ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

দিনে মৃত্যু ৫ হাজার, ১৮০ কোটি পায়না নিরাপদ পানি || মাহমুদ হাফিজ

মাহমুদ হাফিজ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর, স্টকহোম থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩২০ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৫
দিনে মৃত্যু ৫ হাজার, ১৮০ কোটি পায়না নিরাপদ পানি || মাহমুদ হাফিজ

বিশ্ব পানিসঙ্কট মোকাবিলায় বিশ্বনেতারা মিলিত হচ্ছেন সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে। ২৩ আগস্ট (রোববার) স্টকহোম কনফারেন্স সেন্টারে শুরু হচ্ছে পানি ভাবনার বিশ্ব আসর ‘ওয়ার্ল্ড ওয়াটার উইক-২০১৫’।



এ বছর উদযাপন করা হচ্ছে ‘বিশ্ব পানি সপ্তাহ’ আয়োজনের রজতজয়ন্তীও । সম্মেলনের মূল প্রতিপাদ্য ‘পানি ও উন্নয়ন’।

সম্মেলন শুরুর আগেই পাওয়া যাচ্ছে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত। যা এই সম্মেলন উপলক্ষেই প্রকাশিত। একটি তথ্যপত্রে বলা হয়েছে, বিশ্বের অনিরাপদ সুপেয় পানি ও স্বাস্থ্যকর স্যানিটশনের অভাবজনিত রোগে প্রতিদিন ৫ হাজার মানুষের মৃত্যু হচ্ছে।

পানি সপ্তাহ আয়োজক সংস্থা স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল ওয়াটার ইনস্টিটিউট গবেষণালব্ধ উপাত্তের আলোকে কিছু এমন আরো উদ্বেগজনক তথ্য প্রকাশিত হয়েছে এসব তথ্যপত্রে।

বলা হয়েছে, বিশ্বের অন্তত একশ ৮০ কোটি মানুষ নিরাপদ খাবার পানিবঞ্চিত।   প্রায় আড়াশ কোটি মানুষের পর্যাপ্ত স্যানিটেশনের ব্যবস্থা নেই।

এখানেই শেষ নয়। রয়েছে আরও ভয়াবহ সব তথ্য। বলা হয়েছে, বিশ্বে এখনো ৮০ কোটি মানুষ অপুষ্টির শিকার। অন্যদিকে দুইশ কোটি লোক অধিক খাদ্যগ্রহণের কারণে স্থুলকায় হয়ে গেছে।

বিশ্ব খাদ্য উৎপাদনের এক তৃতীয়াংশ অপচয় বা বিনষ্ট হয়ে যাচ্ছে। খাদ্য উৎপাদনে  বিপুল পরিমাণ পানির প্রয়োজন হয়, এ জন্য খাদ্য নষ্টে কার্যত বিশ্বের নদনদীর পানিই নষ্ট হচ্ছে বলেই মনে করছেন পানি বিশেষজ্ঞরা।

পানি সপ্তাহ শুরুর আগেই এসব তথ্য নিয়ে কথা শুরু হয়েছে। মূল আলোচনায় এসব বিষয় গুরুত্ব পাবে। বের হয়ে আসবে সমস্যা ও সঙ্কট সমাধানের নতুন নতুন পথ সেটাই সবার প্রত্যাশা।

মত দেওয়া হয়েছে, মানুষের জীবন ও পরিবেশের ওপর পানি সংক্রান্ত অভিঘাতও মারাত্মক বলে জীবনযাত্রার প্রতিটি ক্ষেত্রে পানির প্রভাব নিয়ে ভাবনা-গবেষণার বিকল্প নেই।

স্টকহোম ওয়াটার ইনস্টিটিউট আরও জানাচ্ছে, বিশ্বের ২৭৬টি নদী অববাহিকার পানি সীমান্তঅতিক্রমী এবং ৪০ শতাংশ বিশ্বজনসংখ্যার প্রাথমিক পানির উৎস সীমান্ত-অতিক্রমী নদী। এসব নদী অববাহিকার পানির অংশীদারিত্ব নিয়ে পাশাপাশি দেশগুলোর মধ্যে জটিলতা তৈরির বড় কারণ। এক্ষেত্রে উভয় দেশের সম্পর্ক ও সহযোগিতাময় পরিবেশের উন্নয়ন গুরুত্বপূর্ণ।

১২০টি দেশের তিনহাজার উন্নয়ন পেশাজীবী, সরকারি-বেসরকারি প্রতিনিধি, শিক্ষাবিদ-জ্বালানি ও পানি সাংবাদিক এতে অংশগ্রহণ করছেন। বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, ব্রাক ও কয়েকটি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার বিশেষজ্ঞ এবং সুইডেনের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়ন ও গবেষণারত বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী এতে যোগ দিচ্ছেন।

বিশ্বনেতাদের এ সম্মেলন উদ্বোধন করবেন সুইডেনের প্রেসিডেন্ট স্ট্যাফেন লোভেন। সম্মেলনে নানা সেশনে উপস্থিত থাকবেন জর্দানের প্রধানমন্ত্রী আবদুল্লাহ এনসুর, মার্শাল আইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট ক্রিস্টোয়ার লোয়াক, ইন্টারন্যাশনাল রিনিউয়েবল এনার্জি এজেন্সীর মহাপরিচালক আদনান জেড আমিন, পেরু’র পরিবেশ প্রতিমন্ত্রী ও কপ-২০ এর প্রেসিডেন্ট ম্যানুয়েল গেরারদো পেড্রো পুলগার প্রমুখ।

বিশ্ব পানি সপ্তাহে পানি সংক্রান্ত বিদ্যমান বিশ্বসঙ্কট নিয়ে আলোচনা করা হবে। এ সময় দেওয়া হবে ওয়াটার নোবেলখ্যাত স্টকহোম ওয়াটার প্রাইজ এবং স্টকহোম ইন্ডাস্ট্রি ওয়াটার অ্যাওয়ার্ড।

এ বছর ভারতে রাজেন্দ্র সিংহ ওয়াটার প্রাইজে ভূষিত হয়েছেন। গ্রামীণ ভারতের মরুভূমিময় এলাকার মানুষের খাবার সঙ্কট দূরীকরণে রাজেন্দ্র যুগান্তকারী ভূমিকা রাখায় তাকে এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে।
 
আয়োজকরা বলেছেন, বিশ্বের সব ধরনের পানি সংক্রান্ত সমস্যা ও সম্ভাবনা নিয়ে এ বছরের পানি সপ্তাহে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে। বর্তমান ও আগামীর জন্য পানি সমস্যা মোকাবিলায় কি কি করা যায় তা নিয়ে গবেষক-আলোচকরা আলোচনা করে দিকনির্দেশনা তৈরি করবেন।

বাংলাদেশ সময় ১২৫৯ ঘণ্টা, আগস্ট ২২, ২০১৫
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।