ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

শব্দকল্পদ্রুম

মুহম্মদ জাফর ইকবাল | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০০৩২ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৪
শব্দকল্পদ্রুম

১.
ঠিক কীভাবে এটা শুরু হয়েছে তার খুঁটিনাটি মনে নেই। সারা পৃথিবীতেই বানানের একটা প্রতিযোগিতা হয়- আমাদের দেশেও হয়েছে, তবে সেটা বাংলার জন্যে নয়, ইংরেজির জন্যে! খুব চমৎকার আয়োজন- কম বয়সী ছেলেমেয়েদের উৎসাহ উদ্দীপনা দেখে মনটা ভরে যায়।

তখনই সম্ভবত মনে হয়েছিল বাংলার জন্যে এ রকম একটা আয়োজন কী আরও বেশি প্রয়োজন নয়?

ইংরেজি বানানের মধ্যে একটা শৃঙ্খলা আছে, বাংলা বানান নিয়ে আমি নিজেই হাবুডুবু খেয়ে যাই। ছেলেবেলায় এক রকম বানান লিখেছি, এখন অন্যভাবে লেখা হয়। চেনা শব্দগুলোও কেমন জানি অচেনা মনে হয়। আমি সেটা নিয়ে মোটেও অভিযোগ করছি না, ভাষা থেকে জীবন্ত আর কিছু পৃথিবীতে নেই। যে ভাষা যত বেশি জীবন্ত, সে ভাষায় তত বেশি পরিবর্তন হয়, সেই পরিবর্তনে ভাষা তত বেশি সমৃদ্ধ হয়। কাজেই পরিবর্তন নিয়ে বুড়ো মানুষের মতো অভিযোগ করা যাবে না।

কাজেই দেশের ছেলেমেয়েদের নিয়ে বাংলা বানানের প্রতিযোগিতা একটা সুন্দর বিষয় হতে পারে। কিন্তু সমস্যা হলো সেটা আয়োজন করবে কে? আমাদের দেশের সংবাদপত্র এ রকম অনেক কিছু আয়োজন করে কিন্তু মজার ব্যাপার হচ্ছে যখন একটা সংবাদপত্র এ রকম কিছু আয়োজন করায় সাহায্য করে তখন অন্য সব পত্রিকা সেটাকে রীতিমতো বয়কট করে! রীতিমতো ছেলেমানুষী ব্যাপার, চমৎকার আয়োজনগুলো পর্যন্ত কেমন জানি একঘরে হয়ে যায়। তবে আমাদের বাংলা বানান প্রতিযোগিতার বেলায় সমস্যাটার সমাধান খুব সহজে হয়ে গেলো। বাংলাদেশের বাংলা সার্চ ইঞ্জিন পিপীলিকা এ উদ্যোগটি নিতে রাজি হলো। পিপীলিকা আমাদের জন্যে নতুন কিছু নয়- আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ গবেষকরাই এটা তৈরি করেছেন। এক অর্থে এটি আমাদেরই প্রতিষ্ঠান। সঙ্গে আছে এক সময়কার জিপিআইটি যেটি বর্তমানে Accenture! আমার জানা মতে পিপীলিকা এক অর্থে এই দেশে একটা বিশ্ববিদ্যালয় এবং একটা ইন্ডাস্ট্রির প্রথম যৌথ একটা উদ্যোগ।

কোনো কিছু শুরু করতে হলে তার একটা নাম দিতে হয়। তাই বাংলা বানান প্রতিযোগিতাটিরও একটা নাম দরকার। যারা এটা আয়োজন করেছে তারা চিন্তা ভাবনা করে এর নাম দিয়েছে ‘শব্দকল্পদ্রুম’। এর থেকে যথাযথ নাম হওয়া সম্ভব বলে আমার মনে হয় না! আমাদের প্রজন্মের সবাই শব্দকল্পদ্রুম শব্দটির সঙ্গে পরিচিত সুকুমার রায়ের এ নামে একটি কবিতার কারণে।

