ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

পেশাগত উৎকর্ষে অনলাইন সাংবাদিকতা

মো. মহিউদ্দিন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১৫৫ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৫
পেশাগত উৎকর্ষে অনলাইন সাংবাদিকতা

চট্টগ্রাম: সব ধরনের চাকরির মধ্যে ঝুঁকি থাকে। তবে চ্যালেঞ্জিং পেশা হিসেবে সাংবাদিকতাকেই ধরা হয়।

কারণ এই চ্যালেঞ্জ সবাই নিতে পারে না। আর সাংবাদিকতা পেশার মধ্যেই আরো একটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো অনলাইন সাংবাদিকতা।

যেখানে প্রতি মুহূর্তে আপডেট থাকতে হয় একজন রিপোর্টারকে, দ্রুত ছুটে যেতে হয় ঘটনাস্থলে, পাঠাতে হয় সর্বশেষ পরিস্থিতি। আর দ্রুত আপলোড করে পাঠককে জানাতে ব্যস্ত থাকতে হয় নিউজরুম এডিটর আর ওয়েব এডিটরদের। সবসময় সবার আগে নিউজ দেওয়ার প্রতিযোগিতা অনলাইনে। এই প্রতিযোগী অবস্থানে থেকেই কাজ করতে হয় এখানে কর্মরত সাংবাদিকদের। পাঠকদের দ্রুত নিউজ পড়ার আগ্রহ দিনদিন বাড়ছে। ফলে দায়বদ্ধতা আরো বাড়ছে।

বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো অনলাইন নিউজপোর্টাল চালুর সেই চ্যালেঞ্জ নিয়েছিলেন বর্তমানে জনপ্রিয় অনলাইন নিউজপোর্টাল বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কমের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন। সেই যাত্রায় কিছুটা বেগ পেতে হলেও বাংলাদেশে অনলাইন নিউজপোর্টোলের জনকের মুকুটটি তারই মাথায় এবং এখনো অনলাইন মাধ্যমে সফল একজন মানুষ পরম শ্রদ্ধেয় আলমগীর হোসেন। অনলাইন সাংবাদিকতার পথিকৃত হয়ে আছেন তিনিই।

আমার সাংবাদিকতা জীবনের অধিংকাংশই কেটেছে অনলাইনে। দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ, দৈনিক আমাদের সময় হয়ে তখন আমি বিডিনিউজটোয়েন্টিফোর.কমে কর্মরত (এই অনলাইনটির প্রতিষ্ঠাতাও আলমগীর হোসেন)। ২০১২ সালে ফ্রেব্রুয়ারি মাসের একদিন রাতে ফোন করে দেখা করতে বললেন তপন দা(আমাদের চট্ট্রগাম ব্যুরো এডিটর)। পরদিন দুপুরে চেরাগি মোড়ে দেখা হতেই বাংলানিউজে স্টাফ করেসপন্ডেন্ট হিসেবে যোগ দিতে বললেন। সিদ্ধান্ত জানাতে বললেন দ্রুত। সিদ্ধান্ত নিয়ে ওইদিন রাতেই দাদাকে জানালাম।

এর দু’য়েকদিন পর চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবের সামনে দেখা হলো রমেন দা’র(রমেন দাশগুপ্ত) সঙ্গে। তিনিও বললেন, চলে আসেন, আমরা একসঙ্গে ভালোভাবে কাজ করবো। পহেলা মার্চ কাজ শুরু করলাম বাংলানিউজে। এর আগে ১০ ফেব্রুয়ারি ফটো করেসপন্ডেন্ট হিসেবে যোগ দিয়েছিলেন সোহেল সরওয়ার। তাকে নিয়েই আমার প্রথম অ্যাসাইনম্যান্ট চট্টগ্রাম কাস্টমসে। সেই থেকে নিউজের পেছনে নিরন্তর ছুটে চলা।

আগের তিনটি হাউসে বিভিন্ন বিটে কাজ করলেও বন্দর কাস্টমস নিয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা খুব বেশি ছিল না। তপন দা’র দিকনির্দেশনা আর রমেন দা’র আন্তরিক সহযোগিতায় এখন আমি এই বিটের নিয়মিত সংবাদ কর্মী। তপন দা’র সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞা আগে থেকেই। দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকায়।

