জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় গঠিত হয়েছিল একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটে। সেশনজট নিরসন ছিল অন্যতম একটি কারণ ও যুক্তি।
এই অবস্থা থেকে উওরণের জন্য বিগত সরকার শুরু করে বিকেন্দ্রীকরণ। সুফল পাওয়া যায় নি বলে এবার সেই হারানো দিনে ফিরে যাচ্ছি আমরা। এতে পুনো তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় খুব খুশি। কারণ ব্যাপক ক্ষমতা পেতে যাচ্ছে এই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়।
গত কয়েক বছর আগে প্রস্তাব ছিল বিভাগীয় শহরগুলিতে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়গুলি হবে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিকল্প। কিন্তু সেই প্রস্তাব থেকে সরে এসে বর্তমানে ইঙ্গিত দেওয়া হচ্ছে পুরনো তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়কে ক্ষমতাসীন করা হবে।
এ প্রসঙ্গে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মহোদয় বলেছেন ইউজিসি যেন বেসরকারি কলেজগুলোর কথাও ভাবে। কারণ হতে পারে সেগুলিকে মানসম্মত করবার প্রয়াস জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় নিতে রাজি নয়।
যেভাবে অলি গলিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় হয়েছে এবং যেভাবে রাজনীতিবিদরা শিক্ষা নিয়ে বাণিজ্যকরণের প্রতিযোগিতায় নেমেছেন, সে পরিপ্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রীর পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এতে ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বিশ্ববিদ্যালয়গুলি বন্ধ হবে। বন্ধ হবে যেখানে সেখানে রাজনৈতিক ক্ষমতা প্রদর্শন করে অনার্স চালুর রেওয়াজ। বন্ধ হবে কোচিং সেন্টার। বন্ধ হবে শিক্ষাবাণিজ্য ও আন্তর্জাতিক গবেষণা বাণিজ্য। দেশের নিরাপত্তার জন্যও এটি প্রয়োজন। কারণ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় গোপনে অনেক বিদেশি গবেষণার সহযোগী। এতে জেনেটিক রিসোর্স পাচার হয়ে যাচ্ছে।
তবে এই উদ্যোগ কার্যকরী হবে যদি সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে উদ্যোগে যুক্ত করা হয়। তাতে ব্যবস্থাপনা উন্নত হবে। সেক্ষেত্রে ওই তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোপলি থাকবে না। তবে, এখানেই শেষ করাটা ঠিক হবে না।
ইতোমধ্যে সেনাবাহিনী নতুন করে বিশ্ববিদ্যালয় নির্মাণের দায়িত্ব নিতে যাচ্ছে। তারা প্রকৌশলী দিয়ে সেতু নির্মাণ করতে পারে বটে, তবে শিক্ষা দেওয়াটার দায়িত্ব যাদের হাতে আছে সেখানেই থাকুক। প্লেটো তার রিপাবলিকে সেনাবাহিনীর যে অবস্থান রেখেছেন তা কিন্তু সারা বিশ্বে সুবিদিত। সামরিক বাহিনী যদি নানান দিকে মনোযোগ দেয় তবে জাতির নিরাপত্তা ও সংহতি সংকটে পড়তে পারে।
আমার মতে সরকার র্যাবও বিলুপ্ত করে একটি শান্তি, দুর্যোগ ও নিরাপত্তা কোর সৃষ্টি করতে পারে। বিদেশে শান্তি নিশ্চিত করার পাশাপাশি এই কোর দেশের জনতার পাশে দাঁড়াতে পারে।
আমরা লক্ষ্য করছি সব কিছুতেই সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করবার প্রবণতা। যদি সেটা সম্ভব হতো তবে উন্নত বিশ্ব আরও আগেই সেটা করতো। সম্প্রতি ব্যাংকগুলো হচ্ছে আমলাকরণ। সেটিও কতটুকু বিজ্ঞচিত তা ভাবার বিষয়।
আমরা লক্ষ্য করেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা ব্যাংক পরিচালনায় অংশ নিয়েছিলেন। সেটি যে সফল হয়নি তা বর্তমান ধারা থেকে বোঝা যাচ্ছে। কেবল তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়কে সরকারি কলেজগুলোর দায়িত্ব দিয়ে শিক্ষার মান উন্নয়ন সম্ভব হবে না। এজন্য বিভাগীয় শহররগুলিতে অবস্থিত সব বিশ্ববিদ্যায়ের আলাদা ক্যাম্পাস ও আলাদা প্রশাসন একান্ত জরুরি। আর একটি জাতীয় অ্যাক্রিডেশান কাউন্সিল করে বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়গুলির মান নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
কলেজগুলোকে অপশন দেওয়া যেতে পারে তারা কোন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হতে চায়। আর বিশ্ববিদ্যালয়গুলি নীতিমালা ও শর্ত দিতে পারে যেগুলি পূরণ করলেই অধিভুক্ত হতে পারে।
আমি আবারও বলতে চাই বেসরকারি, সামরিক নিয়ন্ত্রণে নতুন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় গড়া সমীচীন হবে না। তাতে শ্রেণীবৈষম্য বিস্তর হবে। শিক্ষার বাণিজ্যকরণ ধংসের পথে নেবে। শিক্ষার মান উন্নয়ন ও উচ্চশিক্ষার বিকাশে সরকারে প্রচেষ্টা সফল হোক। উচ্চ শিক্ষার মান উন্নয়ন ও বিস্তার যদি সমাজের চাহিদা অনুযায়ী না হয় তাহলে সমাজে অস্থিরতা দেখা যেতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা যদি সঠিকভাবে একটি সুষম নীতিমালার আলোকে বাস্তবায়ন করা হয় তাহলে উপকৃত হবে গোটা জাতি।
ড. ফরিদ আহমেদ
অধ্যাপক, দর্শন বিভাগ
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়।
ইমেইল: farid_ahmed_ss@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ২২০০ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৯, ২০১৪