কিছুদিন আগে কবি আল-মাহমুদ জামায়াতের কাছ থেকে সংবর্ধনা নেওয়ার পর সাংবাদিকরা চেপে ধরেছিলেন, কেন তিনি জামায়াতের কাছ থেকে সংবর্ধনা নিলেন? তিনি অকপটে বলেছিলেন, ‘আওয়ামী লীগতো আর আমাকে ডেকে সংবর্ধনা দেবে না। তাই জামায়াতের সংবর্ধনা নিয়েছি।
তিনি জামায়াতের সংবর্ধনা নিয়ে ধন্য হলেও, তার এই আচরণ অনেকের কাছে নিকৃষ্ট এবং তার বক্তব্য চরম নির্লজ্জতা মনে হয়েছে। এতে ধিকৃত হয়েছেন কবি। অথচ তিনিই একসময় বাম নেতা ছিলেন। তার মুখে সমাজতন্ত্রের বুলি ফুটতো। এর জন্য তিনি জেলও খেটেছেন। `সোনালী কাবিন` এর লেখক তিনি। অত্যন্ত মেধাবী এই কবির লেখনী অসাধারণ। তিনি বিখ্যাত `নোলক` কবিতায় লিখেছেন:
আমার মায়ের সোনার নোলক হারিয়ে গেল শেষে
হেথায় খুঁজি, হোথায় খুঁজি,সারা বাংলাদেশে।
তার তো তালি পাওয়ার জন্য জামায়াতের দুয়ারে ধর্না দিতে হয় না। অথচ তিনি তা-ই করেছেন। এই মেধাবী লোকটিই কয়েকটি তালির জন্য নিজেকে বিকিয়ে দিয়েছেন। আদর্শচ্যুত হয়েছেন। শুধু তিনিই নন ইদানিং অনেকেই স্বীয় আদর্শচ্যুতি ঘটিয়ে সমাবেশ-এ তালি পাওয়ার জন্য এদিক ওদিক ছুটছেন। নানা সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। দুঃখজনক ব্যাপার হলো, একই স্টাইলে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর মতো ব্যক্তিত্বও জামায়াতের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে ওঠা “মুক্তচিন্তা” ব্যানারের নিচে কয়েক মাস নিয়মিত আশ্রয় নিচ্ছেন। ফ্রেঞ্চ কাট দাড়িসমেত ভিড় করা শিবিরকর্মীদের সভায়ও বক্তৃতা করে বেহেশতের পথ সুগম করছেন।
রোববার একটি জাতীয় দৈনিকে দেখলাম শুধুই তিনিই নন মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক আসম আব্দুর রব ও মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীকও নিয়মিত এসব সভায় তাশরিফ আনছেন। জামায়াতনেতা মীর কাশেম আলীর এ সংগঠনের মঞ্চে অনর্গল বক্তৃতা করছেন, গলা ফাটাচ্ছেন। তরুণ প্রজন্মের কাছে মুহাম্মদ ইব্রাহিম বীরপ্রতীকের গ্রহণযোগ্যতা শুন্যের কোটায় থাকলেও আসম আব্দুর রব ও বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীর জনপ্রিয়তা ও ব্যাপক গ্রহণযোগ্যতা রয়েছে। তরুণরা মুক্তিযুদ্ধে `বাঘা সিদ্দিকীর বীরত্বগাথা` পড়ে রোমাঞ্চিত হয় । তার এধরণের কর্মকান্ডে তরুণরা বিভ্রান্ত। মাঝে মাঝে তিনি নিজেও বিভ্রান্ত বলে মনে হচ্ছে। ইদানিং বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী ২৬ মার্চ বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার ঘোষণা দেননি বলেও বক্তব্য দিচ্ছেন। আওয়ামী লীগের কড়া সমালোচনা করতে গিয়ে মাঝে মাঝে ইতিহাসকে ব্যবহার করছেন।
বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী বা আ স ম আব্দুর রবের মতো ব্যক্তিত্ব স্বেচ্ছায় সচেতনভাবে এরূপ করছেন, এটা বিশ্বাস করা কষ্টকর। তারা অসচেতন ভাবে এটা করেছেন বা করছেন এমনটা ভাবতেই অপেক্ষাকৃত আরামবোধ করছি। আওয়ামীলীগের প্রতি ক্ষোভ থাকলে তারা অন্যভাবে অন্য কোন ফোরামে আলোচনা করতে পারেন। কিন্তু এসব মুক্তিযুদ্ধের সেনাপতিরা জামায়াতী ছত্রছায়ায় গঠিত সংগঠনের ব্যানারে বক্তৃতা করছে এটা মেনে নেয়া কষ্টকর।
মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী জামায়াতী সমর্থকরা কাদের সিদ্দিকীদের হাতে বায়েত গ্রহণ করে হেদায়েত লাভের উদ্দেশ্যে তাদের এসব সভায় ডাকে না। তাদের এসব সভায় ডাকা হয় জামায়াতের বক্তব্য সর্বসাধারণের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য। তাদের মঞ্চে বসিয়ে রেখে করতালি ও স্তুতিতে ডুবিয়ে রেখে জামায়াতী বুদ্ধিজীবীরা নিজেদের বক্তব্য প্রতিষ্ঠা করেন। এখন যেমনটা, মেজর জলিলের বক্তব্যকে জামায়াত তাদের প্রকাশনায় দলিল হিসেবে ব্যবহার করে। ভবিষ্যতের বৃত্তে বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকীকেও সেভাবে ব্যবহার করা হোক আমরা চাই না। আমরা চাই শিগগিরই তার বিভ্রান্তি কাটুক। তিনি আরো সচেতন হয়ে আমন্ত্রণপত্র যাচাই করবেন। উদ্যেক্তাদের যাচাই করবেন। তা না হলে আমাদের ইতিহাস বিকৃত হবে। সঠিক ইতিহাস হারাতে হতে পারে। আমাদেরকে মায়ের নোলকের মতো ইতিহাস খুঁজতে হবে-
`হেথায় খুঁজি, হোথায় খুঁজি, সারা বাংলাদেশে। ’
-মনোয়ার রুবেল।
একটি বেসরকারী সংস্থায় কর্মরত ও তরুণ ব্লগার।
monowarrubel@yahoo.com