পাশ্চাত্যে ইলেকট্রনিক জিনিস থেকে শুরু করে কাপড়-চোপড় মোটকথা ব্যবহার্য বেশীরভাগ জিনিসই চীনের তৈরি অথবা অন্য কোনও এশীয় দেশের। এই কদর যে ওইসব জিনিসের উন্নত মানের জন্য তা নয়, বরং চীনে (এবং এশিয়ায়) সস্তা শ্রমে উৎপাদন সম্ভব বলে পণ্যের দাম কম হয়।
তেমনি আরেকটি গোলক ধাঁধা এশিয়ার সাধারণ মানুষের সমাজ পরিবর্তনের চেষ্টায় দেখি। বিগত বেশ কয়েক মাস ধরে আরব বিশ্বে একনায়কতান্ত্রিক স্বৈরাচারী ব্যবস্থার পরিবর্তনের জন্য জনগণ রাস্তায় আন্দোলনে নেমে বুকের রক্ত দিয়েছে। সেই পিরামিডের দেশ মিশর থেকে শুরু করে হালের লিবিয়ায়। দশক দশক ধরে টিকে থাকা লৌহমানবদের পতন। সত্যিই সম্ভব যদি জনগণ ঐক্যবদ্ধ থাকে। যেটা সম্ভব করতে আফগানিস্তান-ইরাকে আমেরিকা ও তার সহযোগীদের বিলিয়ন বিলিয়ন টাকা খরচ করে বোমা ফেলতে হয়েছে। জগগণ তাদের বুকের তাজা রক্ত দিয়ে রাজপথে লাল গালিচা পেতেছে গণতন্ত্রকে স্বাগত জানাতে। কিন্তু সেই লাল গালিচা মাড়িয়ে গণতন্ত্র, নাকি আরেক স্বৈরাচার এলো সেটাই এখন দেখার অপেক্ষা!
ইতিহাস ঘাটলে দেখা যায় আগেকার যুদ্ধবাজ দেশগুলো অজুহাত ছাড়াই শুধু ক্ষমতা প্রকাশ এবং সম্পদ লুন্ঠনের জন্য অন্য দেশ আক্রমণ করে বসতো। সময়ের সাথে সব কিছুর চরিত্র পাল্টেছে যদিও মূল চরিত্র শোষণ এবং লুণ্ঠন একই আছে। এখনকার যুদ্ধবাজ দেশগুলো খুব কায়দা করে নিজের ক্ষমতার প্রকাশ এবং অন্যের সম্পদ লুণ্ঠন করে। এরা গণতন্ত্র, মানবাধিকার ইত্যাকার নানাবিধ ভাল ভাল ধারনার পিঠে সওয়ার হয়ে নিজ কার্যগুলো স্বিদ্ধি করে। আগেকার তরবারীর চেয়ে অজুহাত বা ছুতো অনেক বেশী ধারালো। এই অজুহাত দিয়ে তারা ইরাককে তছনছ করেছে, আফগানিস্তানের মাটি বোমা ফেলে পাথর বানিয়েছে, এখন ধ্বংস করছে সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য। অথচ সেই অজুহাতের স্রষ্টা কিন্তু তারাই।
ইরানবধের জন্য সাদ্দামকে লালন করেছে তারাই, সোভিয়েত ইউনিয়ন বধের জন্য লাদেন এবং তালেবানের স্রষ্টা এরাই, মধ্যপ্রাচ্যের নির্মম, গণবিরোধী শাসকদের তারাই জিইয়ে রেখেছিল মিত্র ইসরাইলকে রক্ষার জন্য। এখন এদের প্রয়োজন নানা কারণে ফুরিয়ে গেছে। কেউ কেউ ফ্রাংকেনস্টাইনের দানব হয়ে নিজের স্রষ্টাকেই বধে উদ্যত হয়েছিল। তাই মানবতা, গণতন্ত্র, বিশ্ব শান্তি রক্ষার ঠুনকো অজুহাতে নিজেদের তৈরি দানবকে এরা হত্যা করেছে। এদের সৃষ্টি হয়েছিল শত্রুবধের জন্য। প্রয়োজন শেষে এদের খতম করে নিজের গায়ে মানবতাবাদীর তকমা সেঁটে নতুন করে ফন্দি আঁটো বিশ্ব শোষণের এবং সম্পদ লুন্ঠনের। এদের তৈরি করে লাভ, বধ করেও লাভ।
নিজের স্বার্থসিদ্ধিতে এই তথাকথিত মানবাতবাদী পাশ্চাত্য শক্তিগলো নির্মম এবং মিথ্যাবাদী। যে অজুহাতে ইরাক আক্রমণ করা হয়েছিল পরে সেটা মিথ্যা প্রমাণিত হয়। তেমনি গাদ্দাফি স্বৈরশাসক ছিল সত্যি কিন্তু জনরোষকে উস্কে দেবার জন্য কিছু বাড়তি মাল মসলা লাগে। তাই তাকে নারী লোলুপ ইত্যাকার বিভিন্ন বিশেষণে পাশ্চাত্য চিত্রিত করে। কিছুদিন আগে গাদ্দাফির কিছু পশ্চিমা ব্যক্তিগত নার্সের কথায় সেটা ঠিক মেলে না। এটা বহু পুরাতন আধিপত্যবাদী কৌশল যেখানে প্রতিপক্ষের গায়ে কাদা ছুড়ে তাকে দুর্বল করা এবং সেই সংগে জনবিচ্ছিন্ন করে ধ্বংস করা।
