ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

ভয়-শঙ্কার অবসান হোক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০২ ঘণ্টা, জুন ৯, ২০১৬
ভয়-শঙ্কার অবসান হোক ছবিতে দুই সন্তানসহ বাবুল আক্তার ও তার স্ত্রী মাহমুদা খানম মিতু

আমরা কেউ কি এখন নিরাপদ? গেল দেড় বছরে প্রায় একই ধরনের ৪৮ খুন যেন নিরাপত্তাহীন করে তুলেছে সবাইকে। এই সমাজে অস্থিরতা, এক ধরনের নিরাপত্তাবোধের অভাব অনেকদিন ধরে চলছে।

শুধু চলছে বললে ভুল হবে, প্রকট হচ্ছে দিন দিন। যেন ভয়ের সঙ্গে নিত্য বসবাস।

ব্যক্তির নিরাপত্তার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। রাষ্ট্রযন্ত্রের যে শাখা এ নিরাপত্তার দায়িত্বে আছে, আজ তাদের পরিবারই আক্রান্ত। সাধারণ মানুষ নিরাপদবোধ করবে কেমন করে? ক্রমাগত ঘটে যাওয়া এই সিরিজ হত্যাকাণ্ড কোনো ইতিবাচক বার্তা দিচ্ছে না। বিপন্ন, উদ্বিগ্ন ও অরক্ষিত সাধারণ মানুষ এখন অসহায় সময় পার করছে।

রাষ্ট্র খুনিদের ধরতে যতটা না তৎপর, তারচেয়ে বেশি তৎপর আইএস আছে কি নেই, সেই বিতর্কের জবাব দিতে। অন্তত স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কথা শুনে সেটাই মনে হয়। আইএস থাকুক আর না থাকুক ঘটনা তো ঘটছে। জঙ্গিবাদ যেভাবে এগোচ্ছে, সরকার সেভাবে দমন করতে পারছে না। এমনিতেই দেশে সৎ ও দৃঢ় প্রত্যয়ী পুলিশ অফিসারের সংখ্যা নেহাতই হাতে গোনা। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে এসপি বাবুল আক্তারের অসীম সাহসিতার কথা আমরা জানি। নিজের জীবন বাজি রেখে কেবল দেশপ্রেম ও দায়িত্ববোধ থেকে তিনি অনেক অপারেশন চালিয়েছেন। বাবুল আক্তারের মতো দক্ষ পুলিশ অফিসারকে থামানোর জন্যই এই টার্গেট কিলিং হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

পরপর ঘটে যাওয়া এই হামলা, এই মৃত্যু দেশকে একটা সংকটের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছে। এক্ষেত্রে দেশের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংকটের মধ্যে ফেলে দেওয়ার নানা চক্রান্ত থাকতে পারে। সংকট তৈরির পেছনে বাইরের কোনো রাষ্ট্রীয় চালকের ভূমিকা যদি থাকে, সেটাই হচ্ছে দুর্ভাবনার বিষয়।

দেশে গণতন্ত্রের সীমাবদ্ধতার কথা বলে কেউ কেউ সংকটের কারণ হিসাবে যুক্তি দাঁড় করানোর চেষ্টা করেছেন। পৃথিবীর ১৯৪টি দেশের মধ্যে মাত্র ৬৬টি দেশে নির্বাচিত সরকার আছে। বাকি দুই তৃতীয়াংশেরও বেশি দেশে গণতন্ত্র নেই। আজকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম চরম গণতন্ত্রের দেশ হওয়া সত্ত্বেও জঙ্গি-সন্ত্রাসের আওতার বাইরে নিজেদের রাখতে পারছে না।

জঙ্গিবাদের উত্থানের যে সংকট, তা আজ বিশ্বব্যাপী। তার ঢেউ এসে লেগেছে আমাদের দেশেও। এগুলো কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা ভাবলে ভুল হবে। শুধু পুলিশ, ৠাব, কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট বা বিশেষ বাহিনী দিয়ে এই সংকট মোকাবেলা করা যাবে না।

জাতীয় ঐক্য ছাড়া আজকের এই সংকট থেকে বের হওয়ার সহজ কোনো উপায় নাই। ক্ষমতা, পথ ও মতের ভিন্নতা ভুলে দেশ ও মুক্তিযুদ্ধবিরোধী অপশক্তি বাদে সকল শান্তিকামী মানুষের ঐক্যই রুখতে পারে জঙ্গিবাদের উত্থান। ভয় আর শঙ্কার  অবসান ঘটবে তখন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫২ ঘণ্টা, জুন ০৯, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।