(কবিতার প্রথম লাইন এ রকম : ঠাস্ ঠাস্ দ্রুম দ্রাম, শুনে লাগে খটকা-/ ফুল ফোটে? তাই বল! আমি ভাবি পটকা!) তবে শব্দকল্পদ্রুমের আরো একটি পরিচয় আছে, দ্রুম মানে বৃক্ষ বা গাছ। কল্পদ্রুম বা কল্পতরু মানে এমন একটি গাছ যার কাছে যাই চাওয়া যায় সেটাই পাওয়া যায়। তাই শব্দকল্পদ্রুম মানে শব্দের একটি কল্পতরু- অর্থাৎ তার কাছে যে কোনো শব্দ চাইলেই সেই শব্দটি পাওয়া যাবে! সোজা কথায় সেটি হচ্ছে অভিধান বা ডিকশনারি। সত্যি কথা বলতে কী রাধাকান্ত দেব নামে একজন খুব জ্ঞানী মানুষ চল্লিশ বছর খাটা খাটুনি করে ১৮১৯ সালে শব্দকল্পদ্রুম নামে একটা বাংলা অভিধান তৈরি করেছিলেন। আমাদের বাংলা বানান প্রতিযোগিতার নামকরণ করার পর আমরা আবিষ্কার করলাম ঠিক এই নামে হায়াৎ মামুদ একটা অসাধারণ বই লিখেছেন। শুদ্ধভাবে বাংলা লেখা শেখার জন্যে এ দেশের কিশোর কিশোরীদের এর থেকে চমৎকার কোনো বই আমার চোখে পড়েনি!

তথ্য প্রযুক্তির কারণে সারা পৃথিবীতেই বানানের একটা সর্বনাশ হয়ে গেছে! একটা সময় ছিল যখন কিছু একটা করতে চাইলে বানানটি শুদ্ধভাবে লিখতে হতো- আজকাল তার আর দরকার হয় না। ভুল-ভাল একটা বানান লিখলেও সার্চ ইঞ্জিনগুলো ঠিক-ঠাক উত্তর দিয়ে দেয়। অন্যদের কথা জানি না- আমি নিজেও ‘গুগল’ ব্যবহার করতে হলে শুদ্ধ বানান লেখার জন্যে এত ব্যস্ত হই না- আলসেমি করে কাছাকাছি একটা লিখে বসে থাকি!

বাংলার জন্যেও আজকাল সেটা ঘটতে যাচ্ছে- তাই আমরা ঠিক করেছি আমাদের পিপীলিকা সার্চ ইঞ্জিনে কেউ ভুল বানান লিখলে তাকে অন্ততপক্ষে শুদ্ধ বানানটি জানিয়ে দেয়া হবে! এক অর্থে পিপীলিকা সার্চ ইঞ্জিনকে ইচ্ছে করলে বাংলা অভিধান কিংবা ‘শব্দকল্পদ্রুম’ হিসেবেও ব্যবহার করা যাবে। (কাজটি অনেক সহজ হতো যদি বাংলা একাডেমি তাদের অভিধানের শব্দগুলো আমাদের ব্যবহার করতে দিত। এখন আমাদের প্রায় বিশ হাজার শব্দ নতুন করে টাইপ করতে হচ্ছে!)

এটি সত্যি এক সময় ভাষার জন্যে সব কাজ-কর্ম গবেষণা করতেন ভাষাবিদেরা, আজকাল তার পরিবর্তন হয়েছে- এখন তথ্য প্রযুক্তিবিদেরাও ভাষার জন্যে কাজ করে। আমি নিজেই অবাক হয়ে যাই যখন দেখি বাংলাকে কম্পিউটারে ব্যবহারের উপযোগী করার জন্যে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা বাংলা ভাষার বিচিত্র বিচিত্র দিকে রীতিমতো বিশেষজ্ঞ হয়ে গেছে! যে সমস্ত বিষয়গুলো শুধুমাত্র ভাষাবিদেরা জানতেন, যেগুলো নিয়ে কথা বলতেন আজকাল আমার ছাত্রছাত্রী কিংবা তরুণ শিক্ষকেরা সেগুলো নিয়ে কথা বলে। দেখে খুব ভালো লাগে- তবে সত্যি সত্যি যদি বাংলা বানান প্রতিযোগিতার সত্যিকারের একটা উদ্যোগ নিতে হয় তাহলে সেখানে আমাদের দেশের বড় বড় ভাষাবিদ লেখক সাহিত্যিকদের একটু সাহায্য নেয়া দরকার। দেশের বড় বড় মানুষেরা বড় বড় কাজে ব্যস্ত থাকেন, তাই ধরেই নিয়েছিলাম তাদের সমর্থন পাব, কিন্তু তারা হয়তো সত্যিকার অর্থে আমাদের সাহায্য করতে পারবেন না।

