ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

একটি গানে স্বাধীনতার পূর্ণ ইতিহাস || ফারুক ওয়াহিদ

... | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৯ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
একটি গানে স্বাধীনতার পূর্ণ ইতিহাস || ফারুক ওয়াহিদ

স্বাধীনতার পরপরই মহান মুক্তিযুদ্ধের উপর সম্পূর্ণ ইতিহাস ও ঘটনাবলী নিয়ে প্রায় ১১ মিনিট স্থায়ী একটি গান রেকর্ড করা হয়- গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছিলেন লোক সঙ্গীতের কিংবদন্তি মরমী কণ্ঠশিল্পী আবদুল আলীম, বাংলার গানের পাখি সংগীতের অহংকার কোকিলকণ্ঠী সাবিনা ইয়াসমিন এবং কিংবদন্তির লোকসঙ্গীত ও গণসংগীত শিল্পী, সুরকার, গীতিকার, ভাষাসৈনিক, সংগীত পরিচালক ও কণ্ঠযোদ্ধা আবদুল লতিফ।

এই অমূল্য রতন গানটির গীতিকার ও সুরকার ছিলেন আবদুল লতিফ নিজেই।



আবদুল আলীম ও আবদুল লতিফ আজ আর আমাদের মাঝে বেঁচে নেই- কিন্তু গানের পাখি সাবিনা ইয়াসমিনই এই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বা দলিলভিত্তিক অমূল্য রত্ন গানটির একমাত্র জীবিত কণ্ঠশিল্পী হিসেবে কালের নিরব সাক্ষি হয়ে রয়েছেন এবং একমাত্র সাবিনা ইয়াসমিনই গানটির প্রেক্ষাপট, পটভূমি ও রেকর্ডিং এর সময় প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতার আলোকে ঐতিহাসিক রোমাঞ্চকর মুহূর্ত গুলোর সঠিক বর্ণনা দিতে পারবেন।  

বাংলা গানের ইতিহাসে আমরা যতটুক জানি ১৯৪৮ সালে গ্রামোফোন রেকর্ডে উভয় পিঠে রেকর্ডকৃত জগন্ময় মিত্রের ‘চিঠি’ অর্থাৎ ‘তুমি আজ কত দূরে’ বাঙালির হৃদয়-মন ছুঁয়ে যাওয়া স্থায়িত্বের দিক দিয়ে দীর্ঘ ৬ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড স্থায়ী গানটি সর্বশীর্ষে ছিল- যার রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারেনি। কিন্তু বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস ভিত্তিক প্রায় ১১ মিনিট স্থায়ী ‘জয় বাংলার জয় বঙ্গবন্ধুর জয়’ গানটি সর্বকালের সকল রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়- দুইবাংলায় দীর্ঘ ১১ মিনিটব্যাপী কোনো বাংলা গান আছে কিনা আমার জানা নাই।
 
স্বাধীনতার দলিল মুক্তিযুদ্ধের অমূল্য রতন এই গানটিতে বঙ্গবন্ধু ও জয়বাংলার কথা, সামরিক শাসক আইয়ুব খানের জোর করে ক্ষমতা দখলের কথা, ঐতিহাসিক ছয়দফা আন্দোলন, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে আইয়ুব শাহীর পতন, ইয়াহিয়ার ক্ষমতা দখল এবং ৭০-এর নির্বাচন ও নির্বাচনে ছয়দফার জয়, জাতীয় পরিষদের অধীবেশন স্থগিত এবং গোপন মাতাল সভায় ভুট্টো-টিক্কা-ইয়াহিয়ার বাংলায় গণহত্যার ষড়যন্ত্র, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ, হরতাল, অসহযোগ আন্দোলন, বঙ্গবন্ধুর সাথে সময় কাটনোর জন্য আলোচনার নামে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য এবং গোলাবারুদ আনা, ইয়াহিয়ার গোপনে পিণ্ডি চলে যাওয়া এবং টিক্কাখানের গণহত্যা এবং বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার, লুণ্ঠন-অগ্নিসংযোগ, লক্ষ লক্ষ মা-বোনের সম্ভ্রমহানী, ৩০ লক্ষ লোক হত্যা, ১ কোটি লোকের ভারত গমন এবং ভারতের সহযোগিতা, অন্ন-বস্ত্র ও আশ্রয় দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের ট্রেনিং দেওয়া, মুক্তিযোদ্ধাদের গেরিলা আক্রমনে  পাকিস্তান বাহিনী দিশেহারার বর্ণনা, মিত্র-মুক্তিবাহিনীর যৌথভাবে অভিযান, ভারতের সাথে যুদ্ধে জড়িয়ে পড়া, ইয়াহিয়ার আদেশ উপেক্ষা করে নিয়াজির যুদ্ধবিরতি এবং হানাদার পাকিস্তান বাহিনীর আত্মসমর্পণ এবং বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন এসবকিছুরই বর্ণনা রয়েছে এই গানটিতে।

