ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

প্রথমআলো কর্মীদের উথলে ওঠা প্রেমের রহস্য কি?

সোহান মুরাদ, ব্লগার ও পাঠক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১১
প্রথমআলো কর্মীদের উথলে ওঠা প্রেমের রহস্য কি?

সৌদি আরবে আট বাংলাদেশীর শিরশ্ছেদের পর থেকে শুরু হয়ে গত কয়েক দিন ধরে অনলাইন জগতে ঘটনাটি নিয়ে রীতিমত ভাচুর্য়াল যুদ্ধ চলছে।

ফেসবুকের দেওয়াল থেকে শুরু করে বাংলা ব্লগ, অনলাইন ভিত্তিক নানা ফোরামে চলছে আলোচনা-সমালোচনার ঝড়।

শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পর্যবেক্ষণে যে বিষয়টি লক্ষ্য করেছি, একজন সাধাণ ব্লগার কাম পাঠক হিসেবে, সেটি হচ্ছে যারা সৌদি আরবে আট বাংলাদেশির শিরশ্ছেদের ব্যাপারটি নিয়ে প্রতিবাদে বেশ সোচ্চার তাদের অবস্থান বাংলাদেশে।

সৌদি আরব তথা মিডল ইস্টে অবস্থানকারী বাংলাদেশিদের অবস্থা কি? কেনইবা মধ্যেপ্রাচ্যের শ্রমবাজার  ব্ন্ধ হয়ে আছে সে বিষয়ে কোনও ধারণা নেই বললেই চলে। এই প্রতিবাদকারীদের মধ্যে ক্ষুদ্র একটি অংশ আবার বিরোধী দলের সমর্থক কর্মী যারা এটিকে ইস্যু বানিয়ে  সরকারের সমালোচনা করার সুযোগ নিচ্ছে।

সুযোগ সন্ধানীদের মধ্যে হঠাৎ করে একটি গ্রুপের আত্মপ্রকাশ দেখছি, যে গ্রুপটি হঠাৎ করে একটি কর্মসূচির আয়োজন করে কয়েকটি হাতে গোনা আন্তর্জাতিক মিডিয়ায় (যে মিডিয়াগুলোর অ্যালেক্সা রেটিং দেখলেই বোঝা যায় কেমন আন্তর্জাতিক মিডিয়া) একটি ছবি আর কয়েক লাইনের সংবাদ হয়ে অনেক কিছু করে ফেলার ভাব নিচ্ছে ।

 অপ্রিয় হলেও সত্য যে হঠাৎ করে জেগে উঠা এই গ্রুপটির বেশির ভাগ সদস্যই প্রথমআলোর মিডিয়াকর্মী এবং মিডিয়াকর্মীদের বন্ধুবান্ধব এবং প্রথমআলোর কিছু অন্ধ সমর্থক যারা কিনা পারসোনার সিসি ক্যামেরা ইসুৎতে পারসোনার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে  ফেসবুক এবং বাংলা ব্লগগুলোতে চরমভাবে সাধরণ ব্লগারদের তোপের মুখে পড়ে রীতিমত পারসোনার দালাল উপাধি পেয়েছে । পারসোনার ইস্যুতে অন্য যেকোনো মিডিয়ার চাইতে বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম এবং বাংলা ব্লগগুলো যে সাহসিকতা এবং নিরপেক্ষতার পরিচয় দিয়েছে সেখানে প্রিন্ট মিডিয়া বিশেষ করে সর্বাধিক প্রচারের দাবিদার প্রথম আলোর ভূমিকা ছিল রীতিমত জঘণ্য। পারসোনার সিসি ক্যামেরা কেলেংকারি শুরুর কয়েকদিনের ঘটনা নিয়ে কোন রিপোর্ট না করলেও পারসোনার মুখপত্রের মত পারসোনায় গোপন কোনো ক্যামেরার অস্তিত্ব` নেই টাইপের শিরোনাম দিয়ে সংবাদ প্রকাশ করে ব্যাপক নিন্দার শিকার হওয়া পত্রিকাটির দুই সাংবাদিক কাম জনপ্রিয় ব্লগার পারসোনার স্পর্শকাতর ইস্যুটিকে ফেসবুক এবং বাংলা ব্লগে হঠাৎ করে প্রচারণা করতে শুরু করে যে, যারা  রাজাকারদের বিচার বাধাগ্রস্ত করতে চায় তারাই পারসোনা ইস্যুটিকে রং মাখিয়ে অনলাইনে অপপ্রচারে মেতে উঠেছে’।

