ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রধানমন্ত্রী ওভার কনফিডেন্ট!

ফজলুল বারী, কন্ট্রিবিউটিং এডিটর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩১৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২, ২০১১
প্রধানমন্ত্রী ওভার কনফিডেন্ট!

নিউইয়র্ক থেকে ফিরে শনিবার সংবাদ সম্মেলনে অনেক কথা বলছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনেক কনফিডেন্স নিয়ে বলেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়াই আগামী নির্বাচন হবে।

বিএনপিকে সে নির্বাচনে আসতেই হবে এবং তারা আসবে। তার মন্ত্রীরা সবাই স্মার্ট, টক শো’গুলো বেশি টক, রাজনীতিকরা সাংবাদিকদের সমালোচনা করেন, সাংবাদিকদের কেন সমালোচনা করা যাবে না, ইত্যাদি।
 
প্রধানমন্ত্রীর নিজের ওপর আস্থা তথা কনফিডেন্স একটি সরকারের জন্য ভালো। তবে ওভার কনফিডেন্স বুঝি ভালো না। জেদাজেদি ভালো না। এতে তার ও দেশের ক্ষতি হতে পারে বা হবে। এটা আমরা গত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলেও দেখেছি। বিএনপি যা মানবে না বলেছিল, শেখ হাসিনা তাদের কী করে তা মানতে বাধ্য করেছিলেন, তা তার চেয়ে বেশি কে জানে?

তবে শেখ হাসিনার নিউইয়র্কের বক্তব্য আর শনিবারের প্রেস কনফারেন্সের বক্তব্য বেশ চেঞ্জড। নিউইয়র্কে বলেছিলেন বিএনপির সঙ্গে কোন আলোচনাই হবে না। শনিবার গণভবনের প্রেস কনফারেন্সে বলেছেন, আলোচনা হবে। তবে তা সংসদে। এবার সুপ্রিমকোর্টের তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিলকে কেন্দ্র করে সংবিধান সংশোধনের আগেও বলা হয়েছিল, ভবিষ্যৎ নির্বাচন নিয়ে বিএনপির কোনও প্রস্তাব থাকলে সরকার তা নিয়ে সংসদ বা সংসদের বাইরে যে কোনও স্থানে আলোচনায় রাজি। প্রধানমন্ত্রী যেন তা ভুলে না যান। যুদ্ধাপরাধী আর দুর্নীতির মামলার বিচার নিয়ে আলোচনা না করার পক্ষে তার অবস্থান দেশের মানুষ সমর্থন করেন। কারণ এগুলো এখন আদালতের বিচারাধীন বিষয়। বিচার যাতে হয় তা নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের।
 
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন একটি অনির্বাচিত কর্তৃপক্ষের কাছে দেশের কর্তৃ্ত্ব আর ছেড়ে দেওয়া যায় না। ২১-২২ বছর আগে তারা যখন তত্ত্বাবধায়কের দাবিতে প্রথম আন্দোলন করেন তখন একই কথা বলেছেন এরশাদ স্বৈরাচারী। শাহ মোয়াজ্জেম বলেছেন, ফর্মূলা আমরা জিরো পয়েন্টে ছড়িয়ে দেব নাকি! সংসদে এসে আলোচনা করতে হবে। সংবিধান দুমড়ে মুচড়ে ক্ষমতা দখল করা এরশাদ, তার দোসররাও তখন যে কোনও মূল্যে সংবিধান সমুন্নত রাখার কথা বলেছে। এমন কী এরশাদ যখন পড়ে যাচ্ছে, জনতার গণপিটুনি থেকে পিঠ বাঁচাতে স্বৈরাচারের দোসররা যখন পালাতে-লুকাতে ব্যস্ত, তখনও টেলিভিশনে দেশের মানুষকে সংবিধান বোঝাচ্ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