কী নেই গানটিতে? যেহেতু গানটি স্বাধীন হওয়ার পরপরই রেকর্ড করা হয়- তাই এতে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত বা সত্য ঘটনা রয়েছে- কারণ তখন মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ঘটনা আড়াল করা বা বিকৃত করার কথা স্বপ্নেও কেউ চিন্তা করেনি। বাংলাদেশ বেতারে ইদানিং বিশেষ করে অগ্নিঝরা মার্চ তথা স্বাধীনতার মাসে গানটি সম্প্রচার হচ্ছে কি না আমি জানি না। গানটি বেতারের আর্কাইভসে সংরক্ষিত আছে কিনা তাও জানিনা। গানটি যদি হারিয়ে যায় তাহলে গানটি খুঁজে ঠিকই উদ্ধার করা যাবে- কিন্তু যদি ইচ্ছে করে হারিয়ে ফেলা হয় তাহলে আর কোনোদিন খুঁজে পাওয়া যাবে না।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর বাংলাদেশ বেতারের নাম হয়ে যায় ‘রেডিও বাংলাদেশ’। ‘পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী’ হয়ে যায় শুধু ‘হানাদার বাহিনী’ বা ‘শত্রু বাহিনী’ বা ‘বিদেশি বাহিনী’- মুক্তিযুদ্ধের শ্লোগান ‘জয়বাংলা’ হয়ে য়ায় পাকিস্তান থেকে আমিদানীকৃত ‘জিন্দাবাদ’ তথা ‘বাংলাদেশ জিন্দাবাদ’ অথচ মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা কোনোদিন ‘জয় বাংলা’ ছাড়া কোনো ‘জিন্দাবাদ’ স্লোগান দেইনি- মুক্তিযুদ্ধের রুদ্র ধ্বনি ‘জয় বাংলা’ ছিল অকুতোভয় মুক্তিযোদ্ধাদের শক্তির প্রতীক- দেশপ্রেম প্রকাশের প্রতীক ‘জয় বাংলা’ যা- মুক্তিযোদ্ধাদের এনে দিতো অদম্য শক্তি।

‘জয় বাংলা’ বীর বাঙালির প্রাণের স্লোগান- যা বাঙালির প্রাণে নতুন স্পন্দন যোগাতো। ‘জয় বাংলা’ হলো প্রাণের ধ্বনি, হৃদয়ের ধ্বনি, মুক্তির ধ্বনি, যুদ্ধ জয়ের ধ্বনি, সুদীপ্ত সাহসের ধ্বনি। ‘জয় বাংলা’ হলো অগ্রগতির পাথেয়, জয়ের শক্তি। ‘জয় বাংলা’ হলো গ্রাম-বাংলার সাধারণ মানুষের হৃদয়ের  স্লোগান, চেতনার স্লোগান, মাটির স্লোগান।

‘জয় বাংলা’ হলো মুক্তিযুদ্ধে ত্রিশ লক্ষ শহীদের আত্মার ধ্বনি।   কিন্তু আমার বাংলা মায়ের রক্তে কেনা ‘জয় বাংলা’ স্লোগানকে বাদ দিয়ে সেই বর্বর হানাদারদের দেশ পাকিস্তান থেকে আমদানিকৃত সেই ‘জিন্দাবাদ’ এইসব পাকিস্তানি স্লোগান দেওয়ার জন্য বাধ্য করা হয়েছিল এতোদিন- অথচ এই ‘জয়বাংলা’ শ্লোগান দিয়ে আমরা মুক্তিযুদ্ধ করে ‘জিন্দাবাদ’ শ্লোগানের অনুসারী হানাদার পাকিস্তানিদের পরাজিত করে আত্মসমর্পণ করিয়েছি।

