পাওয়ার পয়েন্টের মাধ্যমে প্রেজেন্টেশন তৈরির ক্লাসে সাবজেক্ট নেয়া হয় ‘ওম্যান ইন পাওয়ার’। প্রেক্ষাপট বাংলাদেশ।
এরপর সবার প্রশ্নের উত্তরে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশের ধর্ম নিরপেক্ষ সমাজ, রাজনীতি নিয়ে লম্বা একটি বক্তৃতাও দিয়ে ফেলতে হয়! প্রেজেন্টেশনের একটা ভালো মহড়া-গ্রাউন্ডওয়ার্কও হয়ে যায়! এরপরও যেন বিস্ময়ের ঘোর আর কাটেনা! যেখানে অস্ট্রেলিয়ার মতো প্রায় শতভাগ শিক্ষার সুযোগপ্রাপ্ত মানুষের দেশে এই প্রথম একজন নারী প্রধানমন্ত্রী হয়েছেন জুলিয়া গিলার্ড। এরমাঝে তার আসনটি টলটলায়মান!
বাংলাদেশে আবার নির্বাচনের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়নের বেশিটা শেখ হাসিনার হাতেই হয়েছে। খালেদা জিয়া নিজে প্রতিবার পাঁচটি করে আসনে নির্বাচন করলেও বিএনপি থেকে সেভাবে নারী প্রার্থীদের সংসদে মনোনয়ন দেননি বা মন্ত্রীও করেননি। নারীর ক্ষমতায়নের শেখ হাসিনার মিশনটি অতঃপর কী আটকে যাচ্ছে নারায়নগঞ্জে? এখন পর্যন্ত আলামত তাই।
২০০৮ সালের নির্বাচনে জয়নাল হাজারি, শামীম ওসমানদের বয়কট নির্বাচন থেকে দূরে সরিয়ে রেখে ভালো ফলাফলও পেয়েছেন আওয়ামী লীগ সভনেত্রী। এদের ব্যাপারে হয়তো তিনি এরমাঝে তার মনোভাব পাল্টেছেন! সে কারণে ‘ইশারায় কাফি’ আওয়ামী লীগের নেতারা শামীম ওসমানকে অপছন্দ করলেও মুখে সাফ সাফ কোন কথা বলতে পারছেন না।
অতএব শাসকদলের স্পষ্ট দ্বিধাবিভক্তিতে আপাতত নিরুদ্বেগ, মানসিক মউজে আছেন বিএনপির প্রার্থী তৈমুর আলম খন্দকার আর তার সমর্থক নেতা-কর্মীরা! কারন অলরেডি নির্বাচনের ফার্স্ট রাউন্ডে তারা বিজয়ী! কারন ভোটাররা দেখছেন দেশের নতুন এই সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী প্রশ্নে শাসকদল আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত আর বিএনপি ঐকবদ্ধ! আর আওয়ামী লীগ দ্বিধাবিভক্ত এমন এক প্রার্থী শামীম ওসমানকে নিয়ে, সন্ত্রাসের গডফাদার হিসাবে পরিচয় থাকাতে দল ক্ষমতা হারালে যিনি লোক নারায়নগঞ্জ থেকে পালিয়ে যান! ইন্টারপোলের রেড নোটিশ যার নামে জারি হয়! আওয়ামী লীগ আবার ক্ষমতায় ফিরলে তিনিও ফেরেন নারায়নগঞ্জে!