দেশের মানুষের দূর্ভাগ্য এরশাদের বিরুদ্ধে তখন গণঅভ্যুত্থানের মানুষ জিতলেও ক্ষমতার পালাবদলটি তখন স্বৈরাচারের ফর্মূলা অনুসারেই হয়েছে! অর্থাৎ উপরাষ্ট্রপতি ব্যারিস্টার মওদুদ পদত্যাগ করলে বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আহমদকে এরশাদ প্রথমে উপরাষ্ট্রপতি নিয়োগ করে তাঁর হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন। এভাবে দেশের ইতিহাসের প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দিনের অধীনে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে দেশের প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হয়েও পরবর্তী নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করতে অস্বীকৃতি জানিয়ে বসেন খালেদা জিয়া। অবাক তত্ত্ব দিয়ে বলেন, শিশু আর পাগল ছাড়া কেউ নিরপেক্ষ হতে পারে না! এরপর সেই খালেদা জিয়াকে শেখ হাসিনাই পাগল আর শিশু চিনিয়েছিলেন!

কিন্ত এ ইস্যুতে আবারও সেই সংবিধানের নামে কচকচানি! দেশের মানুষের শান্তি-নিরাপত্তা, না সংবিধান বড়। তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে আদালত আর সংবিধানের নামে এখন শেখ হাসিনা যা বলছেন, খালেদা জিয়াও তখন প্রায় সে রকম সংবিধান সমুন্নত রাখার কথা বলেননি! অতঃপর পানি ঘোলা করে খাওয়ার মতো সংবিধান সংশোধনের নামে জেদাজেদির ১৫ ফেব্রুয়ারির একদলীয় নির্বাচন করে সেখানে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি পাশ করানো হয়! কিন্তু শেখ হাসিনার গণ কার্ফুর আন্দোলনের মধ্যে ভীত সন্ত্রস্ত খালেদা জিয়া সারারাত পার্লামেন্ট চালিয়ে ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকারের তাড়াহুড়ার উপস্থাপনের মাধ্যমে এমন একটি ফাঁকফোকরের তত্ত্বাবধায়ক আইন করে বসেন যে যার ফাঁক গলিয়ে ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার আইনানুগ ২ বছরের বেশি সময় দেশ চালিয়েছে!

আর ১৯৯৬ সালে সে আইনে বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে ২১ বছর শেখ হাসিনার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় ফিরলেও বেশি খুশি হয়ে যাওয়াতে সাংবিধানিক সেই ফাঁকফোকর চিহ্নিত করা হয়নি বা সংবিধান ঠিক করার মতো সংখ্যাগরিষ্ঠতাও সে সরকারের ছিল না। এরশাদের বিরুদ্ধে তত্ত্বাবধায়কের ফর্মূলা দেয়া, খালেদা জিয়াকে বাধ্য করা সেই শেখ হাসিনাই এখন আবার তত্ত্বাবধায়ক পদ্ধতির বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছেন! ধারণা করা যেতে পারে তিনটি কারণে এখন তিনি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার বিরোধী।

এক-ক্ষমতা পেয়েই বিচারপতি লতিফুর রহমানের প্রশাসন পুরোপুরি পালটে দেওয়ার বিষয়টি তিনি ভুলতে পারেননি! যে পদক্ষেপের মাধ্যমে প্রশাসন আর দেশের মানুষকে এমন একটি বার্তা দেওয়া হয় যে, আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরুক তা লতিফুর রহমানের তত্ত্বাবধায়ক সরকার চাইছে না। মনে করা হয়, তখন এমন একটি বার্তার ভিকটিম হয়েছে আওয়ামী লীগ।

দুই-বিএনপি তথা খালেদা জিয়ার গাদ্দারি আর আওয়ামী লীগের তথা শেখ হাসিনার  আন্দোলনের কারণে ১/১১’র তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় বসলেও তারা তাকে প্রথম গ্রেফতার করে জেলে পাঠায়। এরপর দুর্নীতির মামলায় শেখ সেলিম, আব্দুল জলিলকে দিয়ে তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যের ব্যবস্থার পর সে ক্যাসেট আবার ছেড়ে দেওয়া হয় বাজারে!