১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর থেকে ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত দীর্ঘ ২১টি বছর ধরে নতুন প্রজন্ম কিছুই জানতে পারেনি ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের সঠিক ইতিহাস। শুধু তাই নয়, জাতীয় প্রচার মাধ্যম থেকে ওরা ভুলিয়ে দিয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের সকল চিন্তাচেতনা। ‘জয়বাংলা’ এবং ‘জয় বঙ্গবন্ধু’ শ্লোগানকে চিরদিনের জন্য নির্বাসন দিয়েছিল এবং দীর্ঘদিন সারাদেশ মিথ্যার একটা ঘন আবরণে যেন ঢাকা পড়ে গিয়েছিল। মিথ্যা বলা হয়েছে, মিথ্যার অভিনয় করা হয়েছে- এমন কি রূপকথার প্রবাদ পুরুষ শতাব্দীর মহাপুরুষ বাঙালির অবিসংবাদিত সংগ্রামী নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাম নিশানা পর্য্যন্ত মুছে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ জয়ের ৪৫ বছরে মেঘনা-তিতাস-পদ্মা-যমুনায় অনেক জল গড়িয়েছে। আজ সময় এসেছে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতাকে নতুনভাবে মূল্যায়ন করার। নতুন প্রজন্ম ইদানীং মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইহিতাস জানতে পেরে প্রশ্ন করছে- কাদের দোষে এমন মুখ থুবরে পড়েছিল একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস?
 
প্রকৃতপক্ষে মুক্তিযুদ্ধ অনিঃশেষ ও অন্তহীন- তাই মুক্তিযুদ্ধ শেষ হয় কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের চেতনা চিরজাগরূক থাকে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করতে পারলেই আমরা জাতি হিসেবে সমৃদ্ধ হতে পারব এবং বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ে তুলে হারানো বাংলাকে আবার ফিরে পাব।

মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তি তথা সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষের আশু দৃষ্টি আকর্ষণ করে আমরা আশা করবো দেশবাসী তথা নতুন প্রজন্মকে মহান মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানানোর জন্য ২৬ মার্চ ২০১৬ মহান স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধের দলিলভিত্তিক অমূল্য রত্ন ১১ মিনিটের সম্পূর্ণ গানটি বাংলাদেশ বেতার ও টিলিভিশনে সারাদিনব্যাপী পুনঃ পুনঃ প্রচার করা হোক।

আর ‘বাংলাদেশ বেতার’ যদি এখনো অন্তরে ‘রেডিও বাংলাদেশ’ হিসেবে ধারণ করে থাকে তাহলে এই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসভিত্তিক গানটি প্রচারের কোনো প্রয়োজন নেই এবং আমরা ধরে নিবো ‘বাংলাদেশ বেতার’-এ এখনও পাকিস্তানি প্রেতাত্মারা ঘাপটি মেরে বসে রয়েছেন।

মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী পাঠকদের বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের সুবিধার্থে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের দলিলভিত্তিক অমূল্য রত্ন ১১ মিনিটের ‘জয় বাংলার জয় বঙ্গবন্ধুর জয়’ সম্পূর্ণ গানটি নিম্নে দেওয়া হলো:

“জয় বাংলার জয় বঙ্গবন্ধুর জয়
স্বাধীন হইলো দেশ আমাদের
জয় জয় জয় বলো বাংলাদেশের জয় । ।
 
দিনে দিনে মাস গেলো মাসে মাসে সাল
এই ভাবেতে পাকিস্তানের গেলো কতকাল
জোর করিয়া আইয়ুব শাহী সিংহাসন নিলো
আগরতলার মামলাতে গদ্দি ভাইঙ্গা গেলো
হায় হায় গদ্দি ভাইঙ্গা গেলো।
 
মিরজাফরের বংশধর ইয়াহিয়া খানে
উইড়া আইসা জুইড়া গিয়া বসে সিংহাসনে
মুখে মুখে গণতন্ত্র কাজে নাহি মানে
জালিম হইয়া জুলুম চালায় পূর্ব পাকিস্তানে
হায় হায় পূর্ব পাকিস্তানে।
 
ভোটাধিকার দিতে হবে বঙ্গবন্ধুর পণ
কেল্লাফতে খানে তখন দিলো নির্বাচন
তারপরেতে দেশে আইলো নির্বাচনের হোলি
রাজনৈতিক দল সকলে লাগলো ঠেলাঠেলি
হায় হায় লাগলো ঠেলাঠেলি।
 
ধন্য ধন্য বঙ্গবন্ধু ধন্য হইলো দেশ
ছয় দফার জয় হইলো খানের দফা শেষ
ইয়াহিয়া খানে তখন ভুট্টোজিরে কয়
সাধের সিংহাসন নিয়া কেমন জানি হয়
হায় হায় কেমন জানি হয়।
 ভোতা তলোয়ারে ভুট্টো নামিলো ময়দানে
ষড়যন্ত্র করলো তারা গোপনে গোপনে
ভুট্টো-টিক্কা-ইয়াহিয়ায় অনেক বুদ্ধি করে
কারবালা বানাইবে তারা বাংলার ঘরে ঘরে
হায় হায় বাংলার ঘরে ঘরে।
 
