বিএনপি-জামায়াত জোটের বহুল আলোচিত ২৭ সেপ্টেম্বরের জনসভাটি ভালোয় ভালোয় শেষ হয়েছে। শুকরিয়া।
ঢাকার মানুষ আনন্দে থাকে! আমাদের দেশের অন্ধ দলীয় লোকজনের আত্মপক্ষ সমর্থন কতো যে বিচিত্র! গণতন্ত্রের নামে দেশে এভাবে যে যেভাবে পারছে মানুষের স্বাভাবিক চলাচলের গতি বাধাগ্রস্ত করে চলেছেই, এসবের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী মানুষ রুখে দাঁড়াতে শিখবে কবে!
আজ আওয়ামী লীগ কাল বিএনপি এভাবে দলীয় রাজনৈতিক সভা-শোভাযাত্রার নামে গরিব দেশের মানুষজনের পথ বন্ধের সংস্কৃতি বন্ধের বিষয়টি নিয়ে বুঝি কোন একটি উদ্যোগ জরুরি হয়ে পড়েছে। এক পক্ষ এতে বেজার হয়ে বলবেন, এ ধরনের কথাবার্তা সাংবিধানিক নাগরিক অধিকারের ব্যাপারে উস্কানির সামিল! কিন্তু অপর মানুষজনের অধিকার নিরাপদ-প্রটেকশনেরওতো ব্যবস্থা থাকা চাই!
কারণ রাজনৈতিক পক্ষগুলোর মুখোমুখি অবস্থানের কারণে এসব কর্মসূচি জনভোগান্তির পাশাপাশি নিরাপদ হবে, সে গ্যারান্টি নেই। একটু ওলটপালট হলেই শুরু হয় ভাংচুর! মঙ্গলবার দুপুরের একটি নিউজে দেখলাম উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা বাচ্চাদের স্কুল থেকে অগ্রিম নিয়ে চলে যাচ্ছেন! রাজনৈতিক দল ও সরকারকে ভোটার মানুষজনকে এমন ভয় পেয়েই চলতে হয়!
বিরোধীদলের নেত্রী খালেদা জিয়ার তর্জনী উঠানো বক্তৃতা স্ক্যান করে কে কী পেলেন? খালেদা জিয়া সরকার ও সবার উদ্দেশে যেন সরল দুটি টার্গেট-চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছেন। এক-যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তিনি করতে দেবেন না। আর দুই-বাংলাদেশ বিরোধী যুদ্ধাপরাধী জামায়াত-শিবিরের পাণ্ডাদের উদ্দেশে তিনি অভয়বাণী ছড়িয়ে দিয়ে বলেছেন, ভয় নেই—আমি আছি!
দ্রব্যমূল্য নিয়ে দেশের মানুষের ত্রাহি অবস্থা নিয়ে খালেদা জিয়া গা-ছাড়া স্টাইলে বলেছেন, তারা ক্ষমতায় গেলে দ্রব্যমূল্য সহনীয় অবস্থায় নিয়ে আসবেন। কিন্তু ডলারের দাম যেখানে সত্তুর টাকার বেশি, যে দেশে চাল-তেল-চিনি-পিঁয়াজও বিদেশ থেকে আমদানি করে আনা লাগে, সেখানে ‘সহনীয় অবস্থার’ কোনও ফর্মুলা দেয়া নেই। অস্ট্রেলিয়ার বাঙালিরা যে চালের ভাত খান বাংলাদেশি টাকায় সে চালের কেজি ২৫০ টাকার বেশি।
এখানে মানুষের আয়-রোজগার আছে বলে তা গায়ে লাগে না। খালেদা জিয়া আগামীতে ক্ষমতায় আসতে আসতে দেশের কৃষিজমির পরিমাণ যেমন কমবে, বিদেশের যেখান থেকে আমদানি করে নিতে হবে সেখানকার জিনিসপত্রের দামও আরও বাড়বে।
শেয়ার কেলেংকারি আর ব্যর্থমন্ত্রীদের নিয়ে আমরা যা অবিরাম বলছি, এর একটি কথাও সেখানে নেই বিরোধীদলের নেত্রীর বক্তৃতায়! তা শেয়ার কেলেংকারির সঙ্গে তার প্রিয়-ঘনিষ্ঠরা জড়িত, সে কারণেই কী? অবশ্য অতীতে তার আমলের সুশাসনের কোনও দৃষ্টান্তও নেই।
বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম যখন মঙ্গলবারের মিটিং’এর ব্রেকিং আউটপুট ধারাবাহিক জানাচ্ছিল, তখনই অবশ্য জনসভার গতি প্রকৃতি আঁচ করা যাচ্ছিল! শিবিরের সভাপতির বক্তৃতা দিয়ে শুরু করা হয় সভা! সভার সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের বিশিষ্ট এক চরিত্র! একাত্তরে মুক্তিযোদ্ধাদের যে দলটি ঢাকা শহরে প্রথম ঢুকেছে, সে দলের সদস্য ছিলেন অনেকের প্রিয় এই খোকা ভাই। তার নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল খুঁজে খুঁজে তখন জামায়াতি রাজাকারদের ধরে গুলি করে মেরে ভাসিয়ে দিচ্ছিল বুড়িগঙ্গায়! তখন কী তিনি বা তার সহযোদ্ধারা ভাবতে পারছিলেন, নগদ যা পাও হাত পেতে নাও! অর্থাৎ কবে এদের বিচার হবে না হবে বা আদৌ হবে কিনা তাই যা হাতের কাছে পাও খালাস করে দাও!
