বাংলাদেশের এক সময়কার দোর্দন্ড প্রতাপশালী জেনারেল মঈন উ আহমেদ নিজের অসুস্থতা নিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। সংসদীয় কমিটি থেকে উপর্যুপরি তলবের পরিপ্রেক্ষিতে উপায়ান্তর না দেখে শেষ পর্যন্ত অসুস্থ না হয়েও অসুস্থতার একটি সার্টিফিকেট যোগাড় করে ফেলেছেন বলে জানা গেছে।
কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে আয়োজিত এ ব্যবস্থায় মঈন ফ্লোরিডা থেকে যান নিউইয়র্কোর কুইন্সে। ডাঃ জামানের তত্ত্বাবধানে লং আইল্যান্ডের একটি ক্লিনিকে ভর্তি হয়ে অসুস্থতার সনদ সংগ্রহ করেন। ডাঃ জামানের বাড়ি বাংলাদেশের চট্টগ্রামে। তার আরেক ডাক্তার বন্ধু নাম প্রকাশ না করার শর্তে এসব তথ্য জানান।
গত কয়েকদিন ধরে জেনারেল মইনের ভাই এস উ আহমেদ ও মনিরের সূত্রে বিভিন্ন মিডিয়ায় খবর প্রকাশিত হয়, সাবেক এ সেনাপ্রধান দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে গুরুতর অসুস্থ। তাকে আইসিইউতে রাখা হয়েছে এবং তার জন্য দোয়া চাওয়া হয়েছে। এমনকি কোনো কোনো পত্রিকা এক ডিগ্রি বাড়িয়ে লিখেছে তার কেমোথেরাপি চলছে। জানা গেছে, দেশের মানুষের সিমপ্যাথি অর্জন ও সংসদীয় কমিটির চাপ কমানোর লক্ষে জেনারেল মইনের দুরারোগ্য ব্যাধি হওয়া সংক্রান্ত সিন্ডিকেটেড নিউজ পরিবেশন করা হয়েছে দেশে বিদেশে।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি এক অভিনভ তৎপরতার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের ক্ষমতার মূল চালিকাশক্তি হয়ে ওঠেনে তৎকালীন সেনাপ্রধান লেঃ জেনারেল মঈন উ আহমেদ। পরদিন ফখরুদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে একটি বেসামরিক অস্থায়ী সরকার গঠন করে পেছন থেকে দু`বছর দেশ চালান জেনারেল মঈন।
সেনাপরিচালিত সরকার দেশের রাজনীতিবিদ, ব্যবসায়ী, পেশাজীবিসহ বিভিন্ন শ্রেনীর হাজারো মানুষকে আটক করে। দুর্নীতির অভিযোগে দুই সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে কারাগারে নেয়। রাজনীতি থেকে দু`নেত্রীকে অপসারনের জন্য "মাইনাস টু" ফর্মুলা বাস্তবায়নের চেষ্টা করা হয়। নিজস্ব ব্রান্ডের গণতন্ত্র চালু করার ঘোষণা দিয়ে পূর্ণ ক্ষমতায় আসার জন্য রাজনীতি নিয়ে অনেক পরীক্ষা নিরিক্ষা চালিয়ে ব্যর্থ হন মঈন। অবশেষে ২৯ ডিসেম্বর নির্বাচন দিয়ে বিদায় নেয় মঈন-ফখরুদ্দিন সরকার। কিন্তু তার আগে ঘটে যায় অনেক ঘটনা। শত শত ব্যবসায়ী ও বিভিন্ন পেশার মানুষকে ধরে নিয়ে মাসের পর মাস বিনা বিচারে আটক রেখে হাজার হাজার কোটি টাকা তুলে নেওয়া হয়। এর মধ্যে ১২০০ কোটি টাকা ব্যাংকে জমা দেওয়া হয়। বাকী টাকা ভাগ বাটোয়ারা করে বিদেশে পাচারের অভিযোগও রয়েছে। "কাঙ্গারু কোর্ট" গঠন করে দুদকের মামলায় বিচারের নামে চলে প্রহসন। যদিও পরবর্তীতে বেশিরভাগ মামলাই উচ্চ আদালতে বাতিল হয়ে যায়। ২১ আগষ্ট ২০০৭ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সংগঠিত সেনা-ছাত্র সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সংসদীয় কমিটির তদন্তে হাজির হবার জন্য জেনারেল মঈন ও ফখরুদ্দিনকে তলব করা হলে উভয়েই হাজির হতে অস্বীকার করেন। পুনরায় তাদের নোটিশ দেওয়া হলে হাজিরা এড়ানোর জন্য জেনারেল মঈন `বাংলাদেশি স্টাইলে` আমেরিকা থেকেও একটি চিকিৎসা সনদ জোগাড় করে ফেলেন।
দেশে ফিরলে মইনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহ, ক্ষমতার অপব্যহার, দুর্নীতিসহ নানা অভিযোগে মামলা হবার সম্ভাবনা আছে। এ নিয়ে বিএনপি ও আওয়ামীলীগের সিনিয়র নেতৃবৃন্দ একাট্টা হয়ে আছেন, এমনকি আর্জিও তৈরি। কেবল বাকি আছে রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের। এরইমধ্যে ৫ম ও ৭ম সংশোধনী বাতিল হবার পরে জেনারেল মইনের বিরুদ্ধে যে কোনো সময় রাষ্ট্রদ্রোহ মামলা হবার ক্ষেত্র তৈরি হয়ে আছে। তাছাড়া ঐ দু`বছরের সকল কর্মকান্ডের বৈধতা দেবার কথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগাম ঘোষণা দিলেও প্রধানমন্ত্রী হবার পরে আর সে বৈধতা দেননি। যার ফলে মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিনের শাসনকাল এখনও অবৈধ রয়ে গেছে। ঐ সময়ে সারা দেশে সংঘটিত অন্যায় অত্যাচরে ক্ষতিগ্রস্তরা মঈনসহ অন্যান্যদের বিরুদ্ধে হাজার হাজার মামলা দায়ের করতে পারে। ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানার বিদ্রোহে ৫৮ সেনা কর্মকর্তা হত্যার ঘটনায় সেনাপ্রধান মঈনের হাত রয়েছে বলে ব্যাপকভাবে ধারনা করা হয়। ইতোমধ্যেই বিএনপি সরকারের সাবেক বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুর দায়ের করা ১০০ কোটি টাকার ক্ষতিপুরণ মামলা বিচারাধীন রয়েছে মঈনের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে দেশে ফেরা থেকে বাচাঁর জন্য মইনের এ সর্বশেষ উদ্যোগ।
[মুক্তমত কলামটি মুক্তমত প্রকাশের জন্য উন্মুক্ত]
বাংলাদেশ সময় ১১৩৩ ঘণ্টা, জুন ২০, ২০১১