পিন্ডিতে বসিয়া তারা লাল-গোলাপি খায়
ঝনক ঝনক পায়েল বাজে মাতালের সভায়
গিলাসে গিলাসে খাইয়া নেশায় বিভোর হয়
রেডিওর ভাষণের মতে কাল বিকালে কয়
হায় হায় বোতল খাইয়া কয়।
 
বাংলাদেশের দাবিদাওয়া হিসাবে না ধরে
বাঙালিকে দমন করতে গুল্লির আদেশ করে
টক-মিষ্টি শেষ করিয়া খাইলো এবার ঝাল
ভুট্টোর বুদ্ধিতে খানে দিলো লম্বা ফাল
হায় হায় দিলো লম্বা ফাল।
 
পরিষদের অধিবেশন বাতিল কইরা দিলো
বর্তমান আর ভবিষ্যতের চিন্তা না করিল
বঙ্গবন্ধুর ভাষণেতে সাড়া পড়লো দেশে
হরতাল আর অসহযোগ শুরু হইলো শেষে
হায় হায় শুরু হইলো শেষে।
 
পাকিস্তানের হুকুমতে মানতা নেহি হ্যায়
বাঙালিরা কেমন চিজ জানতা নেহি হ্যায়
জানিয়া শুনিয়া যখন বুঝিয়া ফেলিলো
জল্লাদের প্রধানগণে বাংলাদেশে আইলো
হায় হায় বাংলাদেশে আইলো।
 
একে একে অনেক জল্লাদ
জল্লাদ বাংলাদেশে আইলো
বঙ্গবন্ধুর সনে তারা দরশন দিলোরে
প্রাণ আমার যায় যায়রে।
 
গোলাবারুদ আনলো তারা
শুধু মুখেই আলোচনা
সময় কাটাইয়া দিলো করে তালবাহানারে
প্রাণ আমার যায় যায়রে।
 
সুযোগ বুঝে ইয়াহিয়া হায়রে পিণ্ডি চইলা গেলো
জালিম জল্লাদ টিক্কা খানে বাংলায় রইয়া গেলোরে
প্রাণ আমার যায় যায়রে।
 
লক্ষ সৈনিক সাজাইলো
হায় হায় সাজলো শতদলে
চব্বিশ ঘন্টায় বাঙালিকে দমন করবে বলেরে
প্রাণ আমার যায় যায়রে।
 
আরে ঝাঁপাইয়া পড়িল জল্লাদ শহরে শহরে
মানুষ মারিল তারা কাতারে কাতারে
বঙ্গবন্ধুকে তারা গ্রেফতার করিলো
শৃগাল হয়ে সিংহকে ফান্দেতে ভরিলো।
 
লুণ্ঠন করিলো তারা বাঙালির ধন
পারলোনা ছিনাইয়া নিতে বাঙালির মন
লাখো লাখো মা-বোনেদের ইজ্জত লুটিলো
মানুষের ধর্মা-ধর্ম নাহি যে মানিল।
 
আরে নাদিরশাহের বিভীষিকা হয়ে গেলো পার
বীর বাঙালি অস্ত্র ধরে হাতে হাতিয়ার
দানবের মতো জল্লাদ মানব মারিল
পাইকারী হারে তারা ব্যাভিচার করিলো।
 
জয় বাংলার জয় বঙ্গবন্ধুর জয়
স্বাধীন হইলো দেশ আমাদের
জয় জয় জয় বলো বাংলাদেশের জয় । ।
 
লক্ষ লক্ষ বাড়ি ঘরও
হায় হায় পুইড়া করলো ছাই
ত্রিশ লক্ষ মারলো মানুষ
কোনো বিচার নাই ওরে
প্রাণ আমার যায় যায়রে।
 
কোটি লোকে ভারতবাসি
হায় হায় পালাইয়া গেলো
ভারত মাতা সদয় হইয়া
ভরণপোষণ দিলোরে
প্রাণ আমার যায় যায়রে।
 
মাতা হারা খোকা-খুকি
হায় হায় পিতা হারা পুত্র
প্রাণের ভয়ে কাইন্দা বেড়ায়
দেশের সর্বত্ররে
প্রাণ আমার যায় যায় রে।
 
এসো থোকা এসো হে খুকি
হায়রে কেঁদোনা আর তুমি
তোমার পিতা তোমার মাতা
এই জন্মভূমিরে
প্রাণ আমার যায় যায় রে।
 
