ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

সৌদি সফর: অনন্য উচ্চতায় প্রধানমন্ত্রী

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৪৩০ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৬
সৌদি সফর: অনন্য উচ্চতায় প্রধানমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে আলাপরত সৌদি বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ

সম্প্রতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সৌদিআরবসহ তিনটি দেশ সফর করেছেন। এসব সফর শুধু দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের ক্ষেত্রেই নয়, বাংলাদেশকে বিশ্বপরিমণ্ডলে মর্যাদার আসনে তুলে ধরতে অনন্য সাধারণ ভূমিকা পালন করেছে।

শেখ হাসিনা আজ শুধু বাংলাদেশের সরকার প্রধানই নন, দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবন এবং অব্যাহত সাফল্য তাকে বিশ্বনেতায় পরিণত করেছে। এমন একজন বিশ্বনেতার আগমনে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে ছিল উষ্ণ ও রাজকীয় সম্মান। বাদশাহ আব্দুল আজিজ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ উড়োজাহাজটি পৌঁছালে প্রধানমন্ত্রীকে লাল গালিচা সম্মান ও গার্ড অব অনারের মাধ্যমে স্বাগত জানান সৌদি ক্রাউন প্রিন্স মোহাম্মদ বিন নায়েফ বিন আব্দুল আজিজ।

সৌদি আরবের মহামান্য বাদশাহ সালমান বিন আব্দুল আজিজ দায়িত্ব গ্রহণের পর এটাই ছিল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রথম সৌদি সফর। প্রধানমন্ত্রীর সম্মানে কিং ফয়সাল প্যালেসে নৈশ ভোজের আয়োজন, জেদ্দার রয়েল কনফারেন্স প্যালেসকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সফর সঙ্গীদের আবাসস্থল হিসেবে নির্ধারণ - সবই ছিল রাজকীয় আয়োজনে পরিপূর্ণ। এই সফরে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীকে সৌদি কর্তৃপক্ষ যে সম্মান দেখিয়েছে তা এককথায় বিরল।

নৈশ ভোজ থেকে ফিরে মাত্র ২০ মিনিটের মধ্যে ধর্মপ্রাণ প্রধানমন্ত্রী প্রস্তুত হয়ে যান ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে পবিত্রভূমি মক্কায় যাত্রা করার জন্য। পরিবারের সদস্য ও সফরসঙ্গীদের নিয়ে ওমরাহ পালন করেন প্রধানমন্ত্রী। হারাম শরিফে দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ আদায় করে দেশ ও জাতির কল্যাণে মোনাজাত করেন। মহান আল্লার কাছে প্রার্থনা করেন, তিনি যেন বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারেন।

সৌদি বাদশাহের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক ছিল অত্যন্ত খোলামেলা ও আন্তরিকতাপূর্ণ। বাদশাহ সালমান বাংলাদেশকে সমগ্র মুসলিম উম্মাহর মধ্যে একটি শীর্ষস্থানীয় ও গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হিসেবে অভিহিত করেন। বিশ্বশান্তি রক্ষায় বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভূয়সী প্রশংসা করে বিশ্বে শান্তি, স্থিতিশীলতা, উন্নয়ন, মুসলিম উম্মাহর কল্যাণ ও ঐক্যের বন্ধনকে আরও সুদৃঢ় করতে একসঙ্গে কাজ করার দৃঢ় অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। উঠে আসে আমাদের সঙ্গে সৌদি আরবের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের বিষয়গুলো। দু’দেশের মধ্যে বিনিয়োগ ও বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বিদ্যমান সম্ভাবনা কাজে লাগাতে বাদশাহ সৌদি সরকারের আগ্রহের কথা জানান।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের হৃদয়ে সৌদি আরব একটি বিশেষ স্থান দখল করে আছে। এখানে রয়েছে ইসলামের দু’টি পবিত্র মসজিদ। মক্কা ও মদিনা এখানে। রসুলুল্লাহর জন্মস্থান এখানে। ইসলামের এই পবিত্র দু’টি মসজিদের নিরাপত্তা বিধানে বাংলাদেশ সৌদি সরকারকে যে কোনো সহায়তা দিতে প্রস্তুত রয়েছে মর্মে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসময় বাদশাহকে জানান। বাংলাদেশ হতে আরও অধিক সংখ্যক দক্ষ ও আধা-দক্ষ শ্রমিকসহ পেশাজীবী যেমন ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার, শিক্ষক নিয়োগের জন্য সৌদি বাদশাহের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।

সৌদি আরবের শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতাদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর মতবিনিময় ছিল অত্যন্ত হৃদ্যতাপূর্ণ। সৌদি ব্যবসায়ীরা প্রধানমন্ত্রীকে বাংলাদেশের বিভিন্নখাতে বিনিয়োগে আগ্রহের কথা জানান এবং রমজানের পর জেদ্দা চেম্বারের একটি ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদল বাংলাদেশ সফর করবে মর্মেও উল্লেখ করেন।

উল্লেখযোগ্য বিষয় ছিল সৌদি বাদশাহের পাশাপাশি সৌদি আরবের মন্ত্রী, মন্ত্রী পদমর্যাদার অসংখ্য ব্যক্তিবর্গ নির্ধারিত বা অনির্ধারিতভাবে পালাক্রমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তাদের সবাই প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে আলোচনা করেন। আসেন ওআইসির মহাসচিব এবং আইডিবি’র ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্ট।

এছাড়া বাদশাহের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈঠকে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স, মক্কা অঞ্চলের গভর্নর, অর্থমন্ত্রী, সংস্কৃতি ও তথ্যমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী, রয়াল কোর্টের একাধিক পরামর্শকসহ উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকতাদের উপস্থিতি বাংলাদেশকে অন্যতম মর্যাদায় সিক্ত করে।

সৌদি তথ্যমন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রশংসা করে বলেন, নারীর ক্ষমতায়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি উজ্জ্বল উদাহরণ। মুসলিম বিশ্ব নারীদের উন্নয়নে অনেক কিছুই করতে পারে যার উজ্জ্বল প্রমাণ শেখ হাসিনা।

আরেকটি বিষয় লক্ষণীয়, দেশে চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে গোটা সফরকালে সৌদি নেতৃত্ব একটি কথাও বলেননি। এতে প্রমাণিত হয়, সৌদি সরকার বাংলাদেশের আভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে নাক গলাতে পছন্দ করে না।

সৌদি বাদশাহসহ তার সরকারের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ বাংলাদেশ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে যে উচ্চতায় তুলে ধরেছেন তা বাংলাদেশের জনগণের জন্য একটি বড় অর্জন। আমার দৃঢ় বিশ্বাস, এই সফর সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, বাণিজ্যিক ও নিরাপত্তা বিষয়ক সম্পর্ক উন্নয়নে একটি তাৎপর্যপূর্ণ মাইলফলক রচনা করেছে। সৌদি-বাংলাদেশ দ্বিপাক্ষিক সর্ম্পকের ক্ষেত্রে যা নিঃসন্দেহে একটি নবযুগের সূচনা করবে।


লেখক: ইহসানুল করিম, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব


বাংলাদেশ সময়: ০৪১৬ ঘণ্টা, জুন ২১, ২০১৬
এইচএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।