কীপ্যাডে পোড়া গন্ধ। প্লাস্টিকের ভস্ম থেকে যে ধোঁয়া ওঠে, এর সঙ্গে এ গন্ধের কোনও মিল নেই।
এই নিমজ্জনে কোন অতল গহ্বরে যাত্রা করেছি, তা সবার অজানা। সবার বলতে অন্তত জনমানুষের। কারণ আমাদের নিয়তির সুতো যারা কেড়ে নিয়েছেন, তাদের জানা থাকতে পারে কোথায় শেষ বা আদৌ শেষ বলে কিছু আছে কিনা। আপাতত জনমানুষ পুড়ছে খড়কুটোর মত। তুলনা করতে গিয়ে কি একটুও বাড়িয়ে বলা হলো? অভিজ্ঞতা সেকথা বলছে না।
টেলিভিশনে চোখ রেখে দেখুন, পত্রিকার পাতা মেলে ধরুন—দেখবেন আগুনের বীভৎসতা। সেই আগুনে ঝলসে যাওয়া একেকটি মুখ, শরীর আতঙ্কের পাঁকে কেবল নিমজ্জিতই করছে আমাদের।
আগুনে মানুষের শরীর পুড়ছে ঠিকই, কিন্তু পুড়ছে না সেই তালগাছটি। যে তালগাছের দখল নেবার লড়াইয়ে দুই পক্ষ। তালগাছ যখন যার দখলে, তখন তাই তার কাছে সত্যি, বাকি সব মিথ্যে। অর্থাৎ ক্ষমতা দখলের লড়াইয়ে একপায়ে অনড় দাঁড়িয়ে থাকা তালগাছটির বিনাশ চাই। বিনাশ ক্ষমতার নয়, বিনাশ হোক ক্ষমতা দখলে রাখা বা ক্ষমতায় যাবার ‘জেদ’-এর। এই তালগাছ জনগণকে কোনও রসালো তাল উপহার দেয় না। এর পাতার বাতাসে নেই প্রশান্তি। বরং পাতায় পাতায় লু হাওয়া।
জনগণ তালগাছের গোড়ায় গিয়ে যে দাঁড়ায়নি তা নয়। তারা ভেবেছিল গাছটির মালিকানা হয়ত তাদের। তারা যদি গাছ স্পর্শ করার সুযোগ পায়, তাহলে পাল্টে যাবে গাছটির চরিত্রও। রসালো ফল, স্নিগ্ধ বাতাস প্রশান্তি এনে দেবে পুরো জনপদে। কিন্তু তালগাছটি ঘিরে রয়েছে রাজনীতিকরা। যারা জননীতি করছেন না। করছেন রাজনীতি। অভিজ্ঞতা বলছে তারা আসলে করছেন—ক্ষমতানীতি। তারা জনমানুষকে সেই তালগাছ স্পর্শ করতে দিতে নারাজ।
বলা যায় এক্ষেত্রে তাদের মধ্যে ঐক্যও রয়েছে। কিন্তু যখন মালিকানার প্রশ্ন ওঠে দুই পক্ষের, তখন যে লড়াই, যে হিংস্রতা, সেখানে তারা ঢাল হিসেবে টেনে নেয় জনমানুষকে। জনমানুষ তখন কেবল একেকটি সংখ্যা হয়ে ওঠে। তাদের পরিচয় হয় লাশ।
একেকটি লাশকে ব্যবহার করা হয়, হিংস্রতার জ্বালানি হিসেবে। আজ চারপাশ সয়লাব সেই পোড়া-আধপোড়া জ্বালানিতে। ওরা পুড়ছে, পুড়ে যাওয়ার চিৎকারে আসন্ন ফাগুনে-নগরে শিমুল-পলাশ ফুটবে কিনা জানি না। হয়ত প্রতিবাদী হয়ে উঠতে পারে ওরাও।
আগামী ফাগুন-চৈত্র যদি পলাশ-শিমুলশূন্য হয় প্রকৃতি—তবুও কি তুমি অভিমানী হবে না, তোমার ক্রোধ জাগবে না মানুষ? নাকি তুমি কেবল জ্বালানিই হবে, ক্ষমতার নষ্ট লড়াইয়ের!
লেখক: বার্তা প্রধান, সময় টিভি
বাংলাদেশ সময়: ১৩০২ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২১, ২০১৫