এখন শোষণের দুষ্টচক্রের দিকে দৃষ্টি ফেরানো যাক। গাদ্দাফি যে স্বৈরশাসক সেটা সবাই জানে। ভিন্নতাবলম্বীদের সে কিছুতেই ছাড় দিত না। কিন্তু লিবিয়াকে সেই প্রথম ঐক্যবদ্ধ করেছিল। বিদেশি সম্পদ লুটেরাদের দেশ থেকে তাড়িয়ে লভ্যাংশ নিজ দেশে ফিরিয়্ েএনেছিল। নাগরিকের স্বাস্থ্যের মানকে একটা ভাল পর্যায়ে নিয়ে আসতে পেরেছিল। লিবিয়ার মানুষের গড় আয়ু আফ্রিকার যে কোন দেশের গড় আয়ুর চেয়ে অনেক বেশী। এমনকি তা বিশ্বের সবচেয়ে বেশী গড় আয়ুর খুব কাছাকাছি। লিবিয়ায় স্বাক্ষরতার হার প্রশংসনীয়। এখন যে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের ছুঁতোয় পাশ্চাত্যের সহযোগী সরকার প্রতিষ্ঠা হয়েছে সেখানে কি ঐ দুটো শব্দ গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার কিংবা মতামত প্রকাশের অধিকারের প্রায়োগিক কোনও দিক বজায় আছে? বরং গাদ্দাফি না থাকলেও তার স্বৈরশাসনের উপস্থিতির পাশাপাশি আরো কয়েকটি উপসর্গ যোগ হয়েছে সেখানে। তাহলো গৃহযুদ্ধ এবং বিদেশি শক্তি কর্তৃক সম্পদ লুন্ঠন। এ যেন আমার বন্ধুর সিগারেট ছাড়তে পান ধরার অবস্থা। শেষমেষ সে সিগারেট এবং পান দুটোরই আসক্তিতে আটকে যায়। পাশ্চাত্যের গণতন্ত্র এবং মানবাধিকারের প্রলোভনে পড়ে যেসব দেশের জনগণ নিজ শোষকের বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছিল তারাও আগের স্বৈরচারী উপসর্গের সাথে সাথে উপরোক্ত দুই বৈরি উপসর্গের মুখোমখি হয়েছে এখন।
আন্দোলনের শুরুতে জনগণ হয়তো মনে করে এটা তাদেরই আন্দোলন। কিন্তু আসলে কি তাই? রাজপথে অগ্রভাগে জীবন দেওয়া দেখলে সেটাই মনে হতে পারে। কিন্তু জনগণের কি সিদ্বান্ত নেবার ক্ষমতা আছে কাকে তারা ক্ষমতায় বসাতে চায়? সাধারণ জনগণ রাস্তায় একটা গাড়ি পোড়াতে পারলে টায়ার পোড়ার গন্ধে পরিবর্তনের গন্ধ খোঁজে হয়তো। কিন্তু পরিবর্তনের আসল নাটের গুরুরা যে ফাইভ স্টার হোটেলে বসে কিংবা দূরের কোনও দেশে নিরাপদ স্থানে থেকে দূরালাপনীর মাধ্যমে দেশীয় কোন সহযোগীদের মাধ্যমে আসল পরিবর্তনটা করাচ্ছে সেটা কি ওরা বুঝতে পারে? আন্দোলেনের মধ্য থেকে ভিনদেশি শক্তিগুলো স্থানীয় এমন লোকদেরই ক্ষমতায় আনে যাদের জনভিত্তি খুব কম থাকে। বেঁেচ থাকার তাগিদে এরা বাইরের সুতোর টানে তখন ওঠানামা করে। বাঘের পিঠে সওয়ার মতো এদের অবস্থা। উভয় সংকট। এই সুযোগে সব লুটেপুটে নেয় গণতন্ত্রের ছদ্মবেশি বিদেশি প্রভুরা। এরই মধ্যে পরিবর্তনের টায়ারপোড়া গন্ধে ঘরে ফিরে পিছনে তাকিয়ে জনগণ দেখে আন্দোলনের ফসল হাতছাড়া হয়ে গেছে। বিভক্ত দেশে, বিচ্ছিন্ন জনগণ আর নতুন করে আন্দোলনের সাহস পায় না। শোষনের চক্র এভাবেই চলতে থাকে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার সব অধরা, সোনার হরিণ!