অর্থাৎ এখন যদি শাসকদল তাকে অফিসিয়ালি মনোনয়ন দেয় আর তিনি জেতেনও আর সামনের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ যদি ক্ষমতায় ফিরতে না পারে, তাহলে তাকেও আর ত্রি-সীমানায় পাবেনা নারায়নগঞ্জের মানুষজন! পুরো বিষয়টিই যেন হয়ে দাঁড়িয়েছে সন্ত্রাসের সম্পর্কযুক্ত একজনের পক্ষে বা বিপক্ষে থাকার অ্যাসিড টেস্ট! খোদ সরকারি দল এখন সে টেস্টের সম্মুখিন! নাসিক বা নারায়নগঞ্জের নির্বাচন প্রসঙ্গ, পরে।
শীতলক্ষ্যাপাড়ের সিটি নির্বাচন নিয়ে এখন প্রায় প্রতিদিন দেশের প্রধান মিডিয়াগুলোতে নানা খবর বেরুচ্ছে। ফেসবুক, টুইটারের মতো জনপ্রিয় সোশ্যাল নেটওয়ার্ক, বাংলা ব্লগসমূহের লেখালেখি, এসব স্ক্যান করলে যে ধারনাসব বেরিয়ে আসে তাহলো শাসকদল আওয়ামী লীগ সভানেত্রী-প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এখন পর্যন্ত মনস্থীর শামীম ওসমানের পক্ষে। কিন্তু বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার, আর মাঠপর্যায়ের নেতাকর্মীদের রিপোর্ট, মনোভাব শুনে-জেনে কেউ আর মুখ ফুটে কিছু বলার সাহস পাচ্ছেন না।
শেখ হাসিনাকে প্রথম ধারনা দেওয়া হয়েছিল নারায়নগঞ্জের আওয়ামী লীগ একচেটিয়া শামীম ওসমানের পক্ষে। সে ধারনাও এরমাঝে ভুল প্রমানিত হয়েছে। সত্য হচ্ছে নারায়নগঞ্জের আওয়ামী লীগ এখন দ্বিধাবিভক্ত। যারা ভয়কে জয় করতে পেরেছেন, তারা প্রকাশ্যে ডা সেলিনা হায়াত আইভি’র পক্ষ নিয়েছেন। এখন যদি দল আইভিকে মনোনয়ন না দেয় অথবা তিনি নির্বাচন না করেন, তাহলে শুধু ভোট না, জীবন বাঁচাতে এই নেতাকর্মীদের আত্মগোপনে চলে যেতে হবে। কারণ নারায়নগঞ্জ আওয়ামী লীগের এই নেতা-কর্মীরা শামীম ওসমান ও তার সমর্থকদের ভালো চেনেন জানেন।
আর দলের ডাকে বিদেশ থেকে দেশে ফিরে দলের মনোনয়নে পৌরসভায় জিতে ভালো কাজ করে বিপুল জনপ্রিয়তা সত্বেও আইভি যদি মনোনয়ন না পান সরকারের তরফে তাহলে নারায়ণগঞ্জের ভোটারদের কী সংকেত দেয়া হবে? এক্ষেত্রে আইভি’র আরেকটি পজিটিভ দিক গুরুত্বপূর্ণ বাংলাদেশের স্থানীয় সংস্থাসমূহের বেশিভাগ নির্বাচিত জনপ্রতিনিধির দ্বিতীয়দফা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময়ে তাদের বিরুদ্ধে দূর্নীতি ও সন্ত্রাসসঙ্গের অভিযোগ আসে সবার আগে। নারায়ণগঞ্জের মতো পৌরসভায় জিতে এ ব্যাপারে আইভি’র ইমেজটি অবাক করা ভিন্ন। উল্টো তার প্রতিদ্বন্দ্বী শামীম ওসমান-তৈমুর খন্দকারের বিরুদ্ধে সন্ত্রাস-দূর্নীতির গুচ্ছ মামলা থাকলেও সে সব কালিমামুক্ত ডা. আইভি!
সে কারনে এখনও সরকারিদল মনোনয়ন দিচ্ছেনা এটি জেনেশুনেও সেখানকার জনমত যেভাবে তার পক্ষে চাঙ্গা, সরকারিদল যদি শেষ পর্যন্ত সত্যি সত্যি তাকে মনোনয়ন না দেয় তাহলে কী জনমত আরও বিস্ফোরিত হতে পারে? বিস্ফোরিত মানে দলমত নির্বিশেষে ডা আইভি’র পিছনে অবস্থান নিতে পারে নারায়নগঞ্জের সব মানুষজন! কারন সেখানকার ভোটার মানুষ দেখবে তাদের পক্ষে ভালো কাজ করেও দলের মনোনয়ন পাননি তাদের পৌরসভার প্রথম নির্বাচিত নারী চেয়ারম্যান তথা মেয়র!
এরসবই অবশ্য এখনও যদি’র কথাবার্তা, যদি এই! যদি সেই! ১১ অক্টোবর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষদিন। এরমধ্যে শাসকদল আওয়ামী লীগকে তাদের একজন প্রার্থী বেছে নিতে হবে। শামীম ওসমান অথবা ডা আইভি! আগামী ৪৮ ঘন্টা সেজন্য বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ, আওয়ামী লীগের জন্যে। নারায়ণগঞ্জের সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের প্রথম ভোটের জন্যে। ওয়েট অ্যান্ড সী!
ফজলুল বারীঃ সিডনি প্রবাসী সাংবাদিক।