সেই সাদেক হোসেন খোকার সভাপতিত্বে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সংগঠনের নতুন প্রজন্মের এক নেতার বক্তৃতার মাধ্যমে খালেদা জিয়ার বিশাল জনসভার বিসমিল্লাহ করা হয়! খালেদা জিয়া এর মাধ্যমে যে বার্তাটি আমাদের দিতে চেয়েছেন তা অধমরাও বুঝেছেন। সবশেষ পুলিশের সঙ্গে গ্যাস গ্রেনেড ফাইটিং’এর পর ঘরে ঢুকে যাওয়া জামায়াত-শিবিরের কর্মী-ক্যাডারদের মনোবল চাঙ্গা করার দাওয়াই দিয়েছেন শুরুতেই। নানান মিডিয়ার রিপোর্ট-ফুটেজগুলো স্ক্যান করলে বোঝা যাবে পুরো জনসভা নিয়ে বিএনপির নেতা-কর্মীদের তুলনায় জামায়াত-শিবিরের কর্মী ক্যাডাররা কত উজ্জীবিত!
বক্তৃতায়ও তাদের সব গাইড লাইনও দিয়ে দিয়েছেন খালেদা জিয়া। বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার তিনি মানবেন না। আটক জামায়াত নেতাদের মুক্তি দিতে হবে। এটি এখন তার পয়লা নম্বর রাজনৈতিক এজেন্ডা! তা দীর্ঘ অপেক্ষার এই বিচার নিয়ে আমাদের শহীদ পরিবারগুলোর আকুল অপেক্ষার বিরুদ্ধে কী যুদ্ধ ঘোষণা করে ফেললেন বিএনপির চেয়ারপার্সন? গত ইলেকশন শুধু এই ইস্যুতে একবার নাকানি চুবানি খেয়েছে বিএনপি। আগামী ইলেকশনেও যদি মূল ইস্যু হয়ে যায় বিএনপি জিতলে যুদ্ধাপরাধী ঘাতক দালাল রাজাকাররা আবার জেল থেকে বেরিয়ে যাবে, আবার শুরু হবে একাত্তরের স্টাইল, তাহলে পাবলিক সেন্টিমেন্ট বিএনপির পক্ষে না বিপক্ষে যাবে? বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সবাই কী এর মাঝে মরে গেছেন? শহীদ পরিবারগুলোর একটা ভোটও কী পড়বে ঘাতক-খুনি-রাজাকারদের মুক্ত করার বাক্সে?