কিন্তু আমি খুব বিষ্ময়ের সঙ্গে আবিষ্কার করলাম এ দেশের বড় বড় ভাষাবিদ কবি সাহিত্যিক লেখকেরা আমাদের অনেক সময় দিলেন। তাঁদের সঙ্গে কথা বলে ‘শব্দকল্পদ্রুম’ কে শুধু বানানের মাঝে সীমাবদ্ধ না রেখে বাংলা ভাষার জন্যে ভালোবাসার একটা উদ্যোগ হিসেবে দাঁড় করানোর পরিকল্পনা করা হলো। শুধুমা ঢাকা শহরে না করে সারা দেশে করার ইচ্ছে কিন্তু ব্যাপারটা কেমন হবে তার কোনো ধারণা নেই, তাই পরিকল্পনা করা হলো প্রথমে চট্টগ্রামে একটা পরীক্ষামূলক পর্ব করে দেখা হবে- সেই অভিজ্ঞতা যদি ভালো হয় তখন সারা দেশে তার আয়োজন করা যেতে পারে।

গত শুক্রবার ১৭ অক্টোবর এ অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করে শনিবার সারাদিনব্যাপী চট্টগ্রাম শহরের সেন্ট প্লাসিড স্কুলে শব্দকল্পদ্রুমের আয়োজন করা হলো। অন্যদের কথা জানি না, এই দুটি দিন অসংখ্য শিশু কিশোরের সঙ্গে সময় থেকে আমি অপূর্ব কিছু সময় কাটিয়েছি।

আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার এই দেশের শিশু কিশোরদের কাছে খুব প্রিয় একটি নাম, তাকে কোনোভাবে একটা অনুষ্ঠানে উপস্থিত করাতে পারলেই সেই অনুষ্ঠান সফল হয়ে যায়। শব্দকল্পদ্রুমে শুধু আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার নন, শিশু কিশোরদের প্রিয় লেখক আলী ইমাম ও ভাষাবিদ হায়াৎ মামুদও ঢাকা থেকে চলে গিয়েছিলেন! অনুষ্ঠানের শুরুতে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ স্যার উপস্থিত প্রায় বারোশো শিশু কিশোরদের সঙ্গে গল্প করে আমাদের মাতৃভাষার কথা বললেন। সাধারণত তাঁর বক্তব্যের পর অন্য কেউ কথা বলতে সাহস পায় না- কিন্তু আমাদের অনুষ্ঠানে একটা অসাধারণ ঘটনা ঘটে গেল। তার বক্তব্যের পর হুইল চেয়ারে বসে বসে সাবরিনা সুলতানা শিশু কিশোরদের বোঝালো কেন আমাদের দেশে হুইল চেয়ারে বসে থাকা শিশুই হোক, কিংবা বাক বা দৃষ্টি প্রতিবন্ধী শিশুই হোক সবারই স্কুলে যাবার অধিকার আছে।

সাবরিনা সুলতানা এত সুন্দর করে কথা বলেছে যে সব শিশুরা মন্ত্রমুগ্ধের মতো কথা শুনেছে! আমি গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি এই শিশুগুলো যখন বড় হবে, বড় বড় দায়িত্ব নেবে তখন অন্তত তারা এই দেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নেবে!

শব্দকল্পদ্রুমে বানান ও ভাষার মজার মজার অনেক কিছু নিয়ে ঘণ্টা খানেকের একটা লিখিত পরীক্ষায় মতো হয়েছিল। বাংলাদেশের শিশুদের জন্যে এ ধরনের অনেক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়, নানা ধরনের অলিম্পিয়াড হয়। তবে আমার ধারণা এই প্রথম একটি প্রতিযোগিতায় দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছেলেমেয়েরা প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়েছে এবং ব্রেইলে উত্তর লিখে দিয়েছে! আমার খুব আনন্দ হয়েছে যখন দেখেছি তাদের বাংলা বানানের জ্ঞান অন্যান্য ছেলেমেয়েদের তুলনায় যথেষ্ট ভালো!

