ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রত্যাশা

আহমেদ শরীফ শুভ, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১১
একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপের প্রত্যাশা

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের  অধিবেশনে যোগদান শেষে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহস্পতিবার দেশে ফিরেছেন। আওয়ামী লীগের ঢাকা মহানগর শাখা ও দলের অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসমূহ ব্যাপক শোডাউন করে বিমানবন্দরে তাকে সম্বর্ধনা দেয়ার পরিকল্পনা করেছিল।

কিন্তু শেখ হাসিনার আপত্তির কারণে শেষ পর্যন্ত এই কর্মসূচি বাতিল করা হয়।

জানা গেছে, বিমানবন্দরে সম্বর্ধনার নামে শোডাউন করতে গিয়ে ব্যাপক জনসমাগম ঘটলে তাতে যানজটের ব্যাপকতা বেড়ে গিয়ে জনদুর্ভোগের ব্যাপ্তি হয় এই কথা বিবেচনা করেই প্রধানমন্ত্রী এই কর্মসূচি বাতিল করতে বলেছিলেন। জনদুর্ভোগের কথাটি বিবেচনা করার জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে সাধুবাদ। তার গৃহীত পদক্ষেপটি নিতান্ত সামান্য মনে হলেও বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে তা সুদূরপ্রসারী ইতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।

প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধী দলীয় নেত্রী সরকারি এবং দলীয় কাজে বিভিন্ন সময়ে দেশের বাইরে যান। সরকার ও বিরোধী দলীয় প্রধানের মেয়াদকালে তারা বহুবার এমন বিদেশ সফরে যান। কিন্তু তাই বলে প্রতিবার দেশে ফেরার পর তাদের ব্যাপক জন সমাগমের মাধ্যমে শোডাউন করে বিমানবন্দরে সম্বর্ধনা দিতে হবে এমন রেওয়াজ বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনও সভ্য গণতান্ত্রিক দেশে খুঁজে পাওয়া বিরল। যেখানে উত্তরা থেকে মতিঝিল যেতে দুই থেকে চার ঘন্টা সময় লেগে যায় যানজটের তীব্রতায়, সেখানে বিমানবন্দরে হাজার হাজার মানুষ আর গাড়ির সমাবেশ ঘটলে জনদুর্ভোগ কোথায় গিয়ে দাঁড়ায় তা সহজেই অনুমেয়। তা ছাড়া বিদেশগামী যাত্রীদের অসহায় ভোগান্তিতো আছেই। দেশের রাজনীতিবিদরা জন সাধারণের ভোগান্তি উপলব্ধি করতে পারেন না, কিংবা পারলেও নিজেদের প্রচারকে তার উর্ধে স্থান দেন  এমন ধারণার বিপরীতে অবস্থান নিয়ে শেখ হাসিনা নিঃসন্দেহে অভিনন্দনযোগ্য একটি পদক্ষেপ নিয়েছেন।

কোনও সভ্য গণতান্ত্রিক দেশের মাপকাঠিতে বিচার করলে এই পদক্ষেপটি উল্লেখ করার মতো ঘটনা নয়। বরং বিমানবন্দরে এধরনের সম্বর্ধনা দেয়াই প্রথা ও শিষ্টাচারবিরোধী। কিন্তু আমাদের দেশে এই সামান্য শিষ্টাচারই একটি বিরল ঘটনা। শেখ হাসিনা অবশ্য আগেও এ ধরনের আরো একটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রতিপক্ষ থেকে সঠিক সাড়া না পাওয়ায় সেই পদক্ষেপটি স্থায়ী হয়নি। কিছু দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রপ্রবাসী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও সমর্থকেরা খালেদা জিয়ার যুক্তরাষ্ট্র সফরের সময় তাকে কালো পতাকা প্রদর্শন ও তার বিরুদ্ধে বিক্ষোভের সিদ্ধান্ত নেন। শেখ হাসিনা এ ধরনের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার জন্য দলীয় নেতা কর্মীদের নির্দেশ দেন। কিন্তু পরবর্তী সময়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা তার এই সদিচ্ছার মূল্য দেননি বরং শেখ হাসিনার কানাডা সফরকালে বিক্ষোভ করেছেন এবং কালো পতাকা দেখিয়েছেন। সুতরাং আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি ফিরে গেছে পুরনো বলয়ে। অথচ বেগম জিয়া যদি তার অনুসারীদের এধরনের কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিতেন তাহলে অন্তত বিদেশের মাটিতে হলেও আমাদের রাজনীতির কদর্যতা কিছুটা কমতো।

বিদেশের মাটিতে অভিবাসী বাংলাদেশীরা কি ধরনের আচরণ করবেন বা কি ধরনের শিষ্টাচার পালন করবেন তা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর বা সরকারের এখতিয়ারের বাইরে। কিন্তু দেশে আচরণবিধি তিনি বা তার সরকার কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণ করতে পারেন। নিজে দৃষ্টান্ত স্থাপন করে যেহেতু বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি পরিবর্তন করা দুঃসাধ্য, তাই সময় এসেছে  কথায় কথায় বিমানবন্দরে জন সমাগম করে শোডাউন আইন করে বন্ধ করে দেওয়া। প্রধানমন্ত্রী নিজে তার অনুসারীদের এ ধরনের অর্থহীন শোডাউন থেকে বিরত রেখেছেন। তিনি মোরাল হাই গ্রাউন্ডে আছেন। আইন প্রণয়ন করে তিনি অন্তত একটি দূর্ভোগ থেকে জন সাধারণকে রেহাই দিতে পারেন। সময় এসেছে বিমানবন্দরে শোডাউন নিষিদ্ধ করার। আমাদের রাজনৈতিক সংস্কৃতির উত্তরণে এ হতে পারে একটি ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

Shuvo.sharif@gmail.com
বাংলাদেশ সময় ২০১১ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ৩০, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।