বিদেশি শক্তিগুলো প্রতি মুহূর্তে তাদের কৌশল পরিবর্তন করে নিজেদের বাঁচিয়ে ফায়দা লোটার। পশ্চিমারা ইরাক থেকে শিক্ষা নিয়েছে মাটিতে নামা যাবে না। তাই এবার ওরা উড়ন্ত পথে লিবিয়ার দোসরদের সাহায্য করেছে। পশ্চিমারা ইরাক কিংবা আফগানিস্তান থেকে আরো শিক্ষা নিয়েছে কিভাবে নিজে বেঁচে অন্য দেশের উপরে খবরদারী করা যায়, তাদের সম্পদ লুটপাট করা যায়। কিন্ত্ ুগণতন্ত্র প্রতিষ্টায় কিভাবে আরো কার্যকরীভাবে সহযোগিতা করা যাবে বিধ্বস্ত দেশগুলোকে সেই ভাল শিক্ষা দেবার গরজ তাদের কোনও দিন ছিল না। সেটা করলেতো তাদের লুন্ঠনের উদ্দেশ্যই ভেস্তে যাবে। বাগদাদে তেল কোম্পানির সাথে সাথে উর্দিপরা সেনারাও এসেছিল। এই সেনাদের কফিনের কাফেলা বাড়লেও মরুভূমির চোরাবালুতে পা আটকে যাওয়ায় সরতেও পারছে না এখন। তেলের মুনাফার বেশিরভাগই সেনাপালনে খরচ হয়ে যাচ্ছে। ওদিকে এর প্রতিক্রিয়ায় নিজ দেশে অর্থনৈতিক সংকটে মানুষ চাকরি হারাচ্ছে, জনরোষ বাড়ছে। লন্ডনে ঘটে যাওয়া ব্যাপক গণলুন্ঠন কিন্তু বেকারত্বের একটা প্রতিক্রিয়া ছিল। এই বেকারত্ব এসেছে যুদ্ধের কারণে অর্থনৈতিক সংকট থেকে। তাই বেনগাজিতে তারা এবার সেনা নামিয়ে সে ভুল করেনি। কিছু কূটনৈতিক এবং তেল কোম্পানির লোকেরা আজ বেনগাজির রাস্তায় ভাল মানুষের লেবাস পরে তেলের দিকে চকচক চোখে তাকিয়ে দিন গুণছে সব লুটে নেবার। দেশটাকে গণতন্ত্রের প্রলোভন দেখিয়ে ইরাকের মতো দীর্ঘস্থায়ী যুদ্ধের মধ্যে ঠেলে দিয়ে ওরা এখন স্বপ্নে তেলে ভেসে ভেসে মজা দেখবে। তারপরে একদিন দেশীয় দোসরেরা পশ্চিমা স্বার্থ উদ্ধারে ব্যর্থ হলে কিংবা ওদের বিরুদ্ধে জনরোষ দানা বেঁধে উঠলে নিজের অবস্থান ঠিক রাখতে মিশরের মোবারকের মতো ছুড়ে ফেলবে নর্দমায়।
পাশ্চাত্যের ভন্ডামী বোঝা যায় সৌদি আরবের প্রতি তাদের দৃষ্টিভঙ্গী দেখে। কোনও অংশেই সৌদি শাসকেরা গাদ্দাফি-মোবারকের চেয়ে কম যায় না। বরং নারী লোলুপতা এবং নৃশংসতার ভুরি ভুরি প্রমাণ আছে এদের বিরুদ্ধে। এইতো সেদিন সৌদি রাজ পরিবারের এক সমকামী সদস্য যুক্তরাষ্ট্রের হোটেলে তার বিদেশি পরিচারককে নির্যাতন করে মেরে ফেলে। কিন্তু কই, সাদ্দাম কিংবা গাদ্দাফির বেলায় যে চিৎকার শোনা গিয়েছে এক্ষেত্রে গলাটা ছিল অসম্ভব রকম নীচু। সেদেশে গণতান্ত্রিক ঔপনিবেশ স্থাপনের কোন উদ্যোগও নেই তাদের। কারণ ওরা এখনো পাশ্চাত্যের প্রয়োজন মিটিয়ে যাচ্ছে। সেটা মিটে গেলে সৌদি বাদশাহদেরও স্বৈর শাসকের তকমা পেতে দেরি হবে না।