ছোট ছোট ছেলেমেয়েদের অনুষ্ঠানে আমরা সব সময়েই তাদেরকে সরাসরি প্রশ্ন করার সুযোগ করে দিই- যারা এ ধরনের অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকেছে তারা জানে কতো বিচিত্র ধরনের প্রশ্ন দিয়ে তারা বড় বড় মানুষদের নাস্তানাবুদ করে দেয়! ভাগ্যিস সেখানে আব্দুল্লাহ আবু সায়ীদ, আলী ইমাম এও হায়াৎ মামুদের মতো মানুষেরা ছিলেন তাই তাদের বেশির ভাগ প্রশ্নের উত্তর দেয়া গেছে! কিছু কিছু প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হয়নি- মানুষ মারা গেলে কেন সেটাকে ‘পটল তোলা’ বলা হয় সে রকম একটা প্রশ্ন! দোয়েল পাখি থেকে কাক অনেক বেশি, তাহলে জাতীয় পাখি কাক কেন হলো না সে রকম আরেকটি প্রশ্ন! (সঙ্গে সঙ্গেই কাক আর দোয়েল পাখি নিয়ে ভোটাভুটি করে অবশ্য দোয়েল পাখিকেই জাতীয় পাখির সম্মান দিয়ে দেয়া সম্ভব হয়েছিল। )

সব প্রশ্নই যে মজার প্রশ্ন ছিল তা নয়, কিছু কিছু প্রশ্ন আমাদের লজ্জিত করেছে, ব্যথিত করেছে। একজন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী ছেলে আমাদের জিজ্ঞেস করলো, ভাষা মতিনের মতো একজন মানুষ যিনি মৃত্যুর পর নিজের চোখ পর্যন্ত দান করে গেছেন তাকে কেন রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাহিত করা হলো না? আমাদের কাছে মাথা নিচু করে থাকা ছাড়া এ প্রশ্নের আর কোনো উত্তর ছিল না।

প্রতিযোগিতার শেষে পুরস্কার দেয়া হয়। দেখে মনে হতে পারে এটি বুঝি খুব আনন্দের একটা অংশ, আসলে এই অংশটি আমার কাছে একটু দুঃখের। যারা পুরস্কার পায় তাদের আনন্দ থেকে আমাকে বেশি দুঃখ দেয় যারা পুরস্কার পায়নি বলে মন খারাপ করে। সে জন্যে এ ধরনের অনুষ্ঠানে আমি সব সময়েই বাচ্চাদের বোঝানোর চেষ্টা করি প্রতিযোগিতা বিষয়টা আসলে খুব ভালো কিছু নয়! পৃথিবীর কোনো বড় কাজ প্রতিযোগিতা দিয়ে হয় না- সব বড় কাজ হয় সহযোগিতা দিয়ে।

এই যে বাংলা ভাষার জন্যে ভালোবাসার অনুষ্ঠান শব্দকল্পদ্রুম-এর আয়োজন করার জন্যেও অনেক ভলান্টিয়ার দিন রাত কাজ করেছে। ভলান্টিয়ারদের খুঁজে বের করা হয়েছে ইন্টারনেটে ঘোষণা দিয়ে! আমি নিজের চোখে না দেখলে কখনোই বিশ্বাস করতাম না যে শুধুমাত্র ইন্টারনেটের ঘোষণা দেখে এতগুলো ছেলেমেয়ে কাজ করার জন্যে চলে এসেছে। (ফিরে আসার বাসের সময়টা হঠাৎ করে এগিয়ে নিয়ে আসায় আমার হঠাৎ করে চলে আসতে হয়েছে বলে এই ভলান্টিয়ারদের ঠিক করে ধন্যবাদ পর্যন্ত দিয়ে আসতে পারিনি!)

