ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

রাবাদার হাত ধরে ডোনাল্ড-আ্যডওয়ার্ডের কৃতি অতীত

অঘোর মন্ডল, স্পেশালিস্ট স্পোর্টস রাইটার | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৬১৮ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
রাবাদার হাত ধরে ডোনাল্ড-আ্যডওয়ার্ডের কৃতি অতীত ছবি: সংগৃহীত

ঢাকা: একজন কীর্তিমান। অন্যজনকে আপাত বলা যায় প্রতিভাবান।

প্রথমজনের ক্রিকেট জীবন শেষ। দ্বিতীয় জনের শুরু। কিন্তু শুরুতেই যে দ্বিতীয়জন টপকে গেলেন প্রথমজনকে। বিশ বছর ছিচল্লিশ দিনের এক তরুণ ফাস্ট বোলারের অভিষেক ম্যাচের বোলিং ফিগারের কাছে যতোই অ্যালান ডোনাল্ডের বোলিং ফিগারটা ম্লান হয়ে যাক, তাতে খুব বেশি বিষন্ন হবেন কি ডোনাল্ড?

একাধিকবার ডোনাল্ডের ইন্টারভিউ নেওয়ার অভিজ্ঞতা থেকে বলতে পারি, সাউথ আফ্রিকার এই সাবেক ফাস্ট বোলারকে যতোই ‘হোয়াইট ইলেক্ট্রিসিটি’ বলা হোক না কেন, তার মুখ দিয়ে বিদ্যুৎ চমকানোর মতো কোনো কথা বের করা সম্ভব নয়। তিনি বোলার হিসেবে ছিলেন ভয়ংকর। কিন্তু মানুষ হিসেবে অসম্ভব ভদ্র।

সেই ভদ্রলোক নিজের একটা রেকর্ডকে অতীত হতে দেখে বিষন্ন হবেন কেন? অভিষেকেই কাগিসো রাবাদার হ্যাটট্রিকসহ ৬ উইকেট নেয়ায় বরং খুশি হওয়ার অনেক কারণ তিনি খুঁজে পেতে পারেন।

ওয়ানডেতে অভিষেকেই ডোনাল্ড নিয়েছিলেন ২৯ রানে ৫ উইকেট। আর রাবাদা নিলেন ১৬ রানে ৬ উইকেট। এর মধ্যে প্রথম তিন উইকেট এসেছে নিজের ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় ওভারে হ্যাটট্রিকে।

মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতেই জোহান্সেবার্গের ওই তরুণ ফাস্ট বোলার এমন এক রেকর্ড গড়লেন যাতে আলোচনায় উঠে এলো শুধু ডোনাল্ডের নাম নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজের পেসার ফিডেল অ্যাডওয়ার্ড থেকে কানাডিয়ান বোলার অস্টিন কোডিংটন পর্যন্ত।

সাউথ আফ্রিকার পক্ষে অভিষেকে সেরা বোলিং ফিগারটা এতোদিন অ্যালান ডোনাল্ডেরই ছিল। শুধু নিজের অভিষেক কেন, সেটা ছিল সাউথ আফ্রিকারও ওয়ানডে ক্রিকেটে অভিষেক ম্যাচ। সেদিক থেকে ১৯৯১ সালের ১০ নভেম্বর ইডেনে গড়া ডোনাল্ডের রেকর্ড ২০১৫ সালের ১০ জুলাই রাবাদা ভাঙলেন। আবার ভাঙতেও পারলেন না।

বর্ণবৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে সাউথ আফ্রিকা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ফিরে তাদের প্রথম ম্যাচ খেলেছিল ভারতের বিপক্ষে ইডেন গার্ডেনে। ওটাই ছিল তাদের ওয়ানডে অভিষেক ম্যাচ। সেই ম্যাচে সাউথ আফ্রিকা তিন উইকেটে হারলেও দুর্দান্ত বল করেছিলেন ডোনাল্ড। ৮ দশমিক ৪ ওভারে ২৯ রানে তিনি নিয়েছিলেন ৫ উইকেটে। যাদের উইকেট নিয়েছিলেন ক্রিকেট বিশ্বে সেই নামগুলো অনেক ওজনদার। রবি শাস্ত্রী (০), সঞ্জয় মাঞ্জেরেকার (১), সিধু (৬), শচীন টেন্ডুলকার (৬২) এবং প্রভিন আমরে (৫৫)। কোনো দেশের ওয়ানডে অভিষেকে ওটাই কোনো বোলারের সেরা বোলিং ফিগার।