এর আগে তার দেশে ফেরা নিয়ে বাধা সৃষ্টিসহ বাজাবাজিও কম করেননি! দেশে ফেরার পর গ্রেফতার আর একের পর এক মামলায় কোর্টে হাজিরার নামে টানাহেঁচড়াও অনেক করেছে! এরপর মামলা মাথায় চিকিৎসা প্যারোলে মুক্তির নামে তাকে আবার বিদেশ চলে যেতেও হয়। খুব স্বাভাবিক সেই দূঃস্বপ্নের দিনগুলো এখনও ভুলতে পারেন না শেখ হাসিনা!
 
তিন-১৯৯১-৯৬’র খালেদা জিয়া মুখে পাগল, শিশুর কথা বললেও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলে ক্ষমতায় ফেরা নিয়ে আস্থার অভাবের কারণেই তখন তেমন একটি সরকারের বিরোধিতা করেছেন। যে অভিজ্ঞতা শেখ হাসিনার আবার হয়েছে লতিফুর রহমানের সরকারের সময়ে ।
 
১/১১’র সরকারের ভিকটিম বেশি হয়েছেন শেখ হাসিনা। ২০০৮ সালের নির্বাচনে  ক্ষমতায় ফিরতে পারায় তাঁর সে ক্ষতের উপশম হয়। কিন্তু আবার তেমন একটি সরকার এলে সেটি যে লতিফুর রহমান আর ১/১১’র মতো আচরণ করবেনা তা নিয়ে আস্থার অভাবের কারনেই শেখ হাসিনা যে তত্ত্বাবধায়ক যে আর চাচ্ছেন না তা তিনি নিজেই বলছেন। ধারণা করা হয়, যা তিনি বলছেন না তাহলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনের নির্বাচনে আবার জিতে আসা নিয়ে আস্থার অভাব! বিশেষ করে অস্বাভাবিক দ্রব্যমূল্য, শেয়ার কেলেংকারিসহ আরও কিছু বিষয়ের কারণে শেখ হাসিনা দিনেরাতে কাজ করে চললেও মনে করা হয় তার সরকার এখন আর সাবেক ভালো অবস্থানে নেই!

শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা জোর দিয়ে বলেছেন, পরবর্তী নির্বাচন তাঁর সরকারের অধীনেই ‘হবে হবে হবে’। খালেদা জিয়াও সে নির্বাচনে আসবেন, আসতে বাধ্য হবেন, বলেছেন শেখ হাসিনা। এই কথাগুলোতে এক ধরনের ওভার কনফিডেন্স এবং আত্ম অহংকার প্রকাশ পেয়েছে। যা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে তার ও দেশের জন্য ক্ষতিকর। এভাবে খালেদা জিয়া কথা বললে কী তিনি শুনতেন? বা এখন বিরোধীদলে থাকলে তত্ত্ববধায়ক সরকার নিয়ে এভাবে কথা তিনি বলতেন কী।

অলরেডি বেগম জিয়া বলে রেখেছেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া কোন নির্বাচন হবে না। আগামী নির্বাচন তত্ত্ববধায়ক সরকারের অধীনে হবে। শেখ হাসিনার ‘হবে হবে হবে’ বক্তব্যের জবাবে বিএনপি নেতারা এর মাঝে ‘হবে না হবে না হবে না’ বলে নাকচ করে দিয়েছেন। তাহলে এই হবে’টা কী করে করবেন শেখ হাসিনা? জোর করে করবেন? এটা কী সম্ভব?
 
জিনিসপত্রের দাম থেকে নানা ইস্যুতে দেশের জনমত এখন আর তাঁর একচেটিয়া পক্ষে নেই। বাংলাদেশ কেন একটা জনপ্রিয় সরকারের অজনপ্রিয় হতে দুনিয়ার কোথাও সময়  লাগে না। আমেরিকার বারাক ওবামা বা অস্ট্রেলিয়ার জুলিয়া গিলার্ডের জনপ্রিয়তাও এর মাঝে টলটলায়মান!
 
