ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

পিলখানা শহীদদের জন্য উন্মুক্তস্থানে স্মৃতিস্তম্ভ হোক !

ইমামুল হক, অতিথি লেখক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০২৫ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
পিলখানা শহীদদের জন্য উন্মুক্তস্থানে স্মৃতিস্তম্ভ হোক !

'এ জাতিকে কেউ দাবায়া রাখতে পারবে না। ' মহান নেতার সেই সাহসী উচ্চারণে যে জাতি উজ্জীবিত হয়ে স্বাধীনতা অর্জন করলো সে জাতি বীর সেনানীদের এমন নৃসংশ ও নির্মম হত্যাকাণ্ড কিভাবে মেনে নেবে? ২০০৯ সালের ২৫ ও  ২৬ ফেব্রুয়ারি নরপিশাচের দল স্বাধীন বাংলাদেশে নৃসংশ এক উন্মাদনায় মেতে উঠেছিল।

বিশ্বের দরবারে এমন বর্বরোচিত ঘটনা জাতি হিসেবে আমাদের খাটো  করেছে, ওই নর পিসাচেরা জাতি হিসাবে আমাদের মুখে কালিমা লেপন করেছে।   আমাদের গণতন্ত্র, আমাদের নেতৃত্ব,  আমাদের সেনাবাহিনী এবং আমরা কেন পারলাম না আমাদের ৫৭ জন বীরসেনানীকে  সেদিনের এমন এক নির্মম হত্যাযজ্ঞ থেকে বাঁচাতে?  বিচার হয়েছে, হচ্ছে, তারপরও আমরা জানি না নরপিশাচরা কিসের আশায়, কি গভীর ষড়যন্ত্রে কাদের ইশারায় সেদিন মেতেছিলো সেই পৈশাচিক উন্মাদনায়?

বীরের এ রক্তস্রোত, স্বজনদের অশ্রুধারা নিশ্চই ধরার ধুলায় হারিয়ে যেতে পারে না। ইতিহাস কাপুরুষদের ক্ষমা করে না।   আমরা এও জানি ইতিহাস তার আপন গতিতে চলে।   চল্লিশ বছর পরে একাত্তরের ঘাতক দালালদের বিচার হয়েছে, তাদের ঘৃণ্য কাজের, ষড়যন্ত্রের বিবরণ আমাদের সামনে স্পষ্ট হয়েছে। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারির হত্যাযজ্ঞের পেছনের কাপুরুষদের বিস্তারিত কীর্তি ও নিশ্চয়ই  ইতিহাস একদিন আমাদের সামনে হাজির করবে। আমরা কি সেদিনের অপেক্ষায় নেই? সেদিনই হয়ত আমাদের হারানো সূর্য সন্তানদের আত্মা শান্তি পাবে। সেদিনই হয়ত স্বজনদের  আপনজন হারানোর ব্যথা কিছুটা লাঘব হবে।  

আমাদের হারানো সাহসী বীরেরা যারা জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশমাতৃকার জন্যে, যারা আমাদের স্বাধীনতাকে সমুন্নত রেখেছিলেন, যাদের পদচারণায় আমরা সাহসী হয়ে উঠ্তাম তাদের আমরা কি যথার্থ ভাবে স্মরণ করছি? তারা কি কেবলি কয়েকজন মানুষের ভাই, বাবা, স্বামী, বন্ধু, সন্তান কিংবা কয়েকটি পরিবারের স্বজন? কেবল কি সেই স্বজনরাই গভীর বেদনা নিয়ে প্রতিবছর এমন সময় স্মরণ করবে এই সব জাতীয় বীরদের? আমাদের সেনাবাহিনী, আমাদের সরকার, আমদের গণতন্ত্র কি আহত হয়নি এমন বীর সন্তানদের হারিয়ে? জাতি হিসাবে কি আমরা হারাইনি আমাদের গৌরব, আমাদের সাহসী উচ্চারণ কি মুখ থুবড়ে পড়েনি?

প্রবল দেশপ্রেমে উজ্জীবিত, পৌরুষে ভাস্বর, মানুষের প্রীতি সাধনে তৎপর, পরমতসহিষ্ণু , বিনয়ী ও সাহসী জাতির এই শ্রেষ্ট সন্তানদের যথার্থভাবে শ্রদ্ধা প্রদর্শনের জন্যে কর্নেল মুজিব ট্রাস্টসহ সকল শহীদ পরিবার সেই দিনের ঘটনার পর থেকেই ২৫ ফেব্রুয়ারি কে সরকারিভাবে শহীদ সেনা দিবস পালনের জন্যে অনুরোধ করে আসছে।   আমাদের এই প্রজন্ম যদি এই বীরদের দেশপ্রেম, জীবনাচরণ ও দৃষ্টি ভঙ্গি থেকে  উৎসাহিত ও উজ্জীবিত হতে না পারে তবে তা হবে আরও দুঃখজনক ও বেদনাদায়ক। ঢাকায় জনসাধারণের জন্যে উন্মুক্ত স্থানে যথাযথ মর্যাদায় শহীদ সেনানীদের স্মরণে একটি স্মৃতি স্তম্ভ হোক।   এ দাবিও অনেক দিনের।   দেশপ্রেমী বর্তমান সরকার নিশ্চয়ই ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহীদ সেনা দিবস হিসেবে শিগগিরই  ঘোষণা দেবে আর নতুন প্রজন্মকে উজ্জীবিত করবে সঠিক জায়গায় শহীদের স্মরণে একটি স্মৃতি স্তম্ভ নির্মাণ করে।  

যখন আমরা পুর্ণাঙ্গ মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, মুক্ত পরিবেশ, এবং অর্থবহ গণতন্ত্র  পাব তখন আমরা স্পষ্টভাবে চিনে ফেলবো ওদের, যারা ছিনিয়ে নিয়েছে আমাদেরস সাহসী সন্তানদের ।   তবে এ কথা ও ঠিক যে  বীর শহীদদের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা প্রদর্শণের জন্য আমাদের চাই আরও গণতন্ত্র, আরও মানবাধিকার, আর স্বাধীনতা। আমরা কি সেই দিনের অপেক্ষায় নেই?

জেনারেল শাকিল, কর্নেল মুজিব, কর্নেল এলাহি, কর্নেল গুলজার, মেজর হাসান, মেজর সালেহ, ক্যাপ্টেন মাযহার আর ক্যাপ্টেন নুর সহ বিডিআর হত্যাযজ্ঞে হারানো সকল শহীদ বীর সেনানীদের আজ শহীদ সেনা দিবসে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি আমরা সবাই।

ইমামুল হক
শহীদ কর্নেল মুজিব এর ছোট ভাই ও জাতিসংঘের সাবেক কর্মকর্তা
emamul.haque@gmail.com

বাংলাদেশ সময় ১০৪০ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৫, ২০১৬
এমএমকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।