ্রমিকদের পাওনা আদায়ে সহায়তা, মানবাধিকার বিষয়ক স্টোরি নিয়মিতভাবে প্রকাশ এবং কয়েকটি খুন ও বিচার ব্যবস্থায় চিহ্নিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে ক্ষুরধার লিখনি; এমন অনেক কিছুই।

কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের সঙ্গে কুমিল্লা সাংবাদিক ইউনিয়নও পেশাগত দায়িত্ব পালনে সে সময় সাংবাদিকদের সহায়তা করেছে। বাংলাদেশ সাংবাদিক সমিতি, জাতীয় সাংবাদিক সংস্থা স্থানীয় সাংবাদিকদের প্রতিনিধিত্ব করতো পেশাগত যেকোনো সমস্যায়। বাধা-বিপত্তি, নিপীড়ন, নিগ্রহ ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে একসময় রুখে দাঁড়িয়েছে তারা। কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের নেতৃত্ব ঐক্যের বন্ধনে বেঁধে ছিলো সবাইকে। কুমিল্লায় এখন দেশের প্রায় সবগুলো গণমাধ্যমেরই স্টাফ রিপোর্টার বা জেলা প্রতিনিধি রয়েছে। কুমিল্লার সাংবাদিকতায় এসেছে নবীনের জোয়ার। শিক্ষিত, মার্জিত ও মেধাবী তরুণের সম্মিলন ঘটেছে এ পেশায়। তাদের রয়েছে যেকোনো দল ও রাজনৈতিক মতাদর্শের উর্ধ্বে উঠে কাজ করার প্রচেষ্টা। সাংবাদিকতার বিকাশে গঠনমূলক ভূমিকা রেখে আসছেন নবীনেরা। কুমিল্লা প্রেস ক্লাবের মতো একটি প্রতিষ্ঠান এ প্রয়োজন মেটাতে পারে তাদের প্রশিক্ষিত করার মাধ্যমে। এতে গণতান্ত্রিক ও নির্লোভ নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে। মত ও পথের ভিন্নতা সত্বেও নীতি, নৈতিকতা, পেশাদারিত্বকে সম্মান প্রর্দশন করে বর্তমান প্রজন্মের সাংবাদিকদের সামনে এগিয়ে যেতে হবে। সিটিজেন জার্নালিজমের পাদপীঠ কুমিল্লা প্রেস ক্লাবে দলমতের উর্ধ্বে উঠে কাজ করতে হবে। গণতান্ত্রিক অংশীদারিত্ব সৃষ্টি করতে হবে এবং আগামী নির্বাচনে আবেগতাড়িত না হয়ে সৎ ও গতিশীল নেতৃত্বকে বেছে নিতে হবে। নবীন-প্রবীণের নেতৃত্বের সমন্বয়ে গড়ে উঠবে আগামী দিনের কুমিল্লা প্রেসক্লাব।

মনে বলে ছুটে চলে যাই প্রেস ক্লাবে... যার বেদনাবিধুর স্মৃতিগুলো আজো ঘুরে ফিরে মনে।

লেখক: সভাপতি, বাংলাদেশ প্রেস ক্লাব অব আলবার্টা, কুমিল্লা প্রেসক্লাব ও কুমিল্লা সাংবাদিক ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি।

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৯ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ০৩, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।