পাশ্চাত্যের স্ব বিরোধিতা এখানেই। ওরা প্রাচ্যের শাসকদের দুর্নীতি এবং অসততার সুযোগ নিয়ে লুন্ঠনের জন্য ওঁৎ পেতে থাকে। সেখানকার মানুষকে শোষন থেকে মুক্ত করার কোনও উদ্দেশ্য এদের কখনো ছিল না। মুখে এদের মানবতা, মানবাধিকার! কিন্তু নিজেরা টিকে থাকতে এরা শস্তায় জিনিস কিনতে গরীব দেশগুলোকে প্রতিযোগিতায় ঠেলে দেয়। এই প্রতিযোগিতার সবচেয়ে নির্মম বলি হয় উৎপাদন কর্মে নিয়োজিত গরীব শ্রমিকেরা। একইভাবে নিজেদের দেশে গণতন্ত্র থাকলেও এদের আগমনে কোথাও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে তার নজির নেই। সেই ইরাক থেকে আফগানিস্তান এবং কিছুদিন আগে মধ্যপ্রাচ্যে । তারা গণতন্ত্রের নৌকায় চড়ে এলেও ঝোলার মধ্যে থাকে বিশেষ মতলব। বিশেষ কৌশলগত স্থানে নিজের আধিপত্য প্রতিষ্ঠায় তাবেদার সরকার প্রতিষ্ঠা, না হয় সেখানে বাণিজ্যবসতি গড়া।
মনে পড়ে আমাদের দেশের গণমানুষের কথা। সেই ৫২ থেকে রক্ত দিয়ে চলেছে। ৬৯ এর গণ অভ্যুত্থান। মানুষ ভেবেছিল ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান না হলে গণ মানুষের আকাক্সক্ষা পূরণ হবার নয়। তাই তারা যুদ্ধে গিয়েছিল, শহীদ হয়েছিল লক্ষ লক্ষ লোক। এবার স্বপ্ন পূরণের পালা। কিন্তু রাত পেরোনের আগেই স্বপ্নের সমাধি ঘটে। বাহাত্তরে বাকশালের মাধ্যমে গণতন্ত্রের মৃত্যু দেখে স্বাধীনতার পরে প্রথম তাদের স্বপ্নভঙ্গ হয়। এর সুযোগেই সামরিক শাসনের সূত্রপাত। একে এক জিয়া গেল এরশাদ এল। জনগণ আবার তাদের অধিকার ফিরে পেতে নব্বেই এ রাস্তায় নেমে এলো। নূর হোসেনের মতো কতো যে সাধারণ মানুষে সেই আন্দোলনের বলি হয়েছিল তার সঠিক হিসেব কে রাখে! এরপরে এলো তত্ত্বাবধায়ক সরকার-জনগণের আশা পুরণের সোপান, যে সোপানের সিঁড়ি বেয়ে কোন কেউ একজন গণতান্ত্রিক শাসক এসে দেশটাকে ঐক্যবদ্ধ করবে, সামনের দিকে এগিয়ে নেবে। কতোটুকু এগিয়েছে না পিছিয়েছে তাতো আমরা নিজেরাই সাক্ষী। সর্ষের মধ্যে ভূত লুকানোর মতো বিগত তত্ত্বাবধায়ক নিজেই ক্ষমতা ক্যু করতে চেয়েছিল। তাই এখনো পরিবর্তনের জন্য আন্দোলন করতে হয়। কিন্তু এই আন্দোলন কার জন্য? নব্বই পর্যন্ত মিছে হলেও তো একটা স্বপ্ন ছিল জনগণের ভাগ্য পরিবর্তনের। তারপরে একে একে তথাকথিত গণতান্ত্রিক সরকার তো কম এলো গেলো না। আমাদের দুর্ভাগ্য, ভাগ্য পরিবর্তনের কথা বলে যারাই এসেছে তারা নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তন ছাড়া যাদের রক্তের বিনিময়ে অবস্থান করে নিয়েছে তাদের কথা ভুলে গেছে। প্রতিটা গণ আন্দোলনে নূর হোসেনের মতো সাধারণ গরীব ঘরের সন্তানেরা জীবন দিয়ে পরিবর্তন আনে। কিন্তু নূর হোসেনের