ঢাকা, রবিবার, ৭ পৌষ ১৪৩১, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১৯ জমাদিউস সানি ১৪৪৬

মুক্তমত

উচ্চশিক্ষায় বাংলা-ইংরেজি স্বাক্ষরতা কোর্স অযৌক্তিক

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০২ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৮
উচ্চশিক্ষায় বাংলা-ইংরেজি স্বাক্ষরতা কোর্স অযৌক্তিক

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশন (বাবিমক) – দেশের সব সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা। রাষ্ট্রপতির ১৯৭৩ সালের ১০ নং আদেশের মাধ্যমে এটি সৃষ্টি হয়, যা ১৯৭২ সালের ১৬ ডিসেম্বর থেকে কার্যকর রয়েছে। 

কমিশনের প্রাথমিক উদ্দেশ্য- বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সমন্বয়, নিয়ন্ত্রণ, পরিচালনা ও বিকাশ ঘটানো। বিশ্ববিদ্যালয়ে উচ্চশিক্ষার মানরক্ষা এবং নিয়ন্ত্রণও এই প্রতিষ্ঠানের দায়িত্ব।

এছাড়া সরকারকে উচ্চশিক্ষার সামগ্রিক বিষয়ে পরামর্শ দিয়ে থাকে কমিশন।  

মঞ্জুরী কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর স্নাতক পর্যায়ের সব শিক্ষার্থীর জন্য বাংলা/ইংরেজি স্বাক্ষরতা (literacy) ও একটি বঙ্গবিদ্যা কোর্সের পাঠগ্রহণ বাধ্যতামূলক।  

বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে ২/১টি বাংলা/ইংরেজি স্বাক্ষরতা কোর্স আগে থেকেই চালু রয়েছে। কিন্তু সংস্থাটি বর্তমানে স্নাতক পর্যায়ে বাধ্যতামূলক বঙ্গবিদ্যা বিষয়ক শিক্ষা পড়ানোর উদ্যোগ নিয়েছে।  

এর সপক্ষে সুপারিশ করে বলা হয়, স্নাতক পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা তাদের উচ্চশিক্ষা গ্রহণের প্রাথমিক পর্যায়েই বাংলা/ইংরেজিতে স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন হয়ে ওঠে। এ পর্যায়ে বাধ্যতামূলক বঙ্গবিদ্যা কোর্স চালু করতে যাচ্ছে কমিশন; যাতে শিক্ষার্থীরা বঙ্গবিদ্যা (বাংলাদেশ ও মুক্তিযুদ্ধ) বিষয়ক জ্ঞানেও জ্ঞানদীপ্ত হয়ে উচ্চশিক্ষা শুরু করতে পারে।
কিন্তু মঞ্জুরী কমিশনের এই উদ্যোগটি উচ্চশিক্ষা নীতিমালার সঙ্গে  সঙ্গতিপূর্ণ নয়। কেননা ২/১টি কোর্স পড়িয়ে শিক্ষার্থীদের যেমন বাংলা/ইংরেজিতে স্বাক্ষর জ্ঞান সম্পন্ন করে গড়ে তোলা সম্ভব নয়, তেমনি ২/১টি কোর্স পড়িয়ে বঙ্গবিদ্যা বিষয়ক জ্ঞানেও জ্ঞানদীপ্ত করে গড়ে তোলা যাবে না।  

তাছাড়া বাংলা/ইংরেজিতে স্বাক্ষর অথবা বঙ্গবিদ্যা বিষয়ক শিক্ষা হলো- বুনিয়াদী শিক্ষার অংশ। শিক্ষার্থীরা এই শিক্ষা কালক্রমে একটি শিখন প্রক্রিয়াধীনে ধাপে ধাপে অর্জন করে থাকে।  

সেজন্য শিক্ষা-দর্শন অনুসরণে বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা এমনভাবে সাজানোর হয়েছে যে- এই বুনিয়াদি শিক্ষার কাজটি স্নাতক-পূর্ব শ্রেণিতে সম্পন্ন হয়। যাতে স্নাতক শ্রেণিতে পেশাগত শিক্ষা বা কোনো বিশেষায়িত জ্ঞান-বিষয়ক শিক্ষা পড়ানো যায়।  

বর্তমান শিক্ষা ব্যবস্থায়ও বাংলা/ইংরেজি স্বাক্ষরতা অথবা বঙ্গবিদ্যা বিষয়ক শিক্ষা স্কুল পর্যায়ে পড়ানো হয়। আর এই শিক্ষার দায়িত্ব ন্যস্ত রয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের ওপর।

বর্তমান এই শিক্ষাব্যবস্থার আওতায় একজন শিক্ষার্থী প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অর্জনের সময় বাংলা/ইংরেজিতে স্বাক্ষর জ্ঞান বা বঙ্গবিদ্যা বিষয়ক শিক্ষায় জ্ঞান অর্জন করে।

কিন্তু সব শিক্ষার্থী বাংলা/ইংরেজিতে স্বাক্ষর অথবা বঙ্গবিদ্যা বিষয়ে জ্ঞান সম্পন্ন হয় না। মঞ্জুরী কমিশন যদি মনে করে, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ে যেসব শিক্ষার্থী ভর্তি হয়, তারা বাংলা/ইংরেজিতে অথবা বঙ্গবিদ্যা বিষয়ে যথেষ্ট জ্ঞান সম্পন্ন নয়, তবুও এই বুনিয়াদি শিক্ষা দেওয়ার দায়িত্ব তাদের ওপর বর্তায় না।  

এক্ষেত্রে মঞ্জুরী কমিশন বরং এই বুনিয়াদি শিক্ষার ঘাটতির বিষয়টি শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে অবহিত করতে পারে, যেন কমিশন মাউশি’র মাধ্যমে উচ্চ মাধ্যমিক স্তরেই এই বুনিয়াদী শিক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষাব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাতে পারে।  

কিন্তু মঞ্জুরী কমিশন কোনো মতেই এই বুনিয়াদি শিক্ষার দায়িত্বটা নিজের ঘাড়ে নিতে পারে না। এই প্রেক্ষাপট বিবেচনায় মঞ্জুরী কমিশন স্নাতক পর্যায়ে বাংলা/ইংরেজিতে স্বাক্ষরতা এবং বঙ্গবিদ্যা বিষয়ক বাধ্যতামূলক শিক্ষা দেওয়ার উদ্যোগটি পুনর্বিবচনার উদ্যোগ নিতে পারে। এক্ষেত্রে মাউশিকেও দায়িত্ব দেওয়া যেতে পারে।  

কিন্তু কোনোভাবেই বুনিয়াদী শিক্ষার ভার উচ্চ শিক্ষা-প্রতিষ্ঠানের হাতে গছিয়ে দিতে পারে না মঞ্জুরী কমিশন।

লেখক: অধ্যাপক, আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।  

বাংলাদেশ সময়: ১৬১১ ঘণ্টা, মে ১১, ২০১৮
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।