এমনিতে এখন অবধি নির্বাচন নিয়ে সরকার একটি সুবিধাজনক রাজনৈতিক জায়গায় আছে। দেশের মানুষ দেখেছে এখন অবধি সরকার কোন নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেনি। নিজের দলের দখলে থাকা হবিগঞ্জের একটি আসন, চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন তারা হারিয়েছে। ইউপি-পৌরসভা নির্বাচনে ক্ষমতায় থেকেও ভালো করেনি আওয়ামী লীগ। এরপরও মানুষ দেখেছে সরকার নির্বাচনে হস্তক্ষেপের চেষ্টা করেনি। এটি দেশের জন্য ব্যতিক্রমী ভালো একটা নজির। এরশাদ-খালেদা কারও সে রেকর্ড নেই।
 
কিন্তু আগামীতে আরো যে অনেক সমস্যা আসছে। বিএনপিকে আস্থায় নিয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। এটা করা কঠিন। কারণ আমাদের কালচার হচ্ছে সরকার যা বলবে এর বিরুদ্ধে না’ বলে শুরু করবে বিরোধীদল! এটা আওয়ামী লীগ করেছে। এখন করছে বিএনপি। ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেমের পক্ষে আওয়ামী লীগ বলায় বিএনপি এর বিরোধিতা করে বসে। বিব্রত ইলেকশন কমিশন তখন বাধ্য হয়ে বলেছে বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের এভাবে আগ বাড়িয়ে কথা বলাটা ঠিক হয়নি।

আর বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক সরকার আর ইলেকশন কমিশন ইস্যুতে ‘না’ অবস্থান নিয়ে  ফেললে সরকার কী তাদের ছাড়া নির্বাচন করে ফেলবে? এরশাদ-খালেদা জিয়া দু’জনেরই জোরপূর্বক একদলীয় দলীয় নির্বাচন করার বদনামের রেকর্ড আছে। তাদের সে রেকর্ডের ভাগীদার হবার চেষ্টা করবেন কি শেখ হাসিনাও।
 
অতএব সুপ্রিমকোর্টের বাতলে দেয়া পথে অর্থাৎ পরবর্তী দুটি নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকার অধীনে করার বিষয়ে প্রয়োজনীয় অ্যাকোমডেটিভ হোন। নতুবা কিন্তু ক্ষমতা হারাতে পারেন। এমন অভিজ্ঞতা আওয়ামী লীগের ঢের আছে। অর্থাৎ আন্দোলনের সঙ্গে যে বিরোধীদল  নির্বাচনে যায় তারা কিন্তু হারে না। আর অতিরিক্ত জনসংখ্যার গাদাগাদির দেশে কিন্তু আন্দোলনের ইস্যু তৈরি হতে সময় লাগে না।
 
আওয়ামী লীগের আরেক বিপদ হচ্ছে রাজনীতি, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বঙ্গবন্ধুর আদর্শের চর্চা বিবর্জিত এদলের এখনকার সিংহভাগ নেতাকর্মীর চরিত্র ফুলের মতো পবিত্র না। এদের বেশিরভাগ ক্ষমতার ভিতরে ঢুকে যাওয়াতে মাঠে-ময়দান থেকে কিন্তু আওয়ামী লীগের সংগঠন প্রায় হারিয়ে গেছে। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এই সরার বিপদে পড়লে তা সবার বিপদ। চল্লিশ বছরের অপেক্ষার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কোন কারণে বাধাগ্রস্ত হোক তা দেশের মানুষ চায় না।
 
শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে শেখ হাসিনা মিডিয়ার ব্যাপারে উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, এত ভালো কাজ তিনি করছেন, অথচ মিডিয়া তা সেভাবে বলছেনা, টক শো’গুলো বড় বেশি টক। একটু মিষ্টি দিতে বলেছেন তিনি! কিন্তু প্রকৃত পরিস্থিতি কী তাই? যুদ্ধাপরাধীদের আর দুর্নীতির বিচার নিয়ে দেশের প্রায় সব প্রধান মিডিয়া এখনও সরকারের পক্ষে। দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে। কিন্তু মানুষ এর সুফল কতটা পাচ্ছে? এতবেশি জনসংখ্যার দেশে বুঝি বিদ্যুৎ আর অবকাঠামোর বিষয়াদি নিয়ে মানুষকে সুখি-সন্তুষ্ট করা সহজ কী?  কারণ এসবের চাহিদা শুধুই বাড়ছে। প্রতিদিন আরও বাড়বে।
 