খালেদা জিয়া মঙ্গলবার আবারও বলেছেন, আমরাও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাই, কিন্তু এ বিচার হতে হবে নিরপেক্ষ! তা মতিউর রহমান নিজামী, সাকা চৌধুরীদের বাদ রেখে, মুক্তি দিয়ে যুদ্ধাপরাধীদের কী করে নিরপেক্ষ বিচার করা সম্ভব? একাত্তরের সংগ্রাম পত্রিকার ফাইলগুলোয় আবার চোখ বুলিয়ে দেখুন। মুক্তিযোদ্ধা, যারা বাংলাদেশ চাইছে সেখানে তাদের ‘দুষ্কৃতকারী’ আখ্যা দিয়ে কতলের নির্দেশের নিউজ সেখানে রয়েছে প্রতিদিন! তা খালেদা জিয়া কী তেমন একজন ‘দুষ্কৃতকারী’র স্ত্রী’ হিসাবে নিজেকে কবুল করেছেন? এটা তার পছন্দ হতে পারে। কিন্তু আমরা বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষেরা, শহীদ পরিবারের সদস্যরা মনে করি মুক্তিযোদ্ধারা আমাদের শ্রেষ্ঠ সন্তান। দুষ্কৃতকারী না।
বাংলাদেশের মানুষের কাছে দুষ্কৃতকারী তারা, যারা আমাদের বাংলাদেশ যাতে না পাই সেজন্য পাকিস্তানের পক্ষে যুদ্ধ করেছে। এখনও যারা তাদের একাত্তরের বাংলাদেশ বিরোধী অবস্থানকে সঠিক মনে করে, তারা আমাদের কাছে বাংলাদেশবিরোধী দুষ্কৃতকারী। সোজা হিসাব। আর খালেদা জিয়া যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইলে এ বিচার বন্ধ করতে কেন চাইছেন? এদের তিনি মন্ত্রী করেছিলেন সে জন্যে। আবার ক্ষমতায় গেলে তাদের মন্ত্রী করবেন সে জন্যে?
মজার ব্যাপার এসব নিয়ে লিখতে গেলে একদল বোধগম্য আইডেনটিটির লোকজন নিরপেক্ষতার প্রশ্ন তোলেন! আচ্ছা মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে বাংলাদেশের পক্ষে আপনি থাকবেন সেখানেও নিরপেক্ষতার মানে কী? যে কোন একজন মানুষের দেশপ্রেমতো একপক্ষীয় তাই নয় কী? না আপনার দেশপ্রেম তথা লয়েলিটি কিছুটা পাকিস্তান কিছুটা বাংলাদেশের পক্ষে দেখানো গেলে তাতে নিরপেক্ষতা হয়? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে নিরপেক্ষতা মানে যদি যুদ্ধাপরাধী ঘাতক-রাজাকার পাকিস্তানপন্থী অথবা তাদের দোসরদের পক্ষে সহানুভূতি বোঝায় তাহলে কে কে যাবে তাদের পক্ষে?
আওয়ামী লীগের যুদ্ধাপরাধীদের আগে বিচার করতে বলেছেন খালেদা জিয়া। তা আওয়ামী লীগে কী এখন জেলখানার শোভা বর্ধনকারীগুলোর মতো মোটাতাজা জাতের কেউ আছে? মোটাতাজাগুলোকে বাদ রেখে চিকন আলীদের আগে বিচার পছন্দ কেন খালেদা জিয়ার? এখন যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চাইলে প্রক্রিয়াটি চালু থাকলে তা খালেদা জিয়া সত্যি সত্যি বিচার চাইলে তিনি ক্ষমতায় গিয়েতো তাঁর পছন্দের চিকন আলীদেরও বিচার করতে পারবেন, তাই নয় কী? এখন যদি চলমান প্রক্রিয়াটিই বন্ধের জন্যে তিনি উঠে পড়ে লাগেন তাহলে এ ব্যাপারে তাঁর ঈমান নিয়েই প্রশ্ন চলে আসবে না?
খালেদা জিয়া বলেছেন এই যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে নিয়ে আওয়ামী লীগ এক সময় রাজনীতি-আন্দোলন-ইলেকশন করেছে। সঠিক তথ্য। কিন্তু সেটাকে তিনি অনুকরনীয় দৃষ্টান্ত মনে করছেন কেন? অনুকরনতো মানুষ ভালো জিনিসকে করে। খারাপ, বস্তাপচা বিষয়কে বর্জন করে। কৌশলগত আন্দোলনের নামে আওয়ামী লীগের ওই কাজগুলোতো ঠিক ছিলো না তাতো ইতিহাসের শিক্ষা। সেটি ছিল মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বের সংগঠন আওয়ামী লীগের বড় একটা রাজনৈতিক অপরাধ। ২০০১ সালের ইলেকশনে আওয়ামী লীগ যদি এর শাস্তি না পায় তাহলে খালেদা জিয়া তখন আবার ক্ষমতায় ফেরেন কী করে?