 পারসোনার সিসি ক্যামেরার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে যুদ্ধাপরাধ ইস্যুটিকে ব্যবহার করার মত মানসিকতা যারা কিছুদিন আগে দেখিয়েছিল তাদের বড় একটা অংশ সৌদি আরবের ব্যাপারটি উৎসাহী হয়ে অনলাইনে প্রতিবাদের ঝড় তুলছে। এদের প্রচারণার স্টাইল নিয়ে কোনো প্রশ্ন করলে উওর না দিয়ে অশ্লীল ভাষার ব্যবহার এবং কিসের জন্য প্রতিবাদ, তাদের এই প্রতিবাদের মূল লক্ষ্য কি সে ব্যাপারে একরকম দায়সারা উওর দিচ্ছে। এ থেকে যে প্রশ্নটি সাধরণ পাঠকরা করতে শুরু করেছে তা হচ্ছে, বাংলাদেশি শ্রমবাজার ধ্বংসের চক্রান্ত নাতো? কারণ, যারা  পারসোনার মত স্পর্শকাতর ইস্যুতে  দালালি করতে গিয়ে মুক্তিযুদ্ধকে ব্যবহার করে, যারা পাশ্ববর্তী দেশের সীমান্ত আগ্রাসনের শিকার ফেলানী হত্যার প্রতিবাদে মানববন্ধনের বিরোধিতা করে আন্তর্জালে অপপ্রচার চালায় তাদের হঠাৎই তাদের সন্দেহজনক আচরণে মানবতাপ্রেম উথলে ওঠা সত্যি রহস্যজনক।
 
আরো একটি ব্যাপার লক্ষনীয়, প্রবাসীদের জন্য যাদের উথলে উঠেছে প্রেম তাদের প্রবাসীদের মূল সমস্যাগুলো নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। অভিযোগ তোলা হয়েছে যে,  আট বাংলাদেশি ন্যায়বিচার পায়নি । আট বাংলাদেশি যদি ন্যায়বিচার না পেয়ে থাকে তাহলে সে দায়ভার কার? চার বছর ধরে কি ঘোড়ার ঘাস কাটছিল রিয়াদস্থ বাংলাদেশ দূতাবাস? প্রবাসে গিয়ে কাজকর্ম না করে ডাকাতি, মদের ব্যবসা নারীব্যবসা ( উল্লেখ্য, বছরখানেক আগে ইন্দোনেশিয়ান নারীশ্রমিক দিয়ে দেহ ব্যবসা করাতে গিয়ে ধরা খেয়ে এক বাংলাদেশি সৌদি মিডিয়ার সামনে বলেছিল বাংলাদেশি মানেই হারামি) , খুন করলে কি তাদের শাস্তি হবে না?
 
পাঠক, মধ্যপ্রাচ্যের  প্রবাসীরা আট বাংলাদেশির শিরশ্ছেদকে কিভাবে দেখছে তা যদি একটু গভীর দৃষ্টিতে লক্ষ্য করেন তাহলে দেখবেন যে, মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসীরা বিভিন্ন পোস্ট এবং ফেসবুকে কি লিখছেন। মুষ্টিমেয় কিছু প্রবাসীর অপরাধকর্মে লিপ্ত থাকায় কিভাবে লক্ষ লক্ষ প্রবাসী বেকায়দায় আছে সেটি তুলে ধরে তাদের বক্তব্য: অন্যায় করলে শাস্তিতো পেতেই হবে। এবং সেই শাস্তি আমরা যে দেশে  অন্যায় হয়েছে সে দেশের শাসন ব্যবস্থার মতই আমাদের মেনে নিতে হবে।

কারণ, একজন শ্রমিক যখন কোনও দেশে প্রবেশ করে তখন সে দেশের আইন কানুন এবং বিচার ব্যবস্থার প্রতি `হ্যাঁ` বলেই সে সুযোগ পায়। প্রবাসীরা এতেও শংকিত যে মধ্যেপ্রাচ্যের শ্রমবাজারে এমনিতেই চরম দুরববস্থায় আছে বাংলাদেশ। ভারতীয় মিডিয়াকর্মীরা বাংলাদেশীদের নিয়ে অপপ্রচার করে আসছে এখন আবার মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা-এর মত চিহ্নিত একটি মিডিয়া; যে মিডিয়ায় ভারতীয় সীমান্তবাহিনী বিএসএফের  আগ্রাসনের খবর ভেতরের পাতায় ছেপে বিএএসফ সদস্যেদের হোলি আনন্দের ছবি প্রথম পাতায় ছাপে তাদের এমন প্রবাসীদের জন্য মানবতা সৌদি আরবে ২৫ লক্ষ বাংলাদেশি শ্রমিকের শ্রমবাজার পাশ্ববর্তী দেশের হাতে তুলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র নয়তো?

shohanmurad@yahoo.com

বাংলাদেশ সময় ২২০৯ ঘণ্টা, অক্টোবর ১৬, ২০১১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।