গেলো নির্বাচনে আওয়ামী বিজয়ের নেপথ্যে বিএনপি’র বিপক্ষে নেতিবাচক ভোটের বাইরেও হিসাব-নিকাশ ছিলো। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে করা আওয়ামী নির্বাচনী ম্যানিফেস্ট জনসমর্থন পেয়েছিলো।
বক্তৃতা-বিবৃতিতে সরব হলেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার স্বপক্ষে দেওয়া জনরায়ের প্রতি আওয়ামী উদ্যোগগুলোতে কোনো আন্তরিকতা দেখা যায় না। মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষ শক্তি আওয়ামী গড়িমসি বড্ড চোখে পড়ে। অভিযোগ আছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী নেতৃত্ব ও তাদের বর্তমান ঘনিষ্ট স্বজনদের অনেকেরই একাত্তরের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ। পাক-হানাদার বাহিনীর সাথে অনেকেরই ছিলো ‘জানি দোস্তি’। সর্ষের ভেতরের ’এই ভুত’দের কারণেই আওয়ামীরা যুদ্ধাপরাধীদের বিরুদ্ধে প্রমাণ সংগ্রহের নামে সময় ক্ষেপণে ব্যস্ত আছে। আটক ‘ঘাতকরা’ থাকে জেলের ভিআইপি মর্যাদায় আরাম-আয়াসে। আর তাদের ’তাবে-তাবেইনেরা’ ব্যস্ত সময় কাটায় রাজপথের সন্ত্রাসে। নেতাদের নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে। যুদ্ধাপরাধের প্রত্যক্ষ অংশীদার জামায়াতের অস্তিত্ব বিভিন্ন রাজনৈতিক কারণে হুমকির মুখে পড়ায় বড্ড বেপরোয়া হয়ে উঠেছে জামায়াত ।
মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আওয়ামী নীরবতার চেয়েও এক কাঠি সরস বেদনার জন্ম দেয় স্বাধীনতার ঘোষক দাবিদার জিয়ার বিএনপি। বীর এই সেক্টর কমান্ডারের গৃহবধূ একাত্তরের পুরোটা সময় ছিলেন হানাদারদের হাতে বন্দী। জামায়াত আর বিএনপি সেকারণেই দুই মেরুর দুই প্রান্ত। কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতার ভয়ঙ্করী স্বার্থে ’জেনানা নেতৃত্ব হারাম’ বলে ফতোয়া দানকারী জামায়াত আর জেনানা নেতৃত্বের মুক্তিযোদ্ধাদের দল বিএনপি এক কাতারে। জামায়াতের স্বার্থে আঘাত লাগলে বিএনপি মুহূর্তেই রেগে উন্মাদ। অবশ্য মুখের বুলিতে বিএনপি-বেগম জিয়াও , ‘যুদ্ধাপরাধীদের’ বিচার দাবি করেন। এ-যেন মাও সে তুংয়ের লাল বই দিয়ে লাল বই ঠেকানোর তত্ত্ব! একাত্তরের ঘাতকরাই যদি যুদ্ধাপরাধী না হয়, তাহলে যুদ্ধাপরাধী কারা? বিএনপি’কে নিজের অবস্হান পরিস্কার করতে হবে। সুস্পষ্ট ভাষায় জানাতে হবে, জামায়াত ও সাকাচৌ’র একাত্তরের ভূমিকা নিয়ে কোনো দোটানা আছে কিনা?
যুগে যুগে বাঙালিকে জাতীয়তাবাদ প্রশ্নে, আত্মপরিচয়ের প্রশ্নে-জিজ্ঞাসায় দ্বিধা-বিভক্ত করে রাখা হয়েছে। বাংগালীর ঐক্য বিনষ্ট হয়েছে, আমরা বাঙালি মুসলমান, না মুসলমান বাঙালি, এই জিজ্ঞাসায়। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রশ্নে একই ভাবে বাঙালিকে ঠেলে দেওয়া হছে রাজনৈতিক বিভাজনে। জামায়াতিরাতো আজকাল প্রকাশ্যেই দাবি করেন তারা যুদ্ধাপরাধী নয়। তারা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের রক্ষক। সবাই যদি রক্ষক হয়, তাহলে শত্রু কোন অদৃশ্য শক্তি?
রাজনৈতিক পরিস্হিতি পর্যালোচনার ধারাবাহিকতায় ধারণা করা হছিলো এ-দফায় বিএনপি হরতালে যাবে না। অবরোধ-অসহযোগ সহ বিভিন্ন ইতিবাচক কর্মসূচির দিকে ঝুঁকবে। কিন্তু জামায়াতী সন্ত্রাসের বিপক্ষে পুলিশের কঠোর অ্যাকশনের পর বিএনপি দ্বিধাহীনচিত্তে সরাসরিভাবে হরতালে গেল। গুঞ্জন আছে, টানা ছয়দিন হরতালের নামে চলবে বিএনপি’র জামায়াত প্রেম-প্রদর্শন!
আমরা যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার চাই। চাই হরতাল সংস্কৃতির চিরাবসান। অতীতে কোন্ রাজনৈতিক দল কোন কর্মসূচিতে কোন সরকারকে ভুগিয়েছে, আমরা সেই আলোচনা কিংবা বিতর্কে যেতে চাই না। আমরা হরতালহীন জনজীবন প্রার্থী। আমরা যুদ্ধাপরাধী মুক্ত বাংলাদেশ চাই। আমরা ধর্মীয় রাজনীতি কামনা করিনা। ধর্ম হোক আমাদের ঐকান্তিক নিজস্ব বিশ্বাস। এই সামান্য লক্ষ্যে কোনো আপোস নেই।
রাজনীতিবিদেরা আপনাদের ঝগড়া বিবাদ নিয়ে আপনারা থাকুন। অনুগ্রহ করে আমাদের জড়াবেন না, ভোগান্তি বাড়াবেন না আমাদের জন্যে।
সৎ সাহস থাকেতো গনভোট দিন যুদ্ধাপরাধীদের দ্রুত বিচার ও হরতাল বন্ধের প্রশ্নে । অতি সামান্য জনগণ আমরা, আমাদের মতামতটুকু ব্যালট বাক্সের মাধ্যমে রাজনীতিকদের জানিয়ে দেবো।
ইমেলঃ abid.rahman@ymail.com
বাংলাদেশ সময় ১২৩৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৫, ২০১১