কোনো অনুষ্ঠানে গেলে আমাকে বাচ্চাদের অনেক অটোগ্রাফ দিতে হয়। আজকাল শুধু অটোগ্রাফে শেষ হয় না তার সঙ্গে সঙ্গে ‘ফটোগ্রাফ’ ও তোলা হয়। শুধু ফটোগ্রাফে শেষ হয়ে যায় না- সেলফি তুলতে হয়। যারা এখনো শব্দটার সঙ্গে পরিচিত হয়নি তাদের বলে দিই, নিজের ছবি নিজে তোলার নাম সেলফি, আগে ডিকশনারিতে এ শব্দটি ছিল না এখন যোগ করা হয়েছে।

ডিকশনারিতে নতুন শব্দ যোগ করা যায় তার এ রকম জলজ্যান্ত উদাহরণ আছে বলে শব্দকল্পদ্রুমে আমরা ছেলেমেয়েদের নতুন শব্দ তৈরি করারও একটা সুযোগ করে দিয়েছিলাম। প্রথমবার বলে আমরাই পাঁচ ধরনের মানুষের কথা বলেছি। প্রথমটি ছিল: যার সত্যিকারের বন্ধু নেই, সব ফেসবুকের বন্ধু! এই ধরনের মানুষের ছেলেমেয়েরা অনেক বিচিত্র নাম নিয়ে এসেছে, কয়েকটা এ রকম: ফেসবুকানী, ফেস-পোকা কিংবা আলে-বান্দর!

ঠিক এ রকম, যে শিক্ষক ক্লাসে পড়ায় না কিন্তু কোচিংয়ে পড়ায় তার নাম দিয়েছে ল্যাম্পো মাস্টার, কোচিক্ষক কিংবা লোভীক্ষক! যে দিন-রাত কম্পিউটারে গেম খেলে, তাকে বলেছে গেম-খিলাড়ি কিংবা গেম বাবু! পাকিস্তান বাংলাদেশের ক্রিকেট খেলায় যে পাকিস্তানকে সাপোর্ট করে তাদেরকে বেশির ভাগই রাজাকার ডেকেছে। এছাড়া আছে পাকিংলাদেশি এবং বাংকিস্তানি! যে ভাত খেতে চায় না শুধু ফ্রাইড চিকেন খেতে চায় তাদেরকে নাম দিয়েছে হাভাতে- চিকেন কিংবা খুবই সংক্ষেপে চিকু! নিছক মজা করার জন্যেই এই নতুন শব্দের জš§, কিন্তু কে বলবে একদিন হয়তো এ রকম একটা শব্দ ডিকশনারিতে স্থান পেয়ে যাবে!

২.
এতোক্ষণ যে কথাগুলো বলেছি সেটা হচ্ছে ভূমিকা, এবারে আসল বক্তব্যে আসি। আমরা দিন-রাত বাংলায় কথা বলি বলে এই ভাষাটি কী অসাধারণ সেটা সব সময় লক্ষ্য করি না। কম্পিউটারে বাংলা ভাষার স্থান করে দিতে গিয়ে আমি নিজে অনেক কিছু প্রথমবারের মতো আবিষ্কার করেছি যেগুলো ভাষাবিদেরা বহুদিন থেকে জানেন! যারা একটু স্বচ্ছল তারা বাংলা থেকে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করে ইংরেজিতে। অনেক পরিবারেই ছেলে মেয়েদের পাওয়া যাবে যারা বাংলা পড়তে পর্যন্ত চায় না। অনেকেই বাংলা পড়তে চাইলেও রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গল্প পড়তে চায় না। অনেক ছোট ছোট শিশু টেলিভিশনের সামনে বসে বসে বাংলা শেখার আগে হিন্দি শিখে বড় হচ্ছে। টেলিভিশনে এক ধরনের বিচিত্র বাংলা উচ্চারণ আছে- রেডিওতে সেটি আরো ভয়াবহ। আজকাল সবচেয়ে সস্তা মোবাইল টেলিফোনেও বাংলা লেখা যায় কিন্তু বেশির ভাগ এসএমএস লেখা হয় ইংরেজি হরফে। ইচ্ছে করলে এই তালিকা আরো অনেক দীর্ঘ করা যায়- কিন্তু মন খারাপ করা কথা লিখতে ভালো লাগে না!

তাই আমার মনে হয় যারা বড় হয়ে গেছে তাদেরকে হয়তো বাংলা ভাষা নিয়ে আর উৎসাহিত করা যাবে না। কিন্তু যারা ছোট তাদের ভেতরে নিশ্চয়ই নতুন করে একটা ভালোবাসার জন্ম দেয়া সম্ভব। সবাই মিলে সেই কাজটাই শুরু করে দিই না কেন?

বাংলাদেশ সময়: ০০০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৪, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।