এরও আগে এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সুযোগে আওয়ামী লীগ-বিএনপি আর বামপন্থী পাঁচদলের পাশাপাশি হেঁটে একাত্তরের ধিকৃত-প্রত্যাখ্যত জামায়াত রাজনীতির মাঠে নিজের জায়গাটি করে নেবার চেষ্টা করে। এরশাদের পতনের পর জনতার বিজয়োল্লাসের ফাঁকে এখানে ঘাপটি মেরে থাকা পাকিস্তানি নাগরিক গোলাম আজম নিজেকে জামায়াতের আমির ঘোষণা করে তখন সকলের হুঁশ হয়!
কিন্তু এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময়ে ছোট কয়েকটি দল নিয়ে সাতদলীয় জোট করলেও বিএনপি কেন জামায়াতকে নিয়ে জোট করতে চায়নি তা কী ম্যাডামের মনে আছে? বা ১৯৯৬ সালের ইলেকশনে প্রত্যাখ্যাত হবার পর কাজী জাফররা যখন জামায়াতকে নিয়ে চারদলীয় জোট গঠনের প্রস্তাব নিয়ে গিয়েছিল তখন স্বয়ং খালেদা জিয়া কী এর বিরোধিতা করেননি?
খালেদা জিয়া কাজী জাফরদের তখন বলেছিলেন, অসম্ভব জামায়াতকে নিয়ে জোট করলে তিনি ঢাকার পশ্চিমা লবির সাপোর্ট হারাবেন। তখন পশ্চিমা লবিকে ম্যানেজ করার দায়িত্ব নিয়ে কাজী জাফররা তাকে রাজি করান। এরপর জাপার একটা টিম ঢাকার ট্যুইস ডে গ্রুপের কূটনীতিকদের সঙ্গে ধারাবাহিক বৈঠকে পশ্চিমা কূটনীতিকদের এই বলে কনভিন্সড করে যে জামায়াতের মতো মোল্লা সংগঠনগুলোকে জোটের মধ্যে রাখলে সেগুলোকে ওয়াচে-নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব হবে। সেই ওয়াচের ঠিকাদার কাজী জাফররাই এখন আর বিএনপির সঙ্গে নেই। সেই জামায়াত কী এখন বিএনপির ওয়াচে-নিয়ন্ত্রণে আছে? না উল্টো তাদের ওয়াচে-নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে খালেদা জিয়ার বিএনপি?
মঙ্গলবারের বক্তৃতায় খালেদা জিয়া বলেছেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন ইলেকশন করতে দেওয়া হবে না। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে পরবর্তী ইলেকশন হোক তা দেশের বেশিরভাগ মানুষজন চায়। কারণ বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রশাসনিক অবস্থাটা এখনও সে অবস্থায় যায়নি যে ভারতসহ অনেক দেশের মতো ইমিডিয়েট পাস্ট সরকার তত্ত্বাবধায়ক সরকার হিসাবে কাজ করতে গেলে ইলেকশন কমিশনের আদেশ-কর্তৃ্ত্ব সবাই সুবোধ মেনে চলবেন! সুপ্রিমকোর্ট ব্যবস্থাটিকে অসাংবিধানিক ঘোষণার সময়ও পরবর্তী দুটি ইলেকশন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতে বলেছেন।
কিন্তু সাবেক প্রধান বিচারপতি খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ঘুষ গ্রহণের অভিযোগ তুলেতো এ ব্যাপারে গোল একটি বাঁধিয়ে রেখেছেন খালেদা জিয়া নিজেই! এখন তার অভিযোগটি আমলে নিতে গেলে দেখা যাবে দেশের হাইকোর্ট-সুপ্রীমকোর্টের বর্তমান ও সাবেক যত বিচারপতি চিকিৎসার জন্যে প্রধানমন্ত্রীর তহবিল থেকে টাকা নিয়েছেন তাদের সবাই ঘুষখোর! দেশের একটি দায়িত্বশীল পদে থেকে বিচারালয়কে কলংঙ্কের এমন কালিমা, যা তিনি স্বমুখেও দিয়েছেন, দিয়ে ভবিষ্যত তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনকে তিনি নিষ্কন্টক রেখেছেন কী?