আর সরকার কাজ যত ভালো করবে, মানুষ যদি সন্তুষ্ট হয়, এর রেজাল্টতো পাওয়া যাবে নির্বাচনে। সরকার কী সে বিষয়ে কনফিডেন্ট? একটা থানায় বা পুলিশ স্টেশনে প্রতিদিন যত জিডি নেওয়া হয় তা নিউজ না। জিডি না নিলে সে মতো কাজ না করলে তা নিউজ। কারণ জিডি নেওয়া সে মতে কাজ করাই থানার দায়িত্ব। সরকারের কাজকর্মও সে রকম। কারন এসব কাজ  করার ওয়াদা দিয়েই সে ভোট নিয়েছে।
 
শেখ হাসিনা অনেক দেশে যান। সে সব দেশের টকশো আর মিডিয়ার রিপোর্টে সরকারকে কী রকম তুলোধুনো করা হয় তা দেখেন। কাজেই এসব নিয়ে উষ্মার কী আছে? এত জনপ্রিয়তা নিয়ে একটা সরকার ক্ষমতায় আসার পরও এর মাঝে তাদের তোষামোদি করা কোন কোন পত্রিকা মিডিয়া এখন আর চলে না অথবা জনপ্রিয়তা হারিয়েছে, তা কী তিনি  বা তাঁর সরকার ভেবে দেখেছে? এসব অজনপ্রিয় মিডিয়াকে একচেটিয়া সরকারি বিজ্ঞাপন দিয়ে যাওয়া কী সরকারি অর্থের অপচয়-অপব্যবহার না?
 
বা এই সরকার এখনও যত মিডিয়া সাপোর্ট পাচ্ছে, স্মরণকালের কোনও সরকার তা পেয়েছে কী? এসব নিয়ে একটু শুকরিয়া প্রকাশ ভালো নয় কী? জনপ্রিয় মিডিয়াগুলোর সঙ্গে সরকারের সুসম্পর্ক আরো বাড়াতে মোহাম্মদ নাসিম, ওবায়দুল কাদের, সাবের হোসেন চৌধুরীর মতো নেতাদেরতো আরও কাজে লাগানো যায়, তাই না?

শেখ হাসিনা বলেছেন তার মন্ত্রীরা দুর্নীতিতে না, কাজে স্মার্ট! এটা কী সব মন্ত্রীদের ব্যাপারে বলা চলে? যোগাযোগমন্ত্রী আবুল স্মার্ট হলে কী দেশের রাস্তাঘাটের এ অবস্থা হয়? ফারুক খানের বাজারের কারণে কী সরকারের পপুলারিটি আজ তলানিতে নয়? যে মন্ত্রী বিনা পরীক্ষায় তার শ্রমিক সংগঠনের লোকজনকে ড্রাইভিং লাইসেন্স দেবার বেআইনি আবদার করেন, সেই শাহজাহান খানকে স্মার্ট মন্ত্রী না ক্ষ্যাত মন্ত্রী বলা চলে? অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে ন্যূব্জ একটি দেশে স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী যদি ৯ সন্তানের পক্ষে সাফাই গান তাহলে তাকে স্মার্ট বললেতো পাবলিক হাসবে।

নিউইয়র্ক থেকে প্রধানমন্ত্রী ফেরার দিন সংবর্ধনার নামে মানুষকে কষ্ট না দিয়ে বিমানবন্দরে বিশিষ্ট নাগরিক-পেশাজীবীদের মাধ্যমে যে অভ্যর্থনার কাজ করানো হয়েছে, তা নিশ্চয় ব্যতিক্রমী, স্মার্ট একটি কাজ হয়েছে। এমন যে যেখানে স্মার্ট তা পাবলিকই বলবে। অকর্মা-ক্ষেত মন্ত্রিদের স্মার্ট বলে যদি উল্টো প্রটেকশন দেওয়া হয় তাতে কেবিনেটে সত্যিকারের স্মার্ট-দক্ষ যারা আছেন, তাদের সব পরিশ্রম-ক্রেডিবিলিটিই জলে যাবে প্রিয় প্রধানমন্ত্রী।
 
ফজলুল বারীঃ সিডনিপ্রবাসী সাংবাদিক।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।