মতো আরো অনেক নূরের মা, বোনেরা যে গার্মেন্টসে চাকরি করে, বাবারা হাল চাষ করে জমিতে ফসল ফলায় তার কখনো উন্নতি হয়নি। বরং রক্ত দিয়ে যাদের ক্ষমতায় আনা হয় তাদেরই কোন সহেযোগীর প্রতিষ্ঠিত কারখানায় এরা দিনের পর দিন শোষিত হতে থাকে। এদের রক্তে কেনা পরিবর্তনে নতুন গার্মেন্টস, নতুন কারখানার মালিকেরা নতুন উদ্যমে নূর হোসেনদের মা, বোন, বাবাদের শোষন করতে থাকে দিনের পর দিন।
বর্তমানে আমাদের দেশে আরেকটি জোরালো আন্দোলনের ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, প্রেক্ষাপটও হয়তো তৈরি হয়েছে। জনগণ হয়তো আবারো রাস্তায় নেমে আসবে। নিজের সম্পদ, রাষ্ট্রের সম্পদ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করবে। এক সময় পরিবর্তনও হয়তো আসবে। কিন্তু সেই পরিবর্তনটা কার সেখানেই প্রশ্ন। উত্তরটা সরল অংকের চাইতেও সহজ। তারপরেও নির্দিষ্ট বিরতিতে রাজপথে রক্ত দেবার লোকের অভাব ঘটে না। নূর হোসেনরা বুকে স্বপ্নের কথা লিখে আবারো বুকের রক্ত দেবে। কিন্তু স্বপ্ন এখানেও মরীচিকা---- সোনার হরিণ!
এশিয়ায় যেমন শ্রমের দাম কম হওয়াতে পণ্যের দাম্ও তুলনামূলক কম; কিন্তু সেই পণ্য ভোগ করে ধনীরা। তেমনি এশিয়ার গণ আন্দোলনের সামনের কাতারে (নেতৃত্বে নয়)সমাজ পরিবর্তনের জন্য বুকের রক্ত দিচ্ছে যারা, সেই পরিবর্তনের ফলভোগী তারা কখনো হতে পারে না। আন্দ্লোনের সেই ফসল গিয়ে ওঠে অন্য কোনও শোষকের ঘরে। তারই দ্বারা জনগণ আবার শোষিত হতে থাকে। শোষকের পরিবর্তনের জন্য আর কতো আন্দোলন করবে জনগণ, আর কতো বুকের রক্ত দেবে? এখানে শ্রমের মতোই মানুষের রক্তের দাম খুবই সামান্য। তারপরেও কিছু করার নেই আমাদের। কারণ নিজের জামাটা না কিনতে পারলেও জমিলা, মর্জিনাদের কাজ করতে হয় গার্মেন্টস এ শুধুমাত্র বেঁচে থাকার জন্য। তার শ্রমের দাম পাশ্চাত্যে কতোটুকু সেটা জানার সময় নেই বেঁচে থাকার তাগিদে। ঠিক তেমনি অত্যাচারিত জনগণ দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়। কে আসবে ভবিষ্যতে সেটা দেখার সময় থাকে না তাদের। এই সুযোগের অপেক্ষায় ওঁৎ পেতে থাকে পরবর্তী শোষক, পরিবর্তনের ফসল নিজ ঘরে তোলার জন্য। পৃথিবীটা যেমন গোল, শোষিত মানুষের ভাগ্যও শুধু ঘুরে ঘুরে শোষনের কক্ষপথ অতিক্রম করে। গাধার পিটে মুলো ঝুলানোর মতো গণতন্ত্রের মুলোর পিছনে ছুটে আমরা পাচ্ছি হয় গণতান্ত্রিক স্বৈরতন্ত্র, নয়তো গণতান্ত্রিক উপনিবেশবাদ!
mahalom72@yahoo.com
বাংলাদেশ সময় ১৫২০ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১০, ২০১১