এই প্রথমবারের মতো জাতীয় নির্বাচন দেখার সুযোগ পাচ্ছি। নির্বাচনের আর মাত্র ৬ দিন বাকী।
তবে প্রার্থীরা নিজেদের পরিচিত করার জন্য দু’একটি ঘরোয়া বৈঠক ও বাসায় লিফলেট বিলি করতে দেখা যাচ্ছে। এছাড়া পত্রপত্রিকা ও টেলিভিশনের দু’একটি খবরের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নির্বাচনী প্রচারণা। প্রধান দুই জোট থেকেই জনগণের সমর্থন পেতে তাদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি ঘোষণা করেছেন। তবে এক প্রার্থী আরেক প্রার্থীকে গালাগালি বা হুমকি-ধামকি দেওয়ার রেওয়াজও চালু নেই। যার যে দায়িত্ব সে সুন্দরমতো তার দায়িত্ব পালন করে চলছে। চারিদিকে শান্ত পরিবেশ। সত্যি শান্তির দেশ জাপান।
এরআগে, ২০১৬ সালে টোকিও সিটি নির্বাচন দেখার অভিজ্ঞতা আছে। অন্যান্য দিনের মতোই কর্মব্যস্ত মানুষ অফিসের কাজের এক ফাঁকে ভোট দিয়েছেন। সেই নির্বাচনে সরকারি দলের প্রার্থী হেরেছেন। তবুও কোথাও ব্যালট বাক্স ছিনতাই বা কেন্দ্র দখলের মতো ঘটনা ঘটেনি। ঘটবেই বা কেন? ওই যে নিজের দায়িত্ববোধ। সততা আর নৈতিকতার কারণেই তারা আজ উন্নতির চরম শিখরে। কারই বা এতো সময় আছে এসব নিয়ে চিন্তা করার।
জাপানের সংসদের নিম্নকক্ষে ৪৬৫টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হচ্ছে। ক্ষমতায় যেতে হলে অন্তত ২৩৩টি আসন পেতে হবে। এ নির্বাচনে জাপানের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবে’র নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন জোট ও কাতসুয়া ওকাদা’র নেতৃত্বাধীন বিরোধী জোট অংশ নিচ্ছে। এই নির্বাচনে প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের ক্ষমতাসীন দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টিকে (এলডিপি) বাড়তি চাপে রাখার জন্যই এবার নতুন দল গঠন করেছে প্রধান বিরোধী দল ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপান (ডিপিজে) এবং অপেক্ষাকৃত ছোট দল জাপান ইনোভেশন পার্টি (জেআইপি)।
বিরোধী দলের নেতৃত্ব দিচ্ছে ডেমোক্রেটিক পার্টি অব জাপান প্রধান কাতসুয়া ওকাদা। একীভূত হওয়ার পর নবগঠিত দলের নাম রাখা হয়েছে ‘মিনশিনতো পার্টি’। এর ইংরেজি নাম ডেমোক্রেটিক পার্টি। এ জন্য এবার হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে বলে দেশটির শীর্ষ স্থানীয় গণমাধ্যমগুলো বলছে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর জাপানের পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে শিনজো আবে আগাম নির্বাচন ঘোষণা দেন। আগাম এ নির্বাচনের ফলে ২২ অক্টোবর ভোটগ্রহণ। নিজের জনপ্রিয়তা যাচাই এবং উত্তর কোরিয়া নিয়ে বিদ্যমান সংকটে জনমত জানতে সরকারের মেয়াদ শেষ হওয়ার এক বছর আগেই সাধারণ নির্বাচন দিচ্ছেন শিনজো আবে। তিনি তার সমর্থনে আরও শক্তিশালী জনরায় চাইছেন।
২০১২ সালে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করেন শিনজো আবে। তার দল লিবারেল ডেমোক্রেটিক পার্টি ডায়েটে (জাপানের পার্লামেন্ট) জোটসরকারের নেতৃত্ব দিচ্ছে। চলতি বছরের শুরুর দিকে শিনজো আবের জনপ্রিয়তায় ভাটা পড়ে। তবে জাপানের ওপর দিয়ে উত্তর কোরিয়ার দু’টি ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পর এর বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ায় আবের প্রতি জনসমর্থন আবারও বেড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। তবে এবারের নির্বাচনে টোকিওর আলোচিত ও প্রথম নারী গভর্নর ইউরিকো কোইকে অংশ নেওয়ার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে সরে দাঁড়িয়েছেন।
আবের এই আগাম নির্বাচন ঘোষণায় বিশ্লেষকরা বলছেন, বেড়ে যাওয়া জনসমর্থন ও বিরোধী দলের দুর্বলতার সুযোগকে কাজে লাগাতে চাইছেন শিনজো আবে। জুলাইয়ে আবের জনসমর্থন ছিল মাত্র ৩০ শতাংশ, যা সেপ্টেম্বরে বেড়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশের বেশি।
জাপানে সংসদীয় রাজতন্ত্র, অর্থাৎ এ ব্যবস্থায় সম্রাটের ক্ষমতা মূলত আনুষ্ঠানিক ও সীমিত। অন্যান্য অনেক রাষ্ট্রের মত জাপানেও সরকারব্যবস্থা তিন ভাগে বিভক্ত। আইন বিভাগ, শাসন বিভাগ এবং বিচার বিভাগ।
১৯৪৭ খ্রিঃ প্রণীত সংবিধান অনুযায়ী, জাপান সরকার পরিচালিত হয়। এটি একটি এককেন্দ্রিক রাষ্ট্র যার প্রশাসনিক অঞ্চল ৪৭টি এবং সম্রাট হচ্ছেন রাষ্ট্রপ্রধান। সম্রাটের প্রকৃত ক্ষমতা নেই; শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক ক্ষমতা আছে। সরকার চালানোর প্রকৃত ক্ষমতা প্রধানমন্ত্রী ও তার অধীনস্থ রাষ্ট্রমন্ত্রীদের দ্বারা পরিচালিত ক্যাবিনেটের হাতে অর্পিত।
ক্যাবিনেট প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচন করে জাতীয় সংসদ বা ডায়েট, এবং তাকে তার পদে নিয়োগ করেন সম্রাট। জাতীয় ডায়েট হলো আইন বিভাগের কেন্দ্রীয়নিয়ন্ত্রক। এটি দ্বিকক্ষবিশিষ্ট, যেখানে উচ্চ কক্ষটি হলো উপদেষ্টা পরিষদ এবং নিম্নকক্ষ জনপ্রনিধি পরিষদ। নিম্নকক্ষের সদস্যরা জনসাধারণ কর্তৃক সরাসরি নির্বাচিত হয়ে আসেন।
মাহবুব মাসুম, প্রবাসী সাংবাদিক
ইমেইল: masum86cu@yahoo.com
বাংলাদেশ সময়: ০৬৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৫, ২০১৭
এসআরএস