এরপরও দেশের মানুষ মনে করে এ ব্যাপারে দুইনেত্রী যত কথাই বলুননা কেন সামনের ইলেকশনের আগে সবার ঐকমত্যের ভিত্তিতে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠন হতেই হবে।
জামায়াত নিষিদ্ধ সংগঠন কিনা সে প্রশ্নও তুলেছেন খালেদা জিয়া। এ প্রশ্নের জবাব দিতে হবে সরকারকে। দেশের মানুষজন যারা যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের পক্ষে, সংবিধান সংশোধনীর সময় বাহাত্তরের সংবিধানের মূল বিধানসমূহ পুরোপুরি চালুর পক্ষে তারা ছিলেন। ধর্মের নামে মানুষ খুন, শোষন-টর্চারের অভিজ্ঞতায় বাহাত্তরের সংবিধানে ধর্মের নামে রাজনীতি নিষিদ্ধ রাখা হয়। জিয়াউর রহমানের ক্ষমতা দখলের মার্শাল প্রক্লেমেশন অ্যাক্টের অধীনে এই ধর্মভিত্তিক দলগুলো আবার রাজনৈতিক তৎপরতা চালানোর সুযোগ পায়।
কিন্তু মুক্তিযুদ্ধকালীন গণহত্যায় জড়িত থাকায় মানুষের ক্রোধের কারণে সেই সময়েও জামায়াত সরাসরি স্বনামে সংগঠন করার সাহস পায়নি। মাওলানা রহিমের ইসলামিক ডেমোক্রেটিক লীগ তথা আইডিএল’এর নামে প্রথম কাজ শুরু করে জামায়াত। একাত্তরে গণহত্যায় তাদের দোসর সংগঠন ইসলামী ছাত্র সংঘের নাম পালটে রাখা হয় ইসলামী ছাত্র শিবির!
বাংলাদেশের বিপজ্জনক মোল্লা জঙ্গী তৎপরতা এই জামায়াত-শিবির সহ ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক সংগঠনের মাধ্যমেই ছড়িয়েছে। জেএমবিসহ যত সংগঠনের জঙ্গী যখন যেখানে ধরা পড়েছে তাদের সঙ্গে মিলেছে জামায়াত-শিবিরের গাঁটছড়ার সন্ধান! কিন্তু সংবিধান সংশোধনীর সময় দেশের মুক্তবুদ্ধির মানুষের দাবি-পরামর্শ এড়িয়ে আওয়ামী লীগ এসব মোল্লা সংগঠনের সঙ্গে সন্ধিতে গিয়ে দেশের ভবিষ্যতের বিরুদ্ধে প্রোথিত করেছে নতুন এক বিষবৃক্ষ! সবশেষ পুলিশের সঙ্গে জামায়াত-শিবিরের বিশেষ প্রশিক্ষনপ্রাপ্ত ক্যাডারদের গ্যাস গ্রেনেড ফাইটের পর জামায়াত-শিবির নিষিদ্ধের নতুন দাবি তুলেছেন আওয়ামী লীগ নেতা মোহাম্মদ নাসিম। খালেদা জিয়াও মঙ্গলবারের বক্তৃতায় বলতে চেয়েছেন, জামায়াত-শিবির যদি নিষিদ্ধ সংগঠন না হয় তাহলে তাদেরকে প্রকাশ্যে তৎপরতা চালাতে দিতে হবে। এখন মুক্তিযুদ্ধের খুনি বাহিনীর দোসরদের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারকে। কোনও ভনিতা চলবে না।
মঙ্গলবারের বক্তৃতায় খালেদা স্পষ্ট করে দিয়েছেন তিনি আবার ক্ষমতায় যেতে পারলে আটক এসব যুদ্ধাপরাধীদের একটারেও আর জেলের ভাত খেতে দেবেন না। এই বিচার নিয়ে সরকারি ঢিলেমিও কম হয়নি। আশা করা যায় খালেদা জিয়ার ধমকের পর সরকারের এখন হুঁশজ্ঞান বাড়বে। এই বিচার নিয়ে যাতে আর একদিনও সময় নষ্ট না করা হয় সে বিষয়টি এখন নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে! জিয়া যুদ্ধে গিয়ে যে জামায়াতিদের ভাষায় দুষ্কৃতকারী হয়েছেন, খালেদা জিয়া যখন সেই ‘দুষ্কৃতকারীর স্ত্রী’ অভিধা নিয়ে হলেও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার পন্ডের নিয়ত যখন করে ফেলেছেন, সে দায়দায়িত্ব তার। দেশের মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের মানুষ শুধু জানে তার স্বাধীনতার শহীদদের খুনিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে তাদের জিততে হবে। যত দ্রুত সম্ভব শেষ করতে হবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার। ডু অর ডাই।
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক
বাংলাদেশ সময় ১০৪১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০১১