ডোনাল্ডের রেকর্ড তাই অক্ষুন্নও রয়ে গেলো। আবার অভিষেকে কোনো বোলারের সেরা বোলিং ফিগারের মালিক বনে গেলেন ডোনাল্ডের দেশেরই এক তরুণ অশেতাঙ্গ ফাস্ট বোলার রাবাদা। তিনি সেই রেকর্ড গড়লেন বাংলাদেশের বিপক্ষে ১৬ রানে ৬ উইকেট নিয়ে। লিটন (০), মাহমুদউল্ল্যাহ (০), সৌম্যকে (২৭) তার দ্বিতীয় ওভারে ফিরিয়ে দিয়ে হ্যাটট্রিক করলেন রাবাদা। তার আগে তুলে নিলেন তামিম ইকবালের উইকেট (০)। নিলেন মাশরাফি (৪) এবং জুবায়ের হোসেন লিখন (৫) এর উইকেটও।
 
রাবাদার এই কৃতিত্বের আগে ওয়ানডে ইতিহাসে অভিষেকে সেরা বোলিং ফিগার ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের ফিডেল অ্যাডওয়ার্ডের। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে ২০০৩ সালে ২২ রানে ৬ উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তবে ডোনাল্ডের রেকর্ডকে অতীত বানিয়ে দিয়ে সাউথ আফ্রিকান ক্রিকেটে কালো মানুষগুলোর জয়োধ্বনি করে গেলেন রাবাদা। জানান দিয়ে গেলেন পঁচিশ বছর আগে বর্ণবৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যে সাউথ আফ্রিকার প্রত্যাবর্তন ঘটেছিল সেখানে কালো মানুষগুলো উঠে আসছে।

সেই সঙ্গে রাবাদা বাংলাদেশকেও অন্যরকম একটা গ্লানি মুক্ত করে দিয়ে গেলেন। বাংলাদেশের বিপক্ষে অভিষেকেই সেরা বোলিং ফিগার ছিল এতোদনি এক নন টেস্ট প্লেয়িং দেশের বোলার অস্টিন কোডিংটনের।

২০০৩ সালে সাউথ আফ্রিকার মাটিতে বিশ্বকাপ ম্যাচে ২৭ রানে ৫ উইকেট নিয়েছিলেন এই কানাডিয়ান বোলার। ওটাই ছিল অভিষেকে বাংলাদেশের বিপক্ষে যে কোনো বোলারের সেরা ফিগার। উইকেট সংখ্যার দিক থেকে রাবাদার রেকর্ড বাংলাদেশের জন্য হয়তো আরও খারাপ হলো। ৫ এর জায়গায় ৬; খারাপ বৈ কী?

তবে মর্যাদার দিক থেকে বাংলাদেশ বলতেই পারবে রেকর্ডটা একটা টেস্ট প্লেয়িং দেশের কোনো বোলারের দখলে। আবার অন্যভাবে ওটাও অমর্যাদাকর বাংলাদেশের জন্য।

ডোনাল্ড, পোলক, এনটিনি, মর্কেলরা ৬ উইকেট পাননি বাংলাদেশের বিপক্ষে। পেলেন আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আনকোরা এক বোলার রাবাদা। এক, দুই, তিন, চার, পাঁচ, ছয় একেবারে ধারাপাত পড়ার মতো করে ছ’টা উইকেট তুলে নিলেন তিনি। বাংলাদেশের ইনিংসে প্রতিরোধের দেয়ালে তামিম, সৌম্য, লিটন, মাহমুদউল্ল্যাহ ও মাশরাফিদের কোনো ইট গাঁথতে দিলেন না রাবাদা।

১০ জুলাই ২০১৫’র সকাল-দুপুরের মুষলধারে বৃষ্টি মিরপুরে বিকেলে থেমেছিল ঠিকই। কিন্তু রামাদার সৌজন্যে দর্শকরা উইকেট বৃষ্টি দেখলেন। যে বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে অ্যালান ডোনাল্ড, ফিডেল অ্যাডওয়ার্ড, অস্টিন কডিংটনের রেকর্ড অতীতের প্যাভিলিয়নে ঢুকে পড়লো।

বাংলাদেশ সময়: ০৬১৯ ঘণ্টা, জুলাই ১১, ২০১৫
টিআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।