জনগনের সমর্থনে নেতা হলো যারা
পাক সরকারের মতে নাকি দেশদ্রোহী তারা
প্রতিশোধ নিতে হবে মাইরা হানাদার
বন্দুক শিখিয়া লওহে সবাই একবার
হায় হায় সবাই একবার।
 
চারদিক হইতে মুক্তিরা দলে দলে আইলো
জল্লাদ বাহিনী বলে খাইলো রে খাইলো
কোথা হইতে আসে বিচ্ছু কোথা চইলা যায়
খান সেনারা চেষ্টা কইরাও ধরতে নাহি পায়
হায় হায় ধরতে নাহি পায়।
 
হঠাৎ কইরা গুরূম গুরূম দারূম দারূম দিয়া
বহুত জল্লাদ বাহিনী ফেলিলো হুতাইয়া
কাঁহুয়াহু কাঁহুয়াহু নিয়াজি ফোন করে
হুয়াক্কা হুয়া বইল্ল্যা খানে চিৎকার করে
হায় হায় খানে চিৎকার করে।
 
কি হইলো কি হইলো করোগো বাবাজি
বাঙালিরে মারতে গিয়া কি হইয়াছে আজি
যাহা চাও তাহা দিবো বলো সমাচার
বাঙালিকে মাইরা মাইরা করো ছারখার
হায় হায় করো ছারখার।
 
হ্যালো হ্যালো হ্যালো স্যার ক্যায়সে মারেঙ্গে
মুক্তিফৌজ আগিয়া হ্যায় ক্যায়সে লরেঙ্গে
লরতে রহো জনতারেগা ইন্ডিয়াকে সাথ
তরি বিনে তরেগা হাম ইন্ডিয়াকি দাঁত
হায় হায় ইন্ডিয়াকি দাঁত।
 
টেক্কা দিয়া ইয়াহিয়া জং শুরু করে
মিত্র-মুক্তি একসাথে একই রং ধরে
ঠ্যালার নাম বাবাজি এমন দিলো ঠ্যালা
বেগতিক হইয়া কান্দে ইয়াহিয়ার চ্যালা
হায় হায় ইয়াহিয়ার চ্যালা।
 
ও মরি! হায়রে হায় দুঃখে পরান যায়
বিপদে পড়িয়া কান্দে ঠ্যাডা মালিক্কায়
মরি হায়রে হায়। ।
 
নিয়াজি পিঁয়াজি হইলো হালুয়া তার টাইট
ইয়াহিয়ার আদেশে আর করবে নাকি ফাইট
হায় হায় করবে নাকি ফাইট।
 
হায় হায় টিক্কা খানের হুঁক্কা ভাইঙ্গাছে
ইয়াহিয়া হুইত্যা দিয়াছে
ওরে কামান বন্দুক মেশিনগানে এইডা কিডা কইরাছে
ইয়াহিয়ায় হুইত্যা দিয়াছে
শুনছেননি বুঝছেননি দেখছেননি ভাইসবে
ইয়াহিয়ায় হুইত্যা দিয়াছে
ইয়াহিয়ায় হুইত্যা দিয়াছে।
 
রাজ্য গেলো ইজ্জত গেলো গেলো ইয়াহিয়া
বঙ্গবন্ধু বঙ্গভূমি আসিলেন ফিরিয়া
সবার উপর মানুষ সত্য তার উপরে নয়
এই কথা সর্বলোকে সর্বকালে কয়
বলো বাংলাদেশের জয়
বলো বাংলাদেশের জয়
বলো বাংলাদেশের জয়। ”

লেখক: যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী মুক্তিযোদ্ধা (২নং সেক্টর বাঞ্ছারামপুর)

বাংলাদেশ সময় ১৬০০ ঘণ্টা, মার্চ ১০, ২০১৬
এমএমকে

** শুনেছি মায়ের কম্পিত ঠোঁটে || মাহবুবুর রহমান মুন্না
** আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি || জনি হক
** ৭ মার্চের ভাষণঃ মুক্তির গান, স্বাধীনতার কবিতা || এরশাদুল আলম প্রিন্স
** অগ্নিঝরা মার্চ বাঙ্গালির উত্থানপর্ব || জুয়েল মাজহার
** দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা || সাজেদা সুইটি
** এ দেশ গভীর ভালোবাসা ও বন্ধনের || মুফতি এনায়েতুল্লাহ
** সোনালী চেতনার সৌম্য অভ্যুত্থান || মাহমুদ মেনন

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।