ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

গায়েবি গরুর ডিজিটাল কসাই

এরশাদুল আলম প্রিন্স, ল’ এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৩৫ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৬
গায়েবি গরুর ডিজিটাল কসাই

১. আল্লাহ প্রত্যেকটি সম্প্রদায়ের কাছে পয়গম্বর পাঠিয়েছেন যাতে সেই সম্প্রদায় আল্লাহর বিধি-বিধান মেনে সুপথে চলে। মানুষের হেদায়েতের জন্যই নবী-রাসুলরা এসেছেন।

কোনো সম্প্রদায় নবী-রাসুলদের অনুসরণ করেছে আবার অনেক সম্প্রদায় বিপথে গেছে।

হযরত মূসা (আ.)এর জামানায় বনু ইস্রাঈলরা তাঁর অনুসরণ করেনি। আল্লাহ হযরত মূসাকে ওহীর মাধ্যমে ওয়াদা করলেন যে তাকে তওরাত প্রদান করা হবে। এজন্য আল্লাহ তাকে তার সম্প্রদায়কে সাথে নিয়ে তূর পাহাড়ে যেতে বললেন। মূসা (আ.) সেখানে গেলেন ও গিয়ে চল্লিশ দিন রোজা রাখেন।

এই ৪০ দিনের মধ্যে ১০ দিন ছিল যিলহ্জ্জ্ব মাসের প্রথম ১০ দিন। বর্ণনায় আছে ১০ যিলহ্জ্জ্ব মূসা (আ.) প্রথম আল্লাহর সাথে কথা বলার সৌভাগ্য লাভ করেন। শুধু তাই নয়, এই দিনেই হযরত মুহাম্মদ (সা.)এর ওপর দ্বীন-ই-ইসলাম পুরিপূর্ণ হয়।

আজ সেই মহাপবিত্র দিন, বিশ্বের বুকে মানব-মর্যাদা-শান্তি-সাম্য-ভ্রাতৃত্য-সহমর্মিতা প্রতিষ্ঠার দিন। এই দিনে মুহাম্মদ (সা.) ‘বিদায় হজ্জ্বে’ যে ভাষণ দিয়েছেন তা মানবতার জন্য সর্বশ্রেষ্ঠ শান্তির বাণী। আজকের সংঘাত-সহিংসতাপূর্ণ বিশ্বে মহানবীর সে বাণীর প্রাসঙ্গিকতা অনস্বীকার্য।

এদিকে আল্লাহ মূসা নবীকে তওরাত প্রদান করলেন। মুসা (আ.) তওরাত লাভ করে আল্লাহ-রাব্বুল- আলামীনের দর্শন চাইলেন। সূরা আরাফে আল্লাহ বলেন, ‘তুমি আমাকে (এ দুনিয়াতে) কখনোই দেখতে পাবেনা। তবে তুমি তূর পাহাড়ের দিকে দেখতে থাক। এরপর আল্লাহ তূর পাহাড়ের ওপর স্বীয় জ্যোতির বিকীরণ ঘটালেন, সেটিকে বিধ্বস্ত করে দিলেন ও মূসা জ্ঞান হারিয়ে পড়ে গেল’। ...

আল্লাহর হুকুমে হযরত মূসা গেলেন তূর পাহাড়ে। এদিকে ঘটলো আরেক ঘটনা। মূসা (আ.) তূর পাহাড়ে যাওয়ার সময় হারূন (আ.)এর কাছে কওমের দায়িত্ব দিয়ে গেলেন আর নির্দেশ দিয়ে গেলেন যেনো তার সম্প্রদায় তার পরে তাকে অনুসরণ করে তূর পাহাড়ে যায়। কিন্তু তার সম্প্রদায় তার নির্দেশ মতো তূর পাহাড়ে যায়নি।

মূসা (আ.)এর সময় ছিল সামেরি নামের এক পথভ্রষ্ঠ। মূসা (আ.) ওয়াদা ভঙ্গের জন্য তার সম্প্রদায়ের ওপর রাগ করলেন। আল্লাহ বলেছেন, ‘তারা বলল, আমরা আপনার সাথে কৃত ওয়াদা স্বেচ্ছায় ভঙ্গ করিনি। কিন্তু আমাদের ওপর ফেরাউনের অলংকরের বোঝা চাপিয় দেয়া হয়েছিল অত:পর আমরা তা নিক্ষেপ করে দিয়েছি, এমনিভাবে সামেরিও নিক্ষেপ করেছে। অত:পর সে (সামেরি) তাদের জন্য (সেখান থেকে) বের করে আনলে একটা গো-বৎসের অবয়ব, যার মধ্য হাম্বা হাম্বা রব ছিল। অত:পর (সামেরি ও তার লোকেরা) বলল, এটাই তোমাদের উপাস্য এবং মুসারও উপাস্য, যা পরে মূসা (আ.) ভুলে গেছে’ (সূরা ত্বোয়াহা)।

সামেরি এভাবে একটি গায়েবি গরুর আবির্ভাব ঘটালো। মূলত কপটাচারিতা-মিথ্যাচারীতা দিয়ে সামেরি ওই গো-বৎসের আবির্ভাব করেছিল আর এতেই মূসা (আ.)-এর সম্প্রদায় বিভ্রান্ত হয়ে গো-পূজা শুরু করলো।

আল্লাহর দরবারে গরু-ছাগল-উট-দুম্বা-গোশত পৌঁছায়না। পৌঁছায় শুধু তাকওয়া-সহমর্মীতা। গরুর আকার-প্রকার-দাম, গোশত কম-বেশি, ‘কোরবানি’র সাথে এর সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক আছে শুধু নিয়ত ও সততার। গোশত পুরোটা খাওয়া জায়েজ কিন্তু কোনটা উত্তম সেটাও আমাদের মনে রাখা চাই।

এবার ভারত থেকে বেশি গরু আসেনি। আবার সামেরির তথাকথিত গায়েবি গরুও বাজারে ওঠে নাই। দেশি গরুতে বাজার সয়লাব। বিষয়টি আমাদের গবাদী-পশু পালন তথা দেশের জন্য ইতিবাচক।

২. যুগটা অনলাইনের। শহুরে মানুষের কাছে গরু কেনা যতো সহজ কসাইর ব্যবস্থা করা ততোই কঠিন। গরু কবে কেনা হবে কি হবে না তার আগে চাই কসাই নির্ধারণ। গরু কেনার সপ্তাহ আগে ফেসবুকে দেখলাম  কসাই সার্ভিসের বিজ্ঞাপন। তিন ধরনের কসাই-মৌসুমি, সেমি-পেশাদার ও পেশাদার। টাকা যদিও বেশি তবু পেশাদার কসাই’র বুকিংই দিলাম। আমার গরু তখন বাস্তবে নাই, আছে গায়েবে। কিন্তু অনলাই কসাই সার্ভিস সদর দরজায়। এটাই আমাদের অনলাইন বাস্তবতা। এর গতি রোধ করা যাবেনা।

 বাংলাদেশ সময়: ১০২৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৩, ২০১৬
জেডএম/

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।