সেখানেই দেখেছি সহকর্মীদের প্রতি দাদার আন্তরিকতা। বিশ্ববিদ্যালয়ে মাস্টার্স পরীক্ষা দেওয়ার চিন্তায় যখন সুপ্রভাত বাংলাদেশ ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিচ্ছিলাম, তখনই তিনি বললেন, আমার সাথে কাজ করো, সপ্তাহে দু’য়েকদিন ক্লাসও করতে পারবে। পরীক্ষার সময় ছুটি নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

সংশ্লিষ্ট বিটের লোকজন এবং পাঠকরা এখন বাংলানিউজ মানেই বোঝেন সংবাদের সবচেয়ে শক্তিশালী মাধ্যম। কারণ এখানে আগামীকালের অপেক্ষা নেই। নিউজ কিল হওয়ার সম্ভাবনা নেই। ঘটনা শেষের আগেই নিউজ আপ। জেনে গেছে সবাই। দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও। সোর্সরাও বুঝে গেছেন বাংলানিউজের ক্যারিশমা। তাই তাদের অনুযোগ, বাংলানিউজে নিউজটা তুলে দেন (আপ করেন), তাহলে সবাই জেনে যাবে। বাংলানিউজ পাঠকের চাহিদা পূরণে সক্ষম হয়েছে তা এখন বলা যায় নির্দিধায়। কারণ পাঠকের চাহিদাকেই প্রাধান্য দেয় বাংলানিউজ। সব সময় সবার আগে সব ধরনের নিউজ দিয়ে বাংলানিউজ কেবল পাঠকের কাছে জনপ্রিয়তা আর আস্থাই অজর্ন করেনি; সংবাদের উৎস হয়ে উঠেছে। যদিও কেউ কেউ ঈর্ষান্বিত। কারণ বাংলানিউজে দিলে সবাই জেনে যাবে। এইখানেই বাংলানিউজের সফলতা।

বাংলানিউজে কাজ করে বুঝেছি অনলাইনে কতো দ্রুত পেশাগত উৎকর্ষ সাধণ করা যায়। আমার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা এবং উপলব্ধি হলো- বাংলানিউজে তিন বছর তিনমাসে যে পরিমাণ নিউজ করেছি, যে পরিমাণ মানুষের সঙ্গে পরিচয় ঘটেছে, সোর্স বেড়েছে তা বিগত পুরো সময়ের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। তাই এখন তরুণদের কাছে অনলাইন সাংবাদিকতার কদর বেড়েছে বহুগুণ।

ফিরে আসি চট্টগ্রাম ব্যুরো প্রসঙ্গে। দাদা (শ্রদ্ধেয় তপন চক্রবর্তী দা) সব সময় বলেন, আমরা সবাই একই পরিবারের মতো; সবাই মিলেমিশে টিম ওয়ার্ক করতে হবে। আমরা কাজ করছি পরিবারের সদস্যের মতোই। ক্রাইম-আদালতের নিউজ নিয়ে আমাদের কোন টেনশন নাই। কারণ রমেন দা আছেন। যে কোন দুর্লভ ছবি তুলে আনতে জুড়ি নেই সিনিয়র ফটো করেসপন্ডেন্ট উজ্জ্বল দা’র। নগরীর এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত, জন্মদিন থেকে সেমিনার, সভা-সমাবেশ থেকে সংঘর্ষ ছবি দেবে সোহেল সরওয়ার। স্টাফ করেসপন্ডেন্ট মামুন আবদুল্লার ভিন্নধর্মী সংবাদ আর পরামর্শ, কমার্শিয়াল ম্যানেজার সাজু চৌধুরীর সহযোগিতা ঋদ্ধ করেছে। সব প্রয়োজনে আছেন অফিস সহকারী আমাদের রুবেল। বলা চলে ‘তাকে ছাড়া চলেই না। ’ সম্প্রতি যোগ দিয়েছেন নিউজরুম এডিটর ইসমেত আরা, বিপ্লব পার্থ ও কমার্শিয়াল সহকারী রফিকুল ইসলাম। আমাদের ছেড়ে গেছে কেউ কেউ আল রাহমান, সুজন ঘোষ সর্বশেষ ইফতেখার ফয়সাল। তবে এখনো আমাদের সম্পর্ক বা যোগাযোগ ঠিক আগের মতোই। আমরা আছি সুখে দুখে একই পরিবারের মতোই। আরো এগিয়ে যাক প্রিয় বাংলানিউজ……



লেখক: সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, চট্টগ্রাম ব্যুরো






বাংলাদেশ সময়: ২১৫৩ ঘণ্টা, জুলাই ২, ২০১৫
জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।