ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রধানমন্ত্রীকে নাকি গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া হলো?

তুষার আবদুল্লাহ | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩২৭ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫
প্রধানমন্ত্রীকে নাকি গণতন্ত্র ফিরিয়ে দেওয়া হলো?

খালেদা জিয়ার কনিষ্ঠপুত্র আরাফাত রহমান কোকো’র মৃত্যু সংবাদ ঢাকায় পৌছাঁর পর থেকে,বিশেষতঃ গণমাধ্যমে প্রচারের পর-সাধারণ নাগরিকদের মধ্যে গুঞ্জন শুরু হয়েছিল-চলমান সহিংস রাজনীতি হয়তো ‘শোকবিরতি’তে যাচ্ছে। কিন্তু দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে হতে সাধারণের আশা ফিকে হতে শুরু করে।



যখন মালিবাগে বাসে ও সদরঘাটে লঞ্চে আগুন দেওয়ার খবরের পাশাপাশি বিএনপির পক্ষ থেকে চলমান আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়। ঐ মুহূর্তটি থেকে অজানা আতঙ্কও মনে দানা বাধঁতে থাকে, তাহলে কি আরো কোনো সহিংসতার পথে হাঁটবে বিএনপি নের্তৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট?

কিন্তু সন্ধ্যার পরই আবার এমন একটি খবর গণমাধ্যমগুলোতে ব্রেকিং নিউজ হিসেবে আসতে থাকে যা, রাজনীতির  জন্য হবে ইউটার্ন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, পুত্র শোকাতুর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে সমবেদনা জানাতে তার গুলশানের কার্যালয়ে যাবেন। এই খবরটি টেলিভিশনে প্রচার হওয়া মাত্র সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও সবমত ও দলের মানুষরা ইতিবাচক ভাবনা বুনতে শুরু করেন। কেউ কেউ সেই স্বপ্নও দেখতে শুরু করেছিলেন যে, এই সমবেদনা জানানোর উপলক্ষে দুই নেত্রীর দেখা হওয়ার মধ্য দিয়েই হয়তো আলাপ-সংলাপের সূচনা হবে। বারুদের বদলে রাজনীতির মাঠে বইতে শুরু করবে দখিনা হাওয়া। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের উৎকণ্ঠা নিভে গিয়েছিল এবং সবার চোখ থেকেই পেট্রোল বোমার ভয়াল দুঃস্বপ্নটা উড়ে গিয়েছিল।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গণভবন থেকে রওনা হওয়ার আগেই, বিএনপি চেয়ারপারসনের বিশেষ সহকারী যখন জানালেন-শোকে মুহ্যমান খালেদা জিয়াকে ইনজেকশন দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে রাখা হয়েছে, তাই প্রধানমন্ত্রীকে তারা স্বাগত জানাতে পারবেন না। খালেদা জিয়া স্বাভাবিক হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকে জানানো হবে। তারপর তিনি আসতে পারবেন। ২০ দলীয় জোটের যে আন্দোলন চলছে, তা চলতেই থাকবে।

কিন্তু প্রধানমন্ত্রী গুলশান অফিসে অবস্থানরত খালেদা জিয়াকে দেখতে গেলেন। খালেদা জিয়ার গুলশান অফিসের কার্যালয়ের গেটে নেমে দাঁড়ালেন,কিন্তু তাকে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের ভেতরে যেতে দেওয়া হয়নি। খালেদা জিয়া বা বিএনপি’র পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রী স্বাগত জানাতেও কেউ গেটে অবস্থান বা অপেক্ষা করেন নি। ফিরে গেলেন প্রধানমন্ত্রী।

সাধারণ নাগরিকদের প্রশ্নের শেষ নেই। তারা জানতে চান-পুত্র হারানো মা, অর্থাৎ খালেদা জিয়া অসুস্থ থাকতেই পারেন। অচেতন থাকাটাও স্বাভাবিক। কিন্তু দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বা সিনিয়র নেতারা প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাতে পারতেন। তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে নিয়ে যেতে পারতেন ভেতরে।

সাংবাদিক ইউনিয়নের বিএনপিপন্থী গ্রুপের নেতা রুহুল আমিন গাজী’র গণমাধ্যমে দেওয়া তথ্য মতে-ঐ সময়টিতে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ে চার-পাঁচজন স্থায়ী কমিটির সদস্য ভেতরে ছিলেন। তারা নাকি নিচে নেমে আসতে আসতেই প্রধানমন্ত্রী চলে গেছেন। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যাচ্ছেন সেই আয়োজনটি কার্যালয়ের বাইরে স্পষ্টই ছিল। অর্থাৎ তার নিরাপত্তা দলের সদস্যরা ঘণ্টাদুই আগেই সেখানে উপস্থিত হন। সেই আয়োজন দেখেও বিএনপি’র নেতারা প্রধানমন্ত্রীর জন্য গেটে অপেক্ষা করলেন না,প্রধানমন্ত্রীর জন্য দরজা খোলা হলো না। এই আচরণটি শিষ্টাচার বর্হিভূত মনে করছেন সাধারন নাগরিকরা।


তাদের মতে, সামাজিক শিষ্টাচার দেখাতে আওয়ামী লীগের সভাপতিই নন, দেশের প্রধানমন্ত্রী গিয়েছিলেন। তিনি রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী। আরো একধাপ এগিয়ে নাগরিকরা বলছেন-একজন মা ছুটে গিয়েছিলেন আরেকজন মাকে সমবেদনা জানাতে। তাকে খালেদা জিয়া যেখানে ঘুমিয়ে ছিলেন, সেখানে একজন মহিলা হিসেবেও প্রধানমন্ত্রী একনজর দেখতে পারতেন। প্রধানমন্ত্রীকে সেই সুযোগটি না দেওয়াকে শিষ্টাচার বর্হিভূত বলা হচ্ছে। এবং এর মাধ্যমে যদি বিএনপি আপোষহীনতা দেখানোর চেষ্টা করে থাকে, তাহলে সেই চেষ্টাটিকেও হঠকারী চেষ্টা বলছেন সবপক্ষের নাগরিকরা।
 
রাজনীতির যে অচলাবস্থায় আটকে আছে রাষ্ট্র, গণতন্ত্র যখন বিলুপ্ত প্রায়, সেই সময় নাগরিকরা স্বপ্নের রসুন বুনতে চেয়েছিলেন,গণতন্ত্র ও সহিষ্ণুতার রাজনীতি বুঝি আবার বইতে শুরু করবে। কিন্তু দেখা গেলো একপক্ষ অপরপক্ষকে ফিরিয়ে দিলো। আম নাগরিকরা বলছেন এই ফিরিয়ে দেওয়া প্রধানমন্ত্রীকে নয়, আসলে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের দুয়ার থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে গণতন্ত্রকে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩৩০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ২৪, ২০১৫

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।